আমরা কেন মাযহাব মানবো? মাযহাব মানা কি কোরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? মুফতী লুৎফুর রহমান ফারায়েজী

হযরত, আচ্ছালামুআলাইকুম।
লা-মাযহাবীরা বিশদ এক ফিচার তৈরী করেছে……… আমি একজন সাধারণ মুসল্লি। হাদীস ও কুরআনের আলোকে উত্তরটি দিবেন দয়া করে।

আমি জানি আপনি অনেক ব্যস্ত মানুষ। কিন্তু এই সব লা-মাযহাবীদের থেকে আমাদের সাধারণ মানুষের ঈমান আক্বীদা কে ঠিক রাখার জন্য আমাকে একটু সাহায্য করতে হবে।
আমি ও এদের ছেড়ে দিবনা যদি আপনার সহযোগীতা পাই।

দেখুন তাদের রটানো কথা গুলো…………….

বর্তমানে সারাবিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা আড়াইশো কোটিরও বেশী। পৃথিবীর প্রত্যেক তিনজন ব্যাক্তির মধ্যে একজন মুসলমান। অমুসলিমদের কাছে আমরা অর্থাৎ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মুসলমান বলে পরিচিত হলেও মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে অনেক নামে পরিচিত।

যেমন, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী প্রভৃতি।
এই নাম গুলি আল্লাহ বা মুহাম্মাদ (সা) এর দেওয়া নয় এমনকি যাঁদের নামে এই মাযহাব তৈরি করা হয়েছে তারাও এই নাম গুলো দেয়নি।

মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত চারটি মাযহাব, দল বা ফিকাহ ইসলামের কোনো নিয়ম বা বিধান মেনে তৈরি করা হয়নি।

কারন ইসলাম ধর্মে কোনো দলবাজী বা ফিরকাবন্দী নেই। মুসলমানদের বিভক্ত হওয়া থেকে এবং ধর্মে নানা মতের সৃষ্টি করা থেকে কঠোরভাবে সাবধান করা হয়েছে।

এই মাযহাবগুলো রসুল (যা) এবং সাহাবাদের (রা) সময় সৃষ্টি হয়নি।
এমনকি ঈমামগনের সময়ও হয়নি। চার ইমামের মৃত্যুর অনেক বছর পরে তাঁদের নামে মাযহাব তৈরি হয়েছে। কোরআন হাদীস ও চার ইমামের দৃষ্টিতে মাযহাব কি, কেন, মাযহাব কি মানতেই হবে, মাযহাব মানলে কি গোনাহ হবে, সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ্‌!

মাযহাব তৈরিতে আল্লাহর কঠোর নিষেধাজ্ঞা

মুসলমানেরা যাতে বিভিন্ন দলে আলাদা বা বিভক্ত না হয়ে যায় সে জন্য আল্লাহ পাক আমাদের কঠোরভাবে সাবধান করেছেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা কুরআনের সূরা আন-আমর এর ১৫৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন ‘যারা দ্বীন সন্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন, দলে বিভক্ত হয়েছে হে নবী! তাদের সাথে তোমার কোনও সম্পর্ক নেই; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবগত করবেন।

একটু থামুন। উপরের আয়াতটা দয়া করে বারবার পড়ুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন,চিন্তা করুন।

আল্লাহ তা’আলা সরাসরি বলেছেন, যারা দ্বীন বা ধর্মে অর্থাৎ ইসলামে নানা মতগের সৃষ্টি করেছে এবং বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে আমাদের নবী মহাম্মাদ (সা) এর কোনো সম্পর্ক নেই। যার সাথে নবীজীর (সা) কোনো সম্পর্ক নেই সে কি মুসলমান? সে কি কখনো জান্নাতের গন্ধও পাবে। আমরা মুসলমান কোরআন হাদীস মাননে ওয়ালা এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয়। আল্লাহ বলেন এবং তোমাদের এই যে জাতি, এতো একই জাতি; এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক, অতএব আমাকে ভয় করো। (সূরা মুউমিনুন ২৩/৫২)।

তাহলে বুঝতেই পড়েছেন ফরয, ওয়াজীব ভেবে আপনারা যা মেনে চলছেন আল্লাহ তা মানতে কত কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন তবে শুধু এইটুকুই নয় আল্লাহ আরও অনেক আয়াতে এ ব্যাপারে মানুষকে সাবধানবানী শুনিয়েছেন।

যেমন সূরা রূমের একটি আয়াত দেখুন যেখানে আল্লাহ পাক বলছেন ‘….. তোমরা ঐ সকল মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না যারা নিজেদের দ্বীনকে শতধা বিচ্ছিন্ন করে বহু দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দল নিজেদের কাছে যা আছে তা নিয়ে খুশি’ – (সূরা রুম ৩০/৩১-৩২)।
বর্তমানে আমাদের সমাজের অবস্থাও ঐ মুশরিকদের মতো। ইসলামকে তারা (মাযহাবীরা) বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছে এবং তাদের নিজেদের কাছে যা আছে তা নিয়েই তারা খুশি। তাদের সামনে কোনো কথা উপস্থাপন করলে তারা বলেনা যে, কুরআন হাদীসে আছে কি না। তারা বলে আমাদের ইমাম কি বলেছে।

এরা কুরয়ান হাদীসের থেকেও ইমামের ফিকাহকে অধিক গুরুত্ব দেয়। অথচ ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে কুরআন হাদীস। তা ছাড়া অন্য কিছু নয়।

উপরের আযাতে আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপদেশ দিয়েছেন তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না; তোমরা ইসলামে মাযহাবের সৃষ্টি করো না।

অথচ আমরা কুরআনের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে দ্বীনে দলের সৃষ্টি করেছি এবং নিজেকে হানাফী, মালেকী বা শাফেরী বলতে গর্ব অনুভব করছি।

আল্লাহ বলেন ‘হে ইমানদারগন তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রগামী হয়ো না, এবং আল্লাহকে ভয় করো; আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী (সূরা হুরুরতে/০১)

আমার প্রিয় মাযহাবী ভাইয়েরা! এরকম কোরআনের স্পষ্ট নির্দেশ জানার পরও কি আপনারা মাযহাবে বিশ্বাসী হবেন এবং নিজেকে মাযহাবী বলে পরিচয় দেবেন। যারা জানে না তাদের কথা আলাদা। আল্লাহ বলেন ‘বলো, যারা জানে এবং যারা জানেনা তারা কি সমান? (সূরা যুমার ৩৯/০৯)।

তাই আজই তওবা করে সঠিক আব্বীদায় ফিরে আসুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলাম বোঝার তোফিক দিন। আমীন!

ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেননি

ভারতবর্ষের বিখ্যাত হাদীসশাস্ত্রবিদ ও হানাফীদের শিক্ষাগুরু যাকে হানাফীরা ভারতবর্ষের ‘ইমাম বুখারী’ বলে থাকেন সেই শাহ আলিউল্লাহ মুহাদ্দিসদেহেলভী (রহ) বলেছেন – ‘ই’লাম আন্না না-সা-কা-নু ক্কারলাল মিআতির রা-বিআতি গাইরা মুজমিয়ীনা আলাত্‌-তাকলীদিল খা-লিস লিমায় হাবিন্‌ ওয়া-হিদিন্‌ বি-আইনিহী’ অর্থাৎ তোমরা জেনে রাখো যে, ৪০০ হিজরীর আগে লোকেরা কোন একটি বিশেষ মাযহাবের উপর জমে ছিল না’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ; ১৫২ পৃষ্ঠা)।

অর্থাৎ ৪০০ হিজরীর আগে নিজেকে হানাফী, শাফেরী বা মালেকী বলে পরিচয় দিতো না। আর চারশো হিজরীর অনেক আগে ইমামরা ইন্তেকাল করেন। ইমামদের জন্ম ও মৃত্যুর সময়কালটা একবার জানা যাক তাহলে ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।
ইমামের নাম জন্ম মৃত্যু
আবু হানীফা (রহ) ৮০ হিজরী ১৫০ হিজরী
ইমাম মালেক (রহ) ৯৩ হিজরী ১৭৯ হিজরী
ইমাম শাকেরী (রহ) ১৫০ হিজরী ২০৪ হিজরী
আহমদ বিন হাম্বাল (রহ) ১৬৪ হিজরী ২৪১ হিজরী

বিশিষ্ট হানাফী বিদ্বান শাহ ওলিউল্লাহ দেহেলভী (রহ) এর কথা যদি মেনে নেওয়া যায় যে ৪০০ হিজরীর আগে কোনো মাযহাব ছিল না, এবং ৪০০ হিজরীর পরে মানুষেরা মাযহাব সৃষ্টি করেছে, তার মানে এটা দাঁড়ায় যে আবু হানীফার ইন্তেকালের ২৫০ বছর পর হানাফী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে।

ইমাম মালেকের ইন্তেকালের ২২১ বছর পর মালেকী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম শাফেরীর ইন্তেকালের ১৯৬ বছর পরে শাফেরী মাযহাব এবং ইমাম আহমাদের ইন্তেকালের ১৫৯ বছর পর হাম্বলী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ ইমামদের জীবিত অবস্থায় মাযহাব সৃষ্টি হয়নি। তাঁদের মৃত্যুর অনেকদিন পরে মাযহাবের উদ্ভব হয়েছে।

আর একবার চিন্তা করে দেখুন মাযহাব বা দল সৃষ্টি করাতে কোরআন ও হাদিসে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহামান্য ইমামরা ছিলেন কোরআন হাদীসের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসারী এবং ধর্মপ্রান মুসলিম।

তাঁরা কি কোরআন হাদীসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মাযহাব তৈরি করবেন যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এটা কখনো হতে পারে? যারা বলে ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেছেন তারা হয় মুর্খ নয় বেইমান।
তারা ইমামদের প্রতি অপবাদ দেয়। মাযহাব সৃষ্টি হল কিভাবে ফারসীতে একটি প্রবাদ আছে ‘মান তোরা হাজী গো ইয়াম তু মোরা হাজী বোগো’ অর্থাৎ একজন লোক আর একজনকে বলছে, ভাই! যদিও তুমি হাজী নও তথাপি আমি তোমাকে হাজী সাহেব বলছি এবং যদিও আমি হাজী নই তুমি আমাকে হাজী সাহেব বলো।

এভাবে একে অপরকে হাজী সাহেব বলে ডাকার ফলে আমরা দু-জনেই হাজী সাহেব হয়ে যাবো। এভাবেই আবু হানীফার অনুসারীদের অথবা তাঁর ফতোয়া মান্যে ওয়ালাদের অন্যেরা হানাফী একইভাবে ইমাম মালেকের ফতোয়া মাননে ওয়ালাদের মালেকী বলে ডাকাডাকির ফলে মাযহাবের সৃষ্টি হয়েছে।

আজ যা বিরাট আকার ধারন করেছে। আবু হানীফা (রহ) বা তাঁর শিষ্যরা কখনো বলেননি আমাদের ফতোয়া যারা মানবা তারা নিজেদের পরিচয় হানাফী বলে দিবা। অথবা ইমাম মালেক বা শাফেয়ীও বলে যাননি যে আমার অনুসারীরা নিজেকে মালেকী বা শাফেয়ী বলে পরিচয় দিবা।

ইমামরা তো বটেই এমনকি ইমামদের শাগরেদরা কিংবা তাঁর শাগরেদদের শাগরেদরাও মাযহাব সৃষ্টি করতে বলেননি। যখন আমাদের মহামতি ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেননি এবং করতেও বলেননি তখন উনাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি করার অধিকার কেন দিল?

হাদীস বিরোধী বক্তব্যের ব্যাপারে ইমামদের রায়

মাযহাবীদের মধ্যে কিছু লোক দেখা যায় যারা ইমামদের তাক্কলীদ করে অর্থাৎ অন্ধ অনুসরন করে। তারা ইমামদের বক্তব্যকে আসমানী ওহীর মতো মানে।
কোরআন-হাদিস বিরোধী কোনো রায় হলেও তাতে আমল করে। তাই সেই সব লোকদের জন্য হাদীস অনুসরনের ব্যাপারে ইমামদের মতামত এবং তাদের হাদীস বিরোধী বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে তাদের কয়েকটি উক্তি দেওয়া হল। ইনশাল্লাহ্‌!
মাযহাবী ভাইয়েরা এ থেকে অনেক উপকারিত হবেন।

আবু হানীফা (রহ)
১) যখন হাদীস সহীহ হবে, তখন সেটাই আমার মাযহাব অর্থাৎ হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। (ইবনুল আবেদীন ১/৬৩; রাসমুল মুফতী ১/৪; ঈক্কামুল মুফতী ৬২ পৃষ্ঠা)
২) কারো জন্য আমাদের কথা মেনে নেওয়া বৈধ নয়; যতক্ষন না সে জেনেছে যে,আমরা তা কোথা থেকে গ্রহন করেছি। (হাশিয়া ইবনুল আবেদীন ২/২৯৩ রাসমুল মুফতী ২৯, ৩২ পৃষ্ঠা, শা’ রানীর মীথান ১/৫৫; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৩০৯)
৩) যে ব্যাক্তি আমার দলিল জানে না, তার জন্য আমার উক্তি দ্বারা ফতোয়া দেওয়া হারাম। (আন-নাফিউল কাবীর ১৩৫ পৃষ্ঠা)
৪) আমরা তো মানুষ। আজ এক কথা বলি, আবার কাল তা প্রত্যাহার করে নিই। – (ঐ)
৫) যদি আমি এমন কথা বলি যা আল্লাহর কিবাব ও রাসুলের (সা) হাদীসের পরিপন্থি, তাহলে আমার কথাকে বর্জন করো। (দেওয়ালে ছুড়ে মারো)। (ঈক্কাবুল হিমাম ৫০ পৃষ্ঠা)

ইমাম মালেক (রহ)
১) আমি তো একজন মানুষ মাত্র। আমার কথা ভুল হতে পারে আবার ঠিকও হতে পারে। সুতরাং তোমরা আমার মতকে বিবেচনা করে দেখ। অতঃপর যেটা কিতাব ও সুন্নাহর অনুকুল পাও তা গ্রহন কর। আর যা কিতাব ও সুন্নাহর প্রতিকুল তা বর্জন করো। (জানেউ বায়ানিল ইলম ২/৩২, উসুলুল আহকাম ৬/১৪৯)
২) রাসুলুল্লাহ (সা) এর পর এমন কোনো ব্যাক্তি নেই যার কথা ও কাজ সমালোচনার উর্ধে। একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা) ই সমালোচনার উর্ধে। (ইবনু আবদিল হাদী, ১ম খন্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা, আল ফতোয়া – আসসাবকী, ১ম খন্ড ১৪৮ পৃষ্ঠা, উসুলুল আহকাম ইবনু হাযম, ষষ্ঠ খন্ড ১৪৫ – ১৭৯ পৃষ্ঠা)।
৩) ইবনু ওহাব বলেছেন, আমি ইমাম মালেককের উয়ব মধ্যে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার বিষএ এক প্রশ্ন করতে শুনেছি। তিনি বলেন লোকদের জন্য এটার প্রয়োজন নীই। ইবনু ওহাব বলেন, আমি মানুষ কমে গেলে তাঁকে নিরিবিলে পেয়ে বলি ‘তাতো আমাদের জন্য সুন্নাহ। ইমাম মালেক বলেন, সেটা কি? আমি বললাম, আমরা লাইস বিন সাদ, ইবনু লোহাইআ, আমর বিন হারেস, ইয়াবিদ বিন আমার আল-মা আফেরী, আবু আবদুর রহমান আল হাবালী এবং আল মোস্তাওরাদ বিন শাদ্দাদ আল কোরাশী এই সুত্র পরম্পরা থেকে জানতে পেরেছি যে, শাদ্দাদ আল কোরাশী বলেন, আমি রাসুল (সা) কে কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল

করতে দেখেছি। ইমাম মালেক বলেন, এটা তো সুন্দর হাদীস। আমি এখন ছাড়া আর কখনো এই হাদীসটি শুনিনি। তারপর যখনই তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তখনই তাঁকে পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার আদেশ দিতে আমি শুনেছি। (মোকাদ্দামা আল জারাহ ওয়াত তা দীল- ইবনু হাতেমঃ ৩১- ৩২ পৃষ্ঠা)

ইমাম শাফেরীঃ-
১) হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। (মাজমু ১/৬৩; শা’রানী ১/৫৭)
২) আমি যে কথাই বলি না কেন অথবা যে নীতিই প্রনয়ন করি না কেন, তা যদি আল্লাহর রাসুল (সা) এর নিকট থেকে বর্ণিত (হাদীসের) খিলাপ হয়, তাহলে সে কথাই মান্য, যা রাসুল (সা) বলেছেন। আর সেটাই আমার কথা। (তারীখু দিমাশ্‌ক; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৩৬৬,৩৬৪)
৩) নিজ ছাত্র ইমাম আহমাদকে সম্বোধন করে বলেন) হাদীস ও রিজাল সম্বন্ধে তোমরা আমার চেয়ে বেশি জানো। অতএব হাদীস সহীহ হলে আমাকে জানাও, সে যাই হোক না কেন; কুকী, বাসরী অথবা শামী। তা সহীহ হলে সেটাই আমি আমার মাযহাব (পন্থা) বানিয়া নেবো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৪-৯৫ পৃষ্ঠা; হিলয়াহ ৯/১০৬)
৪) আমার পুস্তকে যদি আল্লাহর রাসুল (সা) এর সুন্নাহের খেলাপ কে কথা পাও, তাহলে আল্লাহর রাসুল (সা) এর কথাকেই মেনে নিও এবং আমি যা বলেছি তা বর্জন করো। (নাওয়াবীর মা’জমু ১/৬৩; ইলামূল মুওয়াক্কিঈন ২/৩৬১)
৫) যে কথাই আমি বলি না কেন, তা যদি সহীহ সুন্নাহর পরিপন্থি হয়, তাহলে নবী (সা) এর হাদীসই অধিক মান্য। সুতরাং তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না। (হাদীস ও সুন্নাহর মুল্যমান ৫৪ পৃষ্ঠা)
৬) নবী (সা) থেকে যে হাদীসই বর্ণিত হয়, সেটাই আমার কথা; যদিও তা আমার নিকট থেকে না শুনে থাকো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৩-৯৪)

ইমাম আহমাদ
১) তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না, মালেকেরও অন্ধানুকরন করো না। অন্ধানুকরন করো না শাফেরীর আর না আওয়ারী ও ষত্তরীব বরং তোমরা সেখান থেকে তোমরা গ্রহন কর যেখান থেকে তারা গ্রহন করেছেন। (ইলামুল মোয়াক্কিঈন ২/৩০২)
২) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা) এর হাদীস প্রত্যাখ্যান করে, সে ব্যক্তি ধ্বংসোন্মুখ। (ইবনুল জাওযী ১৮২ পৃষ্ঠা)
৩) আওযাঈ; ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানীফার রায় তাদের নিজস্ব রায় বা ইজতিহাদ। আমার কাছে এসবই সমান। তবে দলিল হল আসার অর্থাৎ সাহাবী ও তাবেঈগনের কথা। (ইবনু আবদিল বার-আল-জামে, ২ খন্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা)

ইমামদের এই সকল বক্তব্য জানার পর আমরা বলতে পারি প্রকৃতই যারা ইমামদের ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন, মান্য করেন তারা ইমামদের কথা অনুযায়ী চলবেন এবং সহীহ হাদীসকেই নিজের মাযহাব বানাবেন। তাক্কলীদ করবেন না।

সরাসরী সেখান থেকে গ্রহন করবেন যেখান থেকে ইমামরা করেছেন অর্থাৎ সরাসরী হাদীস কোরয়ান থেকে। ইমামরা কোনো বিষয়ে ভুল ফতোয়া (সহীহ হাদীস তাঁদের কাছে না পৌছানোর কারনে) দিয়ে থাকলে তা প্রত্যাখ্যান করা এবং সহীহ হাদীসের উপর আমল করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলাম বোঝার ও গ্রহীহ হাদীসের উপর আমল করার তৌফিক দিন।
আমীন!

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

উপরোক্ত বিশাল ফিরিস্তির মূল সারমর্ম হল, আল্লাহ তাআলা সকলকে একতাবদ্ধ হতে বলেছেন। দল তৈরী করা মুশরিকদের কাজ।

মাযহাব অনুসারীগণ কুরআন ও হাদীস রেখে ইমামদের কথাকে প্রাধান্য দেয়।

আর ইমামগণ কোন মাযহাব তৈরী করেননি। বরং পরবর্তীরা তাদের নামে মাযহাব তৈরী করেছে।

এই হল, উপরোক্ত প্রশ্নের ও বিবরণের সারমর্ম।

পুরো বিষয়টির মূল কারণ হল, দ্বীন ও ইসলাম সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ অবগতির অভাব। অন্য শব্দে বললে ইসলাম ও ফিক্বহে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে উদয় হওয়া প্রশ্ন। কিংবা ইচ্ছেকৃত উম্মতকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছেকৃত তৈরী ধুম্রজাল।

এক হল, কুরআন ও হাদীসের বিপরীতে নিজস্ব মত তৈরী করে দলে দলে বিভক্ত হওয়া। আরেক হল, কুরআন ও হাদীস মানতে গিয়ে মতভেদ হওয়া।

দু’টি এক জিনিস নয়।

প্রথমটি পরিত্যাজ্য ও নিন্দনীয়। আর দ্বিতীয়টি গ্রহণীয় ও প্রশংসনীয়।

সাহাবা যুগ ও এমনটি নববী যুগ থেকেই কুরআন ও হাদীস মানতে গিয়ে দু’টি বা একাধিক মত হওয়ার রীতি চলে আসছে। এটাকে কেউ নিন্দনীয় বা পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত করেনি। এমন কি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত তা সাপোর্ট করেছেন।

নবীজী যুগে একাধিক মাযহাব

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَنَا لَمَّا رَجَعَ مِنَ الأَحْزَابِ: «لاَ يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ العَصْرَ إِلَّا فِي بَنِي قُرَيْظَةَ» فَأَدْرَكَ بَعْضَهُمُ العَصْرُ فِي الطَّرِيقِ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: لاَ نُصَلِّي حَتَّى نَأْتِيَهَا، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: بَلْ نُصَلِّي، لَمْ يُرَدْ مِنَّا ذَلِكَ، فَذُكِرَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمْ يُعَنِّفْ وَاحِدًا مِنْهُمْ

হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ যখন আহযাব ফিরলেন, তখন বললেন, [সাহাবীদের] “তোমাদের কেউ বনু কুরাইযায় গিয়ে আসর নামায পড়”। তখন কতিপয় সাহাবীদের পথিমধ্যেই আসরের সময় হয়ে যায়। তখন কতিপয় সাহাবী বলেন, আমরা বনু কুরাইযায় পৌঁছার আগে নামায পড়বো না। কিন্তু বাকিরা বললেন, আমরা এখনি পড়ে নিব। তখন তাদের কেউ বাঁধা দেয়নি। এ বিষয়টি পরবর্তীতে রাসূল সাঃ এর কাছে উল্লেখ করা হলে রাসূল সাঃ কারো ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৯৪৬}

হযরত আয়শা রাঃ, হযরত আবু হুরায়রা রাঃ, হযরত ইবনে মাসঊদ রাঃ এবং ইমাম আহমাদ রহঃ এর এক মত অনুসারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলাকে সরাসরি দেখেননি।

কিন্তু

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ, হযরত আনাস রাঃ, হযরত ইকরিমা রহঃ, হযরত হাসান রহঃ, হযরত রাবী বিন সুলাইমান রহঃ, হযরত ইবনে খুযাইমা রহঃ, হযরত কা’বে আহবার রহঃ, হযরত যুহরী রহঃ, হযরত উরওয়া বিন যুবায়ের রহঃ, হযরত মা’মার রহঃ, হযরত আশআরী রহঃ এবং ইমাম আহমাদ রহঃ এর বক্তব্য অনুপাতে সরাসরি আল্লাহকে দেখেছেন।

এমতটিই ইমাম নববী রহঃ প্রাধান্য দিয়েছেন। [শরহে মুসলিম, ইমাম নববীকৃত, কিতাবুল ঈমান, বাবু মা’না কওলিল্লাহ ওয়ালাক্বাদ রাআহু-৩/৬-৭, বর্ণনা নং-২৮০ (১৭৪)]

এ দুই মতের মাঝে কোন মতের অনুসারীগণ মুশরিকদের পথ অনুসরণ করলেন? কে গোমরাহ আর কে হকপন্থী?

সালাফী আলেমদের মাঝে কে হকপন্থী আর কে মুশরিকদের অনুসারী?

কিরাত পড়া প্রসঙ্গে

ক) আলবানীর মতে জোরে জেহরী নামাযে কিরাত পড়া রহিত।{শায়েখ আলবানীর “নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছলাত সম্পদনের পদ্ধতি-৮৩}

খ) আসাদুল্লাহ গালিব বলে ফরজ। {আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত ছালাতুর রাসূল সাঃ-৮৮}

বিসমিল্লাহ প্রসঙ্গে

ক) বিসমিল্লাহ সূরা ফাতিহার অংশ হবার পক্ষে কোন ছহীহ দলীল নেই। {আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত ছালাতুর রাসূল সাঃ -৮৬}

খ) সূরা ফাতিহা কুরআনের অংশ। {অধ্যাপক হাফিজ আইনুল বারী রচিত “আইনী তুহফা সলাতে মুস্তাফা”-১০৫}

বিসমিল্লাহ জোরে পড়া

ক) গালিব সাহেবের মতে এর কোন ভিত্তি নেই। [আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত ছালাতুর রাসূল সাঃ -৮৬}

খ) জোরে আস্তে উভয়ভাবে পড়া ছহীহ সনদে বর্ণিত। {আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত “ছালাত আদায় পদ্ধতি”-২৮}

রুকু

ক) রুকু পেলে রাকাআত পাওয়া যায়। {আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত “ছালাত আদায় পদ্ধতি”-৩৩}

খ) রুকু পেলে উক্ত রাকাত পায়নি। { আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত ছালাতুর রাসূল সাঃ -৯৬}

সালাম

ক) ডান দিকে ফিরে ওয়াবারাকাতুহু বলতে হবে {আকরামুজ্জামান সম্পাদিত ছালাত আদায় পদ্ধতি-৬২}

খ) উভয় দিকেই ওয়াবারাকাতুহু বলতে হবে। {ইবনে ফজলের সহীহ নামায ও দুআ শিক্ষা-১০৩}

জনাযায় ফাতিহা

ক) আসাদুল্লাহ গালিব বলেন পড়া ওয়াজিব। {ছালাতুর রাসূল-২১৩}

খ) আলবানী বলে সুন্নত। {সিফাতু সালাতিন্নবী-১১১}

৭- রুকু থেকে হাত বাঁধা

শায়েখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন ও ইবনে বায বলেন, রুকুর পর উঠে হাত বাঁধা সুন্নাত (ফতুওয়া আরকানুল ইসলাম পৃ:২৭৩)

কিন্তু শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন, বিদআত। -(আসলু সিফাতিস সালাহ খ:২ পৃ:৭০০)

৮-সেজদায় যাবার পদ্ধতি

শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী ও ড. আসাদুল্লাহ গালীবের মতে সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত পরে হাটু রাখা সুন্নাত -(ছালাতুর রাসূল, সিফাতিস সালাহ দ্র:)

অপরদিকে ইবনে বায ও ইবনে উসাইমিন বলেন, আগে হাটু পরে হাত রাখা সুন্নাত -(ফাতাওয়া ইবনে বায খ:১১, পৃ:১৫৯, ফতুওয়া আরকানুল ইসলাম পৃ:২৭৫)

যদি শাখাগত মাসায়েলে মাসায়েলের নাম মুশরিকদের অনুসরণ। উম্মতকে বিভক্ত করা হয়। তাহলে লা মাযহাবীরা কোন দিক থেকে উম্মতকে কম বিভক্ত করছে। তারা সহীহ হাদীসের নামে উম্মতকে এত বেশি বিভক্ত কেন করে যাচ্ছে?

মাযহাবের অনুসরণ মানেই কি কুরআন ও হাদীস বিরোধী?

যদি তা’ই হয়, তাহলে আমাদের প্রশ্ন হল, যদি মাযহাবের অনুসারী দাবী করলে কেউ কুরআন ও হাদীসের অনুসরণের বিপরীত হয়ে যায়। তাহলে উম্মতের মাঝে কুরআন ও হাদীস অনুসারী বাকি থাকবে কে?

যাদের নামে আমাদের দেশের লা মাযহাবীরা নতুন এক মাযহাব তথা লা মাযহাবী মাযহাব প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে তারা কি আসলেই লা মাযহাবী নাকি কোন না কোন মাযহাবের অনুসারী?

একটু যাচাই করে নিন-

শায়েখ আব্দুল ওয়াহহাব নজদী রহঃ এর মাযহাব

غيرهم، لعدم ضبط مذاهب الغير؛ الرافضة، والزيدية، والإمامية، ونحوهم؛ ولا نقرهم ظاهراً على شيء من مذاهبهم الفاسدة، بل نجبرهم على تقليد أحد الأئمة الأربعة .

অর্থ : আমরা ফিকহী বিষয়ে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রাহ.-এর মাযহাবের অনুসারী। যারা চার ইমামের কোনো একজনের তাকলীদ করে আমরা তাদের উপর কোনো আপত্তি করি না। কারণ (চার ইমামের মাযহাব সংকলিতরূপে বিদ্যমান। পক্ষান্তরে) অন্যদের মাযহাব সংকলিত আকারে বিদ্যমান নেই। তবে রাফেযী, যাইদিয়া, ইমামিয়্যাহ ইত্যাদি বাতিল মাযহাব-মতবাদের অনুসরণকে আমরা স্বীকৃতি দিই না। বরং তাদেরকে চার ইমামের কোনো একজনের তাকলীদ করতে বাধ্য করি। [আদ দুরারুস সানিয়্যা ১/২৭৭]

সৌদীর সাবেক প্রধান মুফতী বিন বায রহঃ এর মাযহাব

مذهبي في الفقه هو مذهب الإمام أحمد بن حنبل رحمه الله.

‘ফিকহের ক্ষেত্রে আমার মাযহাব হল, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর মাযহাব’। [মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে বায ৪/১৬৬]

তিনি আরো বলেছেন,

وأتباع الشيخ محمد بن عبد الوهاب رحمه الله كلهم من الحنابلة، ويعترفون بفضل الأئمة الأربعة و يعتبرون أتباع المذاهب الأربعة إخوة لهم في الله.

অর্থ : শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নাজদীর অনুসারী সকলেই হাম্বলী মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত। তারা চার ইমামকেই অত্যন্ত শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখেন এবং চার মাযহাবের অনুসারীদেরকে নিজেদের দ্বীনী ভাই মনে করে থাকেন। [মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে বায ৫/১৫০]

তিনি আরো বলেন,

وأنتم تعلمون حفظكم الله أن الخلاف المذهبي في أمور الفروع واقع منذ قديم الزمان، ولم يؤد ذلك إلى البغضاء والتشاحن والشقاق.

অর্থ : আল্লাহ আপনাদের রক্ষা করুন নিশ্চয়ই আপনারা অবগত আছেন যে, দ্বীনের ফুরু‘ বা শাখাগত মাসায়েলে ফিকহী মাযহাবসমূহের মধ্যে যে মতপার্থক্য তা নতুন নয় বরং প্রাচীনযুগ (সাহাবাযুগ) থেকেই চলে আসছে। আর এই মতপার্থক্য মুসলিম উম্মাহর মধ্যে কোনোরকম হিংসা-বিদ্বেষ এবং বিভক্তি সৃষ্টি করেনি। [মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে বায ৫/১৪৯]

উপরোক্ত উদ্ভট প্রশ্ন বিষয়ে সৌদীর সাবেক প্রধান মুফতী বিন বায রহঃ এর বক্তব্যটিই যথেষ্ট বলে মনে করিঃ-

فقد كان أصحاب الرسول صلى الله عليه وسلم والعلماء بعدهم رحمهم الله يختلفون في المسائل الفرعية، ولا يوجب ذلك بينهم فرقة ولا تهاجرا…

অর্থ : রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ এবং তাঁদের পরবর্তী উলামায়ে কেরাম শাখাগত অনেক মাসায়েলে মতভেদ করেছেন। কিন্তু এই মতভেদ তাঁদের মাঝে বিভেদ ও বিভক্তি সৃষ্টি করেনি কেননা তাঁদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য ছিল দলীলের ভিত্তিতে সত্যকে জানা। সুতরাং কোনো বিষয়ে যখন দলীলের মর্ম তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে তখন তারা একমত হয়ে গেছেন। আর যখন তাঁদের কারো নিকট দলীলের মর্ম অস্পষ্ট ছিল তখন তাঁদের মাঝে মতপার্থক্য হয়েছে। কিন্তু কেউ তাঁর ভাইকে গোমরাহ বলেননি এবং এর ভিত্তিতে সম্পর্কচ্ছেদ করা, তার পিছনে নামায ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি কাজে লিপ্ত হননি। সুতরাং আমাদের সকলের কর্তব্য হল, আল্লাহকে ভয় করা। হককে আকড়ে ধরা। ঈমানী ভ্রাতৃত্ব রক্ষা করা এবং শাখাগত মাসায়েলে মতভিন্নতার দরুণ বিভেদ-বিচ্ছিন্নতায় লিপ্ত না হওয়ার যে আদর্শ সালাফে সালেহীন রেখে গেছেন তা গ্রহণ করা। [মাজমুউ ফাতওয়া ইবনে বায ১১/১৪২-১৪৩]

সৌদীর প্রসিদ্ধ আলেম মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহঃ লিখেন,

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আলউছাইমীন রাহ.-এরও মাযহাব ও তাকলীদের সমর্থনে একাধিক বক্তব্য রয়েছে। তিনি নিজের ফিকহী মাসলাকের পরিচয় দিতে গিয়ে স্পষ্ট বলেছেন,

نحن الآن مذهبنا مذهب الامام أحمد رحمه الله.

অর্থ : বর্তমানে আমাদের মাযহাব হল, ইমাম আহমাদ রাহ.-এর মাযহাব। [লিকাআতুল বাবিল মাফতুহ ১২/১০০]

মাযহাব মানার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করতে গিয়ে আরো লেখেন :

الانتماء الى المذهب ودراسة قواعده و أصوله يعين الإنسان على فهم الكتاب والسنة.

অর্থ : কোনো মাযহাবের সাথে সম্বন্ধযুক্ত হওয়া এবং তাঁর উসূল ও কাওয়ায়েদ অধ্যয়ন করা মানুষকে কুরআন-সুন্নাহ বুঝতে সহায়তা করে। [মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইলে উছাইমীন ২৬/২৪৫]

এছাড়া শাইখ উছাইমীন রাহ.-এর শরাহ-ভাষ্যসহ প্রকাশিত ইবনে কুদামা মাকদীসী রাহ.-এর ‘লুমআতুল ই‘তিকাদ’ কিতাবে স্পষ্ট লিখা আছে-

وأما النسبة إلى إمام في فروع الدين كالطوائف الأربع فليس بمذموم، فإن الاختلاف في الفروع رحمة، والمختلفون فيه محمودون في اختلافهم، مثابون في اجتهادهم، واختلافهم رحمة واسعة، واتفاقهم حجة قاطعة.

অর্থ : দ্বীনের ফুরু‘ তথা শাখাগত বিষয়ে কোনো ইমামের সাথে সম্বন্ধ নিন্দার বিষয় নয়। যেমন চার মাযহাব। কারণ, ফুরু‘-এর ক্ষেত্রে মতভেদ হচ্ছে রহমত। এই মতপার্থক্যকারীগণ তাদের মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে প্রশংসিত এবং ইজতিহাদের ক্ষেত্রে আজর ও ছওয়াবের অধিকারী। তাদের মতপার্থক্য হল, প্রশস্ত রহমত আর তাদের মতৈক্য হচ্ছে অকাট্ট দলীল।

ইবনে কুদামা রা.-এর উপরোক্ত বক্তব্যকে দালিলিকভাবে প্রমাণ করতে গিয়ে শাইখ উছাইমীন রাহ.-এর ব্যাখ্যায় লেখেন,

الفروع: جمع فرع وهو لغة : ما بني على غيره، واصطلاحًا: ما لا يتعلق بالعقائد، كمسائل الطهارة والصلاة ونحوها.
والاختلاف فيها ليس بمذموم حيث كان صادرًا عن نية خالصة واجتهاد، لا
عن هوى وتعصب؛ لأنه وقع في عهد النبي -صلى الله عليه وسلم- ولم ينكره، حيث قال في غزوة بني قريظة: “لا يصلين أحد العصر إلا في بني قريظة، فحضرت الصلاة قبل وصولهم فأخر بعضهم الصلاة، حتى وصلوا بني قريظة، وصلى بعضهم حين خافوا خروج الوقت، ولم ينكر النبي -صلى الله عليه وسلم- على واحد منهم” رواه البخاري، ولأن الاختلاف فيها موجود في الصحابة وهم خير القرون؛ ولأنه لا يورث عداوة ولا بغضاء ولا تفرق كلمة.

অর্থ : …আর পরিভাষায় ফুরু‘য়ী বা দ্বীনের শাখাগত মাসায়েল হল, যা আকীদা সম্পৃক্ত নয়, যেমন পবিত্রতা এবং নামাযের বিভিন্ন মাসায়েল। আর এক্ষেত্রে যে মতপার্থক্য, এটা কোনো নিন্দনীয় বিষয় নয়। যখন এর ভিত্তি হয় বিশুদ্ধ নিয়্যতের সাথে ইজতিহাদ। খেয়াল-খুশি বা অন্যায় পক্ষপাত নয়। কারণ তা নবীযুগেও সংঘটিত হয়েছে কিন্তু তিনি এর উপর কোনো আপত্তি করেননি। যেমন বনু কুরাইযার যুদ্ধের সময় তিনি বললেন, তোমরা বনু কুরাইযায় আসরের নামায পড়বে। অতপর গন্তব্যে পৌঁছার পূর্বেই আসরের সময় হয়ে গেল। একদল নামাযকে বিলম্বিত করলেন, বনী কুরায়যায় পৌঁছে নামায পড়লেন। আর একদল সময় চলে যাচ্ছে দেখে পথিমধ্যেই নামায পড়ে নিলেন। কিন্তু আল্লাহর রাসূল কোনো পক্ষের উপরই আপত্তি করলেন না, তিরষ্কার করলেন না। আর তাছাড়া এধরনের মতপার্থক্য তো সাহাবীদের মাঝেও হয়েছে। আর তারা হলেন এ উম্মতের সর্বোত্তম শ্রেণী। আর এই মতপার্থক্য উম্মাহর মাঝে কোনোরূপ হিংসা-বিদ্বেষ বা অনৈক্য সৃষ্টি করেনা। [শরহু লুমআতুল ই‘তিকাদ পৃষ্ঠা ১৬৪]

ইবনে উসাইমিন রহঃ আরো বলেন,

والتقليد في الواقع حاصل من عهد الصحابة رضي الله عنهم. ولا شك أن من الناس في عهد الصحابة رضي الله عنهم وإلى عهدنا هذا من لا يستطيع الوصول إلى الحكم بنفسه لجهله وقصوره، ووظيفة هذا أن يسأل أهل العلم، وسؤال أهل العلم يستلزم الأخذ بما قالوا، والأخذ بما قالوا هو التقليد.

অর্থ : বাস্তব কথা হল, তাকলীদ সাহাবা যুগ থেকেই চলে আসছে। কেননা সাহাবা যুগ থেকে নিয়ে এই যুগ পর্যন্ত সবসময়ই এমন মানুষ থাকেন, যারা নিজে নিজে শরীয়তের বিধান জানতে সক্ষম নন। তাঁদের কর্তব্য, আহলে ইলমদের জিজ্ঞাসা করে সেই অনুপাতে আমল করা। আর এটাই তাকলীদ। [ফতোয়া নূর আলাদদারবি ২/২২০]

সৌদীর প্রসিদ্ধ আলেম শায়েখ সালেহ আলফাউজান লিখেন,

هاهم الأئمة من المحدثين الكبار كانوا مذهبيين، فشيخ الاسلام ابن تيمية وابن القيم كانا حنبليين، والإمام النووي وابن حجر شافعيين، والإمام الطحاوي كان حنفيا وابن عبدالبر كان مالكيا.

অর্থ : বড় বড় হাদীস বিশারদ ইমামগণ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. ও ইবনুল কায়্যিম রাহ. ছিলেন হাম্বলী, ইবনে হাজার রাহ. ও ইমাম নববী রাহ. ছিলেন শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। ইমাম ত্বহাবী রাহ. ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী। ইবনু আব্দিল বার রাহ. ছিলেন মালেকী মাযাহবের অনুসারী। [ইয়ানাতুল মুসতাফিদ শরহু কিতাবিত তাওহীদ ১/১২]

রাবেতা আলমে ইসলামিয়ার ফাতওয়া

সবশেষে ফিকহি মাযহাবের ইখতিলাফ ও মতভিন্নতার ধরন সম্পর্কে বর্তমান যুগের বড় বড় মনীষীর প্রতিনিধিত্বে ১৪০৭ হিজরীতে ‘রাবেতাতুল আলামিল ইসলামী’ মক্কা মুকাররমায় যে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছিল তার মূল অংশ তুলে ধরছি
“মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত চিন্তানৈতিক মতবিরোধ সাধারণত দু’ধরনের।

ক) আকীদা ও বিশ্বাসগত মতবিরোধ। খ) আহকাম ও বিধানগত মতবিরোধ।
প্রথমোক্ত মতবিরোধ…। আর দ্বিতীয়তটি হল, কিছু বিধানের ক্ষেত্রে ফিকহী মাযহাবসমূহের মতপার্থক্য, যার অনেক শাস্ত্রীয় কারণ রয়েছে। এবং যাতে আল্লাহ তাআলার নিগূঢ় হিকমত রয়েছে। যেমন বান্দাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ এবং নুসূস থেকে আহকাম ও বিধান উদঘাটনের ক্ষেত্রকে প্রশস্ত করা। তাছাড়া এটা হল অল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক বিরাট নিআমত এবং ফিকহ ও কানুনের মহাসম্পদ, যা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীন ও শরীয়তের ক্ষেত্রে প্রশস্ততা দিয়েছে। ফলে তা নির্ধারিত একটি হুকুমের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবে না, যা থেকে কোনো অবস্থাতেই বের হওয়ার সুযোগ নেই। বরং যে কোনো সময়ই কোনো বিষয়ে যদি কোনো একজন ইমামের মাযহাব সংকীর্ণতার কারণ হয়ে যায় তাহলে শরঈ দলিলের আলোকেই অন্য ইমামের মাযহাবে সহজতা ও প্রশস্ততা পাওয়া যাবে। তা হতে পারে ইবাদত সংক্রান্ত বিষয়ে অথবা মুআমালা সংক্রান্ত অথবা পারিবারিক কিংবা বিচার ও অপরাধ সংক্রান্ত। তো আহকাম ও বিধানের ক্ষেত্রে এ ধরনের মাযহাবী ইখতিলাফ আমাদের দ্বীনের জন্য দোষের কিছু নয় এবং তা স্ববিরোধিতাও নয়। এ ধরনের মতভেদ না হওয়া অসম্ভব। এমন কোনো জাতি পাওয়া যাবে না যাদের আইন-ব্যবস্থায় এ ধরনের ইজতিহাদী মতপার্থক্য নেই।
অতএব বাস্তবতা এই যে, এ ধরনের মতভেদ না হওয়াই অসম্ভব। কেননা একদিকে যেমন নুসূসে শরয়ী অনেক ক্ষেত্রে একাধিক অর্থের সম্ভাবনা রাখে অন্যদিকে শরয়ী নস সম্ভাব্য সকল সমস্যাকে সুস্পষ্টভাবে বেষ্টন করতে পারে না। কারণ নুসূস হল সীমাবদ্ধ আর নিত্য-নতুন সমস্যার তো কোনে সীমা নেই।
অতএব কিয়াসের আশ্রয় নেওয়া এবং আহকাম ও বিধানের ইল্লত, বিধানদাতার মাকসাদ; শরীয়তের সাধারণ মাকসাদসমূহ বোঝার জন্য চিন্তাভাবনা করতে হবে এবং এর মাধ্যমে নিত্যনতুন সমস্যার সমাধান গ্রহণ করতে হবে।
এখানে এসেই উলামায়ে কেরামের চিন্তার বিভিন্নতা দেখা দেয় এবং সম্ভাব্য বিভিন্ন দিকের কোনো একটিকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে মতপার্থক্য হয়। ফলে একই বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আসে। অথচ প্রত্যেকের উদ্দেশ্য হক্ব ও সত্যের অনুসন্ধান। কাজেই যার ইজতিহাদ সঠিক হবে তিনি দুটি বিনিময় পাবেন এবং যার ইজতিহাদ ভুল হবে তিনি একটি বিনিময় পাবেন। আর এভাবেই সংকীর্ণতা দূর হয়ে প্রশস্ততা সৃষ্টি হয়।
সুতরাং যে মতপার্থক্য কল্যাণ ও রহমতের ধারক তা বিদ্যমান থাকলে দোষ কেন হবে? বরং এ তো মুমিন বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার রহমত ও অনুগ্রহ। বরং মুসলিম উম্মাহর গর্ব ও গৌরবের বিষয়।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, কিছু মুসলমান তরুণ, বিশেষত যারা বাইরে লেখাপড়া করতে যায় তাদের ইসলামী জ্ঞানের দুর্বলতার সুযোগে কিছু গোমরাহকারী লোক তাদের সামনে ফিকহী মাসআলার এজাতীয় মতপার্থক্যকে আকীদার মতভেদের মতো করে তুলে ধরে। অথচ এ দু’য়ের মাঝে আকাশ-পাতালের ব্যবধান!
দ্বিতীয়ত যে শ্রেণীর লোকেরা মানুষকে মাযহাব বর্জনের আহবান করে এবং ফিকহের মাযহাব ও তার ইমামগণের সমালোচনা করে এবং মানুষকে নতুন ইজতিহাদের মধ্যে নিয়ে আসতে চায় তাদের কর্তব্য, এই নিকৃষ্ট পন্থা পরিহার করা, যা দ্বারা তারা মানুষকে গোমরাহ করছে এবং ঐক্যকে বিনষ্ট করছে। অথচ এখন প্রয়োজন ইসলামের দুশমনদের ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় নিজেদের ঐক্যকে সুদৃঢ় করা।” মাজাল্লাতুল মাজমাইল ফিকহী, রাবিতাতুল আলামিল ইসলামী, মক্কা মুকাররমা, বর্ষ ১, সংখ্যা ২, পৃষ্ঠা : ৫৯, ২১৯
উপরোক্ত রেজুলেশনে যাদের স্বাক্ষর রয়েছে : ‘আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে বায, রঈস; ড. আব্দুল্লাহ উমর নাসিফ, নায়েবে রঈস; মুহাম্মাদ আশশাযিলী আননাইফার, সদস্য; মুহাম্মাদ আলহাবীব ইবনুল খাওজা, সদস্য; মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সুবায়্যিল, সদস্য; আবুল হাসান আলী নদবী, সদস্য; আবু বকর জুমী, সদস্য; মুহাম্মাদ ইবনে জুবাইর, সদস্য; সালেহ ইবনে ফাওযান আলফাওযান, সদস্য; মুহাম্মাদ মাহমুদ আসসাওয়াফ, সদস্য; আব্দুল্লাহ আবদুর রহমান আলবাসসাম, সদস্য; মুস্তফা আহমাদ আযযারকা, সদস্য; মুহাম্মাদ রশীদ রাগেব কাবানী, সদস্য; ড. আহমাদ ফাহমী আবু সুন্নাহ, সদস্য; মুহাম্মাদ সালেম ইবনে আবদুল ওয়াদূদ, সদস্য।”

আশা করি এ দীর্ঘ আলোচনা ও প্রমাণাদীর মাধ্যমে একথা পরিস্কার যে, মাযহাবের অনুসরণ করা মানে কুরআন ও হাদীসেরই অনুসরণ। মাযহাব অনুসরণের বিরোধীতা করা মানে হল, কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ ছেড়ে দিয়ে মনের পূজায় লিপ্ত হওয়া।

আর উম্মতে মুসলিমার সকল গ্রহণযোগ্য উলামাগণই মাযহাবের অনুসারী। মাযহাব অনুসরণ কোন বিভক্তির কারণ নয়। বরং কুরআন ও সুন্নাহ মানার জন্য একটি সুন্দর ও যুৎসই কর্মপন্থা।

মাযহাব বিরোধীতাই মূলত ফেতনা ও বিশৃংখলার মূল কারণ।

আল্লাহ তাআলা আমাদের লা মাযহাবী ফিতনা থেকে হিফাযত করুন। আমীন।

এ বিষয়ে আরো জানতে হলে আমাদের ‘মাযহাব ও তাকলীদ’ ক্যাটাগরির লেখা ও প্রবন্ধগুলো পড়তে পারেন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *