কাজ করছে না অ্যান্টিবায়োটিক

জটিল রোগের শেষ ভরসা অ্যান্টিবায়োটিক কলিস্টিনও কাজ করছে না। যথেচ্ছ ব্যবহারে অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণে শেষ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো যে কলিস্টিন তা এখন অকার্যকর হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসকেরাও। এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে পোলট্রি শিল্পকে। পোলট্রি শিল্পে মুরগির রোগ সারাতে অতি মাত্রায় ব্যবহারে মানুষের জন্য উপকারী এ অ্যান্টিবায়োটিকটি আজকে অকার্যকর বলে দাবি করেছেন আইসিডিডিআর.বির বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষাগারে কলিস্টিন ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী ই-কোলিকে ১১টি ভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষায় মাল্ট্রি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স (এমডিআর) হিসেবে পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘গাট প্যাথোজেনে’ এ সংক্রান্ত গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। এ গবেষণার সিনিয়র অথর ও আইসিডিডিআর.বির সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. মনিরুল আলম বলেন, ‘কলিস্টিন ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে পড়ায় এটা মানুষের মধ্যে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ঘটেছে। কারণ একটা সময় কার্বোপেনেম (একসময়ের অত্যন্ত কার্যকর একটি অ্যান্টিবায়োটিক। এ অ্যান্টিবায়োটিককে বলা হতো ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে শেষ আশ্রয়) ব্যবহার করেও যে রোগ সারানো যায়নি তা কলিস্টিন দিয়ে সারানো যেত।’ ড. মনিরুল আলম বলেন, ই-কোলি বিচিত্র ধরনের একটি ব্যাকটেরিয়া, যা খাদ্যে, মানুষ ও প্রাণীর ইনটেস্টাইনে (পাকস্থলীর শেষ দিকের অংশ) থাকে এবং মারাত্মক ডায়রিয়ার কারণ হয়ে থাকে। এ গবেষণা আইসিডিডিআর.বি, যুক্তরাষ্ট্রের এনআইএইচ, জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফেকশাস ডিজিজেস (এনআইআইডি) সমর্থনে করা হয়েছে। ড. মনিরুল আলম বলেন, কলিস্টিন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে যাওয়া মানে হলোÑ কেউ এমডিআর ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে আর সারিয়ে তোলা যাবে না। ফলে অনেক রোগীকে না-ও বাঁচানো যেতে পারে।’
গবেষণায় বলা হয়েছে, পোলট্রি ফার্মে নানা ধরনের রোগ সারাতে কলিস্টিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের অতি ব্যবহারের কারণে তা এখন আর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করছে না। আবার প্রাণীর দেহে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক গোশতের মাধ্যমে মানুষের দেহে চলে আসছে। মানুষের দেহে তা পরিমাণে কম হওয়ায় মানুষের দেহে বসবাসকৃত ব্যাকটেরিয়াগুলো নিজেদের মধ্যে কলিস্টিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছে। আবার পোলট্রি শিল্পের বিষ্ঠা থেকে কলিস্টিন পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরিবেশের মধ্যে থাকা অন্য ব্যকটেরিয়াগুলোও প্রতিরোধী হয়ে যাচ্ছে।
আইসিডিডিআর.বির সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ পোলট্রি শিল্পে কলিস্টিন ব্যবহার হচ্ছে। পোলট্রি শিল্পে অতিরিক্ত ব্যবহারে ই-কোলি ও অন্যান্য সংক্রামক রোগ মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স হয়ে যাচ্ছে।
ড. মনিরুল আলম বলেন, বাংলাদেশে মনুষ্য বর্জ্য শোধন না করেই পানিতে ফেলা হচ্ছে। এসব বর্জ্য পানিতে মিশে মানুষের খাদ্য চক্রে ঢুকে যাচ্ছে। বর্জ্য খেয়ে মাছ বড় হচ্ছে। মাছ আবার মানুষে খাচ্ছে। এভাবে খাদ্য চক্রে প্রবেশ করে পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহারের প্রতি মনোযোগ দিতে পরামর্শ দিয়েছেন। তা না হলে শুধু কলিস্টিন নয়, আরো অনেক প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠবে। রোগে-শোকে মানুষ আর ওষুধ খুঁজে পাবে না।

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *