ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকসহ শিক্ষার বিভিন্ন স্তর থেকে ইসলামী শিক্ষা ও মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক বিষয়াবলী বাদ দিয়ে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদের বিষয়াবলী যুক্ত করেই থেমে থাকেনি, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন- ২০১৬ এর মাধ্যমে সরকার ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করতে ও শিকল পরাতে চাচ্ছে এখন। এই লক্ষ্যে কিছু অপতৎপরতা ইতিমধ্যেই আমরা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কয়েকটি সংস্থার লোকজন সরলমনা ক্বওমি আলেমদের নেতৃস্থানীয় কারো কারো কাছে ক্বওমি শিক্ষাকে সরকারী স্বীকৃতি দেওয়ার টোপ দিয়ে আলেমদের পায়ে শেকল পরাতে চাচ্ছে। আমাদের সকলকেই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে যে, যারা সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক বিষয়গুলো বাদ দিয়ে নাস্তিক্য ও হিন্দুত্ববাদের বিষয় সন্নিবেশিত করে এ দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শ বিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলেছে, তাদের কাছ থেকে কিসের স্বীকৃতি নেব আমরা! মূলতঃ স্বীকৃতির নাম দিয়ে তারা ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষার স্বকীয়তা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট উচ্ছেদ করে এই দেশে ইসলামী শিক্ষার সর্বশেষ এই অবলম্বনটাকেও ধ্বংস করে দিতে চায়। তাদের এই অপতৎপরতা উলামা-মাশায়েখ, মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র ও তৌহিদী জনতা কখনোই সফল হতে দিবে না। মনে রাখতে হবে, ক্বওমি মাদ্রাসার অর্থই হচ্ছে, জনগণের মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসাসমূহ কোষাগারের অর্থে চলে না, সরাসরি জনগণই এসব মাদ্রাসা চালায়। গতকাল (২৫ মে) বুধবার বাংলাদেশ ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে বোর্ডের সভাপতি ও হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী এই বক্তব্য রাখেন। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন, আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, বেফাক মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জাব্বার জাহানাবাদী, মাওলানা মুফতী জসীম উদ্দীন, মাওলানা মুহাম্মদ ওমর, বোর্ডের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতী আবু ইউসুফ, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা শফিউল আলম প্রমুখ।
বেফাক সভাপতি ও হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র সভাপতিত্বে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা মহাপরিচালকের কার্যালয়ে বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে জাতীয় শিক্ষা নীতি- ২০১০ ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন- ২০১৬, জাতীয় ও ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার নানা দিক এবং ক্বওমি সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। বৈঠকে বিদ্যমান স্কুল পাঠ্যবইয়ে নাস্তিক্য ও হিন্দুত্ববাদের বিষয়াবলী সংযোজনসহ ধর্মহীন শিক্ষানীতি ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বেফাক কর্মকর্তাগণ বক্তব্য রাখেন।
বৈঠকে হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন যে, আজ শুধু স্কুল পাঠ্যবই বা সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা নয়, নাস্তিক্যবাদি চক্র খাঁটি ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উপরও শকূনী নজর দিয়েছে। ক্বওমি সনদের স্বীকৃতির নামে তারা বিভিন্নভাবে সরলমনা আলেমদেরকে প্ররোচিত করতে চাইছে। তিনি বলেন, যারা সাধারণ শিক্ষা থেকে ইসলামকে উচ্ছেদ করে নাস্তিক্য ও হিন্দুত্ববাদের শিক্ষা চালু করছে, তারা কখনো কি খাঁটি ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার বন্ধু হতে পারে? হেফাজত আমীর উলামায়ে কেরামের প্রতি বর্তমান সংকটময় সময়ে ছোটখাটো মতভেদ ভুলে সর্বাবস্থায় জোরদার ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ষড়ন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। তারা নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে উলামায়ে কেরামের পায়ে শেকল পরাতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, তৎকালীন বৃটিশ আমলেও যখন আমাদের শাসন ব্যবস্থা স্বাধীন ছিল না, তখনও দারুল উলূম দেওবন্দসহ গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের হাজার হাজার ক্বওমি মাদ্রাসা স্বাধীনভাবে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে পরিচালিত হয়েছিল। এমনকি বর্তমানে আমাদের বিশাল প্রতিবেশী দেশ ভারতেও কট্টর হিন্দুত্ববাদি বিজেপি শাসনামলে সেই দেশের ক্বওমি মাদ্রাসাসমূহ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ইসলামী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে। স্বীকৃতি নিয়ে দেওবন্দের আলেমগণও কোন দেন-দরবার বা প্রস্তাব আলোচনা তুলছেন না। এ নিয়ে বিজেপি সরকারও কোন প্রশ্ন তুলেনি। অথচ ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে আজ ইসলাম, মুসলমান ও ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে বেশী হুমকির শিকার।
বৈঠকে হেফাজত আমীর আরো বলেন, ঐতিহ্যবাহী ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার এই ধারা বাংলাদেশের মানুষকে ধর্মপ্রাণ ও মানবিক বানাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে মুসলিম বিজয়ের সময় থেকেই মাদ্রাসা শিক্ষা প্রচলিত, যে শিক্ষা মানুষকে সুশৃংখল, আইনমান্যকারী, ধার্মিক ও সৎচরিত্রবান হিসেবে তৈরি করে। ধর্মীয় সামাজিক শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম ধারা ক্বওমি মাদ্রাসা হাজার বছর ধরে জনগণের সাহায্য সহযোগিতা ও আন্তরিক সদিচ্ছায় বাংলাদেশে চালু রয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক আইন ও অপপ্রচার চালিয়ে এ শিক্ষাধারাটি ধ্বংসের উদ্যোগ নিলে তা কখনো সফল হবে না। আল্লামা শাহ আহমদ শফী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তৎকালীন বৃটিশ সরকারও ক্বওমি মাদ্রাসাকে ধ্বংস করার জন্য কম প্রচেষ্টা চালায়নি। কিন্তু ক্বওমি মাদ্রাসা নয়, বরং তারা নিজেরাই উচ্ছেদ হয়ে গেছে। এখনও যারা সেরকম অপতৎপরতা চালাবে, তাতে ক্বওমি মাদ্রাসা নয়, ষড়যন্ত্রকারীরাই উচ্ছেদ ও ধ্বংস হয়ে যাবে। #
Leave Your Comments