উত্তর:- মোবাইলে বিবাহ শুদ্ধ হওয়া না হওয়া নিয়ে উলামায়ে কেরামের মাঝে দুটি মতামত পাওয়া যায়। ১ম মতামত হল, সরাসরি মোবাইলের মাধ্যমে হওয়া বিবাহ গ্রহণযোগ্য নয়। এটিই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মত । এমতটি গ্রহণ করাই অধিকতর নিরাপদ।
কারণ, বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য দুজন সাক্ষীর সামনে পাত্র-পাত্রী কিংবা তাদের প্রতিনিধি উপস্থিত হয়ে ইজাব-কবুল (বিবাহকার্য সম্পাদন) করা জরুরি। সরাসরি মোবাইলে বিবাহ হওয়ার ক্ষেত্রে যেহেতু ইজাব-কবুল (প্রস্তাব ও গ্রহণ) দুটি পৃথক জায়গা থেকে হয়েছে আর সাক্ষীদ্বয় শুধু এক স্থানে উপস্থিত ছিল তাই তাদের উক্ত বিবাহ শুদ্ধ হয়নি এবং তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে পরস্পর স্বামী-স্ত্রী নয়।
কিছু কিছূ উলামায়ে কোরাম মোবাইলে হওয়া বিয়েকে বিশেষ সুরতে বৈধ বলেছেন। এরমধ্যে অন্যতম ফাতওয়ায়ে হক্কানিয়ার লিখক আল্লামা আব্দুল হক হক্কানি। তিনি তাঁর রচিত ফাতওয়ার কিতাব ফাতওয়ায়ে হক্কানিয়ার ৪খন্ডের ৩১১ নং পৃষ্ঠায় প্রচলিত মোবাইল ফোনকে ৩ ভাগে ভাগ করে বলেন, বর্তমানে কিছু মোবাইল ফোন এমন আছে যার মাধ্যমে কেবল একজনই শুনতে পায়। আবার কিছু মোবাইল এমনও আছে যার মাধ্যমে মজলিসে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি শুনতে পায়। আবার কিছু মোবাইল ফোন আছে যেগুলোতে উপস্থিত সবাই পারস্পরিক কথাবার্তা শোনার পাশাপাশি একে অপরকে দেখতেও পায়।
বিধায়, প্রথম সুরতে বিবাহ সহীহ না হলেও অবশিষ্ট দুই সুরত তথা এমন মোবাইল যার মাধ্যমে মজলিসে উপস্থিত সকলেই তার আওয়াজ সুন্দরভাবে শুনতে ও দেখতে ও বুঝতে পারে এবং কোন প্রকার জটিলতা বা অস্পষ্টতা না থাকে তবে বিবাহ সহীহ হয়ে যাবে।কারণ ইসলামী শরীয়তে বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, সাক্ষীদ্বয়ের উপস্থিতিতে ছেলে ও মেয়ের ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (গ্রহণ) সম্পাদন করা। এবং সাক্ষীদ্বয়ও তা নিজ কানে শোনা।যেহেতু পরবর্তী দুই ধরনের মোবাইল দ্বারা এসব শর্ত পুরণ সম্ভব তাই বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে।
উভয় মতামতের মধ্যে ১ম মতটি গ্রহণ করাই শ্রেয় এবং নিরাপদ। কারণ বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহারে এমন অনেক সফটওয়ার যোগ হয়েছে যা রীতিমত অবাক হওয়ার মত। নিথর পিকচার দিয়ে জলজ্যান্ত ভিডিও তৈরী করা, কারো স্বর কপি করে স্ক্রিপ্টের বক্তব্যগুলো সেই স্বরে প্রতিধ্বনিত করাসহ রেকর্টেড ভিডিওকে লাইভ হিসেবে চালানো এখন বাচ্চাদের খেলনার মত হয়ে গেছে। যার ফলে নানামুখি ধোকা ও প্রতারণার সমূহ আশংকা থাকাই ওলামায়ে কেরাম প্রথমোক্ত মতকেই গ্রহণযোগ্য বলে মত দিয়েছেন।
রদ্দুল মুখতার – ৩/১২। -বাদায়েউস সানায়ে ২/৫২৭; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ২/১৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬; মুঈনুল মুফতী, তুমুরতাশী পৃ. ১৮০; আলবাহরুর রায়েক ৩/৮৮; দুরারুল হুক্কাম ১/৩২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৬৮; ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া- ৪/৩১১।
Leave Your Comments