প্রশ্ন:- জুমার দ্বিতীয় আযানের জবাব দেওয়ার বিধান কী?

উত্তর:-

জুমআর দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া হবে কি হবে না এ বিষয়ে হানাফী ফকীহগণের বিভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। একটি বক্তব্য এই যে, এই আযানের জওয়াব না দেওয়া উচিত। এর সপক্ষেও দলিল রয়েছে। আমাদের একাধিক আকাবির এই বক্তব্য অনুযায়ী ফতোয়া দিয়েছেন।

কোনো কোনো কিতাবে (যেমন আহসানুল ফাতাওয়া (খণ্ড : ৪,পৃষ্ঠা : ১৩৫) দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়াকে যে স্পষ্টভাবে নাজায়েয বলা হয়েছে তা আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে দলিলের আলোকে মারজুহ। অর্থাৎ তা অগ্রাধিকারযোগ্য নয়।

আমাদের আকাবিরের মধ্যে হযরত মাওলানা যফর আহমদ উসমানী রাহ. ইলাউস সুনান কিতাবে (খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৮০) এবং তাঁর ফতোয়া সংকলন ইমদাদুল আহকামে (খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৪১৯-৪২০) এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যার সারকথা এই যে, দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া নাজায়েয কিংবা মাকরূহে তাহরীমী হওয়ার মতটি দলিলের আলোকে অগ্রাধিকারযোগ্য নয়। আল্লামা আবদুল হাই লখনবী রাহ. আসসিআয়াহ খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৫৩), আততা’লীকুল মুমাজ্জাদ (পৃষ্ঠা : ১৩৮) ও নাফউল মুফতী ওয়াস সাইল (পৃষ্ঠা : ১৩৪) কিতাবসমূহে যা কিছু লিখেছেন তার সারকথাও তাই।

ফাতাওয়া রহীমিয়ায় (খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১৪৭) হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ কেফায়াতুল্লাহ রাহ.-এর এই উক্তি বর্ণনা করা হয়েছে যে, মুতাআখখিরীন হানাফী আলেমগণ মুআবিয়া রা.-এর হাদীসের ভিত্তিতে মিম্বরের আযানের জওয়াব দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।হাদিসটি হলো-

আবু উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ রাহ. বলেন, আমি মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রা.-কে মিম্বরের উপর বসা অবস্থায় দেখেছি, মুয়াযযিন যখন আযানে আল্লাহু আকবার বললেন তখন তিনিও আল্লাহু আকবার বলেছেন …। এরপর আযান শেষ হলে তিনি বললেন, হে লোক সকল! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই মজলিসে অর্থাৎ যখন মুয়াযযিন আযান দেন- এমনটিই বলতে শুনেছি, যেমনটি আপনারা আমাকে বলতে শুনলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ৯১৪

অন্য বর্ণনায় সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. বলেন, ইমাম খুতবার জন্য বের হলে নামায পড়া যাবে না আর ইমাম খুতবা শুরু করলে কথা বলা যাবে না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৩৪২

আর খুতবার সময় যেহেতু চুপ থাকা ও মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনা ওয়াজিব তাই আযানের পরপরই ইমাম খুতবা শুরু করে দিলে আযানের দুআ পড়া যাবে না। কিন্তু যদি ইমাম খুতবার জন্য দাঁড়াতে বিলম্ব করেন তবে এ সময় আযানের দুআও পড়া যাবে।

আর হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম মুআবিয়া রা.-এর উপরোক্ত হাদীসের অধীনে বলেছেন যে, ‘‘বোঝা গেল, ইমামের জন্য দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া উচিত। তবে মুকতাদি জওয়াব দিবে কি না-এ সম্পর্কে হানাফীদের দুটি বক্তব্য রয়েছে। আমাদের (একাধিক) বুযুর্গ এই ফতোয়া দিয়েছেন যে, মৌখিকভাবে জওয়াব না দিয়ে মনে মনেই জওয়াব দিবে।’’ -ইনআমুল বারী খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৯৪

এমন মতবিরোধপূর্ণ মাসআলার ক্ষেত্রে আপনি সাধারণত যে আলেমের কাছে মাসআলা জিজ্ঞাসা করেন তার ফতোয়া অনুযায়ীই আমল করতে থাকুন। কিন্তু কোনো আলেম যদি হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ কেফায়াতুল্লাহ রাহ. ও হযরত মাওলানা যফর আহমদ উসমানী রাহ.-এর তাহকীক মোতাবেক কাউকে দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া জায়েয হওয়ার ফতোয়া দেন আর মুসতাফতী সে অনুযায়ী আমল করতঃ দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেয় তাহলে তাকে নিষেধ করা যাবে না।

[উত্তর প্রদানে-মুফতী হোসাইন আহমদ,নাযেমে তালীমাত-অত্র প্রতিষ্ঠান]

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *