একটি অসম্ভাব্য কথোপকথন
.
মুসলিমঃ আচ্ছা তুমি কিসে বিশ্বাস কর?
নাস্তিকঃ আমি কোনো কিছুতে বিশ্বাস করি না। আমি কোনো ধর্মে বিশ্বাস করি না। আমি বিজ্ঞান মানি। যা প্রমাণ করা যায় আমি সেটা বিশ্বাস করি।
.
মুসলিমঃ আচ্ছা তার মানে কি তুমি কোন কিছুই বিশ্বাস করো না?
নাস্তিকঃ কেন বিশ্বাস করবো? কোন ধর্ম বিশ্বাস করবো? এই যে তোমার ধর্মে জিহাদের কথা আছে, এটা একটা আধুনিক মানুষ কিভাবে মেনে নিতে পারে? তারপর ধর তোমার ধর্মে আছে…
.
মুসলিমঃ দাঁড়াও, দাঁড়াও…তুমি সম্ভবত আমার প্রশ্নটা বুঝতে পারো নি। তুমি কেন আমার ধর্মে বিশ্বাস করো না আমি সেটা জিজ্ঞেস করি নি। আমি জিজ্ঞেস করেছি তুমি কি কোনো কিছুতেই বিশ্বাস করো না?
নাস্তিকঃ হ্যা। আমি কোন কিছুই বিশ্বাস করি না। যা বিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় আমি শুধু সেটাই মানি। এটাই আমার নীতি।
.
মুসলিমঃ তুমি কি বিশ্বাস করো স্রষ্টা নেই?
নাস্তিকঃহ্যা আমি বিশ্বাস করি কোনো স্রষ্টা নেই।
মুসলিমঃ এটা কি একটা বিশ্বাস না?
নাস্তিকঃ উমম…না…
মুসলিমঃ তাহলে স্রষ্টা নেই – এটার প্রমাণ দাও।
.
নাস্তিকঃ(কিছুক্ষন চিন্তা করে) আমি প্রমাণ দিতে পারছি না। আমি কিন্তু এটাও বলছি না যে কারো কাছে এমন কোন প্রমাণ নেই। হয়তো আছে, যেহেতু বিজ্ঞানের এতো উন্নতি হয়েছে। তবে আমার জানা নেই। এমনো হতে পারে এখন না থাকলেও কোন এক সময়ে এমন প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে…
মুসলিমঃ ঠিক আছে। খুব ভালো কথা। কিন্তু তুমি তো একটু আগেই বললে যা প্রমাণিত তুমি শুধু সেটাই মানো। আবার তুমি নিজেই বলছো তুমি কোন প্রমাণ দিতে পারছো না। তাহলে দেখা যাচ্ছে তুমি কোন প্রমাণ ছাড়াই দাবি করছো যে স্রষ্টা নেই। তাহলে কি এটা একটা বিশ্বাস না?
নাস্তিকঃ (চুপ)
.
মুসলিমঃ তাহলে কি বলা যায় যে স্রষ্টা আছে কি নেই তা তুমি নিশ্চিত ভাবে জানো না? কারন তুমি যদি বলো তুমি প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করো তাহলে তো তুমি নিজেই তোমার নীতি লঙ্ঘন করছো
নাস্তিকঃ হ্যা, হ্যা। আমি আসলে জানি না। হয়তোবা স্রষ্টা আছে হয়তোবা স্রষ্টা নেই। আমি স্রষ্টাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না।
.
মুসলিমঃ ঠিক আছে। স্রষ্টাকে নিয়ে নাহয় খানিক পরে কথা বলা যাবে। আমি আগে তোমার ব্যাপারটা একটু বুঝতে চাচ্ছি। দেখো তুমি যদি বলো স্রষ্টা আছে কি নেই এটা তুমি জানো না – তাহলে কিন্তু আর তোমাকে নাস্তিক বা Atheist বলা যায় না। বরং তুমি আসলে একজন agnostic বা অজ্ঞেয়বাদী।
নাস্তিকঃ দুটার মধ্যে পার্থক্য কি?
.
মুসলিমঃপার্থক্য হল একজন নাস্তিক (atheist) একটা দাবি বা claim করে। তার দাবি হল – স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই। যদি তুমি কোন দাবি করো, তাহলে সেই দাবিকে প্রমাণ করার দায়িত্ব তোমার। তোমাকে প্রমাণ দিতে হবে যে স্রষ্টা নেই। কিন্তু নাস্তিকরা কোন গ্রহনযোগ্য প্রমাণ দেওয়া তো দূরের কথা কোন সম্ভাব্য প্রমাণ উপস্থাপনও করতে পারে না। সাধারণত তাদের কথাবার্তা বিভিন্ন ধর্মের প্রতি আক্রমণ করার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। তারা বেশিরভাগ সময়ই অন্যের অবস্থানের সমালোচনা করে, কিন্তু কখনোই নিজের অবস্থানের পক্ষে কোন প্রমাণ দেয় না।
.
নাস্তিকঃ ওকে, তাহলে একজন agnostic কি বলে?
.
মুসলিমঃ একজন agnostic বা অজ্ঞেয়বাদী কোন দাবি করে না। সে বলে – একজন স্রষ্টা আছেন কি না, এটা আমি জানি না। যেহেতু সে কোন দাবি করছে না, তাই তাকে কোন প্রমাণও দিতে হচ্ছে ন।
.
নাস্তিকঃ রাইট। হ্যা, আমি একজন agnostic
মুসলিমঃ ওকে। তাহলে তুমি কোন ধরণের agnostic?
নাস্তিকঃ মানে?
মুসলিমঃ দেখো অজ্ঞেয়বাদীদের মধ্যে দুটো ধারা আছে। কেউ বলে – আমি কিছু নিশ্চিত ভাবে জানি না। আবার কেউ বলে- কোন কিছু নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব না। এটাকে অ্যাকচুয়ালি সংশয়বাদ বলা যায়।
আরেকদল আছে যারা বলে স্রষ্টা আছেন কি নেই এটা নিয়ে চিন্তা বা কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই। অভিয়াসলি তু্মি তিন নাম্বার ক্যাটাগরিতে পড়ছো না, যেহেতু ধর্ম, স্রষ্টা এগুলো নিয়ে তোমার অনেক কিছু বলার আছে। তো প্রথম দুই দলের মধ্যে তুমি কোন দলে?
.
নাস্তিকঃ দ্বিতীয়টা। কোন কিছু নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব না।
মুসলিমঃ কিন্তু তুমি যদি বল কোন কিছু নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব না তাহলে তুমি কিভাবে নিশ্চিতভাবে বল আমার বিশ্বাস ভুল? আর যদি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে জানা না যায় তাহলে – এই কথাটা যে সঠিক এটা তুমি কিভাবে নিশ্চিত হবে?
.
নাস্তিকঃ বুঝতে পারছি না, তোমার কথার মানে কি?
.
মুসলিমঃ মানে হল, তুমি কিভাবে নিশ্চিতভাবে জানলে কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব না? ব্যাপারটা কি সাংঘর্ষিক হয়ে গেল না? আর তুমি যদি সংশয়বাদী হও তাহলে তুমি কিভাবে তোমার সংশয়ের ব্যাপারে সংশয়হীন হও? নিশ্চয় তোমার সংশয়ের ব্যাপারেও তোমার সংশয় থাকার কথা? কিন্তু সংশয়ের ব্যাপারে সন্দিহান হবার অর্থ তো নিশ্চয়তার দিকে যাওয়া, তাই না?
.
নাস্তিকঃ (কিছুক্ষন চুপ করে থেকে) ঠিক আছে। হয়তো নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব, হয়তো না, কিন্তু স্রষ্টা আছেন কি না আমি জানি না।
.
মুসলিমঃ গুড। তাহলে তুমি স্বীকার করো যে আসলে তুমি জানো না। এটা বেশ ভালো একটা অবস্থান। এতক্ষণ তুমি নিজেকে ছাড়া বাকি সবকিছু নিয়ে কথা বলছিলে। এতক্ষণে তুমি মূল জায়গায় নজর দিচ্ছো। তাহলে এখন প্রশ্ন হল, স্রষ্টা যে আছেন এটা তুমি কেন জানো না?
.
নাস্তিকঃ আমি জানি না, হয়তো আমি বিষয়টা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা করি নি। হয়তো আমি যথেষ্ট প্রমাণ পাই নি?
.
মুসলিমঃ যদি তোমাকে প্রমাণ দেখানো হয় তাহলে কি তুমি তা দেখতে ও বিবেচনা করতে রাজি হবে?
.
নাস্তিক (নাকি agnostic?)ঃ হ্যা
…..
শেষপর্যন্ত আস্তিক এবং নাস্তিক দুজনেই বিশ্বাসের জায়গা থেকেই তর্ক করে। পার্থক্য হল এক পক্ষ স্বীকার করে, আরেকপক্ষ স্বীকার করে না। কিন্তু ঐ ব্যক্তি কখনোই সত্যের সন্ধান পাবার আশাও করতে পারে না, যে তার বিশ্বাস (অবিশ্বাসের) বাস্তবতাকে স্বীকার করতে রাজি না।
.
এই কথোপকথনটা আনলাইকলি কারন সাধারণ নাস্তিকরা যৌক্তিকভাবে চিন্তা করে না। তারা অন্ধভাবে তাদের বিশ্বাস আঁকড়ে থাকে, নিজ বিশ্বাসের পক্ষে কোন প্রমাণ দেয় না এবং তারা কখনো প্রশ্নের জবাব দেয় না। যদি কখনো জবাব দেয়ও তখন বাংলা প্রথম পত্রের মতো জবাব দেয়। আকারে বিশাল, সাবস্টেন্সের দিক থেকে শূন্য এবং কখনোই টু দা পয়েন্ট না। যদিও তারা আশা করে অন্য সবাই তাদেরকে প্রমাণ দিতে বাধ্য, এবং তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য, তারা যেভাবে চায় সেভাবেই উত্তর দিতে বাধ্য।
.
সহজ ভাবে বললে এই কথোপকথনটা বা এই চিন্তার ট্রেনটা অনুসরণের জন্য চিন্তার যে পরিপক্কতা বা ম্যাচিউরিটি দরকার সেটা অধিকাংশ নাস্তিকদের মধ্যে অনুস্পস্থিত। আর যেহেতু তারা অন্ধ অবিশ্বাসের অবস্থান থেকে কথা বলে তাই তারা এ বিষয়ে কোন যুক্তি কিংবা প্রমাণ বিবেচনা করতেও রাজি না
.
তবুও পরবর্তীতে কোন হামবড়া গোছের নাস্তিকের সাথে দেখা হলে (অবশ্য তাদের অধিকাংশই হামবড়া) তাকে এই প্রশ্নগুলো করতে পারেন। বাংলা প্রথম পত্র জাতীয় কথাবার্তা আর গরু রচনা জাতীয় অপ্রাসঙ্গিক কথার স্রোতে বাঁধ দিয়ে কথা চালিয়ে যদি মাঝামাঝি পর্যন্ত কথা চালিয়ে নিতে পারেন তাহলে ইন শা আল্লাহ হামবড়া নাস্তিকের হামবড়া ভাব আর থাকবে না।
Leave Your Comments