আল্লাহ কোথায়?
আল্লাহর উপর ঈমান ও বিশ^াসের ক্ষেত্রে কাউকে ঈমানদার হসিবেে স্বীকৃতি দয়োর জন্য “ আল্লাহ তায়ালা আছেন” এতটুকু বিশ্বাস পাওয়া যাওয়াই যথেষ্ট। আল্লাহ কোথায় আছেন? কিভাবে আছেন? কি করছেন? আল্লাহ তায়ালা দেখতে কেমন? তাঁর অঙ্গ পতঙ্গ আছে কিনা? থাকলে কার মত বা কেমন? ইত্যাদি প্রশ্ন করা বা প্রশ্নের জবাব খোঁজার প্রয়োজন নেই। বরং এসব বিষয়ে কথা বলাই বিদআত। পূর্ববর্তী মুহাক্কিক আলেমগণ এমনটাই বলছেনে।
হযরত ইমাম মালিক রহঃ বলেন,
الاستواء معلوم والكيفية مجهولة، والسؤال عنه بدعة، والايمان به واجب
অথাৎ ইসতিওয়া তথা জানা,ধরণ অজানা, এনিয়ে প্রশ্ন করা বিদয়াত এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব।
আল্লাহ তায়ালা কোথায় আছনে এনয়িে কোরআন ও হাদসিে সুনশ্চিতিভাবে কোন আলোচনা নইে। কছিু কছিু আয়াত ও হাদসিে আল্লাহ তায়ালার অবস্থান সর্ম্পকে যে র্বণনা পাওয়া যায় গ্রহণযোগ্য ঊলামায়ে করোমরে মতে এগুলো মুতাশাবিহাত এর আওতাভুক্ত। মুতাশাবহিাতরে ব্যাপারে নয়িম হল কোনরুপ দ্বীধা সংশয় কংিবা প্রশ্ন ও অনুসন্ধান ব্যতরিকেে মনেে নয়ো।
সুতরাং আল্লাহ তাআলার অবস্থান স¤পর্কীয় আয়াতগুলোকে ব্যাখ্যা সহ মানা হবে? না শুধু শাব্দিক অর্থের উপর রাখা হবে? দুই পদ্ধতির যে কোন একটি পদ্ধতি অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে। যদি ব্যাখ্যাসহ মানা হয়, তাহলে সকল আয়াতের ব্যাখ্যাই করতে হবে। এক আয়াতের ব্যাখ্যা আর অন্য আয়াতের শুধু শাব্দিক অর্থ নেয়া যাবে না। আর যদি শুধু শাব্দিক অর্থই গ্রহণ করা হয়, ব্যাখ্যা ছাড়া। তাহলে এ স¤পর্কীয় সকল আয়াতকেই তার শাব্দিক অর্থের উপর রাখতে হবে। কোনটারই ব্যাখ্যা করা যাবে না।
ইরশাদ হচ্ছে-
هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذذِينَ فِي قُلُوبوبِهِمْ زَيْغٌ
فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَاللرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ
كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ
সে আল্লাহই এমন সত্তা যিনি আপনার প্রতি কিতাব নাজিল করেছেন,যার কিছু আয়াত মুহকাম,যার উপর কিতাবের মূল ভিত্তি,এবং অপর কিছু আয়াত মুতাশাবিহ। যাদের অন্তরে বক্রতা আছে তারা মুতাশাবিহ আয়াতসমূহের পেছনে পড়ে থাকে। উদ্দেশ্য ফেতনা সৃষ্টি করা এবং সেসব আয়াতের তাবীল খোঁজা,অথচ সেসব আয়াতের যথাযথ মম আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কেউ জানেনা। আর যাদের ইলম পরিপক্ক তারা বলে,আমরা এর প্রতি বিশ^াস রাখি- {সূরা আলে ইমরান-৭}
সুতরাং এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা বা এসবের পিছনে না পড়াই শ্রেয়। কারণ এসবের পিছনে পড়ে বহু মানুষ ঈমানের গন্ডি থেকে বের হয়ে যাওয়ার মত দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে যেহেতু কথিত আহলে হাদিস নামধারী বিশেষ একটি দল ও মতবাদের লোকজন এনিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলেছে,তারা অপপ্রচার করছে যে “আল্লাহ তায়ালা একমাত্র আরশেই আছেন! এর বাহিরে আর যারা বলবে তারা বিদয়াতি, ঈমানহারা! ইত্যাদি । তাই আমরা অপারগ হয়ে এনিয়ে কলম ধরতে বাধ্য হয়েছি।
আল্লাহ তায়ালা কোথায় আছেন এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামদের মতামত:-
ইমাম মাতুরিদি রহ. লেখেন, আল্লাহ তাআলার অবস্থানের ক্ষেত্রে মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
(ক) তাদের কেউ কেউ ধারণা করছে যে, আল্লাহ তাআলা আরশের ওপর অধিষ্ঠিত। তাদের নিকট আরশ হলো একটি সিংহাসন; ফেরেশতাগণ যা বহন করে এবং এর চারদিক প্রদক্ষিণ করে।
কেননা, আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন,
১) সেদিন আপনার প্রতিপালকের আরশকে আটজন ফেরেশতা বহন করবে। সুরা হাক্কাহ : ১৭
وَ یَحۡمِلُ عَرۡشَ رَبِّكَ فَوۡقَهُمۡ یَوۡمَئِذٍ ثَمٰنِیَۃٌ ﴿ؕ۱۷﴾
২) আপনি ফেরেশতাদের আরশ প্রদক্ষিণ করতে দেখবেন।- সুরা যুমার : ৭৫
وَ تَرَی الۡمَلٰٓئِكَۃَ حَآفِّیۡنَ مِنۡ حَوۡلِ الۡعَرۡشِ یُسَبِّحُوۡنَ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ ۚ
৩) যে সকল ফেরেশতা আরশ বহন করে এবং আরশের চারপাশ প্রদক্ষিণ করে। সুরা মুমিন : ৭
الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ
৪) দয়াময় আরশের ওপর ইসতিওয়া করেছেন সুরা তহা ৫
اَلرَّحۡمٰنُ عَلَی الۡعَرۡشِ اسۡتَوٰی ﴿۵﴾
৫) তারপর তিনি আরশে ইসতিওয়া করেছেন সুরা আরাফ : ৫৪
اِنَّ رَبَّكُمُ اللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۟
৬) অতপর আলাহ তায়ালা আরশে ইসতিওয়া করেছেন সুরা হাদীদ: ৪
هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ؕ یَعۡلَمُ مَا یَلِجُ فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا یَخۡرُجُ مِنۡهَا وَ مَا یَنۡزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَ مَا یَعۡرُجُ فِیۡهَا ؕ وَ هُوَ مَعَكُمۡ اَیۡنَ مَا كُنۡتُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۴﴾
এ ছাড়াও তাদের দলিল হলো, মানুষ দুয়ার সময় ওপরের দিকে হাত উত্তোলন করে এবং ওপর থেকে
নিজেদের কল্যাণের প্রত্যাশা করে। এথকেওে অনুমান করা যায় আল্লাহ তায়ালা আরশইে আছনে।
(খ) কেউ কেউ বিশ্বাস করে, আলাহ তাআলা সব জায়গায় রয়েছেন। এরা পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াত দ্বারা দলিল দিয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন
قوله تعالى {وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ}
{সূরা বাকারা-১৮৬}
আমি তাদের ঘাড়ের রগের চাইতেও অধিক নিকটবর্তী।- قوله تعالى {وَنَحنُ أَقرَبُ إِلَيهِ مِن حَبلِ
الوَرِيدِ{সূরা কাফ-১৬}
فَلَوْلا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ (৮৩) وَأَنْتُمْ حِينَئِذٍ تَنْظُرُونَ (৮৪) وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلَكِنْ لا تُبْصِرُونَ (৮৫)
{সূরা ওয়াকিয়া-৮৩,৮৪,৮৫}
{ وَللَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجْهُهُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ } [البقرة-১১৫
{ وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَمَا كُنتُمْ {সূরা হাদীদ-৪}
( إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا
{সূরা হাদীদ-৪০}
قوله تعالى مَا يَكُونُ مِن نَّجْوَى ثَلاثَةٍ إِلاَّ هُوَ رَابِعُهُمْ وَلا خَمْسَةٍ إِلاَّ هُوَ سَادِسُهُمْ وَلا أَدْنَى مِن ذَللِكَ وَلا أَكْثَرَ إِلاَّ
هُووَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ( المجادلة – ‘তিন ব্যক্তি যদি
কথোপকথন করে, তবে আলাহ তাআলা হন চতুর্থজন।- সুরা মুজাদালা : ৭
وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ
{সূরা বাকারা-২৫৫}
অন্য আয়াতে রয়েছে আমি তোমাদের চেয়ে মৃত ব্যক্তির অধিক নিকটবর্তী। অথচ তোমরা দেখো না।- সুরা ওয়াকিআ : ৮৫
অন্য আয়াতে তিনি বলেন অথচ তিনি সেই আলাহ, যিনি আকাশেও প্রভু এবং পৃথিবীতেও প্রভু।- সুরা জুখরুফ : ৮৪
এরা ধারণা করেছে যে, যদি আল্লাহ তাআলাকে সব জায়গায় বিরাজমান না বলা হয়, তাহলে এর দ্বারা আল্লাহ তাআলাকে সীমিত করা হয়। প্রত্যেক সীমিত জিনিস তারচে বড় জিনিস থেকে ছোট। এটি আল্লাহর জন্য একটি ত্রুটি হিসেবে বিবেচিত। এদের এই অসার বক্তব্যে আল্লাহ তাআলাকে স্থানের মুখাপেক্ষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে আল্লাহর জন্য সীমা সাব্যস্ত করা হয়েছে। এদের বক্তব্য অনুযায়ী মহাবিশ্বের সীমা ও আল্লাহর সীমা একই হওয়া আবশ্যক হয়। আর মহান আল্লাহ তাআলা এগুলো থেকে স¤পূর্ণ ঊর্ধ্বে।
(গ) তৃতীয় দলের বক্তব্য হলো, আল্লাহ তাআলা সকল স্থান ও জায়গা থেকে মুক্ত ও পবিত্র। রূপক অর্থে কখনো কোনো স্থানের দিকে আল্লাহ তাআলাকে স¤পৃক্ত করলেও এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তাআলা উক্ত স্থানের সংরক্ষণ ও লালন-পালনকারী । কিতাবুত তাওহিদ : ১৩১
আল্লাহ তায়ালা কোথায় ? এনিয়ে পূর্বসুরী ইমামদের মতামতই আমাদের মতামত। নিচে তাদের মতামত উল্লখে করা হলঃ-
১) ইমাম আবু হানিফা রহ.কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আল্লাহ কোথায়? তিনি বললেন :
كان الله تعالى ولا مكان، كان قبل أن يخلق الخلق، كان ولم يكن أين ولا خلق ولا شىء، وهو خالق كل شىء
যখন কোনো স্থানই ছিল না, তখনো আল্লাহ ছিলেন। সৃষ্টির অস্তত্বিরে পূর্বে তিনি ছিলেন। তিনি তখনো ছিলেন, যখন কোথায় বলার মতো জায়গা ছিল না, কোনো সৃষ্টি ছিল না এবং কোনো বস্তুই ছিল না। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা ।-আল-ফিকহুল আবসাত : ৫৭
২) ইমাম আবু হানিফা রহ. আরও বলেন :
نقر بأن الله على العرش استوى من غير أن يكون له حاجة إليه واستقرار عليه وهو الحافظ للعرش وغير
العرش، فلو كان محتاجا لما قدر على إيجاد العالم وتدبيره كالمخلوق ولو كان محتاجا إلى الجلوس والقرار فقبل
خلق العرش أين كان الله تعالى! تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا.
আমরা স্বীকার করি যে, আল্লাহ তাআলা আরশের ওপর ইসতিওয়া করেছেন। তিনি আরশের প্রতি কোনো ধরনের প্রয়োজন ও তার ওপর স্থিতিগ্রহণ ব্যতিরেকেই তার ওপর ইসতিওয়া করেছেন। তিনি আরশ ও আরশ ছাড়া অন্য সব সৃষ্টির সংরক্ষণকারী কোনো ধরনের মুখাপেক্ষিতা ব্যতিরেকে। তিনি যদি মুখাপেক্ষী হতেন, তাহলে সৃষ্টিজীবের মতো মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও পরিচালনা করতে সক্ষম হতেন না। তিনি যদি আরশের ওপর সমাসীন হওয়া এবং স্থির হওয়ার দিকে মুখাপেক্ষী হতেন, তাহলে আরশ সৃষ্টির পূর্বে তিনি কোথায় ছিলেন? আল্লাহ এসব বিষয় থেকে স¤পূর্ণ ঊর্ধ্বে। -আল-ওসিয়্যাহ : ২
৩) ইমাম ইবনু আবদুস সালাম রহ. ইমাম আবু হানিফা থেকে উদ্ধৃত করেন :
من قال لا أعرف الله تعالى في السماء هو أم في الأرض كفر، لأن هذا القول يوهم أن للحق مكانا ومن توهم
أن للحق مكانا فهو مشبه
যে ব্যক্তি বলবে, আমি জানি না, আল্লাহ তাআলা আকাশে আছেন নাকি পৃথিবীতে, সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ, এই কথাটি এ সংশয় সৃষ্টি করে যে, আল্লাহ তাআলার জন্য কোনো স্থান রয়েছে। যে ব্যক্তি এ ধারণা রাখবে যে, আলাহ জন্য কোনো স্থান রয়েছে, সে একজন মুশাব্বিহা। -শারহুল ফিকহিল আকবার, মোল্লা আলি কারি
৪) ইমাম আবু মানসুর মাতুরিদি রহ. আরও লেখেন :‘আলাহ তাআলার অবস্থানের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মূলনীতি হলো, যখন কোনো স্থান ছিল না, তখনো আল্লাহ তাআলা ছিলেন। কোনো জায়গার অস্তত্বি¡ না থাকলেও আল্লাহ অস্তত্বি¡ সম্ভব। আল্লাহ তাআলা অনাদি থেকে বিদ্যমান রয়েছেন। যেমন কোনো স্থানের অস্তিত্ব না থাকা সত্তে¡ও তিনি অবিনশ্বর রয়েছেন। মহান আল্লাহর সত্তা বা গুণাবলি পরিবর্তন-পরিবর্ধন, সংযোজন-বিয়োজন, হ্রাস-বৃদ্ধি ও বিলুপ্তি থেকে স¤পূর্ণ মুক্ত।- কিতাবুত তাওহিদ : ১৩২
৫) ইমাম আবুল লাইস সমরকন্দি রহ. বলেন,আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদা হলো, আল্লাহ তাআলা নিজের মহত্ব, বড়ত্ব ও প্রভুত্বের দিক থেকে আরশের ওপর সমুন্নত। স্থান, দূরত্ব ও উচ্চতার দিক থেকে তিনি আরশের ওপর সমুন্নত নন; যেমনটি ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেছেন। তিনি আলাহর মর্যাদাগত সমুন্নত হওয়ার কথা বলেছেন। কেননা, মর্যাদা ও বড়ত্বের দিক থেকে সমুন্নত হওয়াটা মহান প্রতিপালকের গুণ। শারহুল ফিকহিল আবসাত : ২৫-২৬
৬) ইমাম আবুল ইয়াসার বাজদাবি রহ. লেখেন,আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদা-বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তাআলা স্থান থেকে মুক্ত । তিনি আরশে বা অন্য কোনো স্থানে নন। তিনি আরশের ওপরও নন। আলাহ তাআলা সমস্ত দিক থেকেও স¤পূর্ণ মুক্ত। ভ্রান্ত আকিদায় নিপতিত কিছু হাম্বলি, কাররামিয়া, ইহুদি ও মুজাসসিমার আকিদা হলো, আলাহ তাআলা আরশে অবস্থান করেন বা অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন। তাদের কেউ কেউ বলে, অন্যান্য দেহবিশিষ্ট বস্তুর মতো আল্লাহ তাআলার ছয় দিক রয়েছে। তাদের কেউ কেউ বলে, আলাহ তাআলার একটি দিক রয়েছে (ওপরের দিক)। আর এই দিকের কারণে তিনি আরশে অবস্থান গ্রহণ করেছেন।-উসুলুদ দীন : ৪০
৭) ইমাম গাজালি রহ. বলেন :তুমি জাহাম ইবনু সাফওয়ানের আকিদাগত ভ্রান্তি থেকে বেঁচে থেকো। কিছু লোকের ভ্রান্ত বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তাআলা সব জায়গায় রয়েছেন। যারা আল্লাহ তাআলাকে কোনো জায়গা অথবা দিকের সঙ্গে স¤পৃক্ত করেছে, তাদের পদস্খলন হয়েছে। তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তারা তাদের সমস্ত চিন্তা ভাবনাকে জীব-জন্তুর ইন্দ্রীয় ক্ষমতার মধ্যেই কেন্দ্রীভ‚ত করে রেখেছে। তাদের চিন্তা শক্তি দেহ ও দেহ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গণদি থেকেও মুক্ত হয়নি।- আল-আরবাইন ফি উসুলিদ দীন : ১৯৮
এবার আমরা হানাফি মাজহাবের প্রখ্যাত ইমামগণের থেকে এ বিষয়ক আকিদা উদ্ধৃত করব :
১) ইমাম বদরুদ্দীন আইনি রহ. বলেন আবুল আলিয়া বলেছেন, (আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রে) ইসতওিয়ার অর্থ হলো উঁচু হওয়া। তার এই ব্যাখ্যায় ত্রুটি রয়েছে। কেননা, আল্লাহ তাআলা কখনো নিজের স¤পর্কে ইসতওিয়া বা উঁচু হওয়ার গুণ ব্যবহার করেননি। মুজাসসিমাদের (দেহবাদী) বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তাআলা আরশের ওপর স্থির হয়েছেন বা স্থিতি গ্রহণ করেছেন। তাদের এই বক্তব্যটি ভ্রান্ত। কেননা, স্থির হওয়া বা স্থিতি গ্রহণ করা নশ্বর দেহের বৈশিষ্ট্য। এর দ্বারা কোনো কিছুর মধ্যে প্রবীষ্ট হওয়া ও সীমাবদ্ধ হওয়া আবশ্যক হয়। আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রে এগুলো অবাস্তব ও অকল্পনীয়।-উমদাতুল কারি : ২৫/১১১
২) আল্লামা ইবনু নুজাইম রহ. বলেন,আলাহর জন্য স্থান সাব্যস্তের কারণে কাফির হয়ে যাবে। কেউ যদি বলে, আল্লাহ তাআলা আকাশে রয়েছেন, এটা যদি সে হাদিসের বাহ্যিক বক্তব্য উদ্ধৃত করার উদ্দেশ্যে বলে, তবে সে কাফির হবে না। কিন্তু বাস্তবে যদি আল্লাহ তাআলা আকাশে রয়েছেন এই ধরনের বিশ্বাস রাখে, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। এ বক্তব্য দ্বারা যদি তার বিশেষ কোনো নিয়ত না থাকে, তবুও অধিকাংশের নিকট এটা কুফরি হবে। এটাই সঠিক এবং এর ওপরই ফাতওয়া। – আল-বাহরুর রায়িক : ৫/১২৯
হুবহু একই ফাতওয়া মাসআলা হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত ফাতওয়াগ্রন্থ ফাতওয়া আলমগিরিতেও বিবৃত রয়েছে।- ফাতওয়া আলমগিরি : ২/২৫৯
৩) উলামায়ে দেওবন্দের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব বিখ্যাত তাফসির ও হাদিস-বিশারদ আলামা আবদুল হক দেহলবি রহ. লেখেন : আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব ও অবস্থানের জন্য কোনো স্থানের প্রয়োজন নেই। কেননা, দেহবিশিষ্ট ও স্থানিক বস্তুর জন্যই কেবল অবস্থানের জায়গার প্রয়োজন হয়। মহান আল্লাহ তাআলা দেহ থেকে স¤পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। সুতরাং তিনি আকাশে থাকেন না। তিনি জমিনেও অবস্থান করেন না। পূর্ব-পশ্চিম কোথাও তিনি থাকেন না। বরং সমগ্র মহাবিশ্ব তাঁর নিকটি অণু-পরমাণুতুল্য। সুতরাং তিনি এই ক্ষুদ্র সৃষ্টির মধ্যে কেন অবস্থান করবেন? তবে সৃষ্টির সবকিছুই আল্লাহর সামনে পূর্ণ উদ্ভাসিত। কোনো কিছুই তাঁর থেকে সুপ্ত বা অজ্ঞাত নয়। সকল স্থান ও জায়গা আলাহর নিকট সমান।- আকায়িদুল ইসলাম : ৩২
* আল্লাহ তাআলা শুধুই আসমানে বা আরশে সীমাবদ্ধ করে ফেলা আল্লাহ তাআলার বড়ত্বকে খাট করা:-
আমরা জানি, কোন বস্তু যখন অন্য বস্তুর উপর থাকে, তখন যে বস্তুর উপর বস্তুটি রাখা হয়, তা বড় থাকে, আর যা রাখা হয় তা হয় ছোট। যেমন-যদি বলা হয় যে, কলমটি টেবিলের উপর আছে, তখন বুঝতে হবে যে, টেবিলটি বড় আল কলমটি ছোট, কারণ, কলম বড় হলে কলমটি টেবিলের উপরথাকতে পারে না।এটাই মুহিত ও মুহাতের পার্থক্য। আলাহ রাব্বুল আলামীন মুহীত তথা সর্ব কিছুকে পরিবেষ্টনকারী।
তাকে পরিবেষ্টনকারী কিছু নেই। যদি বলা হয় যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শুধু আরশের উপর আছেন, তাহলে আরশ আলাহ রাব্বুল আলামীনকে মুহীত করে ফেলছে, তথা পরিবেষ্টন করে ফেলছে, তথা আরশ হয়ে যাচ্ছে বড়, আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হয়ে যাচ্ছেন ছোট নাউজুবিল্লাহ। তাই সহীহ আক্বিদা হল-আলাহ রাব্বুল আলামীন সর্বত্র আছেন। তিনি যেমন আরশে আছেন, তেমনি জমিন আসমান সর্বত্র আছেন।
يقول الإمام جعفر الصادق رضي الله عنه: “مَنْ زعم أن الله في شيء أو من شيء أو على شيء فقد أشرك؛ إذ لو كان في شيء لكان محصورًا، ولو كان على شيء لكان محمولًا، ولو كان من شيء لكان مُحْدَثًا” اهـ. يُنظر: “الرسالة القشيرية” (1/ 29، ط. دار المعارف بالقاهرة).
কথিত আহলে হাদীসদের কাছে আমাদের প্রশ্ন
১. আল্লাহ তাআলা আরশেই অবস্থান করলে আরশ সৃষ্টির আগে আল্লাহ তাআলা কোথায় ছিলেন?
২. কিয়ামতের সময় সব কিছু যখন ধ্বংস হয়ে যাবে তখন আল্লাহ তাআলা কোথায় থাকবেন?
৩. আল্লাহ তাআলা আরশেই অবস্থান করলে মুসা আঃ কে দেখা দেয়ার জন্য ত‚র পাহাড়ে কেন ডেকে
নিলেন?
Leave Your Comments