কাল সাড়ে নয়টা। আকাশে প্রচণ্ড মেঘ জমেছে। মেঘমালা ক্রমেই ঘনীভূত হয়ে আসছে। হয়ত বৃষ্টি নামবে। মেঘের কালো ছায়ায় দীপ্তিমান সূর্যটা যেন ক্রমেই আড়াল হয়ে যাচ্ছে। একটা সময় সূর্যটা যেন কোথায় হারিয়ে গেল। মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল।
.
জানালার ফাঁক দিয়ে উকি মেরে বৃষ্টির রিম-ঝিম শব্দটা উপভোগ করছিলাম। ছোটবেলার কথা মনে পড়ছিল। আমি তখন ক্লাশ ফাইভে পড়ি। আমাদের স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা ক্লাসে একদিন জিজ্ঞাসা করলেন,
ছেলেরা, তোমরা কি কেউ বলতে পারবে Cats and dogs অর্থ কি?
.
আমরা সকলেই সমস্বরে বলে উঠলাম “বিড়াল এবং কুকুর”, ম্যাম।
.
আমাদের উত্তর শুনে ম্যামের হাসি যেন আর থামছেই না। ম্যামের হাসির কারণটা অবশ্য ক্লাশ সেভেনে উঠার পর বুঝেছিলাম। ছোটবেলার কথা চিন্তা করতে করতে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ।
.
মা বলল, দেখত কে এল?
– যাই মা।
আমি দরজা খুলতে গেলাম। দরজা খুলতেই কানে ভেসে আসল আসসালামুয়ালাইকুম।
.
– ওয়ালাইকুমুসসালাম। ফারিস, তুই?
– তুই না রাতে ফোন করে আসতে বলেছিলি?
– তাই বলে এত বৃষ্টিতে?
– আমি কথা দিয়েছিলাম দশটায় আসব। কথা তো রাখতেই হবে দোস্ত।
.
ফারিস আমার ক্লাশমেট। সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকেই ছেলেটার সাথে আমার পরিচয়। মাঝারি গড়নের, ফর্সা, মাথার চুলগুলো পাতলা কিন্তু দাড়ি বেশ ঘন। দাঁতগুলো মুক্তার মত। ফারিসের সবথেকে নজরকাড়া বৈশিষ্ট্য হল তার হাসি। খুব সুন্দর মুচকি হাসতে পারে। কথা বলার সময় তার ঠোটের কোণায় সব সময় এক ঝলক হাসি লেগে থাকে। অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে। পারবে না কেন? ও জানে প্রচুর। একাডেমিক পড়শুনার থেকে অন্যান্য বই-ই বেশি পড়ে। সময় পেলেই বই নিয়ে পড়ে থাকে। একটানা অনেকক্ষণ পড়তে পারে। বই পড়ার প্রতি ওর মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহ দেখে আমরা প্রায়ই ঠাট্টা করে বলাম, ফারিস তোকে আমরা বই এর সাথে বিয়ে দিয়ে দেব। ও বই এতটাই দ্রুত পড়তে পারত যে, আমাদের একপাতা শেষ না হতে হতেই ও দুই পাতা পড়ে ফেলতে পারত।
.
প্রচণ্ড তাক্বওয়াবান ছেলে। নামাজ, রোজা, যিকির, ব্যক্তিগত আমলের ব্যাপারে খুবই সচেতন। আর সময়ের প্রতি তার সচেতনতার মাত্রাটা আমাদের সকলের থেকে বেশি। তাই এই তুমুল বৃষ্টিতে ভিজেও সে টাইমলি চলে এসেছে।
.
আমি বললাম, আয় ভেতরে আয়।
– চল।
.
ফারিসকে বসার ঘরে বসতে দিয়ে আমি ভেতর থেকে গামছা এনে বললাম,
এই নে ভেজা শরীরটা মুছে নে, নয়ত ঠাণ্ডা লাগবে।
.
ফারিস শরীর মুছতে মুছতে বলল, কি যেন বলবি বলেছিলি?
– এত তাড়া কিসের?
– রাহাতের সাথে দেখা করতে যেতে হবে। আর ১১ টায় যাব বলে কথা দিয়েছিলাম। তাই আর কি।
.
ফারিস কথা দিয়ে কথা রাখে নি এমন উদাহরণ নেই। ওর মুখে প্রায়ই শুনতাম কথা দিয়ে কথা না রাখা হল মুনাফিকদের লক্ষণ। অগত্যা চলে যাবে বিধায় আমি আসল ব্যপারটা ওকে জানালাম।
.
আমার ফুপাত ভাই আসিফ। প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে বি.বি.এ করছে। কিছুদিন আগেও যে ছেলেটা নামাযে অবহেলা করত না, আজ সে সংশয়বাদীদের কাতারে নাম লিখাতে বসেছে। কোন এক নাস্তিক লেখকের পাল্লায় পরেছে। ধর্ম ব্যাপারটা তার কাছে নাকি আদিম বলে মনে হয়। তার বক্তব্য হল বিশ্বায়নের এই যুগে ধর্মের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। যে মানুষ রকেট বানাচ্ছে, কৃত্তিম উপগ্রহ বানাচ্ছে, সুপার কম্পিউটার বানাচ্ছে সে মানুষ তার জীবনবিধানও নিজেই নির্ধারণ করে নিতে পারে। তাই সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বেকার বিধান অনুসরণ করার কোন যৌক্তিকতা তার কাছে নেই। আমি আসিফের বিষয়টা ফারিসের কাছে খুলে বললাম।
.
ফারিস বলল, ও আছে বাসায়?
– হুম। কালকেই এসেছে।
– ওর সাথে কথা বলা যাবে?
– সে জন্যেই তো তোঁকে ডেকেছি। আচ্ছা আমি ডাকছি।
.
আসিফ! আ–সিফ! এই আসিফ! এইদিকে আয়।
.
ভেতর থেকে আসিফ এল। ততক্ষণে চাও চলে এসেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ফারিস বলল,
– ভালো আছ আসিফ?
– জ্বি ভাল।
– তোমার পড়াশুনা কেমন চলছে?
– ভাল।
– বই পড়তে কেমন লাগে?
– ভাল।
– হুমায়ুন আজাদের বই পড়েছ, ‘আমার অবিশ্বাস’?
– হুম।
– তোমার সংশয় এই বই থেকেই উদ্ভব হয়েছে, তাই না?
– আপনি কি করে জানলেন?
.
ফারিস উত্তর দিল না। কারণ বইটা সে আসিফের অনেক আগেই পড়েছে। সে পাল্টা প্রশ্ন করল।
.
– আচ্ছা তুমি মাও সেতুং এর নাম শুনেছ?
– হ্যাঁ শুনেছি।
.
আমি বুঝতে পারছিলাম না যে আলোচনার মধ্যে হঠাৎ মাও সেতুং আসল কেন? চুপ থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই দেখে নীরব শ্রোতার মত ফারিস ও আসিফের কথোপকথন শুনছিলাম।
.
ফারিস আসিফকে লক্ষ্য করে বলল, তুমি কি জান মাও সেতুং এর কারণে গণচীনে কতজন নিরীহ লোকের প্রাণহানি হয়েছিল?
– না।
– তার প্রত্যক্ষ নির্দেশে ৬- ১০ মিলিয়ন লোককে হত্যা করা হয়।
আমি তো অবাক, প্রায় ১০ মিলিয়ন লোক! এই বেটা তো বনী ইসরাইলের সিরিয়াল কিলারের থেকেও বেশি খারাপ। আসিফ চুপ, ফারিস কেবল মুচকি হাসল।
.
এরপর ফারিস আসিফকে লক্ষ্য করে বলল, বলতে পারবে জোসেফ ষ্ট্যালিনের নির্দেশে কি পরিমাণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল?
আসিফ না সূচক মাথা নাড়ল।
.
– ষ্ট্যালিন ছিলেন সমজতান্ত্রিক পৃথিবীর এক কুখ্যাত নেতা যিনি তার প্রজাদের রক্তে নিজের হাতকে রঞ্জিত করেছিলেন। তার শাসনামলে প্রায় ২০ মিলিয়ন লোককে হত্যা করা হয় যার মধ্যে শুধুমাত্র ককেশাস অঞ্চলেই মৃতের সংখ্যা ছিলো ১০০০০০০ জন।
.
আমি অবাক হয়ে বললাম, বাপরে এই বেটা তো সন্ত্রাসীদের বাপ নয়, দাদা। বলতেই হাসির রুল পড়ে গেল।
.
– আসিফ তুমি কি জান সমাজতন্ত্রীদের কারণে বিশ্বে কি পরিমাণ লোক নিহত হয়েছিল?
– অনেক।
– অনেক নয় এক্স্যাক্ট সংখ্যাটা বল।
– মনে নেই।
– The Black Book of Communism এর দেয়া তথ্যানুসারে বিশ্বে প্রায় ১০০ মিলিয়ন লোক নিহত হয় এদের কারণে। আচ্ছা আসিফ বল তো এদের এই কাজগুলো ঠিক না ভুল?
– অবশ্যই ভুল।
– কিভাবে বুঝলে?
– নিজের বিবেক দিয়ে।
– তাদের বিবেক অনুসারে এই কাজগুলো ঠিক ছিল না ভুল?
– ঠিক।
– আসিফ, তুমি তো অবশ্যই জান আমাদের দেশে মিনি স্কার্ট পরে বের হওয়াটা কি?
– অসভ্যতা।
– পশ্চিমা দেশগুলোতে?
– স্বাভাবিক।
– শুধু স্বাভাবিকই নয় বরং তাদের দেশে যদি কেউ বিকিনি পরেও রাস্তায় বের হয় তাহলেও সেটা তাদের দৃষ্টিতে দোষের কিছুই নয়। আবার তুমি যদি দক্ষিণ ফ্রান্সের সমুদ্র সৈকতে যাও, দেখতে পাবে সেখানে সকল বয়সের অসংখ্য নারী শরীরের ঊর্ধ্বভাগ সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে টপলেস হয়ে রৌদ্রস্নান করছে। আরেকটু এগিয়ে আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে যাও, সেখানে সৈকতে অসংখ্য ন্যুডিস্টদের সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে রৌদ্রস্নান করতে দেখবে। তাহলে এখন বল তো কোন সংস্কৃতিটা আমাদের জন্য আদর্শ বলে বিবেচিত হবে?
.
আসিফ চুপ। কিছু বলছে না।
.
– আচ্ছা আসিফ বল তো আমাদের দেশ ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৭১ সালে সংগঠিত যুদ্ধকে তুমি কিভাবে দেখ?
– এটা মুক্তিযুদ্ধ। এটা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে আমাদের দেশের স্বাধীনতার লড়াই।
– হ্যা, অবশ্যই। অবশ্যই এটা মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে এই যুদ্ধটা কি ছিল?
.
আসিফ কিছু বলল না, তার মানে উত্তরটা তার জানা।
.
– তাহলে বলতো আসিফ, তুমি জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কোন মানদণ্ড দিয়ে মানুষের কর্মগুলোকে বিচার করবে?
– বিবেক।
– তুমি যদি কেবল বিবেক বুদ্ধির উপরেই নির্ভর করে সব কর্মগুলোকে যাচাই করতে যাও তাহলে অবশ্যই সেটা ভুল হবে।
– কেন ভুল হবে?
– কারণ তোমার বিবেক যেটাকে ঠিক মনে করছে, সেটা অন্যের কাছে ঠিক মনে নাও হতে পারে। আবার অন্যের বিবেকের কাছে যেটা ঠিক মনে হচ্ছে সেটা তোমার কাছে ঠিক নাও মনে হতে পারে। কি পারে না?
.
আসিফ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।
.
– তোমার চোখে মিনি স্কার্ট কিংবা বিকিনি পড়ে রাস্তায় বের হওয়াটা অন্যায় কিন্তু জাপানীদের চোখে তা স্বাভাবিক। তোমার চোখে নগ্ন হয়ে সমুদ্রসৈকতে স্নান করাটা অন্যায় কিন্তু পশ্চিমাদের চোখে তা স্বাভাবিক। তোমার কাছে মাও সেতুং কিংবা জোসেফ ষ্ট্যালিনের কর্মকাণ্ডগুলো সন্ত্রাসবাদ মনে হলেও তাদের চোখে ও তাদের একনিষ্ঠ অনুসারীদের চোখে তা স্বাভাবিক। তোমার দৃষ্টিতে ১৯৭১ সালের যুদ্ধটা মহান স্বাধীনতার যুদ্ধ হলেও, পশ্চিম পাকিস্তানের দৃষ্টিতে তা সন্ত্রাসবাদ। তোমার কাছে সমকামিতা অস্বাভাবিক ব্যাপার হলেও হুমায়ুন আজাদ কিংবা অভিজিৎ রায়দের কাছে তা স্বাভাবিক। তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই একটা কিছুকে ষ্ট্যান্ডার্ড ধরতে হবে, যার সাথে তুলনা করে আমরা আমাদের সকল কর্মকে বিবেচনা করে দেখব যে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল। আর এই ষ্ট্যান্ডার্ড যদি মানুষ ঠিক করতে যায় তাহলে বিপত্তি ঘটবে।
.
– কেন?
– কারণ এক দেশের ষ্ট্যান্ডার্ড আরেক দেশে চলবে না। এক সমাজের ষ্ট্যান্ডার্ড আরেক সমাজে চলবে না। এক শতাব্দীর ষ্ট্যান্ডার্ড আরেক শতাব্দীতে চলবে না। তুমি যেমন পশ্চিমাদের ষ্ট্যান্ডার্ড মানবে না, তারাও তোমাদেরটা মানবে না। তুমি যেমন গ্রীকদের ষ্ট্যান্ডার্ড মানবে না তারাও তোমারটা মানবে না। তুমি যেমন নগ্নবাদীদের ষ্ট্যান্ডার্ড ফলো করবে না, তারাও তোমারটা ফলো করবে না। তুমি যেমন অভিজিৎ রায়ের মত সমাকামীদের ষ্ট্যান্ডার্ড ফলো করতে আনইজি ফিল করবে, তারাও তোমারটা ফলো করতে আনইজি ফিল করবে। আর মানুষের তৈরি ষ্ট্যান্ডার্ড পরিবর্তনশীল। তাহলে বল কোন জিনিসটা ঠিক আর কোনটা ভুল আমরা তা কিভাবে নির্ণয় করব?
.
আসিফ এবার একেবারে চুপ। মাথা নীচের দিকে করে আছে।
.
– একটা সময় প্রাচীন গ্রীক ছিল সভ্যতার রাজধানী, এরপর রোমান সভ্যতা। কিন্তু কালের আবর্তনে তাদের সমাজে প্রচলিত ষ্ট্যান্ডার্ড বর্তমান বিশ্বে অচল । শুধু অচল নয় হাসির পাত্রও বটে। তাই ষ্ট্যান্ডার্ড যিনি ঠিক করতে পারেন তিনি হলেন আমাদের স্রষ্টা। সেই স্রষ্টাই আমাদের ষ্ট্যান্ডার্ড হিসেবে পাঠিয়েছেন ধর্ম। ধর্মের বিধিবিধান ঠিক করার জন্য তিনি পাঠিয়েছেন ওহী। আর ওহীকে বাস্তবায়ন করার জন্য পাঠিয়েছেন নবী ও রাসূলদের। স্রষ্টা প্রেরিত ওহীকে যদি আমরা সকল কর্মের ষ্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচনা করি তাহলে আর কোন সমস্যাই থাকে না। মানুষ আমার কিংবা তোমার বিবেক প্রসূত ষ্ট্যান্ডার্ড মানতে বাধ্য না হলেও স্রষ্টা প্রণীত ষ্ট্যান্ডার্ড মানতে ঠিকই বাধ্য, কেননা স্রষ্টা তাকে সৃষ্টি করেছে। আর মহান স্রষ্টা কর্তৃক প্রণীত সেই ষ্ট্যান্ডার্ড এর নাম হল আল কোরআন, যাকে আমরা মুসলিমরা সকল কর্মের ষ্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচনা করি।
.
ফারিসের কথা শেষ হতেই আসিফ মাথা নিচু করে আমাদের সামনে থেকে চলে গেল। আমি ওকে আটকাতে যাব এই মূহুর্তে ফারিস আমাকে মাথা নেড়ে নিষেধ করল।
.
ফারিসের যাবার সময় হয়ে এল। আমি ওকে বিদায় দিচ্ছিলাম, এমন সময় ভেতর থেকে হঠাৎ আসিফ এসে ওকে জড়িয়ে ধরল। আসিফের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ফারিসকে অনেক শক্ত করে ধরে বলল, সরি ভাইয়া অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।
.
ফারিস আসিফের দিকে তাকিয়ে বলল,
– সত্য এমনি ভাইয়া। সত্য আমাদের সকলকে আকর্ষণ করে। আমাদের অন্তরকে ছুঁয়ে যায়। কেননা স্রষ্টা আমাদেরকে সত্যকে মেনে নেয়ার যোগ্যতা দিয়েই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আর তুমি সেই সত্যের দিকেই ফিরে এসেছ। আলহামদুলিল্লহ, আল্লাহ তোমার সহায় হোন।
.
এমন আবেগঘন মুহূর্তটা দেখব কল্পনাও করি নি। চোখের পানি আটকাতে পারলাম না। মনে মনে বললাম, ফারিস তুই পারিসও বটে।
========================
লেখকঃ জাকারিয়া
Leave Your Comments