উরাইন গোত্রের লোকদের হত্যা করে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি অমানবিক কাজ করেছেন? মুফতি লুতফুর রহমান ফারায়েজী

জনৈক নব্য মুরতাদ তার ইসলাম ছেড়ে দেবার কারণ বলতে বলেছেনঃ

বুখারী শরীফের ২৩৩ নং হাদীসে আছে-উরাইনা গোত্রের লোকরা অসুস্থ্য হলে তাদের নবীজী উটের দুধ ও পেশাব পান করতে বললেন। তখন তারা উটের রাখালদের হত্যা করে, মুরতাদ হয়ে চলে যাচ্ছিল।

উরাইনা গোত্রের লোকদের তিনটা দোষ ছিল। যা হাদীসে আছে। যথা-১)তারা মুরতাদ হয়েছে। ২-উটের রাখালদের হত্যা করেছে। ৩-উট ডাকাতী করেছে।

তাদের গ্রেফতার করা হল। তাদের ডান হাত ও বাম পা কাটা হল। লোহার শলাকা দিয়ে তাদের চোখ তুলে ফেলা হল। তাদের মরুভূমিতে রাখার পর তারা পানি চাইলে তাদের পানি না দিয়ে হত্যা করা হল।

উরাইনার লোকদের হাত পা কেটে ফেলা হল, এটা কি নবীর কাজ?

এসব আমার বিবেকের কাছে খারাপ লেগেছে তাই ইসলাম ছেড়ে দিলাম।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

উরাইনা গোত্রের তিনটি অপরাধ ভাল করে আবার খেয়াল করুন।

১-যারা প্রথমে ইসলাম কবুল করেছে। ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় বিধান মান্য করবে বলে শপথ করেছে। এরপর তারা রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে মুরতাদ হয়েছে।

২-রাষ্ট্রের কোষাগার লুণ্ঠন করেছে।

৩-রাষ্ট্রীয় প্রতিপ্রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছে।

উপরোক্ত তিনটি জঘন্য অপরাধ যারা করেছেন,তার ক্ষেত্রে আপনি যদি উক্ত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হতেন, তাহলে কী ফায়সালা করতেন?

আমি আপনার বিবেকের কাছে জানতে চাই। একজন রাষ্ট্রদ্রোহী, একজন রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুণ্ঠনকারী, একজন প্রতিরক্ষা বাহিনীর খুনিকে সাদরে ইজ্জতের সাথে ছেড়ে দেয়া হবে? নাকি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে?

যে তিনটি অভিযোগ, তার প্রতিটির জন্যই তার কঠোর মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। কিন্তু সেই তুলনায় শাস্তিগুলো কি একটু কমই দেয়া হয়নি?

বিবেকের আদালতে দাঁড়িয়ে বিষয়গুলো বিচার করুন।

বাংলাদেশের আইন আদালত অমান্য করে কোন ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রদ্রোহী হয়। যদি উপরোক্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুট করে। যদি উপরোক্ত ব্যক্তি বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করে।

উপরোক্ত জঘন্য অপরাধীকে বাংলাদেশ সরকারের কী শাস্তি দেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

আর আপনি রাষ্ট্রপ্রধান হলেই বা কী করতেন?

আরো যা জানতে হবে!

উরাইনী সন্ত্রাসীরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিযুক্ত রাখালদের হাত পা কেটে দিয়েছিল। চোখ উপড়ে ফেলেছিল।

এসব উটের দুগ্ধ দিয়ে নবী পরিবারসহ অনেক পরিবারের রাতের খাবার সরবরাহ হতো। উরাইনী সন্ত্রাসীদের সে রাতের লুণ্ঠনের কারণে সেদিন রাত খাবারহীনভাবে কাটিয়েছে নবী পরিবার। [দেখুন-আর রউজুল আনফ ফী শরহি সীরাতিন নাবাবিয়্যাহ-৬/৪২]

রাউজুল আনফের ইবারতের আরবী পাঠ

قُلْنَا: فِي ذَلِكَ جَوَابَانِ: أَحَدُهُمَا: أَنّهُ فَعَلَ ذَلِكَ قِصَاصًا لِأَنّهُمْ قَطَعُوا أَيْدِي الرّعَاءِ وَأَرْجُلَهُمْ وَسَمَلُوا أَعْيُنَهُمْ، رُوِيَ ذَلِكَ فِي حَدِيثِ أَنَسٍ، وَقِيلَ: إنّ ذَلِكَ قَبْلَ تَحْرِيمِ الْمُثْلَةِ. فَإِنْ قِيلَ: فَقَدْ تَرَكَهُمْ يَسْتَسْقُونَ، فَلَا يُسْقَوْنَ، حَتّى مَاتُوا عَطَشًا، قُلْنَا عَطّشَهُمْ لِأَنّهُمْ عَطّشُوا أَهْلَ بَيْتِ النّبِيّ- صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- تِلْكَ اللّيْلَةَ، رُوِيَ فِي حَدِيثٍ مَرْفُوعٍ أَنّهُ عَلَيْهِ السّلَامُ لَمّا بَقِيَ وَأَهْلُهُ تِلْكَ اللّيْلَةَ بِلَا لَبَنٍ، قَالَ: اللهُمّ عَطّشْ مَنْ عَطّشَ أَهْلَ بَيْتِ نَبِيّك. وَقَعَ هَذَا فِي شَرْحِ ابْنِ بَطّالٍ، وَقَدْ خَرّجَهُ النّسَوِيّ.

যারা রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাত পা কেটেছে, চোখ উপড়ে ফেলেছে, রাষ্ট্র প্রধানের পরিবারকে অভূক্ত রেখেছে। রাষ্ট্রীয় মাল লুট করে পালিয়েছে। তাকে তার অপরাধের অনুরূপ শাস্তি প্রদান করা কি অন্যায় নাকি ন্যায় বিচার?

আপনার বিবেক বুদ্ধি কী বলে?

নিশ্চয় ন্যায় বিচার। অবশ্যই ন্যায় বিচার। প্রতিটি বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি তা’ই বলবে। প্রতিটি আকল এটাই সাক্ষ্য দিবে। নবীজীর বিচার সঠিক ছিল। যথার্থ ছিল।

যদি ভিন্ন কথা বলে, তাহলে বুঝতে হবে, আপনার বিবেক আপনার নিয়ন্ত্রিত নয়। বরং অন্য কারো হাতে থাকা রিমোটের ক্রীড়ানক মাত্র। আপনি কেবলি একটি দাবার গুটি। যাকে নিয়ে খেলছে কোন ঝানু খেলোয়ার।

ইসলামের মত অমূল্য রতন এমন আহমকী করে ছেড়ে দিয়েছেন শুনে আমরা যারপরনাই আশ্চর্য হলাম।

আল্লাহ আপনার বিবেক বুদ্ধির সুমতি প্রদান করুন। আমীন।

এ অভিযোগের জবাবটিও পড়ুন-

বনু কুরাইজাবাসীকে শাস্তি দিয়ে কি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যায় করেছেন? [নাউজুবিল্লাহ]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *