সাজিদের খুব মন খারাপ।আমি রুমে ঢুকে দেখলাম সে তার খাটের উপর শক্তমুখ করে বসে আছে।
আমি বললাম,- ‘ক্লাশ থেকে কবে এলি?’
সে কোন উত্তর দিলো না। আমি কাঁধ থেকে সাড়ে দশ কেজি ওজনের ব্যাগটি নামিয়ে রাখলাম টেবিলের উপর। তার দিকে ফিরে বললাম,- ‘কি হয়েছে রে? মুখের অবস্থা তো নেপচুনের উপগ্রহ ট্রাইটনের মতো করে রেখেছিস।’
সে বললো,- ‘ট্রাইটন দেখতে কি রকম?’
– ‘আমি শুনেছি ট্রাইটন দেখতে নাকি বাঙলা পাঁচের মতো।’
আমি জানি, সাজিদ এক্ষুনি একটা ছোটখাটো লেকচার শুরু করবে। সে আমাকে ট্রাইটনের অবস্থান, আকার-আকৃতি, ট্রাইটনের ভূ-পৃষ্টে নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ, সূর্য আর নেপচুন থেকে ট্রাইটনের দূরত্ব কতো- তার যথাযথ বিবরণ এবং তথ্যাদি দিয়ে প্রমান করে দেখাবে যে, ট্রাইটন দেখতে মোটেও বাঙলা পাঁচের মতো নয়।
.
এই মূহুর্তে তার লেকচার বা বকবকানি, কোনটাই শোনার আমার ইচ্ছে নেই।তাই, যে করেই হোক, তাকে দ্রুত থামিয়ে দিতে হবে। আমি আবার বললাম,- ‘ক্লাশে গিয়েছিলি?’
– ‘হু’
– ‘কোন সমস্যা হয়েছে নাকি? মন খারাপ? ‘
.
সে আবার চুপ মেরে গেলো।এই হলো একটা সমস্যা।সাজিদ যেটা বলতে চাইবে না, পৃথিবী যদি ওলট-পালট হয়েও যায়, তবু সে মুখ খুলে সেটা কাউকে বলবে না।
.
সে বললো,- ‘কিচেনে যা। ভাত বসিয়েছি। দেখে আয় কি অবস্থা।’
আমি আকাশ থেকে পড়ার মতো করে বললাম,- ‘ভাত বসিয়েছিস মানে? বুয়া আসে নি?’
– ‘না।’
– ‘কেনো?’
– ‘অসুস্থ বললো।’
– ‘তাহলে আজ খাবো কি?’
.
সাজিদ জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।সেদিকে তাকিয়েই বললো,- ‘ভাত বসিয়েছি। কলে যথেষ্ট পরিমাণে পানি আছে। পানি দিয়ে ভাত গিলা হবে।’
সিরিয়াস সময়গুলোতেও তার এরকম রসিকতা আমার একেবারেই ভালো লাগে না।
.
অগত্যা কিচেনের দিকে হাঁটা ধরলাম।
যেটা ভেবেছি ঠিক সেটা নয়।ভাত বসানোর পাশাপাশি সে ডিম সেদ্ধ করে রেখেছে।আমার পেছন পেছন সাজিদও আসলো। এসে ভাত নামিয়ে কড়াইতে তেল, তেলে কিছু পেঁয়াজ কুঁচি, হালকা গুড়ো মরিচ, এক চিমটি নুন দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে, তাতে ডিম দুটো ছেড়ে দিলো। পাশে আমি পর্যবেক্ষকের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছি। মনে হচ্ছে, সাজিদ কোন রান্না প্রতিযোগিতার প্রতিযোগি, আর আমি চিফ জাষ্টিস।
.
অল্প কিছুক্ষণ পরেই ডিম দুটোর বর্ণ লালচে হয়ে উঠলো। মাছকে হালকা ভাঁজলে যেরকম দেখায়, সেরকম। সুন্দর একটি পোঁড়া গন্ধও বেরিয়েছে।
আমি মুচকি হেসে বললাম,- ‘খামোখা বুয়া রেখে এতগুলো টাকা অপচয় করি প্রতিমাসে। অথচ, ভুবন বিখ্যাত বুয়া আমার রুমেই আছে। হা হা হা।’
.
সাজিদ আমার দিকে ফিরে আমার কান মলে দিয়ে বললো,- ‘সাহস তো কম না তোর? আমাকে বুয়া বলিস?’
আমি বললাম,- ‘ওই দেখ, পুঁড়ে যাচ্ছে।’
সাজিদ সেদিকে ফিরতেই আমি দিলাম এক ভোঁ দৌঁড়!
–
গোসল সেরে, নামাজ পড়ে, খেয়ে-দেয়ে উঠলাম। রুটিন অনুযায়ী, সাজিদ এখন ঘুমোবে। রাতের যে বাড়তি অংশটা সে বই পড়ে কাটায়, সেটা দুপুর বেলা ঘুমিয়ে পুষিয়ে নেয়।
.
আমার আজকে কাজ নেই। চাইলেই ঘুরতে বেরোতে পারি।কিন্তু বাইরে যা রোদ! সাহস হচ্ছিলো না।
এরমধ্যেই সাজিদ ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিন্তু আমার মনের মধ্যে একটি কচকচানি রয়ে গেলো। সাজিদকে এরকম মন খারাপ অবস্থায় আমি আগে কখনো দেখি নি। কেন তার মন খারাপ সে ব্যাপারে জানতে না পারলে শান্তি পাচ্ছি না। কিন্তু সাজিদকে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। সে কোনদিনও বলবে না।ভাবছি কি করা যায়?
.
তখন মনে পড়লো তার সেই বিখ্যাত (আমার মতে) ডায়েরিটার কথা, যেটাতে সে তার জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো হুবহু লিখে রাখে।আজকে তার মন খারাপের ব্যাপারটিও নিশ্চয় সে তুলে রেখেছে।
তার টেবিলের ড্রয়ার খুলে তার ডায়েরিটা নিয়ে উল্টাতে লাগলাম।
মাঝামাঝিতে এসে পেয়ে গেলাম মূল ঘটনাটা।যেরকম লেখা আছে, সেভাবেই তুলে ধরছি-
.
০৭/০৫/১৪
‘মফিজুর রহমান স্যার। এই ভদ্রলোক ক্লাশে আমাকে উনার শত্রু মনে করেন। ঠিক শত্রু না, প্রতিদ্বন্দ্বী বলা যায়।
আমাকে নিয়ে উনার সমস্যা হলো- উনি উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলে, ক্লাশের ছেলে-মেয়েদের মনে ধর্ম, ধর্মীয় কিতাব, আল্লাহ, রাসূল ইত্যাদি
নিয়ে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করেন।কিন্তু, আমি প্রতিবারই উনার এহেন কাজের প্রতিবাদ করি।উনার যুক্তির বীপরিতে যুক্তি দিই। এমনও হয়েছে, যুক্তিতে আমার কাছে পরাজিত হয়ে উনি ক্লাশ থেকেও চলে গিয়েছিলেন কয়েকবার।
.
এই কারনে এই বামপন্থি লোকটা আমাকে উনার চক্ষুশূল মনে করেন।
সে যাকগে! আজকের কথা বলি।
.
আজকে ক্লাশে এসেই ভদ্রলোক আমাকে খুঁজে বের করলেন। বুঝতে পেরেছি, নতুন কোন উছিলা খুঁজে পেয়েছে আমাকে ঘায়েল করার।
ক্লাশে আসার আগে মনে হয় পান খেয়েছিলেন। ঠোঁটের এক কোণায় চুন লেগে আছে।
.
আমাকে দাঁড় করিয়ে বড় বড় চোখ করে বললেন,- ‘বাবা আইনষ্টাইন, কি খবর?’
.
ভদ্রলোক আমাকে তাচ্ছিল্য করে ‘আইনষ্টাইন’ বলে ডাকেন। আমাকে আইনষ্টাইন ডাকতে দেখে উনার অন্য শাগরেদবৃন্দগণ হাসাহাসি শুরু করলো।
.
আমি কিছু না বলে চুপ করে আছি। তিনি আবার বললেন,- ‘শোন বাবা আইনষ্টাইন, তুমি তো অনেক বিজ্ঞান জানো, বলো তো দেখি, সূর্য কি পানিতে ডুবে যায়?’
.
ক্লাশ স্তিমিত হয়ে গেলো। সবাই চুপচাপ।
আমি মাথা তুলে স্যারের দিকে তাকালাম। বললাম,- ‘জ্বি না স্যার। সূর্য কখনোই পানিতে ডুবে না।’
স্যার অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললেন,- ‘ ডুবে না? ঠিক তো?’
– ‘জ্বি স্যার।’
– ‘তাহলে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় কেন হয় বাবা? বিজ্ঞান কি বলে?’
.
আমি বললাম, – ‘স্যার, সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘুরে।সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরার সময়, পৃথিবী গোলার্ধের যে অংশটা সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, সে অংশে তখন সূর্যোদয় হয়, দিন থাকে। ঠিক একইভাবে, পৃথিবী গোলার্ধের যে অংশটা তখন সূর্যের বীপরিত দিকে মুখ করে থাকে, তাতে তখন সূর্যাস্ত হয়, রাত নামে।আদতে, সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয় বলে কিছু নেই।সূর্য অস্তও যায় না। উদিতও হয়না। পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারনে আমাদের এমনটি মনে হয়।’
.
স্যার বললেন,- ‘বাহ! সুন্দর ব্যাখ্যা।’
উনি আমার দিকে ঝুঁকে এসে বললেন,- ‘তা বাবা, এই ব্যাপারটার উপর তোমার আস্থা আছে তো? সূর্য পানিতে ডুবে-টুবে যাওয়া তে বিশ্বাস-টিশ্বাস করো কি?’
পুরো ক্লাশে তখনও পিনপতন নিরবতা।
.
আমি বললাম,- ‘না স্যার। সূর্যের পানিতে ডুবে যাওয়া-টাওয়া তে আমি বিশ্বাস করিনা।’
এরপর স্যার বললেন,- ‘বেশ! তাহলে ধরে নিলাম, আজ থেকে তুমি আর কোরআনে বিশ্বাস করো না।’
.
স্যারের কথা শুনে আমি খানিকটা অবাক হলাম।পুরো ক্লাশও সম্ভবত আমার মতোই হতবাক।স্যার মুচকি হেসে বললেন,- ‘তোমাদের ধর্মীয় কিতাব, যেটাকে আবার বিজ্ঞানময় বলে দাবি করো তোমরা, সেই কোরআনে আছে, সূর্য নাকি পানিতে ডুবে যায়। হা হা হা।’
.
আমি স্যারের মুখের দিকে চেয়ে আছি। স্যার বললেন, – ‘কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো? দাঁড়াও, পড়ে শোনাই।’
.
এইটুক বলে স্যার কোরআনের সূরা কাহাফের ৮৬ নাম্বার আয়াতটি পড়ে শোনালেন-
.
‘(চলতে চলতে) এমনিভাবে তিনি (জুলকারনাঈন) সূর্যের অস্তগমনের জায়গায় গিয়ে পৌঁছুলেন, সেখানে গিয়ে তিনি সূর্যকে (সাগরের) কালো পানিতে ডুবে যেতে দেখলেন।তার পাশে তিনি একটি জাতিকেও (বাস করতে) দেখলেন, আমি বললাম, হে জুলকারনাঈন! (এরা আপনার অধীনস্ত),আপনি ইচ্ছা করলে (তাদের) শাস্তি দিতে পারেন, অথবা তাদের আপনি সদয়ভাবেও গ্রহণ করতে পারেন।’
.
এরপর বললেন,- ‘দেখো, তোমাদের বিজ্ঞানময় ধর্মীয় কিতাব বলছে যে, সূর্য নাকি সাগরের কালো পানিতে ডুবে যায়। হা হা হা। বিজ্ঞানময় কিতাব বলে কথা।’
.
ক্লাশের কেউ কেউ, যারা স্যারের মতোই নাস্তিক, তারা হো হো করে হেসে উঠলো। আমি কিছুই বললাম না।চুপ করে ছিলাম।’
–
এইটুকুই লেখা। আশ্চর্য! সাজিদ মফিজুর রহমান নামের এই ভদ্রলোকের কথার কোন প্রতিবাদ করলো না? সে তো এরকম করে না সাধারণত। তাহলে কি…….? আমার মনে নানা ধরনের প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিতে লাগলো সেদিন।
–
এর চারমাস পরের কথা।
.
হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় সাজিদ আমাকে এসে বললো,- ‘আগামিকাল ডিপার্টমেণ্ট থেকে ট্যুরে যাচ্ছি। তুইও সাথে যাচ্ছিস।’
আমি বললাম, – ‘আমি? পাগল নাকি? তোদের ডিপার্টমেন্ট ট্যুরে আমি কিভাবে যাবো?’
.
– ‘সে ভাবনাটা আমার। তুকে যা বললাম, জাষ্ট তা শুনে যা।’
.
পরদিন সকাল বেলা বেরুলাম।তার ফ্রেন্ডদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো সাজিদ।স্যারেরাও আছেন। মফিজুর রহমান নামের ভদ্রলোকটির সাথেও দেখা হলো। বিরাট গোঁফওয়ালা। এই লোকের পূর্বপুরুষ সম্ভবত ব্রিটিশদের পিয়নের কাজ করতো।
.
যাহোক, আমরা যাচ্ছি বরিশালের কুয়াকাটা।
পৌঁছাতে পাক্কা চারঘণ্টা লাগলো।
সারাদিন অনেক ঘুরাঘুরি করলাম। স্যারগুলোকে বেশ বন্ধুবৎসল মনে হলো।
.
ঘড়িতে সময় তখন পাঁচটা বেজে পঁচিশ মিনিট। আমরা সমুদ্রের কাছাকাছি হোটেলে আছি।আমাদের সাথে মফিজুর রহমান স্যারও আছেন।
.
তিনি সবার উদ্দেশ্যে বললেন,- ‘গাইজ, বি রেডি! আমরা এখন কুয়াকাটার বিখ্যাত সূর্যাস্ত দেখবো।তোমরা নিশ্চয় জানো, এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সমুদ্র সৈকত, যেখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।’
.
আমরা সবাই প্রস্তুত ছিলাম আগে থেকেই। বেরুতে যাবো, ঠিক তখনি সাজিদ বলে বসলো,- ‘স্যার, আপনি সূর্যাস্ত দেখবেন?’
.
স্যার বললেন,- ‘Why not! How can I miss such an amazing moment?’
সাজিদ বললো,- ‘স্যার, আপনি বিজ্ঞানের মানুষ হয়ে খুব অবৈজ্ঞানিক কথা বলছেন। এমন একটি জিনিস আপনি কি করে দেখবেন বলছেন, যেটা আদতে ঘটেই না।’
.
এবার আমরা সবাই অবাক হলাম। যে যার চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। সাজিদ দাঁড়িয়ে আছে।
.
স্যার কপালের ভাঁজ দীর্ঘ করে বললেন,- ‘What do u want to mean?’
সাজিদ হাসলো। হেসে বললো,- ‘স্যার, খুবই সোজা। আপনি বলছেন, আপনি আমাদের নিয়ে সূর্যাস্ত দেখবেন। কিন্তু স্যার দেখুন, বিজ্ঞান বুঝে এমন লোক মাত্রই জানে, সূর্য আসলে অস্ত যায়না। পৃথিবী গোলার্ধের যে অংশ সূর্যের বীপরিত মুখে অবস্থান করতে শুরু করে, সে অংশটা আস্তে আস্তে অন্ধকারে ছেঁয়ে যায় কেবল। কিন্তু সূর্য তার কক্ষপথেই থাকে।উঠেও না, ডুবেও না। তাহলে স্যার, সূর্যাস্ত কথাটা তো ভুল, তাই না?’
.
এবার আমি বুঝে গেছি আসল ব্যাপার। মজা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।
মফিজুর রহমান নামের লোকটা একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,-
‘দেখো সাজিদ, সূর্য যে উদিত হয়না আর অস্ত যায়না, তা আমি জানি। কিন্তু, এখান থেকে দাঁড়ালে আমাদের কি মনে হয়? মনে হয়, সূর্যটা যেনো আস্তে আস্তে পানির নিচে ডুবে যাচ্ছে। এটাই আমাদের চর্মচক্ষুর সাধারণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। তাই, আমরা এটাকে সিম্পলি, ‘সূর্যাস্ত’ নাম দিয়েছি।বলার সুবিধের জন্যও এটাকে ‘সূর্যাস্ত’ বলাটা যুক্তিযুক্ত।
দেখো, যদি আমি বলতাম,- ‘ছেলেরা, একটুপর পৃথিবী গোলার্ধের যে অংশে বাংলাদেশের অবস্থান, সে অংশটা সূর্যের ঠিক বীপরিত দিকে মুখ নিতে চলেছে। তারমানে, এখানে এক্ষুনি আঁধার ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামবে।আমাদের সামনে থেকে সূর্যটা লুকিয়ে যাবে।চলো, আমরা সেই দৃশ্যটা অবলোকন করে আসি’, আমি যদি এরকম বলতাম, ব্যাপারটা ঠিক বিদঘুটে শোনাতো। ভাষা তার মাধুর্যতা হারাতো।শ্রুতিমধুরতা হারাতো। এখন আমি এক শব্দেই বুঝিয়ে দিতে পারছি আমি কি বলতে চাচ্ছি, সেটা।’
.
সাজিদ মুচকি হাসলো। সে বললো,- ‘স্যার, আপনি একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। বিজ্ঞান পড়েন, বিজ্ঞান পড়ান। আপনি আপনার সাধারন চর্মচক্ষু দিয়ে দেখতে পান যে- সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে পানির নিচে। এই ব্যাপারটাকে আপনি সুন্দর করে বোঝানোর জন্য যদি ‘সূর্যাস্ত’ নাম দিতে পারেন, তাহলে সূরা কাহাফে জুলকারনাঈন নামের লোকটি এরকম একটি সাগর পাড়ে এসে যখন দেখলো- সূর্যটা পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে, সেই ঘটনাকে যদি আল্লাহ তা’য়ালা সবাইকে সহজে বুঝানোর জন্য, সহজবোধ্য করার জন্য, ভাষার শ্রুতিমধুরতা ধরে রাখার জন্য, কুলি থেকে মজুর, মাঝি থেকে কাজি, ব্লগার থেকে বিজ্ঞানি,ডাক্তার থেকে ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র থেকে শিক্ষক, সবাইকে সহজে বুঝানোর জন্য যদি বলেন-
.
‘‘(চলতে চলতে) এমনিভাবে তিনি (জুলকারনাঈন) যখন সূর্যের অস্তগমনের জায়গায় গিয়ে পৌঁছুলেন, সেখানে গিয়ে তিনি সূর্যকে (সাগরের) কালো পানিতে ডুবে যেতে দেখলেন’,
.
তখন কেনো স্যার ব্যাপারটা অবৈজ্ঞানিক হবে? কোরান বলেনা যে, সূর্য পানির নিচে ডুবে গেছে। কোরান এখানে ঠিক সেটাই বলেছে, যেটা জুলকারনাঈন দেখেছে, এবং বুঝেছে। আপনি আমাদের সূর্যাস্ত দেখাবেন বলছেন মানে এই না যে- আপনি বলতে চাচ্ছেন সূর্যটা আসলেই ডুবে যায়।আপনি সেটাই বোঝাতে চাচ্ছেন, যেটা আমরা বাহ্যিকভাবে দেখি।তাহলে, একই ব্যাপার আপনি পারলে, কোরান কেন পারবে না স্যার?
.
আপনারা কথায় কথায় বলেন,- ‘The Sun rises in the east & sets in the west’ এগুলা নাকি Universal Truth..
কিভাবে এগুলো চিরন্তন সত্য হয় স্যার, যেখানে সূর্যের সাথে উঠা-ডুবার কোন সম্পর্কই নাই?
কিন্তু এগুলো আপনাদের কাছে অবৈজ্ঞানিক নয়। আপনারা কথায় কথায় সূর্যোদয়, সূর্যাস্তের কথা বলেন। অথচ, সেইম কথা কোরান বললেই আপনারা চিৎকার করে বলে উঠেন- কোরান অবৈজ্ঞানিক। কেন স্যার?’
.
সাজিদ একনাগাড়ে এতসব কথা বলে গেলো। স্যারের মুখটা কিছুটা পানসে দেখা গেলো। তিনি বললেন,- ‘দীর্ঘ চারমাস ধরে, এরকম সুযোগের অপেক্ষা করছিলে তুমি, মি. আইনষ্টাইন?’
.
আমরা সবাই হেসে দিলাম।
সাজিদও মুচকি হাসলো। বড় অদ্ভুত সে হাসি।।
=================================
‘কুরআন কি সূর্যের পানির নিচে ডুবে যাওয়ার কথা বলে?’
লেখকঃ আরিফ আজাদ
Leave Your Comments