ডারউইনিজমের ব্যবচ্ছেদ: পর্ব-২

ডারউইনিজমের ব্যবচ্ছেদ: পর্ব-২
.
ডারউইনিজম নিয়ে বিস্তারিত বলার আগে ইভোল্যুশন নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক। ইভোল্যুশন নিয়ে অনেকের মাঝে অস্পষ্টতা আছে। আগেই বলা হয়েছে, ইভোল্যুশন বা বিবর্তন হলো জীবের জণ্মগত বৈশিষ্টের ধারাবাহিক পরিবর্তন। বিবর্তনকে দুইভাগে ভাগ করা যায়, ম্যাক্রো ইভোল্যুশন বা বৃহৎ বিবর্তন ও মাইক্রো বা ছোট বিবর্তন। আমরা সবাই সাধারণত ম্যাক্রোইভোলুশন নিয়ে কথা বলি, তর্ক বিতর্ক করি।
.
ম্যাক্রোইভোলুশন থিওরী মতে জীবের টার্ন্সফর্মেশন বা রূপান্তর, এক জীব থেকে আরেক জীবে পরিণত হওয়া সম্ভব। সাইন্টিফিক তথ্য অনুযায়ী জীবের এই পূর্ণাঙ্গ পরিবর্তন সম্ভব নয়, বিশেষ করে বহু কোষী (মাল্টিসেলুলার) জীবের ক্ষেত্রে তো নয়ই। কিছু স্টাডি আছে যেখানে দেখা গেছে কিছু এক কোষী প্রোক্যারিওট গুলোর মধ্যে জিনগত সাদৃশ্য অনেক।
.
যেমন কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রজাতির মধ্যে জিনগত সাদৃশ্যতা অনেক, এই সাদৃশ্যতা হয়তো এভোলিউশনারী মেকানিজমের মাধ্যমে হয়েছে। এক কোষী জীবে ইভোল্যুশন হওয়া খুবই সম্ভব এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
সমস্যা হয় তখন, যখন আমরা এই মেকানিজম মাল্টিসেলুলার বা বহুকোষী প্রাণী যেমন, এনিম্যাল, প্লান্ট ইত্যাদির ক্ষেত্রেও একই রকম সহজ ও সরল মনে করি। আমরা সবাই কমবেশি আদি ও প্রাকৃত কোষের পার্থক্য ছোট বেলায় পড়েছি!!! এই দুই প্রকার কোষের স্ট্রাকচারাল/কাঠামোগত পার্থক্য আকাশ পাতাল। তাদের রিপ্রোডাকশন/প্রতিলিপি তৈরির প্রদ্ধতি একেবারেই আলাদা।
.
উদাহরণ দিলে ক্লিয়ার হবে- ব্যাকটেরিয়া (এক কোষী) যেখানে সেখানে জন্মাতে পারে, একটা ব্যাকটেরিয়া থেকে আরেকটা ব্যাকটেরিয়া হতে ৪ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে, পক্ষান্তরে একটা এনিম্যাল সেল (কোষ) থেকে আরেকটা হতে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা সময় লাগে । এই রকম হাজারো উদাহরণ দেয়া যাবে, যা থেকে এটাই স্পষ্ট হবে এক কোষী আর বহু কোষী জীবের মধ্যে আদৌ কোনো মিল নাই। তাই ব্যাক্টেরিয়াতে ইভোল্যুশন হলেই এটা বলে দেয়া চূড়ান্ত বোকামি যে বহুকোষী জীবেও ইভোল্যুশন (ম্যাক্রো) হয়।
.
বহুকোষী জীবে মাইক্রোইভোল্যুশন প্রতিনিয়ত হচ্ছে। প্রধানত মিউটেশন (জিনের গঠনগত পরিবর্তন), জিন ফ্লো, জেনেটিক ড্রিফট (জিনের স্থানান্তর) ইত্যাদি কারণে প্রাণী দেহে মাইক্রোইভোলুশন হয়। আমাদের যে ক্যান্সার হয়, এটাও একপ্রকার ইভোল্যুশন (মাইক্রো)। ক্যান্সার হলে কোষের ডিএনএ’র স্বাভাবিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে যায়, ফলে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি হয়, কিছু প্রোটিন বা মলিক্যুলের উৎপাদন কমে বা বেড়ে যায় কিন্তু এর ফলে মানুষ কখনো বানর বা হনুমান হয়ে যায় না!!
.
মূলকথা হলো, মাইক্রোইভোলুশনের মাধ্যমে দেহের বিশেষ করে, কোষের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু তাতে একধরণের প্রাণী/উদ্ভিদ অন্য কোনো প্রাণী বা উদ্ভিতে রূপান্তরিত হয়ে যায় না বা বাইরের (ফেনোটিপিক্যাল) গঠনগত পরিবর্তন হয় না।
.
আরো একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার, আমরা প্রায়ই শুনি বানর, শিম্পাঞ্জি সাথে আমাদের ডিএনএ’র অনেক মিল, তাই আমরা ধরে নিতেই পারি এদের সাথে হয়তো আমাদের এক কালে সাদৃশ্যতা ছিল।এটাও অজ্ঞতার এক বহিঃপ্রকাশ।
.
যারা মলিকুলার বায়োলজি ভালো জানে তাদের জন্য বুঝা অনেক সহজ, ডিএনএ’র মিল থাকলেই সবকিছু হয়ে যায় না। ডিএনএ’ই শেষ কথা নয়, ডিএনএ থেকে আর.এন.এ হয়, তার পরে প্রোটিন তৈরী হয়। প্রোটিন হলো সব কিছুর মুলে। অনেকেই জানে না, একই জীন (পার্ট অফ ডিএনএ) থেকে বিভিন্ন ধরণের আর.এন.এ. তৈরী হতে পারে, একই আর.এন.এ. বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন তৈরী করতে পারে, একই প্রোটিনের বিভিন্ন আইসোফর্ম (দেখতে একই কিন্তু কাজ আলাদা) থাকতে পারে। তার মানে ডিএনএ’র মিল হলেই সবকিছু হয়ে যায় না। ব্যাক্টেরিয়ার ডিএনএ আর আমাদের ডিএনএ একই জিনিস দিয়ে তৈরী, তাই বলে ব্যাক্টেরিয়ার ডিএনএ যে কাজ আমাদের ডিএনএ কি একই কাজ করে? অবশ্যই নয়। প্রাণীদের ডিএনএ র সাদৃশ্য থাকতে পারে এবং থাকাটা স্বাভাবিক, মূল পার্থক্য হলো তাদের কাজে এবং এখানেই সবাই স্বাতন্ত্র ও আলাদা।
(ইন শা আল্লাহ চলবে)
==============================
লেখকঃ সাইফুর রাহমান

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *