হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ। বাংলাদেশের প্রখ্যাত ওয়ায়েজ। একই সঙ্গে তিনি লেখক ও গবেষক। ইতোমধ্যই বাজারে তার ৩ টি বই ব্যাপক জপ্রিয়তা লাভ করেছে।
তিনি প্রতি বছর দেশে ও দেশের বাইরে প্রায় ৩০০ মাহফিল করে থাকেন। বর্তমানে বয়ানের জগতে তরুণদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় বক্তা তিনি।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার দনিয়াতে রয়েছে তার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা ‘মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।’ এ মাদরাসায় হিফজ বিভাগ, কিতাব বিভাগ ও ফতোয়া বিভাগ চালু রয়েছে।
এ বছর নতুন বিভাগ ‘ওয়াজ প্রশিক্ষণ কোর্স’ নামে এক বছর মেয়াদি একটি বিভাগ চালু করা হয়েছে। রমজানরে পর এ বিভাগে ভর্তি শুরু হবে।
এ বিভাগের নানা দিক নিয়ে কথা হয় ‘মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা’র প্রতিষ্ঠতা পরিচালক মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ’র সঙ্গে।
‘ওয়াজ প্রশিক্ষণ’ বিভাগে চালুর পেছনে কারণ কী?
‘ওয়াজ প্রশিক্ষণ’ বিভাগে চালুর পেছনে কারণ হলো, আহলে আলেমদের অনেকেই বয়ানের ময়দানে আছেন। সবাই তো বড় আলেম নন। তাই অনেক সময় জয়িফ-দুর্বল কথা বলে ফেলেন। আহলে হাদিস বা লা মাযহাবিগণ এর সুযোগ নিয়ে আহলে হকদের বদনাম করে থাকে।
আবার অনেকে আছেন পূর্ণ মাওলানা না হয়েই বয়ানের ময়দানে নেমে যান। তাদের একটু গাইড করলে হয়তো ভুল ত্রুটি থেকে বাঁচতে পারবে। ভালো বয়ান করতে পারবে। কেননা, তারা ময়দানে নেমে পড়েছেন। তাদের তো ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। তাদের বললেও হয়তো ফিরবেন না। তাই যদি তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জাতির সামনে সঠিক কথগুলো পৌঁছানো গেলেই ভালো।
আবার দেখা যায় জুমার মসজিদগুলোতে খতিবগণ বিষয় ভিত্তিক কথা বলতে পারেন না বা কীভাবে কোন বিষয় উপস্থাপন করতে হয় তার অনুশীলন না থাকায় ঝামেলা হয়। তাই এদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গঠনমূলক আলোচনায় সহযোগিতা করাই ওয়াজ প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য।
বিভাগটি চালু করার আগে বড় কোন আলেমের পরামর্শ নেয়া হয়েছিলো কি?
আলহামদু লিল্লাহ! বিভাগটি চালু করার পূর্বে বাংলাদেশের অন্যতম আলেমে দীন আল্লামা মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদসহ অনেক বড় আলেমের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে। তারা এটা সমর্থন করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন এবং এর প্রয়োজনের কথাও বলেছেন।
এছাড়া যাত্রবাড়ীর হজরত আল্লামা মাহমুদুল হাসান ও আল্লামা মুফতি দেলোয়ার হোসাইন সাহেবের মন্তব্য হলো বর্তমানে ওয়াজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ফায়দা হচ্ছে।
কেননা, সাধারণ মুসলমানের সবাই মাদরাসায় পড়েন না। ওয়াজ মাহফিলে সব ধরনের মানুষ উপস্থিত হয়ে থাকেন। এতে তাদের ঈমান, আকিদা ও আমল পরিশুদ্ধ হয়। ওয়াজের ময়দান দীনি খেদমতের বিশাল এক ময়দান।
বাংলাদেশে এমন বিভাগ অন্য কোন মাদরাসায় অাছে বলে জানা নেই। আপনি কীসের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে এটা চালু করছন?
এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণ হলো, অন্য সব বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও ওয়াজ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই । তাই আমি এ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিই। অনলাইনে/অফলাইনে অনেক বক্তার বয়ান সামনে আসে। যা খুব বেশি আপত্তিকর মনে হয়।
তাদের আপত্তিকর দিকগুলো নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই আমার এ আয়োজন। যাতে তাদের একটি নিয়মতান্ত্রিকতায় নিয়ে আসা যায়। কেননা, যারা জাতির সামনে কথা বলেন তাদের কথায় ত্রুটি থাকা কোনভাবেই কাম্য নয়।
এ বিভাগে কী কী পড়ানো হবে?
আমরা এ বিভাগে সপ্তায় একদিন ক্লাস নেবো। তবে কেউ নিয়মিত থাকতে চাইলে সে সুযোগও আছে। আর এতে দরসুল কুরআন, দরসুল হাদিস, তাফসিরে ইবনে কাসির, বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও হাদিস, বাচনভঙ্গি, উপস্থাপনা, সঠিক বাংলাভাষার প্রয়োগ শেখানো হবে।
ইফতার তামরিনের মতো করে তাদের দলিলসহ বিষয়ভিত্তিক বয়ান লেখানো হবে। ফেরাকে বাতেলা সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে।
এখানে কি কেবল ওয়াজের সুর শেখানো হবে নাকি এর নির্দিষ্ট সিলেবাস আছে?
না, শুধু সুর নয়। বাস্তবভিত্তিক দালিলিক সাবলীল আলোচনাই প্রাধান্য পাবে। সুরে আমি নিজেও বিশ্বাসী নই। গঠনমূলক উপস্থাপনা, সুন্দর আলোচনায় মাধ্যমেও আকর্ষণ তৈরি করা যায়, মানুষকে মাঠে বসিয়ে রাখা যায়। এ বিভাগের জন্য আমাদের তৈরি একটি বিশেষ সিলেবাস থাকবে।
‘ওয়াজ প্রশিক্ষণ’ নামটা নিয়ে অনেকেই আপত্তি করছেন। এ বিষয়ে কী বলবেন?
ওয়াজ প্র্রশিক্ষণ নাম নিয়ে যাদের আপত্তি তারা ওয়ায়েজদের নিয়েও আপত্তি করে থাকেন। এর ওয়াজ ভালো নয়, ওর ওয়াজে এ ত্রুটি! আসলে যে এ বিষয়ে কাজ করা দরকার তা নিয়ে কারো ভাবনা নেই, কেউ এগিয়ে আসে না।
আমরা প্রথমে এর নাম দিয়েছিলাম ‘তাখাস্ সুস ফিল বয়ান ওয়াল ইরশাদ।’ পরে আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে, এর নাম হবে ‘ওয়াজ প্রশিক্ষণ কোর্স।’
যেহেতু তারা বয়ান শিখবে, ওয়াজ শিখবে তাই এর নাম ওয়াজ প্রশিক্ষণ হওয়াই কাম্য। ওয়াজ শব্দটা তো মন্দ নয়। আমার কাছে এ নামই যৌক্তিক। আর এখানে আপত্তি তোলার কী আছে তা আমি বুঝি না। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যেখানে নাহু ছরফের কোর্স হয় সেখানে ওয়াজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকবে না বা এটা নিয়ে আপত্তি করার কী আছে তা আমার বোধগম্য নয়।
প্রশিক্ষণ দিবেন কে কে?
প্রশিক্ষণে আমি প্রধান থাকবো। আর আমাদের মারকাযের শিক্ষকগণ থাকবেন। এর জন্য যে আলাদা প্রশিক্ষকের প্রয়োজন আছে বিষয়টি তেমন নয়। অাগ্রহী শিক্ষার্থীদের কথা বলার নানা দিক শেখানো হবে, উপস্থাপনা শেখানো হবে।
এর জন্য আমাদের মারকাযে প্রশিক্ষিত উপস্থাপক ও দক্ষ আলেম রয়েছেন। আমরা মাঝে মাঝে বাংলাদেশের বিখ্যাত ওয়ায়েজদের এনেও তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।
সৌজন্যে আওয়ার ইসলাম
Leave Your Comments