নাস্তিকদের ভেল্কিবাজির সাতকাহন – ২১
.
আমাদের আড্ডাটির কথাতো আগেই বলেছি। সাপ্তাহিক আড্ডা। শিক্ষামূলক বটে। একেক সপ্তাহে একেক টপিকের উপর আলোচনা চলে।
আমি আর সাজিদ মাগরিবের নামাজ পড়ে এগুচ্ছিলাম। উদ্দেশ্য- আড্ডাস্থল। আজ আড্ডা হচ্ছে সেন্ট্রাল মসজিদের পেছনে। অই দিকটায় একটা মাঝারি সাইজের বট গাছ আছে। বটতলাতেই আজ আসর বসার কথা।
.
খানিকটা দূর থেকে দেখলাম আড্ডাস্থলে বেশ অনেকজনের উপস্থিতি। কেউ একজন যেন দাঁড়িয়ে হাত নেঁড়ে নেঁড়ে কথা বলছে।
তাকে দেখে শামসুর রাহমানের কবিতার দুটি লাইন মনে পড়ে গেলো-
.
‘স্বাধীনতা তুমি-
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি লাগা সতেজ ভাষণ।’
.
আড্ডাস্থলে পৌঁছে দেখি হুলস্থুল কান্ড। আলোচনা তখন আর আলোচনায় নেই, বাড়াবাড়িতে রূপ লাভ করেছে।
.
দাঁড়িয়ে হাত নেঁড়ে যে কথা বলছিলো, সে হলো রূপম। ঢাবির ফিলোসপির ষ্টুডেন্ট। এথেইজমে বিশ্বাসী। তার মতে, ধর্ম কিছু রূপকথার গল্প বৈ কিছু নয়। সে তর্ক করছিলো হাসনাতের সাথে। হাসনাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্থ্রোপোলজিতে পড়ে।
.
রূপমের দাবি- একমাত্র নাস্তিকতাই স্বচ্চ, সৎ আর বিজ্ঞানভিত্তিক কথা বলে। কোন প্যাঁচগোচ নেই, কোন দুই নাম্বারি নেই, কোন ফ্রডগিরি নেই। যা বাস্তব, যা বিজ্ঞান সমর্থন করে – তাই নাস্তিকতা।
.
মোদ্দাকথা, নাস্তিকতা মানে প্রমাণিত সত্য আর স্বচ্চতার দিশা।
হাসনাতের দাবি- ধর্ম হলো বিশ্বাসের ব্যাপার। আর বিশ্বাসের ব্যাপার বলেই যে একে একেবারে ‘রূপকথা’ বলে চালিয়ে দিতে হবে, তা কেনো?
ধর্ম ধর্মের জায়গায়, বিজ্ঞান বিজ্ঞানের জায়গায়। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সামঞ্জস্যতা দেখাতে গিয়ে সে আলবার্ট আইনষ্টাইন সহ বড় বড় কিছু বিজ্ঞানী আর দার্শনিকদের মন্তব্য কোট করতে লাগলো।
.
আমি গিয়ে সাকিবের পাশে বসলাম। তার হাতে বাদাম ছিলো। একটি বাদাম ছিলে মুখে দিলাম।
.
সাজিদ বসলো না।
সে রূপমের পাশে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখলো। বললো, ‘এতো উত্তেজনার কি আছে রে?’
.
-‘উত্তেজনা হবে কেনো?’- রূপম বললো।
– ‘তোকে দেখেই মনে হচ্ছে অনেক রেগে আছিস। এ্যানিথিং রং?’
হাসনাত বলে উঠলো, ‘উনি নাস্তিকতাকে ডিফেন্ড করতে এসছেন। উনার নাস্তিকতা কতো সাঁধু লেভেলের, তা প্রমান করার জন্যই ভাষণ দেওয়া শুরু করেছেন।’
.
সাজিদ হাসনাতকে ধমক দেওয়ার সুরে বললো, ‘তুই চুপ কর ব্যাটা। তোর কাছে জানতে চেয়েছি আমি?’
.
হাসনাতকে সাজিদের এইভাবে ঝাঁড়ি দিতে দেখে আমি পুরো হাঁ করে রইলাম। হাসনাত সাজিদের সবচে প্রিয় বন্ধুদের একজন।আর এই রূপমের সাথে সাজিদের পরিচয় ক’দিনের? মনে হয় একবছর হবে। রূপমের জন্য তার এতো দরদ কিসের? মাঝে মাঝে সাজিদের এসব ব্যাপার আমার এতো বিদঘুটে লাগে যে, ইচ্ছে করে তার কানের নিচে দু চারটা লাগিয়ে দিই।
.
সাজিদের ধমক খেয়ে বেচারা হাসনাতের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। হবারই তো কথা।
.
সাজিদ আবার রূপমকে বললো, ‘বল কি হয়েছে?’
– ‘আমি বলতে চাইছি ধর্ম হলো গোঁজামিলপূর্ণ একটা জিনিস। সেই তুলনায় নাস্তিকতাই স্বচ্চ, সত্য আর বাস্তবতাপূর্ণ। কোন দুই নাম্বারি তাতে নেই।’
সাজিদ বললো, ‘তাই?’
– ‘হুম, Any doubt?’
.
সাজিদ হাসলো। হাসতে হাসতে সে এসে মিজবাহ’র পাশে বসলো। রূপম বসলো আমার পাশে। বটগাছের নিচের এই জায়গাটা গোলাকার করে বানানো হয়েছে। সাজিদ আর রূপম এখন মুখোমুখি বসা।
.
সাজিদ বললো, ‘বন্ধু, তুই যতোটা স্বচ্চ, সত্য আর সততার সার্টিফিকেট তোর বিশ্বাসকে দিচ্ছিস, সেটা এতোটা স্বচ্চ, সত্য আর সৎ মোটেও নয়।’
রূপম বললো, ‘মানে? কি বলতে চাস তুই? নাস্তিকরা ভূয়া ব্যাপারে বিশ্বাস করে? দুই নাম্বারি করে?’
– ‘হুম। করে তো বটেই। এটাকে জোর করে বিশ্বাসও করায়।’
– ‘মানে?’
সাজিদ নড়েচড়ে বসলো। বললো, ‘ খুলে বলছি।’
.
এরপরে সাজিদ বলতে শুরু করলো-
.
‘বিজ্ঞানীরা যখন DNA আবিষ্কার করলো, তখন দেখা গেলো আমাদের শরীরের প্রায় 96-98% DNA হলো নন-কোডিং, অর্থাৎ, এরা প্রোটিনে কোনপ্রকার তথ্য সরবরাহ করে না। 2-4% DNA ছাড়া বাকি সব DNA-ই নন-কোডিং। এগুলোর তখন নাম দেওয়া হলো- Junk DNA । Junk শব্দের মানে তো জানিস,তাইনা? Junk শব্দের অর্থ হলো আবর্জনা। অর্থাৎ, এই 98% DNA’র কোন কাজ নেই বলে এগুলোকে ‘বাতুল DNA’ বা ‘Junk DNA’ বলা হলো।
.
ব্যস, এটা আবিষ্কারের পরে বিবর্তনবাদী নাস্তিকরা তো খুশীতে লম্ফঝম্প শুরু করে দিলো। তারা ফলাও করে প্রচার করতে লাগলো যে, আমাদের শরীরে যে 98% DNA আছে, সেগুলো হলো Junk, অর্থাৎ, এদের কোন কাজ নেই। এই 98% DNA ডারউইনের বিবর্তনবাদের পক্ষে অনেক বড় প্রমান। তারা বলতে লাগলো- ‘মিউটেশনের মাধ্যমে এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতিতে রূপান্তরিত হবার সময় এই বিশাল সংখ্যক DNA আমাদের শরীরে রয়ে গেছে।
.
যদি কোন বুদ্ধিমান স্রষ্টা আমাদের সৃষ্টি করতো, তাহলে এই বিশাল পরিমাণ অকেজো, অপ্রয়োজনীয় DNA তিনি আমাদের শরীরে রাখতেন না। কিন্তু কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বার হাত ছাড়া, প্রকৃতির অন্ধ প্রক্রিয়ায় আমরা অন্য একটি প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছি বলেই এই বিশাল অপ্রয়োজনীয়, অকেজো DNA আমাদের শরীরে এখনো বিদ্যমান।’
.
বিবর্তনবাদীদের গুরু, বিখ্যাত বিবর্তনবাদী জীব বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স তো এই Junk DNA কে বিবর্তনবাদের পক্ষে বড়সড় প্রমাণ দাবি করে করে একটি বিশাল সাইজের বইও লিখে ফেলেন। বইটির নাম ‘The Selfish Gene’ ।
.
কিন্তু বিজ্ঞান অই Junk DNA তে আর বসে নেই।
.
বর্তমানে এপিজেনেটিক্সের গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, এতোদিন যে DNA কে Junk বলে বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, তার কোনকিছুই Junk নয়। আমাদের শরীরে এগুলোর রয়েছে নানারকম বায়োকেমিক্যাল ফাংশান। যেগুলোকে নাস্তিক বিবর্তনবাদীরা এতোদিন অকেজো, বাতিল,অপ্রয়োজনীয় বলে বিবর্তনের পক্ষে বড়সড় প্রমাণ বলে লাফিয়েছে, সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে- এসব DNA মোটেও অপ্রয়োজনীয়, অকেজো নয়। মানবদেহে এদের রয়েছে নানান ফাংশান। তারা বলতো, প্রকৃতির অন্ধ প্রক্রিয়ায় মানুষ অন্য একটি প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে বলেই এরকম অকেজো,নন ফাংশনাল DNA শরীরে রয়ে গেছে। যদি কোন সৃষ্টিকর্তা বিশেষভাবে মানুষকে সৃষ্টি করতো, তাহলে এরকম অপ্রয়োজনীয় জিনিস আমাদের শরীরে থাকতো না।
.
কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এসব DNA মোটেও নন-ফাংশনাল নয়। আমাদের শরীরে এদের অনেক কাজ রয়েছে। তাহলে বিবর্তনবাদীরা এখন কি বলবে? তারা তো বলেছিলো ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলেই এগুলো বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ। কিন্তু এগুলোর প্রয়োজন যখন জানা গেলো, তখনও কি তারা একই কথা বলবে? ডকিন্স কি তার ‘The Selfish Gene’ বইটা সংশোধন করবে? বিবর্তনবাদীরা কি তাদের ভুল শুধরে নিয়ে ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবে? বল দোস্ত, এইটা কি দুই নাম্বারি না?’
.
সাজিদ থামলো। রূপম বললো, ‘বিজ্ঞানের অগ্রগিতে এরকম দু একটি ধারণা পাল্টাতেই পারে। এটা কি চিটিং করা হয়?’
.
সাজিদ বললো, ‘না। কিন্তু বিজ্ঞান কোন ব্যাপারে ফাইনাল কিছু জানানোর আগেই তাকে কোন নির্দিষ্ট কিছু একটার পক্ষে প্রমাণ বলে চালিয়ে দেওয়া, প্রতিপক্ষকে এটা দিয়ে একহাত নেওয়া এবং এটার পক্ষে কিতাবাদি লিখে ফেলাটা চিটিং এবং নাস্তিকরা তাই করে।’
.
সাজিদ বললো, শুধু Junk DNA নয়। আমাদের শরীরে যে এপেন্ডিক্স আছে, সেটা নিয়েও কতো কাহিনী তারা করেছে। তারা বলেছে, এপেন্ডিক্স হলো আমাদের শরীরে অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ। আমাদের শরীরে এটার কোন কাজ নেই। যদি কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বা আমাদের সৃষ্টি করতো, তাহলে এপেন্ডিক্সের মতো অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ আমাদের শরীরে রাখতো না। আমরা শিম্পাঞ্জী জাতীয় একপ্রকার এপ থেকে প্রকৃতির অন্ধ প্রক্রিয়ায় বিবর্তিত বলেই এরকম অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ আমাদের শরীরে রয়ে গেছে।এটার কোন কাজ নেই।
.
এটাকে তারা বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ বলে চালিয়ে দিতো।
.
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, এপেন্ডিক্স মোটেও কোন অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ নয়। আমাদের শরীরে যাতে রোগ জীবাণু, ভাইরাস ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য যে টিস্যুটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেটার নাম লিম্ফ টিস্যু। এই টিস্যু আমাদের শরীরে অনেকটা সৈনিক তথা প্রহরীর মতো কাজ করে। আর, আমাদের বৃহদন্ত্রের মুখে প্রচুর লিম্ফ টিস্যু ধারণকারী যে অঙ্গটি আছে, তার নাম এপেন্ডিক্স।
যে এপেন্ডিক্সকে একসময় ‘অকেজো’ ভাবা হতো, বিজ্ঞান এখন তার অনেক ফাংশানের কথা আমাদের জানাচ্ছে।বিবর্তনবাদীরা কি আমাদের এ ব্যাপারে কোনকিছু নসীহত করতে পারে? এখনো কি বলবে এপেন্ডিক্স অকেজো? বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ?’
.
রূপম চুপ করে আছে। সাজিদ বললো, এতো গেলো মাত্র দুটি ঘটনা। তুই কি মিসিং লিঙ্কের ব্যাপারে জানিস রূপম?’
.
আমার পাশ থেকে রাকিব বলে উঠলো, ‘মিসিং লিঙ্ক আবার কি জিনিস?’
সাজিদ রাকিবের দিকে তাকালো। বললো, ‘বিবর্তনবাদীরা বলে থাকে একটা প্রাণী থেকে ধীরে ধীরে অন্য একটা প্রাণী বিবর্তিত হয়।তারা বলে থাকে- শিম্পাঞ্জি থেকে আমরা, মানে মানুষ এসেছে বিবর্তন প্রক্রিয়ায়। যদি এরকম হয়, তাহলে শিম্পাঞ্জি থেকে কিন্তু এক লাফে মানুষ চলে আসেনি।
.
অনেক অনেক ধাপে শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষ এসেছে। ধর, ১ সংখ্যাটা বিবর্তিত হয়ে ১০ এ যাবে। এখন ১ সংখ্যাটা কিন্তু এক লাফে ১০ হয়ে যাবে না। তাকে অনেকগুলো মধ্যবর্তী পর্যায় (২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯) অতিক্রম করে ১০ হতে হবে। এই যে ১০ এ আসতে সে অনেকগুলো ধাপ (২, ৪, ৭, ৮, ৯) অতিক্রম করলো, এই ধাপগুলোই হলো ১ এবং ১০ এর মিসিং লিঙ্ক।’
.
রাকিব বললো, ‘ও আচ্ছা, বুঝলাম। শিম্পাঞ্জি যখন মানুষে বিবর্তিত হবে, প্রাথমিক পর্যায়ে তার মধ্যে কিছু মানুষের কিছু শিম্পাঞ্জীর বৈশিষ্ট্য আসবে। এই বৈশিষ্ট্য সম্বলিত পর্যায়টাই মিসিং লিঙ্ক,তাই না?’
.
– ‘হুম। যেমন ধর, মৎস্য কন্যা। তার অর্ধেক শরীর মাছ, অর্ধেক শরীর মানুষ। তাহলে তাকে মাছ এবং মানুষের একটি মধ্যবর্তী পর্যায় হিসেবে ধরা যায়। এখন কেউ যদি দাবি করে যে মাছ থেকে মানুষ এসেছে, তাহলে তাকে ঠিক মৎস্য কন্যার মতো কিছু একটা এনে প্রমাণ করতে হবে। এইটাই হলো মিসিং লিঙ্ক।’
.
রূপম বললো, ‘তো এইটা নিয়ে কি সমস্যা?’
সাজিদ আবার বলতে লাগলো, ‘বিবর্তনবাদ তখনই সত্যি হবে যখন এরকম সত্যিকার মিসিং লিঙ্ক পাওয়া যাবে।পৃথিবীতে কোটি কোটি প্রাণী রয়েছে। সেই হিসাবে বিবর্তনবাদ সত্য হলে কোটি কোটি প্রাণীর বিলিয়ন বিলিয়ন এরকম মিসিং লিঙ্ক পাওয়া যাওয়ার কথা। কিন্তু মজার ব্যাপার, এরকম কোন মিসিং লিঙ্ক আজ অবধি পাওয়া যায়নি। গত দেড়শো বছর ধরে অনেক অনেক ফসিল পাওয়া গেছে কিন্তু সেগুলোর কোনটিই মিসিং লিঙ্ক নয়। বিবর্তনবাদীরা তর্কের সময় এই মিসিং লিঙ্কের ব্যাপারটা খুব কৌশলে এড়িয়ে যায়। কেউ কেউ বলে, ‘আরো সময় লাগবে। বিজ্ঞান একদিন ঠিক পেয়ে যাবে,ইত্যাদি।’
.
কিন্তু, ২০০৯ সালে বিবর্তনবাদীরা একটা মিসিং লিঙ্ক পেয়ে গেলো যা প্রমাণ করে যে মানুষ শিম্পাঞ্জী গোত্রের কাছাকাছি কোন এক প্রাণী থেকেই বিবর্তিত। এটার নাম দেওয়া হলো- Ida.
.
বিবর্তনবাদ দুনিয়ায় রাতারাতি তো ঈদের আমেজ নেমে আসলো। তারা এটাকে বললো ‘The eighth wonder of the world’ ।
.
কেউ কেউ তো বলেছিলো, ‘আজ থেকে কেউ যদি বলে বিবর্তনবাদের পক্ষে কোন প্রমাণ নেই, তারা যেন Ida কে প্রমাণ হিসেবে হাজির করে। বিবর্তনবাদীদের অনেকেই এইটাকে ‘Our Monalisa’ বলেও আখ্যায়িত করেছিলো। হিষ্ট্রি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফী, ডিসকভারি চ্যানেলে এটাকে ফলাও করে প্রচার করা হলো। সারা বিবর্তনবাদ দুনিয়ায় তখন সাজ সাজ রব।
.
কিন্তু, বিবর্তনবাদীদের কান্নায় ভাসিয়ে ২০১০ সালের মার্চে টেক্সাস ইউনিভার্সিটি, ডিউক ইউনিভার্সিটি আর ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো’র গবেষক বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দেখালেন যে, এই Ida কোন মিসিং লিঙ্ক নয়। এটা Lamour নামক একটি প্রাণীর ফসিল।তাদের এই রিসার্চ পেপার যখন বিভিন্ন নামীদামী সাইন্স জার্নালে প্রকাশ হলো, রাতারাতি বিবর্তনবাদ জগতে শোক নেমে আসে। বল রূপম, এইটা কি জালিয়াতি নয়? একটা আলাদা প্রাণীর ফসিলকে মিসিং লিঙ্ক বলে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়া কি চিটিং নয়?’
.
এরচেয়েও জঘন্য কাহিনী আছে এই বিবর্তনবাদীদের। ১৯১২ সালে Piltdown Man নামে ইংল্যান্ডের সাসেক্সে একটি জীবাশ্ম পাওয়া যায় মাটি খুঁড়ে। এটিকেও রাতারাতি ‘বানর এবং মানুষের’ মিসিং লিঙ্ক বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। এটাকে তো ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য রেখে দেওয়া হয়। বানর এবং মানুষের এই মিসিং লিঙ্ক দেখতে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসতো।
.
কিন্তু ১৯৫৩ সালে কার্বণ টেষ্ট করে প্রমাণ করা হয় যে, এটি মোটেও কোন মিসিং লিঙ্ক নয়। এটাকে কয়েকশো বিলিয়ন বছর আগের বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।গবেষণায় দেখা যায়, এই খুলিটি মাত্র ৬০০ বছর আগের আর এর মাড়ির দাঁতগুলো ওরাং ওটাং নামের অন্য প্রাণীর। রাতারাতি বিবর্তন মহলে শোক নেমে আসে।
.
বুঝতে পারছিস রূপম, বিবর্তনবাদকে জোর করে প্রমাণ করার জন্য কতোরকম জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে?
একটা ভূয়া জিনিসকে কিভাবে বছরের পর বছর ধরে প্রমাণ হিসেবে গিলানো হয়েছে?
.
নেট ঘাঁটলে এরকম জোঁড়াতালি দেওয়া অনেক মিসিং লিঙ্কের খবর তুই এখনো পাবি। মোদ্দাকথা, এই নাস্তিকতা, এই বিবর্তনবাদ টিকে আছে কেবল পশ্চিমা বস্তুবাদীদের ক্ষমতা আর টাকার জোরে।
.
এই বিবর্তনবাদই তাদের সর্বশেষ সম্বল ধর্মকে বাতিল করে দেওয়ার। তাই এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, দাঁড় করানোর জন্য, মানুষকে গিলানোর জন্য তাদের যা যা করতে হয় তারা করবে। যতো জালিয়াতির আশ্রয় নিতে হয় তারা নিবে।
.
এরপরও কি বলবি তোর নাস্তিকতা সাঁধু? সৎ? প্রতারণাবিহীন নির্ভেজাল জিনিস?
.
রূপম কিছু না বলে চুপ করে আছে। হাসনাত বলে উঠলো, ‘ইশ! এতক্ষণ তো নাস্তিকতাকে নির্ভেজাল, সৎ, সাঁধু, কোন দুই নাম্বারি নেই, কোন ফ্রডবাজি নেই বলে লেকচার দিচ্ছিলি। এখন কিছু বল?’
.
এশা’র আজান পড়লো। আমরা নামাজে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম।আমাদের সাথে রাকিব আর হাসনাতও আছে। অল্প একটু পথ হাঁটার পরে আমি হঠাৎ থেমে গেলাম। সাজিদ বললো, ‘তোর আবার কি হলো রে?’
আমি রাগি রাগি চেহারায়, বড় বড় চোখ করে বললাম, ‘তুই ব্যাটা হাসনাতকে তখন ওইভাবে ঝাঁড়ি দিয়েছিলি কেনো?’
.
সাজিদ হাসনাতের দিকে তাকালো। মুচকি হেসে বললো, ‘শেক্সপীয়র বলেছেন – ‘Sometimes I have to be cruel just to be kind’…..
আমরা সবাই হা হা হা করে হেসে ফেললাম।
=====================================
(এখানে আরো কিছু এড করা যেতো। যেমন- কৃত্রিম প্রাণ তৈরির ঘটনা, এপেন্ডিক্সের মতো আরো কিছু অঙ্গ যেমন – ককিক্স ইত্যাদি। লেখাটির বেশি দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে বলে তা করা হয়নি।)
তথ্যসুত্রঃ
Junk DNA এর রেফারেন্স-
১/ Report of ‘The Guardian’- Breakthrough study overturns theory of ‘junk DNA’ in genome (5 September 2012)
2/ Report Of ‘New York Times’- Bits of Mystery DNA, Far From ‘Junk,’ Play Crucial Role (5 September 2012)
3/ Report Of ‘Evolutionnews’- Junk No More: ENCODE Project Nature Paper Finds “Biochemical Functions for 80% of the Genome” (September 05, 2012)
‘এপেন্ডিক্স’ এর রেফারেন্সঃ-
4/ Report Of ‘Science Daily’- Immune cells make appendix ‘silent hero’ of digestive health ( November 30, 2015)
5/ Report Of ‘Science Daily’- Appendix Isn’t Useless At All: It’s A Safe House For Good Bacteria ( October 08, 2007)
6/ Report Of ‘Fox News’- Appendix May Produce Good Bacteria, Researchers Think (October 05, 2007)
মিসিং লিঙ্ক ‘Ida’ এর রেফারেন্সঃ-
7/ Report Of ‘Daily Mail’- Missing link? Ida was not even a close relative say fossil experts ( October 22, 2009)
8/ Report Of ‘Ideacenter’- The Rise and Fall of Missing Link Superstar “Ida”
জালিয়াতিপূর্ণ ফসিল ‘Piltdown Man’ এর রেফারেন্সঃ-
9/ Report Of ‘Science Mag’- Study reveals culprit behind Piltdown Man, one of science’s most famous hoaxes (August 09, 2016)
10/ Report Of ‘Live Science’- Piltdown Man: Infamous Fake Fossil (September 30, 2016)
=====================================
লেখকঃ আরিফ আজাদ
.
#সত্যকথন
Leave Your Comments