নাস্তিক-মুক্তমনা লেখক ‘S.P.’ এর ইসলামবিদ্বেষী পোস্টের জবাবের #৩য়_পর্ব

নাস্তিক-মুক্তমনা লেখক ‘S.P.’ এর ইসলামবিদ্বেষী পোস্টের জবাবের #৩য়_পর্ব আজ পোস্ট করছি।
.
গল্প বলা স্টাইলে নাস্তিকতা(আসলে ইসলা্মবিদ্বেষ) প্রচার করে যিনি ইতিমধ্যেই নাস্তিকমহলে ব্যাপক বাহবা কুড়িয়েছেন।অনেকেই ওনার একাউন্টে গিয়ে নিজের অজান্তেই তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে পারেন বিধায় তার সম্পূর্ণ নাম উল্লেখ না করে শুধু নামের অদ্যাক্ষর উল্লেখ করলাম।যারা আগেই তার পোস্ট পড়েছেন, তারা এমনিতেই চিনতে পারবেন।
.
[এই সিরিজের ১ম ও২য় পর্বের জন্য দেখুন #সত্যকথন_৯৯ ও #সত্যকথন_১০০ ]
.
S.P. লিখেছে –
.
//আয়াতটা [সুরা তাওবা ৫] যদি ভাল করে পড়ে থাকো তাহলে খেয়াল করেছো কি, শুরুতে কি বলা হয়েছে- ‘অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে’- এর মানে কি? এর মানে আরব পৌত্তলিকদের ধর্ম বিশ্বাস ছিল ১২ মাসের মধ্যে বিশেষ চারটি মাস হচ্ছে নিষিদ্ধ মাস বা পবিত্র মাস তাদের দেবতাদের কাছে। এই মাসগুলোতে আরবের কোন গোত্রই যুদ্ধ বিগ্রহ রক্তপাতে জড়াতো না। এই সময় সব আরব গোত্র নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করত। মজাটি কি জানো, পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা ইসলামের আল্লাহ কি করে পৌত্তলিক কাফেরদের এইসব ‘পবিত্র মাসের’ বিশ্বাসকে নিজেও পবিত্র বলে গোণ্য করেন? তিনি না ইব্রাহিম নবী মাবুত! তিনি না মুসা ঈসার মাবুত? কই তুমি একজনও ইহুদী খ্রিস্টানকে পাবে যারা বিশেষ আরবি চারটি মাসকে পবিত্র বা নিষিদ্ধ বলে মান্য করে বা সেসময় করত? পাবে না।//
.
.
>>>>> আরবের পৌত্তলিকরা পালন করত বলেই যে সেটা একত্ববাদী কিংবা ইব্রাহিমি (Abrahamic) রীতি হবে না এমন কোন কথা নেই। আরবের মুশরিকরা এগুলোকে দেবতাদের পবিত্র মাস হিসাবে গণ্য করত না বরং আল্লাহর পবিত্র মাস হিসাবে গণ্য করত। কুরাইশ আরবরা ছিল ইব্রাহিম(আ) ও ইসমাঈল(আ) এর বংশধর।বংশ পরম্পরায় বেশ কিছু ইব্রাহিমি রীতি তাদের মধ্যে অবশিষ্ট ছিল।ইসলাম সেগুলো বহাল রেখেছে।হারাম মাস তার মধ্যে একটি।ইসলাম কোন নতুন ধর্ম নয়, সব কিছু বাতিল করে দেয়া ইসলামের নীতি নয়; ইসলাম সকল নবী-রাসুলের ধর্ম।ইসলাম শুধু তাদের মধ্যকার নব উদ্ভাবনগুলো পরিত্যাগ করতে বলেছে।
.
আমাদের আলোচ্য ইসলামবিদ্বেষী লেখক দাবি করেছেন যেঃ ইসলাম মূলত পৌত্তলিকদের আচরিত হারাম(পবিত্র/sacred) মাসের বিধান গ্রহণ করেছে এবং হারাম মাসের রীতি ইহুদি-খ্রিষ্টান কোন আব্রাহামিক জাতির ভেতর ছিল না।চলুন দেখি বাস্তবতার নিরিখে এই দাবি কতটুকু সত্য।
.
জাহিলিয়াতে যুগে কুরাইশ আরবদের মধ্যে হারাম মাসের রীতি ছিল বটে; কিন্তু তা ছিল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান থেকে বিচ্যুত অবস্থায়। আল্লাহর নির্ধারিত হারাম মাস হচ্ছেঃ যিলকদ, যিলহজ, মুহাররাম ও রজব।কিন্তু কুরাইশরা আল্লাহ নির্ধারিত হারাম মাসকে বদলে ফেলেছিল।তারা এই মাসগুলো আগু-পিছু করে পালন করত। মোটেও খাঁটি ইব্রাহিমি রীতিতে পালন করত না। তাদের এই কাজের সমালোচনা করা হয়েছে সুরা তাওবার ৩৭নং আয়াতে। [১]
.
এর আগের আয়াতে(সুরা তাওবা ৩৬) আল্লাহর আদি অকৃত্রিম বিধানের বর্ণণা করা হয়েছে এবং মুসলিমদেরকে হারাম মাসের বিধান জানানো হয়েছে। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) জানিয়ে দেন আল্লাহর নির্ধারিত হারাম মাস হচ্ছেঃ যিলকদ, যিলহজ, মুহাররাম ও রজব। [সহীহ বুখারী ৪৬৬২ ও সহীহ মুসলিম ১৬৭৯ দ্রষ্টব্য] কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসলামে হারাম মাসের রীতি আরবের পৌত্তলিক কুরাইশদের থেকে ভিন্ন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) সৃষ্টির আদি থেকে চলে আসা সেই চিরন্তন রীতির দিকে মানুষকে আহ্বান করেছেন।
.
এখন প্রশ্ন হচ্ছেঃ ইহুদি-খ্রিষ্টান এইসব জাতির মাঝে কি কোন প্রকার হারাম মাসের(sacred months) রীতি ছিল?
.
ইসলাম ও ইহুদি উভয় ধর্মেই চান্দ্র মাসে বর্ষ গণণা হয়।উভয় ধর্মের ক্যালেন্ডারের ভেতরে মিল রয়েছে।আমরা সহীহ হাদিসে দেখতে পাই যে মদীনার ইহুদিরা আশুরার রোজা পালন করত। [২]
.
ইহুদি ও ইসলাম উভয় ধর্মের ক্যালেন্ডারের পারস্পরিক সম্পর্ক জানার জন্য বেন আব্রাহামসন ও যোসেফ কাৎজ এর এই গবেষণাপত্রটি দেখা যেতে পারেঃ “The Islamic Jewish Calendar How the Pilgrimage of the 9th of Av became the Hajj of the 9th of Dhu’al-Hijjah” [৩]
.
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে মূলত তিনটি হাজ্জ{হিব্রু ‘হাগ’, ইংরেজি festival/pilgrimage} এর বিবরণ রয়েছে{Tanakh, Shemot chapter 23 দ্রষ্টব্য}। ইহুদিদের pilgrimage এর মাসগুলো পবিত্র মাস(sacred month) হিসাবে গণ্য হত এবং এ সময়ে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল। [৪]
.
ইহুদিদের ২য় টেম্পল ধ্বংসের পর হিব্রু ক্যালেন্ডারের আভ(Av) মাসের ৯তারিখে আরো একটি pilgrimage যুক্ত হয়। অতএব মোট pilgrimage হয় ৪টি।অর্থাৎ ৪টি পবিত্র মাস।
.
আরবের ইহুদিদের মধ্যেও এই পবিত্র মাসের রীতি প্রচলিত ছিল।অথচ আমাদের আ্লোচ্য নাস্তিক মহোদয় দিব্যি বলে দিলেন পবিত্র মাসের এ রীতি নাকি পৌত্তলিক রীতি, ইহুদি-খ্রিষ্টান কারো মধ্যে এমন কিছু ছিল না!!
.
আর খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে যা বলব— আমি স্বীকার করি যে খ্রিষ্টানরা হারাম(পবিত্র) মাস পালন করে না, তখনো করত না। কিন্তু এটি সর্বজনবিদিত যেঃ খ্রিষ্টধর্ম রোমে গিয়ে ঈসায়ী ধর্ম থেকে এক পৌত্তলিক ধর্মে পরিনত হয়।তাওরাত অনুসারী বনী ইস্রাঈলের ইব্রাহিমি (Abrahamic) রীতিনীতি বাদ দিয়ে তারা বিভিন্ন রোমক সংস্কৃতি গ্রহণ করে।সেন্ট পলের দর্শন মানতে গিয়ে তারা অনেক আগেই তাওরাতের আইন বর্জন করেছে।কাজেই খ্রিষ্টানদের থেকে হারাম মাস পালন আশা করা যায় না।ইহুদি বা খ্রিষ্টান কোন ধর্ম আমাদের কাছে দলিল নয়।তাদের গ্রন্থগুলো বিকৃত হয়েছে এবং আমরা মুসলিমরা তাদের সকল রীতি-নীতির সাথে একমত নই। শুধুমাত্র আমাদের নাস্তিক মহোদয় হারাম মাসের বিধানকে ‘পৌত্তলিক’ বিধান সাব্যস্ত করলেন এবং এমন কোন কিছু ইহুদিরা পালন করত না বলে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলেন বিধায় ইহুদিদের এ রীতিগুলো সম্পর্কে আলোচনা করলাম।
.
[ চলবে, ইন শা আল্লাহ।
সিরিজের পরবর্তী পর্বে এই ইসলামবিদ্বেষী লেখকের আরো অনেকগুলো মিথ্যাচার ও অপব্যাখ্যার পোস্টমর্টেম করা হবে। আল্লাহু মুসতা’আন। ]
======
লেখকঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
#সত্যকথন
=======
তথ্যসূত্রঃ
.
[১] বিস্তারিত দেখুনঃ তাফসির ইবন কাসির(হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী), ৩য় খণ্ড, সুরা তাওবার ৩৭ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৬৭০-৬৭২
[২] সহীহ বুখারী ২০২৪,৩৩৯৭ ও সহীহ মুসলিম ১১৩০ দ্রষ্টব্য
[৩] ডাউনলোড লিঙ্কঃ https://goo.gl/TJcU9m
[৪] “The Islamic Jewish Calendar How the Pilgrimage of the 9th of Av became the Hajj of the 9th of Dhu’al-Hijjah”; By Ben Abrahamson and Joseph Katz; page 4
অথবা
http://www.alsadiqin.org/en/index.php…
(কমেন্টে স্ক্রীনশট দেয়া হল)

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *