আল্লাহ তাআলা মানুষ ছাড়া যত সৃষ্টি আছে তাদের জন্য পোশাকের একটি কুদরতি ব্যবস্থা রেখেছেন। উদ্ভিদের জন্য ছাল-বাকল , প্রাণীদের জন্য চামড়া ও চামড়ার ওপরের পশম তাদের পোশাক। যেসব প্রাণী ঠাণ্ডায় বাস করে, তাদের চামড়া এ পরিমাণ মোটা ও পশমবিশিষ্ট হয় যে তাদের দেহের হেফাজত হয়ে যায়। আর যেসব প্রাণী উষ্ণ এলাকায় বাস করে, তাদের পশম কম হয়ে থাকে। কুদরতিভাবে তাদের মধ্যে গরম সহ্য করা এবং উষ্ণ ভূমিতে বিচরণ করার যোগ্যতা বেশি থাকে।
মহান আল্লাহ মানুষের দেহে যে চামড়া দিয়েছেন, তা নরম হলেও বহিরাগত অনেক প্রভাব গ্রহণ করতে সক্ষম। তারা সাধারণত ঘন পশমমুক্ত। তাই পোশাকের প্রতি অধিক মুখাপেক্ষী।
পোশাক পাঁচ ধরনের
(১) ফরজ পোশাক : এমন পোশাক, যা দ্বারা সতর ঢেকে যায়।
(২) মুস্তাহাব পোশাক : এমন পোশাক, যা রাসুল (সা.)-এর পোশাকের মতো বা তাঁর পোশাকের খুব কাছাকাছি অথবা সমকালীন নেককার লোকদের পোশাকের মতো হয়।
(৩) মুবাহ ও জায়েজ পোশাক : এমন পোশাক, যার মধ্যে শরিয়তের সীমানার ভেতর থেকে সৌন্দর্যের প্রতি খেয়াল রাখা হয়।
(৪) মাকরুহ পোশাক : এমন পোশাক, যা পরিধান করার দ্বারা পরিধানকারীর অহংকার, প্রসিদ্ধি বা অন্যকে ছোট করা উদ্দেশ্য হয়।
(৫) হারাম পোশাক : পুরুষ মহিলার মতো এবং মহিলা পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। নাবালেগ ছেলে-মেয়ের বেলায়ও এ মাসআলা প্রযোজ্য। তবে যে এলাকায় নারী ও পুরুষের পোশাকের খুব বেশি পার্থক্য থাকে না, সেখানে পোশাক এক হওয়া হারামের মধ্যে গণ্য হবে না। তাদের পোশাকের মধ্যে পার্থক্য হবে হিজাব বা টুপি ইত্যাদি দ্বারা। (ফাতাওয়া শামি : ৫/২২৩, ফাতহুল বারি : ১০/৩৪৫, বুখারি : ২/৮৭৪, ইবনে মাজাহ : ১/৩৪৮, ২/২৯৯, নাইলুল আউতার : ৬/১২৬)
পুরুষ ও নারীর কাপড় পরিধানের উদ্দেশ্য সতর ঢাকা। যে কাপড় দ্বারা এ উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় না, তা পরাও জায়েজ নয়। এমনিভাবে মুসলমানের জন্য অমুসলমানের ধর্মীয় পোশাক পরিধান করা নাজায়েজ। যেমন—হিন্দুদের মতো ধুতি ও গলায় পৈতা পরা, কপালে সিঁদুর বা চন্দন লাগানো, বৌদ্ধদের মতো গেরুয়া পোশাক পরিধান করা, খ্রিস্টানদের মতো ক্রুশ বা ক্রুশের বিকল্প কিছু পরিধান করা ইত্যাদি। প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ। পুরুষের জন্য অহংকারবশত টাখনুর নিচে জামা-পায়জামা পরিধান করা মাকরুহে তাহরিমি। অহংকারের নিয়ত না থাকলে মাকরুহে তানজিহি। জখম ইত্যাদি ওজরের কারণে টাখনুর নিচে কাপড় পরা জায়েজ। মহিলাদের জন্য পূর্ণ পা ঢেকে মাটি পর্যন্ত কাপড় ঝুলিয়ে পরা উত্তম। টুপি পরিধান করা সুন্নত। রাসুল (সা.) সাদা টুপি বেশি পরিধান করতেন। টুপি গোল, লম্বা বা পাঁচকল্লি—যেকোনোটাই হতে পারে। নামাজ বা নামাজের বাইরে পাগড়ি পরিধান করা সুন্নত। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ৫/৩৩৩, আবু দাউদ : ২/২০৩, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৫/১২১)
বর্তমানে কোট, প্যান্ট, শার্ট মুসলমান-অমুসলমান-নির্বিশেষে সর্বস্তরের কর্মজীবী মানুষের পোশাকে পরিণত হয়েছে। এগুলো এখন বিশেষ কোনো ধর্মের পোশাক নয়। তাই এগুলো পরিধান করা নাজায়েজ হবে না। তবে এগুলো নেককার লোকদের পোশাক নয় বিধায় অনুত্তম নিঃসন্দেহে। পুরুষের জন্য সোনার আংটি বা চেইন পরিধান করা হারাম। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৬০, ফিকহে হানাফি কে উসুল ওয়া জাওয়াবেত)
কাপড় পরিধানের কয়েকটি সুন্নত
(১) জামা-পায়জামা, কামিজসহ সব ধরনের পোশাক পরিধানের সময় ডান হাত ও ডান পা আগে প্রবেশ করানো।
(২) পুরুষের জন্য পায়জামা, লুঙ্গি ও জামা, জুব্বা ও আবা-কাবা টাখনুর ওপরে রাখা।
(৩) সাধারণ কাপড় পরিধানের সময় এই দোয়া পড়া : ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি কাসানি হাজা, ওয়া রাজাকানিহি মিন গাইরি হাউলিম মিন্নি ওয়া লা কুওয়াহ্।’ আর নতুন কাপড় পরিধানের সময় এই দোয়া পড়া : ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি কাসানি মা উওয়ারি বিহি আউরাতি ওয়া আতাজাম্মালু বিহি ফি হায়াতি।’
(৪) বিসমিল্লাহ বলে কাপড় খোলা শুরু করা এবং খোলার সময় বাঁ হাত ও বাঁ পা আগে বের করা।
(৫) জুতা প্রথমে ডান পায়ে, তারপর বাঁ পায়ে পরা এবং খোলার সময় প্রথমে বাঁ পা, তারপর ডান পা থেকে খোলা।
(৬) নতুন কাপড় ক্রয় করলে পুরনো কাপড় গরিবদের দিয়ে দেওয়া উত্তম। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৮৪, ৫৮৫৫, তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৬০, আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৪১, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদিস : ২৪৯১০, মুসতাদরাক, হাদিস : ৭৪০৯)
Leave Your Comments