প্রশ্ন:- ঢিলা টিস্যু ব্যবহার করা,প্রয়োজনে হাঁটাহাঁটি করার বিধান কী?

ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব অনেক। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, والله يحب المطهرين আল্লাহ তাআলা পাক-পবিত্র লোকদের পছন্দ করেন। [সূরা তাওবা (৯) : ১০৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, الطهور شطر الإيمان পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৩)
বিশেষ করে পেশাব থেকে পবিত্রতার বিষয়ে হাদীস শরীফে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إن عامة عذاب القبر في البول، فتنزهوا من البول.
কবরের অধিকাংশ আযাব হবে পেশাবের কারণে। তাই পেশাব থেকে বেঁচে থাক। -মুসনাদে আব্দ ইবনে হুমায়দ, হাদীস. ৬৪২; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৬৫৪
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
اتقوا البول، فإنه أول ما يحاسب به العبد في القبر.
পেশাব থেকে বেঁচে থাক। কারণ কবরে বান্দাকে সর্বপ্রথম পেশাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। -মুজামে কাবীর, তবারানী ৮/১৫৭
সুতরাং পেশাব থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা শরীয়তে কাম্য। যুগের পরিবর্তনের কারণে মানুষের দৈহিক অবস্থা পরিবর্তন হয়। দেখুন না, মুহাজির সাহাবীগণ শুধু ঢিলা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতেন।
আলী রা. মুহাজির সাহাবীদের অন্যতম। তিনি মুহাজিরদের তুলনায় তাবেয়ীদের দৈহিক অবস্থার দুর্বলতা দেখে তাবেয়ীদের লক্ষ করে বললেন, তোমাদের পূর্বের লোকেরা পশুর মত (শক্ত) মল ত্যাগ করত। আর তোমরা পাখির মত (নরম) মল ত্যাগ কর। তাই তোমরা ঢিলা ব্যবহারের পর পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা কর। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৬৩৪
তদ্রূপ উম্মাহর ইমামগণ উম্মতের অবস্থার প্রতি লক্ষ করে দেখলেন যে, পেশাবের পর যদি উহ-আহ, উঠা-বসা, হাঁটা-হাঁটি ইত্যাদি না করে তাহলে অনেকের পেশাব থেকে পূর্ণরূপে পবিত্রতা অর্জন হয় না। তাই উম্মাহর ইমামগণ নায়েবে নবী হিসেবে তাদের অনুমতি দিয়েছেন।
হাঁটা-হাঁটি, উঠা-বসা, উহ-আহ এখানে মাকসাদ নয়। উদ্দেশ্য হল অবশিষ্ট পেশাব বের করে পূর্ণরূপে পবিত্রতা অর্জন করা। এগুলো পবিত্রতার পরিপূরক। তাই এসব কাজ পবিত্রতারই অংশ।
*ইস্তিবরার পরিচয় ও হুকুম:-
ইমাম নাসায়ী রাহ. বর্ণনা করেন, ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার অথবা মক্কার এক বাগানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তখন দুই ব্যক্তির আওয়ায শুনতে পেলেন যাদেরকে কবরে আযাব দেওয়া হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদেরকে আযাব দেওয়া হচ্ছে। (এমন) বড় কোনো কারণে আযাব দেওয়া হচ্ছে না (যা থেকে বাঁচা খুব কঠিন)। এরপর বললেন, হাঁ, (তবে বড় গুনাহ)। তাদের একজন পেশাব থেকে ইস্তিবরা করত না, আরেকজন পরনিন্দা করত।
-সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২০৬৮, ২০৬৯
হাদীসটি لايستبرئ – শব্দ এসেছে। এর অর্থ হল সে ইস্তিবরা করত না। ইস্তিবরার অর্থ হল স্বাভাবিক পেশাব বের হওয়ার পর অবশিষ্ট পেশাব বের করা।
সহীহ বুখারীর আরেক ভাষ্যকার আল্লামা কিরমানী রাহ. لايستبرئ (একজন পেশাব থেকে ইস্তিবরা করত না) এর ব্যাখ্যায় বলেন,
لا يستفرغ البول جهده بعد فراغه منه، فيخرج منه بعد وضوءه.
পেশাব করার পর চেষ্টা করে অবশিষ্ট পেশাব বের করত না। ফলে অযু করার পর তা বের হত। -আলকাওয়াকিবুদ্ দারারী ৩/৬৬ (২১৬ নং হাদীসের ব্যাখ্যা)
আলোচ্য হাদীসে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তিকে কবরে এই জন্য শাস্তি দেওয়া হচ্ছে যে, সে ইস্তিবরা করত না। অর্থাৎ সে পেশাব করার পর যে পেশাব বাকি থাকে তা বের করত না। সুতরাং এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় ইস্তিবরা অত্যন্ত জরুরি। তাই ইমাম নববী রাহ. সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থে এ হাদীসের শিরোনাম দিয়েছেন-
باب الدليل على نجاسة البول ووجوب الاستبراء منه
অধ্যায় : পেশাব নাপাক এবং পেশাব থেকে ইস্তিবরা করা ওয়াজিব। শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রাহ. বলেন-
قوله صلى الله عليه وسلم: أما أحدهما فكان لايستبرئ من البول الحديث، أقول: فيه أن الاستبراء واجب.
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইস্তিবরা করা ওয়াজিব। – হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ১/৩০৮
মোটকথা, এ হাদীস প্রমাণ করে ইস্তিবরা (বাকি পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন) করা জরুরি। অন্যথায় পরে পেশাব ঝরে অযু নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং শরীর ও কাপড় নাপাক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ইস্তিবরার তরীকা:-
উল্লিখিত হাদীস থেকে প্রমাণিত হল যে, ইস্তিবরা তথা স্বাভাবাকি পেশাবের পর অবশিষ্ট পেশাব বের ফোটা পেশাব বের করা জরুরি। তবে ইস্তিবরার জন্য কোন্ পন্থা অবলম্বন করা হবে, সে সম্পর্কে হাদীসটিতে কিছু বলা হয়নি। অতএব যার জন্য যে পদ্ধতি উপকারী সে সে পদ্ধতি অবলম্বন করবে।
যেমন :হাঁটা-হাঁটি, উঠা-বসা ইত্যাদি। আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যা আলকুওয়ায়তিয়্যায় ইস্তিবরার পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে-
طلب البراءة من الخارج بما تعارفه الإنسان من مشي أو تنحنح أو غيرهما إلى أن تنقطع المادة.
ইস্তিবরা হল পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য প্রত্যেকের অভ্যাস অনুযায়ী এই পর্যন্ত হাঁটা-হাঁটি, গলা খাকরি ইত্যাদি করা যে, পেশাবের কিছুই বাকি না থাকে। (খ. ৪ পৃ. ১১৩) ইবনে আবেদীন রাহ.ও ইস্তিবরার একই পরিচয় দিয়েছেন। দেখুন : রদ্দুল মুহতার ১/৫৫৮
খোলাসা হল, পেশাবের পর ইস্তিবরা করা আবশ্যক। তবে এর জন্য কোন্ পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে, তা নির্ধারিত নেই। হাদীস ও আছারে বিভিন্ন পদ্ধতি পাওয়া যায়। সবই মুবাহ। কোনটাই বিদআত বা শরীয়ত পরিপন্থি নয়।
(দ্র. মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদীস নং ৫৮; ১৭০৯; আল আল আওসাত, ইবনুল মুনযির ১/৩৪৩; হুজ্জাতুল্লাহিল বাগিলগাহ ১/৩৮) নির্দিষ্টভাবে এর কোনোটাই জরুরি নয়; জরুরি হল ইস্তিবরা। সুতরাং ইস্তিবরার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ অভ্যাস অনুযায়ী যে পন্থা কার্যকর মনে হয় সে পন্থা গ্রহণ করবে। একই সাথে পেশাবের ব্যাপারে ওয়াসওয়াসা বা সংশয় গ্রস্ততার শিকার হয়ে যায়। এ রকম বাড়াবাড়িও কাম্য নয়। একথাগুলোই বলেছেন ইমামুল হারামাইন রাহ.।
-আলমাজমূ ৩/৩৪

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *