১) মুহা. অলিউল্লাহ মুফতি সাহেব হুজুর!
মাজার শরিফের শরিফ শব্দটি এবং পীর সাহেব কেবলা’র কেবলা শব্দটা, উক্ত লকব দুটিকি ব্যবহার করার বিষয়ে শরিয়তের কোনো বিধান আছে কিনা, বলা যাবে কি যাবে না?
উত্তর:-স্থান,কাল পাত্র ভেদে হুকুমের পরিবর্তন হয়। একই জিনিস একদৃষ্টিকোণে অবৈধ হলেও অপরদৃষ্টিকোণে বৈধ। প্রশ্নেবর্ণিত শব্দগুলো স্থান কাল পাত্র ভেদে পরিবর্তন হবে।
১. فيروز اللغات অভিধানে ‘কেবলা’ শব্দের বিশ্লেষণ:
প্রসিদ্ধ উর্দূ অভিধান ফিরোজোল্লোগাতের ৯৪৮ পৃষ্ঠায় ‘কেবলা’ শব্দটি মোটামোটি ১৫টি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। তন্মধ্যেকয়েকটি উপাধি ও সম্মানসূচক অর্থে ব্যবহারের প্রমাণ মিলে
যেমন-
১. کلمۃ تعظيم-حضرت – সম্মানসূচক শব্দ, যেমন- হযরত।
২. جناب – জনাব (এটাও সম্মানসূচক শব্দ)
৩. قبلۃ انام- سب کا واجب التعظيم – (কেবলায়ে আনাম- সবচেয়ে সম্মানিত
ব্যক্তিকে কেবলায়ে আনাম বলা হয়)
৪. قبلۃ عالم – ساری دنيا کا قبلۃ – بادشاہوں کا لقب – কেবলায়ে আলাম- সারা দুনিয়ার কেবলা, আর এটা রাজা-বাদশাহ গণের উপাধি।
৫. قبلۃ گاہ – بجاۓ قبلۃ، والد ماجد، بزرگ – কেবলায় গাহ- স্থানের কেবলা,
সম্মানিত পিতা, বুযুর্গ ব্যক্তি।
৬. قبلۃ وکعبۃ- کلمۃ تعظيم وتکريم – কেবলা ওয়া কাবা- সম্মানসূচক শব্দ।
৭. قبلۃ وکعبۃ سمجہا- تعظيم کی لائق جاننا – কেবলা ওয়া কাবা সামঝা- অর্থাৎ
সম্মানের উপযুক্ত মনে করা।
একইভাবে শরীফ শব্দটিও বিভিন্ন অভিধানে সম্মানিত ব্যক্তি বা স্থানের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে।
যেমন-১. جامع اللغات অভিধানে ‘শরীফ’ শব্দের ব্যাখ্যা:
শরীফ শব্দের ব্যাখ্যায় – جامع اللغات এর ১ম খন্ড ৯৪ পৃষ্ঠায় এসেছেÑ
১. مرد بزرگ اور بڑی مرتبہ کا – বুযুর্গ ও মর্যাবান ব্যক্তির উপাধি।
২.ہر شیئ بزرگ قدر ادمی – প্রত্যেক মর্যাবান ব্যক্তি।
৩. اصیل اور نجیب – ভাল বংশ এবং অভিজাত বা বুযুর্গ।
৪.لقب مکہ معظمہ کے حاکم کا – মক্কার শাসকের উপাধি।
২. فيروز اللغات অভিধানে ‘শরীফ’ শব্দের ব্যবহার:
প্রসিদ্ধ উর্দূ অভিধান ফিরোজোল্লোগাতের ৮৪১ পৃষ্ঠায় ‘শরীফ’ শব্দটি মোটামোটি ১১টি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন-
১.بزرگ – তাকওয়াবান ব্যক্তি।
২. عالی خانداں – সম্ভ্রান্ত বা উচ্চ বংশীয় লোক।
৩. بھلا مانس – ভাল মানুষ বা উত্তম ব্যক্তি।
৪. اصيل – খাঁটি, উচ্চ বংশীয় বা অভিজাত শ্রেণীর লোক।
৫. مھذب – মার্জিত বা ভদ্র লোক।
৬. کلمۂ تعظيم جو شہروں اور مقدس مقامات کے ليے مستعمل ہوتا ہے جيسے شرقپور شريف অর্থাৎ এটি সম্মানসূচক শব্দ যা শহর কিংবা পবিত্র স্থানের সাথে ব্যবহার করা হয়। যেমন- শরকপুর শরীফ।
৭. شريف زادہ: اشراف کا بيٹا – مھذب – শরীফ জাদাহ: অভিজাত বা উচ্চবংশীয় লোকের ছেলে, ভদ্র লোক।
৮. شريف الطرفين: ماں باپ دونوں کی طرف سے شريف – শরীফুত তরফাইন: পিতা-মাতা উভয় দিক থেকে যে সন্তান ভদ্র বা সম্মানিত।
৯. شريف النفس: شريف طبغ – نيک خو – শরীফুন নফস: ভদ্র স্বভাব, ভাল খাসলাত।
১০. شريف و رذيل: ادنی اعلی – نيک بد – ہر قسم کے لوگ – শরীফ ওয়া রাজিল: উঁচু-নিচু, ভাল-মন্দ, প্রত্যেক প্রকার মানুষ।
১১. شريفۂ: شريف عورت – ايک قسم کا پھل – سيتا پھل – শরীফাহ: ভদ্র মহিলা, এক প্রকার ফল; যেমন- চিতা ফল।
৩. বুখারী শরীফে ‘শরীফ’ শব্দের ব্যবহার:
বখারী শরীফের كتاب الحدود এর অন্তর্গত একটি বাবের অধীনে একখানা হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে সম্ভ্রান্ত বা প্রভাবশালী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘শরীফ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। হাদিসটি বাবের নামসহ উল্লেখ করা হল-
باب إقامة الحدود على الشريف والوضيع
عن عائشة : أن أسامة كلم النبي صلى الله عليه و سلم في امرأة فقال (إنما هلك من كان قبلكم أنهم كانوا يقيمون الحد على الوضيع ويتركون على الشريف والذي نفسي بيده لو فاطمة فعلت ذلك لقطعت يدها )
অর্থ: প্রভাবশালী (সম্ভ্রান্ত) ও দুর্বল ব্যক্তির উপর হদ প্রয়োগের পরিচ্ছেদ: ‘হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত উসামা (রা.) জনৈক মহিলার ব্যাপারে নবী করিম (স.) এর কাছে শুপারিশ করলেন। তখন তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়সমূহ ধ্বংস হয়ে গেছে। কারণ তারা আতরাফ (নি¤œ শ্রেণির) লোকদের উপর শরীয়তের শাস্তি কায়েম করত। আর আশরাফ (উচ্চশ্রেণির) লোকদেরকে রেহাই দিত। ঐ মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, ফাতিমাও যদি এ কাজ করত তাহলে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দিতাম।’
অত্র হাদিসে সম্ভ্রান্ত বা উচ্চ শ্রেণির লোকদের ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী (স.) ‘শরীফ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন।
উপরোক্ত বিস্তারিত আলোকপাত থেকে বুঝা গেল কেবলা ও শরীফদ্বয় সম্মানসূচক অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। সুতরাং কোন ব্যক্তি ও স্থানের প্রতি নিছক সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেম্যে এ শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যদি এ শব্দ ব্যবহারের কারণে আলাদা সম্মান ও এমন কোন কাজ করা উদ্দেম্য হয় যা শরয়ী দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য তাহলে ব্যবহার করা জায়েয হবে না।
Leave Your Comments