জনৈক মুরতাদ ব্যক্তি অভিযোগ হল,
বনু কুরাইজার সাতশ কিংবা নয়শ পুরুষকে জবাই করা হয়েছে নবীজীর নির্দেশে। এটা কি নবীর কাজ?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
বিষয়টিকে যেভাবে উপস্থাপন করা হল, এ উপস্থাপন পদ্ধতিটি খুবই অন্যায় ও গর্হিত।
বনু কুরাইজা মদীনায় অবস্থানকারী একটি গোত্র। যাদের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান্তি চুক্তি ছিল। কেউ কারো উপর আক্রমণ করবে না। বর্হিশত্রু আক্রমণ করলে পরস্পর সহযোগিতা করবে। [সীরাতে ইবনে হিশাম-১/৫০৩-৫০৪]
কিন্তু খন্দক যুদ্ধের সময় যখন কুরাইশরা দশ হাজার বাহিনী নিয়ে মদীনা ঘেরাও করে। তখন মুসলিম সেনা সদস্য ছিল মাত্র তিন হাজার।
এক অসম সমরে অবতীর্ণ দুই শিবির। এ সময় মিত্র শক্তির সহযোগিতা ছিল বড়ই প্রয়োজন। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল। মিত্র বনু কুরাইজা সহযোগিতা করবেতো দূরে থাক বরং শত্রুর সাথে হাত মেলায়।
বনু কুরাইজার সাথে যে সন্ধি চুক্তি ছিল, তা তারা ভঙ্গ করে মক্কার মুশরিকদের সাথে মিলে যায়। সেই সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালাগাল করে।
যখন বনী নজীরের সর্দার হুআই বিন আখতাব বনু কুরাইজার সর্দার কাব বিন আসাদ কুরাজীকে তার দলে টানতে আসে,তখন সে দৃঢ়তার সাথে বলেছিলঃ
وَيْحكَ يَا حُيَيُّ: إنَّكَ امْرُؤٌ مَشْئُومٌ، وَإِنِّي قَدْ عَاهَدْتُ مُحَمَّدًا، فَلَسْتُ بِنَاقِضٍ مَا بَيْنِي وَبَيْنَهُ، وَلَمْ أَرَ مِنْهُ إلَّا وَفَاءً وَصِدْقًا
আফসোস তোমার জন্য হে হুয়াই! নিশ্চয় তুমি এক নিকৃষ্ট ব্যক্তি। নিশ্চয় আমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে চুক্তিবদ্ধ। সুতরাং আমার ও তার মাঝে যে চুক্তি রয়েছে তা আমি ভঙ্গ করতে পারবো না। আর আমি তাকে একজন ওয়াদা রক্ষাকারী এবং সত্যনিষ্টই পেয়েছি। [সীরাতে ইবনে হিশাম-২/২২০, গাযওয়ায়ে খন্দক অধ্যায়)
কিন্তু অবশেষে হুয়াইয়ের ফাঁদে পড়ে চুক্তি ভঙ্গ করে শত্রুপক্ষের সাথে মিলে যায়। যখন নবীজীর প্রতিনিধি তার সাথে সাক্ষাতে চুক্তির কথা স্মরণ করায় তখন সে তাচ্ছিল্যের সাথে বলেঃ
مَنْ رَسُولُ اللَّهِ؟ لَا عَهْدَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مُحَمَّدٍ وَلَا عَقْدَ
আল্লাহর নবী কে? মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং আমাদের মাঝে কোন চুক্তি নেই। কোন সন্ধি নেই। [সীরাতে ইবনে হিশাম-২/২২২]
এইভাবে শান্তি ও সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে বনু কুরাইজার নেতা কাব বিন আসাদ বিপদের মুহুর্তে শত্রুপক্ষের সাথে হাত মেলায়। মুসলমানদের জন্য চরম দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে বর্হিশত্রু মক্কার মুশরিকদের বিরাট বাহিনী। অপরদিকে ঘরের শত্রু বনু কুরাইজা।
এ গাদ্দারীর কারণেই খন্দক যুদ্ধ শেষে বনী কুরাইজাকে শায়েস্তা করতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহিনী নিয়ে বনু কুরাইজা অভিমুখে যাত্রা করেন। বনু কুরাইজার অধিবাসীরা তাদের দুর্গ বন্ধ করে বসে থাকে। ২৫দিন পর্যন্ত তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। অবশেষে তাদের বন্দি করা হয়। একজন মহিলা ছাড়া কোন মহিলাকে হত্যা করা হয়নি। যে মহিলার কারণে খাল্লাদ বিন সুআইদ রাঃ নামক সাহাবী শহীদ হন। [উয়ুনুল আছার-২/৭৮]
তিরমিজী, নাসায়ী ও ইবনে হিব্বানের বর্ণনা অনুপাতে চারশত লোককে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ যিনি করেছেন, তিনি নিজেকে মুক্ত চিন্তার মানুষ হিসেবে দাবী করছেন। নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক বলে দাবী করছেন।
আমি উক্ত ভাইকে প্রশ্ন করতে চাই! যখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আমাদের দেশের উপর আক্রমণ করেছিল। তখন আমাদের দেশের নাগরিক যেসব রাজাকাররা পাকিস্তানীদের পক্ষে কাজ করেছিল। আমাদের হত্যায় সহযোগিতা করেছিল। সেসব গাদ্দার রাজাকারদের ক্ষেত্রে মুক্ত চিন্তার অধিকারী ভাইটার মতামত কী? সেই সমস্ত রাজাকারদের ছেড়ে দেয়া হবে?
মুক্ত চিন্তার অধিকারী দাবিদার ভাইয়েরাই রাজাকারদের হত্যা করার জন্য সবচে’ বেশি সোচ্চার। রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে দিনের পর দিন শাহবাগের রাস্তা বন্ধ করে পিজি হাসপাতালের মুমূর্ষূ রোগীদের কষ্ট দিয়েছিল এসব তথাকথিত মুক্ত চিন্তাবীদরাই। আবার তাদের মুখেই গাদ্দার বনু কুরাইজার জন্য এ কেমন হাস্যকর দরদ উথলে উঠে? এটা কি দ্বিমুখী নীতি নয়?
আমিও আপনাকে বলি! অন্যের বলা কথাগুলি তোতাপাখির মত না আউড়ে, নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে ঘটনাগুলো যাচাই করুন। তাহলে দেখবেনঃ বনু কুরাইজার ঘটনার উপর কোন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তির প্রশ্ন থাকতে পারে না।
আল্লাহ তাআলা উক্ত ভাইকে হিদায়াত দান করুন। বিবেকের বদ্ধ দুয়ার খুলে দিন। আমাদের সকলকে হিদায়াতের উপর অটল রাখুন। আমীন।
এ প্রশ্নোত্তরটিও পড়ুন-
উরাইন গোত্রের লোকদের হত্যা করে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি অমানবিক কাজ করেছেন?
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
Leave Your Comments