“বিজ্ঞানমনস্কতা” লিখক:-মুহা.আরিফ আজাদ

“বিজ্ঞানমনস্কতা”
.
‘আমি ভাই বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ।চাক্ষুষ প্রমাণ সহ চোখে না দেখা অবধি আমি কোনকিছুই বিশ্বাস করি না।’
— ‘তাই নাকি?’
– ‘হ্যাঁ, একদম।’
.
— ‘তা ভাই, আপনি বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করেন?’
– ‘অবশ্যই। এটা তো প্রমাণিত সত্য।’
— ‘বিবর্তনবাদ বলে, বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগে একটি এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে বিবর্তিত হতে হতে পৃথিবীতে সকল প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে। অর্থাৎ, সেই একটি ব্যাকটেরিয়া থেকেই বাঘ, ভাল্লুক, সাপ, কচ্ছপ, খচ্চর, ইঁদুর, মশা, হাতি,নীলতিমি থেকে বানর-শিম্পাঞ্জি হয়ে মানুষ এসেছে।’
– ‘হ্যাঁ। তো?’
.
– ‘কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি তো চোখে না দেখা অবধি কোনকিছুই আবার বিশ্বাস করেন না। আপনি আজ পর্যন্ত কোন শিম্পাঞ্জিকে বিবর্তিত হতে হতে মানুষে রূপান্তর হতে দেখেছেন?’
– ‘না, আসলে………সব যে চোখে দেখেই বিশ্বাস করি ঠিক তা নয়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন এমনটিই হয়েছে। তারা নিশ্চই এটি গবেষণা করে বলেছেন। তাই তাদের কথায় তো বিশ্বাস করাই যায়, তাই না?’
.
– ‘ও আচ্ছা। তাই বলেন। কিন্তু বিজ্ঞান তো আজ পর্যন্ত এমন কোন প্রমাণ দেখাতেই পারলো না যেখানে একটি প্রাণী সময়ের ব্যবধানে সম্পূর্ণ আরেকটি প্রানীতে পরিণত হয়ে গেছে, এরকম। যেটাকে ম্যাক্রো ইভোলুশান বলে আর কি!
এমনকি, বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী রিচার্ড লেনস্কি ই.কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপরে ল্যাবরেটরিতে দীর্ঘ ২৪ বছর একটানা মিউটেশন ঘটিয়ে পরীক্ষা করেছেন। আশা ছিলো- মিউটেশনের ফলে কোন একসময় এই ব্যাকটেরিয়া অন্য একটি প্রজাতিতে রূপান্তরিত হবে। মিউটেশন ঘটিয়ে ব্যাকটেরিয়াকে অন্য প্রজাতিতে রূপান্তরিত করার জন্য ২৪ বছর খুব যথেষ্ট সময়। কারন, ব্যাকটেরিয়ার রিপ্রোডাকশান সবচে দ্রুত হয়।
.
কিন্তু আশার মধ্যে গুড়ে বালি দিয়ে দেখা গেলো, ২৪ বছর মিউটেশন ঘটানোর পরেও ল্যাঙরা, ব্যাকা-ত্যারা,থ্যাতলা ব্যাকটেরিয়া ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় নাই। অর্থাৎ, ই.কোলাই ব্যাকটেরিয়া ২৪ বছর পরেও ব্যাকটেরিয়াই থেকে গেছে। অন্য কোন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়ে যায় নি।’
.
– ‘দেখুন, বিবর্তন খুব স্লো প্রসেস। ধরুন, আপনাকে যদি আমাজন বনের রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে রেখে আসা হয়, সময়ের বিবর্তনে, পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে তাল মিলাতে মিলাতে আপনি একসময় রেড ইন্ডিয়ানদের মতো কাঁচা মাংশ খেতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। আপনার এই কাঁচা মাংশ খেয়ে টিকে যাওয়াকে বলে ‘ন্যাচারাল সিলেকশান।’ এভাবেই বিবর্তন কাজ করে। ছোট ছোট সিম্পটম গুলো, আই মিন মাইক্রো ইভোলুশান গুলো আস্তে আস্তে, সময়ের পরিক্রমায় একদিন বৃহৎ বিবর্তন তথা ম্যাক্রো ইভোলিউশন ঘটিয়ে ফেলে। ছোট ছোট বিবর্তনগুলো দেখেই আমরা বুঝতে পারি যে বড় বিবর্তনও সম্ভব।’
.
– ‘আমাজন জঙলে আমি হয়তো সময়ের পরিক্রমায় রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে কাঁচা মাংশ খাওয়া শুরু করবো। কিন্তু সেটা কোনভাবেই প্রমান করে না যে, আমি কোন একদিন রেড ইন্ডিয়ান থেকে নীলতিমি তে পরিণত হয়ে সমুদ্র ভ্রমণে বের হবো।’
– ‘আপনি ভাই আসলে বিজ্ঞান বুঝেনইই না।’
– ‘আচ্ছা,, ধরে নিলাম যে,পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে যে ছোট ছোট পরিবর্তন গুলো হয়, সেগুলোই প্রমাণ করে যে- এভাবে অনেক সময় দিলে একদিন একটি প্রানী সম্পূর্ণ অন্য আরেকটি প্রাণীতে রূপান্তরিত হবে, ঠিক আছে?’
.
– ‘এই তো লাইনে আসছেন।’
– ‘আচ্ছা, পরের প্রশ্ন। বলুন তো, কেউ যখন প্রেগন্যান্ট হয়, তার মধ্যে তখন কোন প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা যায়?’
– ‘এই যেমন- বমি বমি ভাব, মাথা ধরা, মাথা ঘুরা, শরীর দূর্বল দূর্বল লাগা এইসব।’
.
– ‘আচ্ছা বেশ। ধরুন, কাল সকালে উঠে দেখলেন যে আপনার বমি বমি ভাব লাগছে, মাথাও ঘুরছে ভোঁ ভোঁ করে। সাথে শরীরটাও খুব দূর্বল। তাহলে, এই ছোট ছোট লক্ষণগুলো দেখে আমরা কি ধরে নিতে পারি যে আপনি অদূর ভবিষ্যতে কোন একদিন সত্যি সত্যিই প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবেন?’
.
– ‘আমি কিভাবে প্রেগন্যান্ট হবো?’
– ‘কেন? এই যে, ছোট ছোট লক্ষণ, সিম্পটম এইসবই তো প্রমান করার জন্য যথেষ্ট যে আপনি কোন একদিন প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবেন, যেমন করে ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো প্রমাণ করে যে আমি একদিন রেড ইন্ডিয়ান থেকে নীল তিমি হয়ে যাবো।’
– ‘না, আসলে, ইয়ে…… মানে……. ধুরো, আপনি বিজ্ঞানের ‘ব’ ও বুঝেন না মিয়া। কাঠমোল্লা কোনহানের।’
=======================
লেখকঃ আরিফ আজাদ

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *