ভোলায় আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের নাম করে কিছু ভ্রান্তবাদীদের কেন্দ্র করে যে ঘটনাটা ঘটেছে এটা নিয়ে একদল স্বার্থবাজরা বিপরিত কিছু ফায়দা অর্জনে পায়তারা করছে। বেশ কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখেছি বিকৃত মস্তিস্কের কিছু লোকজন বিভিন্ন এলাকায় কিছু মসজিদের ব্যাপারে উদ্ভট উদ্ভট আহবান জানাচ্ছে। ওমুক মসজিদকে এই করি তমুক মসজিদকে ঐ করি টাইপের আহবান আর কি! অবাক লাগছে ব্যাপারটা। এত সহজ হয়ে গেলো সবকিছু? একটা মসজিদের ব্যাপারে কিছু করার আগে ভয় হয় না এদের? বিজ্ঞ আলেমদের স্পষ্ট মতামত এবং লিখিত অনুমোদন ছাড়া কিভাবে কোন মসজিদের ব্যাপারে উদ্ভট কোন দাবির উসকানী ফেসবুকে আসতে পারে। মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার আহবান করা হচ্ছে ফেসবুকে ভাবলেই আমার ভয় লাগছে খুব। আল্লাহর রাসুল স. মসজিদে জিরার ভেঙ্গে দিয়েছেন আল্লাহর সরাসরি নির্দেশনা পাওয়ার পর। মসজিদে জিরার তৈরি করে মুনাফিকরা ইসলামের ক্ষতি করছে জেনেও রাসুলুল্লাহ স. মসজিদ ভেঙ্গে দেননি। ভেঙ্গেছেন আল্লাহর নির্দেশনা আসার পর। কোন মসজিদ মসজিদে জিরারের অন্তর্ভূক্ত হবে সে মতামত আলেমরা সম্মিলিতভাবে দিতে হবে। এসব নিয়ে অবশ্যই সচেতনতা না বাড়ালে ফেসবুকে উদ্ভট উদ্ভট আহবান করা এই কম আক্কেল অসভ্যগুলো এদেশে বিশ্রি ধরনের ধর্মীয় সমস্যা তৈরি করবে মনে হচ্ছে। এদের ব্যাপারে সজাগ হওয়া উচিত।
ভোলার ঘটনাটার ব্যাপারে তিনটি পয়েন্ট বেশ জোড়ালো ভাবে আগেও বলেছি এখনও বলছি। এই পয়েন্ট তিনটা অনেক জরুরি ভোলার ঘটনাটার সঠিক বিশ্লেষনের জন্য।
১. প্রথম পয়েন্ট: স্থানীয় জনগন কেহই এটাকে মসজিদ হিসেবে মেনেও নেয়নি। স্বিকারও করেনি। এটা কারো কাছে মসজিদই ছিলো না। কেন স্বিকার করেনি কেন এটা কারো কাছে মসজিদই ছিলো না এর পেছনে অনেক কারন আছে। সে কারন কারো জানতে মনে চাইলে স্পটে গিয়ে জেনে আসলেই হয়। ফেসবুকের প্রোপাগান্ডা দিয়ে কেবল ধর্মীয় সম্প্রীতির বারোটাই বাজবে। মুল ঘটনার কোন সমাধান হবে না। এটাকে কোনভাবে মসজিদ হিসেবে মেনে নিলে অথবা আহলে হাদিস বিশেষায়িত মসজিদ হলেও স্থানীয় জনগন এটা ভাঙ্গার সাহসই করতো না। আহলে হাদিস তাদের মসজিদ এদেশে অনেক আগেই অনেক যায়গাতে আলাদা করে ফেলেছে এবং মনখুশিমত মসজিদকে ফেৎনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যাবহার করছে। এমনকি কাদীয়ানী সম্প্রদায়ের আলাদা আহমদিয়া মসজিদ নাম দেয়া মসজিদও এদেশে আছে। কিন্তু কোথাও সেই মসজিদ কেহ ভেঙ্গে দেয়নি। কারন এদেশের মানুষ মসজিদকে পবিত্র স্থান জ্ঞান করে এবং মসজিদের ব্যাপারে পরিপুর্ন সেন্টিমেন্ট ধারন করে। মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা শব্দটাই তো কলজে কেঁপে উঠার মত। সাধারন জনগন কাউকে কিছু না জানিয়ে একটা মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার মত সাহস করবেই না কোনদিন। এর পেছনে যে অন্য কারন আছে তা একটু বুদ্ধি থাকলেই বুঝতে পারার কথা।
মসজিদ হিসেবে এটাকে ফেসবুক এক্সপোজ করার মুল কারন ছিলো জনগনের সেন্টিমেন্ট ক্রয় করা। অলরেডি সেই সেন্টিমেন্ট দিয়ে টাকা কামাই করাও শুরু করে দিয়েছে এই তথাকথিত আস্তানার কর্নধার সেই বখাটেরা। তাদের উদ্দিশ্যই ছিলো ফেসবুক লাইভ দিয়ে কিছু চিন্তাহীন ফেসবুক প্রজন্মকে দিকভ্রান্ত করা। এমন নজির ফেসবুকে হাজার হাজার আছে। কিছুদিন আগে ফেসবুকে এক মেয়ে লাইভে এসে কেঁদে কেঁদে বলছিলো তার বাবা তাকে ধর্ষণ করে। ভিডিওটা সত্তুর মিলিয়নের বেশি ভিউ হয়েছিলো। লাখ লাখ শেয়ার এবং হাজার হাজার প্রতিবাদী পোস্ট হয়েছিলো। কিন্তু পরে সিআইডি অনুসন্ধানে জানা গেলো ঐ মেয়ে ইয়াবা এডিক্ট! তাকে তার বাবা ইয়াবা খেতে দেয় না বলে এই গল্প ফেঁদেছিলো। ভোলায় মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনার ফেসবুক রুপটা এমনই। বুকে হাত দিয়ে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি।
২. দ্বিতীয় পয়েন্ট : ভোলায় এই ভাংচুর জ্বালানো পোড়ানোর ঘটনাতে ছোট হোক বড় হোক কোন হুজুর আলেম উলামা বা কোন সংগঠন সংস্থার এক চুল পরিমানও হাত নেই। এবং সামান্যতম অংশগ্রহনও নেই। এটাই আমি জানি। এবং এ কারনেই এই ঘটনাটা ঘটতে পেরেছে। নয়ত এমন কিছু ঘটতোই না। আহলে হাদিস ফিৎনা নিয়ে ভোলার আলেমরা সম্মিলিতভাবে সোচ্চার এটা ঠিক। কিন্তু এই ভাংচুরের ঘটনা কোন আলেমরাই জানে না। তাদের সাথে কেউ পরামর্শও করেনি। ভাংচুরের সময়কার কিছু ছবি দেখলেই ক্লিয়ার হতে পারবেন তারা লুঙ্গি উঠিয়ে কাছা দেয়া স্থানীয় মানুষ।
ভাংচুরের সময়টাতে ভোলার এক সাংবাদিকের কাছ জেনে তখনই আমি বেশ কয়েকজন আলেমের কাছে ফোন করেছিলাম। তারা শুনে অবাক হয়েছে! তারা একদম জানেই না এটা। ভোলার কেন্দ্রে অবস্থিত রতনপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা Mijan সাহেব হযরতকেও ফেসবুকে মেসেজ করে উদ্বেগ জানানোর পর উনিও বলেছেন ঘটনাটা আমার কাছ থেকেই শুনছেন তিনি। তখন থেকে তিনিও খোজ নেয়া শুরু করেছেন। আমি কেন জানি এটা নিয়ে প্রোপাগান্ডা হবে বুঝেছিলাম। মনে হয়েছে এটা নিয়ে অনলাইন প্রোপাগান্ডা হবে। ঠিক তাই হয়েছে। আরো অবাক হয়েছি কিছু অসভ্য আর বিকৃত মস্তিস্কের লোক এটার মধ্যে চরমোনাই হান্দায়া দিছে দেইখা!! ভোলার ঘটনায় চরমোনাই ওয়ালাদের প্রবেশ করানো অষ্টমাশ্চর্য হতে পারে আমার দৃষ্টিতে। চরমোনাই ওয়ালারা এই ঘটনার লেজের পশম অংশেও নেই কারন তারা তাদের নির্বাচনী কাজ নিয়েই ব্যাস্ত! ভোলা থেকে নিয়মিত টিম যাচ্ছে বরিশাল সিটি নির্বাচনে। তারা এই ফালতু কাজে সময় দেবে কিভাবে? কিন্তু একদল মিথ্যুক এখানে চরমোনাই হান্দায়া দিছে ফেসবুকে। ভোলায় গিয়া পারলে বইলেন এটা। মিথ্যা বলার কারনে মানুষ ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিবে। কালকে এক অনলাইন নিউজ পোর্টালে নিউজ দেখেছিলাম,
…. সিলেটে চরমোনাই ওয়ালাদের মেয়র প্রার্থী নাকি জামায়াতের হয়ে কাজ করছে! চরমোনাই ওয়ালাদের মুলত জামায়াত নির্বাচনে নামিয়েছে! হ্যাঁ! এমন নিউজও হয়!
এখন এই ধরনের মিথ্যাচারের কী জবাব হতে পারে বলেন। ভোলার ব্যাপারেও এমন মিথ্যাচারই করেছে কেউ কেউ। সাথে পঁচিশ নম্বর লিস্টেড দিকভ্রান্তরা তো আছেই। তারা চরমোনাইর বিরোধীতা করতে গিয়ে ঈমানহারা হতেও দ্বিধা করে না।
৩. তৃতীয় পয়েন্ট : আহলে হাদিস যেই নীতি এদেশে লালন করে ভোলার ঐ আস্তানায় আহলে হাদিসের নীতিকেও বিকৃত করা হতো। কারন যে বা যারা এটার মুল কেন্দ্রে ছিলো তারা সবাই-ই এলাকার নেশাখোর এবং বখাটে হিসেবে পরিচিত। ধর্মীয় কোন জ্ঞান তাদের একদমই নেই। আহলে হাদিস যে ধর্মীয় নীতি লালন করে তাও তারা প্রচার করতো না। তারা ভোলাতে চরফ্যাশনের ভ্রান্ত ফেরকা “কালেমার জামায়াত” থেকে অনুপ্রানিত ছিলো! এই ভ্রান্ত জামায়াত নিয়ে আর একদিন লিখবো। কালেমার জামাতের লিডারের মত এই আস্তানাতেও বড় একটা আখড়া করার চেষ্টা করেছিলো। এখানে আহলে হাদিস মতাদর্শও প্রচার হতো না। তারা কোরআন শরীফকে মাটিতে বিছিয়ে ছবি তুলে সেগুলো প্রচার করার মত হীন কাজও করেছে।
ভোলাতেও আহলে হাদিসের কার্যক্রম আছে। ভোলার সর্বপ্রবীণ এবং সম্মানিত আলেম আমার শশুর হওয়ার সুবাদে অনেকের সাথেই নতুন পরিচয় হচ্ছে। আহলে হাদিসের মুল লিডারদের অনেককেও আমি চিনেছি সম্প্রতি সময়ে। এমনকি আমার নতুন আত্বীয়ের মধ্যেও কাছের একজন ভোলার আহলে হাদিসের নেতৃত্ব দিতো। যদিও তিনি ফিরে এসেছেন ঐ জগত থেকে। কিন্তু ভোলার আহলে হাদিস গ্রুপও এটার তেমন প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু দুর দুরন্তে বইসা ফেসবুক পোস্টে পুরা বিপ্লব ঝাড়তেছে আর ফেসবুকে বানানো মসজিদ রক্ষা করতেছে অনেকেই। অবাক লাগে এসব দেখলে।
পরিশেষে লেখা অনেক লম্বা হয়ে গেছে। একটা কথা বলেই শেষ করছি!
…. এদেশের মানুষ মসজিদকে পবিত্র স্থান জ্ঞান করে তারা মসজিদ তৈরি করতে নিজের ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রমের টাকা দেয়। নিজের ঘরে চাল-চুলো ছাদ না থাকলেও মসজিদটা টাইলস করা দৃষ্টিনন্দন হোক এমনটাই চায় সবাই। তাই এদেশের মানুষ মসজিদ ভেঙ্গে ফেলেছে এই কথাটা প্রতিষ্ঠিত করে দিতে কেউ সহায়তা কইরেন না প্লিজ। ভোলার একজন মানুষ হিসেবে হাত জোর করে বলছি, ভোলায় সত্যিকারেই কোন মসজিদ ভাঙ্গা হয়নি। এই অপবাদের ভারটা আমরা নিতে পারছি না আর।
Leave Your Comments