মজান নিয়ে একটি অবিশ্বাসী প্রশ্নের উত্তরঃ

রমজান নিয়ে একটি অবিশ্বাসী প্রশ্নের উত্তরঃ
=============================
.
রমজান আসার সাথে সাথে নাস্তিকরা রোজা নিয়ে ইসলামের একটি ভুল ধরার চেষ্টা করে বিভিন্ন গ্রুপ বা পেজে প্রচারনা চালায়। বিষয়টা তাদের নিকট এমনভাবে শুনতে পারেন,
.
“আল্লাহ বলেছেন সূরা বাকারা: ১৮৭ আয়াতে,
‘সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে’
মূলত এ আয়াত দিয়ে বোঝা যায় আল্লাহর মক্কার বাইরের এবং পৃথিবীর বক্রতা ও দিন-রাত সংঘটিত হওয়ার বৈজ্ঞানিক নিয়ম সম্বন্ধে কোনো ধারণা ছিল না। পৃথিবীর আকৃতি ও বসবাসকারী মানুষ সম্পর্কে কোরানের লেখক অবগত ছিলেন না।তিনি জানতেন না পৃথিবীর সকল স্থানে একই সময় সূর্য ওঠে ও অস্ত যায় না। তিনি এও জানতেন না যে, কোথাও সুর্য ওঠা ও ডোবার মধ্যবর্তি সময় ১৩ ঘন্টা আর কোথাও ২২ ঘন্টা আবার কোথাও ছয়মাস । তাই যার এই সহজ জিনিসটি জানা নেই সে সৃষ্টিকর্তা হতে পারে না।”
.
#জবাবঃ
এখানে নাস্তিকের মূল অভিযোগ হচ্ছে আল্লাহ কি জানতেন বা জানতেন না তা নিয়ে। রোজা কিভাবে রাখা যায় তা নিয়ে প্রাকটিকাল চিন্তা করা নয়, অথচ যেখানেই হোক না কেন রোজা রাখার অনেকগুলো পদ্ধতি অনুসরন করেই মুসলিমরা সহজেই রোজা রাখছে, তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যা শুধু হচ্ছে নাস্তিকদের।
যাক গে, তবে আসুন প্রথমেই টেবিলটা উল্টে দেই।
.
উক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে নাস্তিকদের দাবি, আল্লাহ জানতেন না সুর্যের বিভিন্ন অঞ্চলের উদয়স্থলের কথা এবং কোরানের লেখকের ধারনা ছিল হয়ত পৃথিবি চ্যাপ্টা।
যদি নাস্তিকরা কোরান ঠিকমত পড়ত তবে নিশ্চয়ই তারা জানত আল্লাহ তা’লার জ্ঞানের কথা।
.
কারন কোরানেই স্পষ্ট করে লেখা আছে,
“Lord of the heavens and of the earth and all between them, and Lord of every point of the rising of the sun.”
(Quran 37:5)
[ অনুবাদেঃ ইউসুফ আলী, মুহসীন খান প্রমুখ ]
.
তাহলে নাস্তিকদের কোরান সম্পর্কে আনা বৈজ্ঞানিক ভুলের অভিযোগটা এখানেই মাঠে মারা গেল। কারন কোরান অনুসারে আমরা দেখতে পাই আল্লাহর স্পষ্টত ধারনা ছিল সুর্যের বিভিন্ন উদয়স্থলের কথা, যদিও মানুষ খালি চোখে সুর্যকে রোজ এক জায়গা হতেই উদিত হতে দেখে, কিন্তু যিনি মহাবিশ্বের সৃষ্টা, তিনি ঠিকই জানেন সুর্য প্রতি মুহুর্তেই কোন না কোন পয়েন্টে উদিত হচ্ছে। এজন্যই তিনি লিখলেন every point of the rising of the sun অর্থাৎ এই আয়াত দিয়েও বোঝা যায় যে পৃথিবী গোল তা কোরানের লেখক খুব ভালো করেই জানতেন।
.
এবার আসি রোজার ব্যাপারে।
নাস্তিকরা হয়ত ইসলাম সম্পর্কে খুব জ্ঞান রাখে না, কারন ইসলামে প্রথম নির্দেশ ফলো হয় কোরান হতে, দ্বিতীয় হাদিস হতে, যদি কোরান ও হাদিসেও স্পষ্টত না থাকে তবে ইজমা কিয়াস( যদিও কোরান হাদিসেই এই সমস্যা সমাধান এর অনেকগুলো ইংগিত রয়েছে) পরিবেশগত অবস্থা যে কোন সময় যেকোন কারনে চেইঞ্জ হতে পারে। আর এ জন্যই রোজার ব্যাপারে আল্লাহ মানুষকে সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার জেনারেল নির্দেশ প্রদানের সাথে সাথে অনেক বিকল্প নির্দেশও দিয়ে গেছেন, যা ইসলাম বিদ্বেষীরা কখনো আপনাকে দেখাবে না।
.
কোরানে আল্লাহ আরো বলেন,
“যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর।”( সুরা বাকারা ১৮৫)
.
অর্থাৎ যে মুসাফির হয়ে অন্য কোথাও ভ্রমন করল, সে অন্য দেশের সময় বা যেখান থেকে ভ্রমন করেছে সেই সময় হতে রোজা রাখবে,তেমনি যদি কেউ উত্তর মেরুতে যায় তবে নিজ দেশ অথবা উক্ত অঞ্চলের আশেপাশে যেখানে ২৪ ঘন্টা দিন রাত তার হিসেবে বা যেভাবে তার সহজ হয় সেভাবে রোজা রাখবে।
এরপরও যদি কেউ রোজা রাখতে না পারে , আল্লাহ তারও বিধান দিয়েছেন এর আগের আয়াতেই, বাকারা ১৮৪
“গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে।”
.
অর্থাৎ পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত, হোক উত্তর মেরু বা দক্ষিন মেরু, সুর্য না দেখার জন্য বা যে কোন কারনে যদি রোজ রাখতে সমস্যা হয় তবে অন্য কোন সময় গননার মাধ্যমে সে উক্ত রোজা রাখবে, অথবা রোজা না রেখে কোন গরীব মিসকীনকে খাইয়ে দিবেন। দেখুন কত সুন্দর ও পরিপাটি বিধান।
আবার হাদিসে দীর্ঘ সময় দিন বা রাত যেখানে হবে সেখানে কিভাবে ইবাদত করতে হবে সেসম্পর্কে একেবারে স্পষ্ট বিধান রাসুল সাঃ দিয়ে গেছেন দাজ্জাল সংক্রান্ত মুসলিম শরীফ ২৩৯৭ হাদিসটিতে।
“We said: Allah’s Messenger, how long would he stay on the earth? He (ﷺ) said: For forty days, one day like a year and one day like a month and one day like a week and the rest of the days would be like your days. We said: Allah’s Messenger, would one day’s prayer suffice for the prayers of day equal to one year? Thereupon he (ﷺ) said: No, but you must make an estimate of time. http://sunnah.com/urn/270150
অর্থাৎ এক দিন= ছয়মাস বা এক বছর যখন হবে তখন মুসলিমগন সময়ের হিসেব করে নিজেরা ইবাদতের কাজ চালাবে। একই ইজমা অনুসারে উত্তর মেরু বা দক্ষিন মেরুতে কেউ বসবাস করতে চাইলে সেখানেও তারা একই ভাবে সময়ের গণনার মাধ্যমে রোজা ও নামাজ এর কাজ সম্পন্ন করবে।
.
এত কিছুর পরেও যদি দ্বীন পালনে কোন অঞ্চলগত সমস্যা হয়, সেটা যে প্রকারেই হোক তবে আল্লাহ উক্ত অঞ্চল ত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন,
.
“যারা নিজের অনিষ্ট করে, ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করে বলে, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলেঃ এ ভূখণ্ডে আমরা অসহায় ছিলাম।
ফেরেশতারা বলেঃ আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা দেশত্যাগ করে সেখানে চলে যেতে?”
(সূরা নিসা ৯৭)
.
তেমনি উত্তর মেরু বা দক্ষিন মেরুতে যদি কারো থাকার কারণে দ্বীন ইবাদত পালনে অসুবিধা হয় তবে কোরানের নির্দেশ উক্ত অঞ্চল ত্যাগ করা। কারন প্রশস্ত পৃথিবীর বিশাল জায়গা বাদ দিয়ে উত্তর মেরু ও দক্ষিন মেরুতেই থাকতে হবে এটা কোন চিন্তা হতে পারে না। শুধু নাস্তিক্যবাদি আয়োডিনমুক্ত চিন্তায়ই হয়ত তা সম্ভব।
.
লেখকঃ মোঃ রাফাত রহমান [ফেসবুক id: Md. Rafat Rahman]

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *