نحمده ونصلي علي رسوله الكريم اما بعد
সর্ব সম্মতিক্রমে শরীয়তের গ্রহণযোগ্য দলিল চারটি।
১.কুরআনুল কারীম
২.রাসূল স. এর সুন্নাহ
৩.সাহাবা ও দীনদার আহলে ইলমের ইজমা
৪. মুজতাহিদ ইমামগণের কিয়াস
বর্তমানে যারা হাদীস মানার অজুহাতে মুজতাহিদ ইমামগণের কিয়াস বা মাযহাব মানাকে অস্বীকার করে তারা একটি বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন উত্থাপন করে থাকে যে, হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, কুরআন, সুন্নাহ কে আঁকড়ে ধর তাহলে তোমরা বিপথগামী হবে না। কাজেই যারা চার মাযহাব বা চার ইমামের মাযহাব মেনে মাযহাবী হলো, তারা কুরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে ধরলেন কোথায় ? বরং তারাতো কুরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে ধরার স্থলে মাযহাব বা মাযহাবের ইমামদের আঁকড়ে ধরলেন। তাহলে তাদেরকে গোমরাহ বা বিপথগামী বলা যাবে না কেন ?
এজাতীয় প্রশ্নের জবাব হচ্ছে-
কোন মুজতাহিদ ইমামের পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ ছাড়া নিজস্ব কোন পথ ও মত নেই। সুতরাং মাযহাব মানলে কুরআন-সুন্নাহ ছেড়ে ভিন্ন কারো পথ অবলম্বন করার প্রশ্নই আসে না। ইমামের মাযহাব মান্য করার মূল কারণ ও রহস্য হচ্ছে, সাধারণ মুসলমান আলেম হোক বা গাইরে আলেম, যারা মুজতাহিদ নয় তাদের পক্ষে মাযহাব মানা ছাড়া কুরআন-সুন্নাহ কে আঁকড়ে ধরাই সম্ভব নয়। কাজেই হাদীসের আদেশক্রমে কুরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতেই মাযহাব বা ইমাম মানতে হয়।
এর সামান্য বিশ্লেষণ হচ্ছে, বহু রহস্যের কারণে আল্লাহ তায়ালা এবং তার প্রিয় নবী পবিত্র কুরআন-সুন্নায় অনেক বিষয়ের বর্ণনা সুস্পষ্ট ভাষায় দিলেও বহু বিষয়ের সমাধান সুস্পষ্ট ভাষায় অকাট্যভাবে প্রদান করেননি। তাই দেখা যায়-
ক. অনেক বিষয়ের সমাধান কুরআন-সুন্নায় খুঁজে পাওয়া যায় না।
খ. অনেক বিষয়ের সমাধান কুরআন-সুন্নায় খুঁজে পাওয়া গেলেও সুস্পষ্ট মর্ম বুঝে আসে না।
গ. অনেক বিষয়ে সুস্পষ্ট মর্ম বুঝে আসলেও কোথাও এর সমাধান এক রকম আবার কোথাও অন্য রকম পরিলক্ষিত হয়।
এ তিনটি ক্ষেত্রে ইজতিহাদ বা বিশেষ গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত মূলক ও সুস্পষ্ট সমাধান করার দায়িত্ব স্বয়ং কুরআন-সুন্নাই অর্পন করেছে মুজতাহিদগণের হাতে।
পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ….
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহ ও তার রাসুলের। এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলুল আমর অর্থাৎ ফিকাহবিদ বা মুজতাহিদ তাদের।”
এ আয়াতে শরীয়তের পূর্বোল্লিখিত চার দলিল সনাক্ত করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং পূর্বোল্লিখিত তিনটি ক্ষেত্রে মুজতাহিদ ইমামগণের সিদ্ধান্ত ও সমাধান মানাই কুরআনের নির্দেশ।
তাই মাযহাব মানলে কুরআন সুন্নাহর অমান্য নয় বরং মাযহাব না মানলেই কুরআন সুন্নাহর অমান্য হয়।
উল্লেখ্য, যেসব বিষয়ে কুরআন সুন্নায় সুস্পষ্ট সমাধান নেই এবং সাহাবাদের ঐকবদ্ধ সমাধান পাওয়া যায় না; তবে মুজতাহিদ ইমামগণ ঐক্যমতে পৌঁছতে পেরেছেন, তাকে দ্বিতীয় স্তরের ইজমা বলা হয়।
আর যদি কেউ ঐক্যমতে পৌঁছতে না পেরে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন, তখন প্রত্যেক মতকেই একেক মাযহাব বলা হয় এবং প্রত্যেকটি মতই শরীয়তের বিচারে সঠিক। একটিও বাতিল নয়।
রাসুল স.বলেছেন, ‘মুজতাহিদগণের পরস্পরে দ্বিমত হলে উভয় মতেই সওয়াব রয়েছে।’ সুতরাং প্রসিদ্ধ চারটি মাযহাবের প্রতিটি পালনেই যে সাওয়াব আছে তা হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত।
অনেকে আবার প্রশ্ন করেন, মাযহাব শুধু চারটি কেন ? মুজতাহিদ ইমাম কি শুধু চার জনই ছিলেন ?
এর জবাব হচেছ, ‘না’। ইজতিহাদের গুণাবলীসম্পন্ন লোক সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের যুগে অনেক ছিলো। কিন্তু তাদের বর্ণিত যাবতীয় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সুবিন্যস্তভাবে সংরক্ষিত হয়নি। বরং সংরক্ষিত হয়েছে মাত্র চার মুজতাহিদের বিবরণ ও বিশ্লেষণ। এ কারণেই বর্তমানে এ চার মুজতাহিদের মাযহাব অনুসরণ ছাড়া জীবনের সর্বক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন সুন্নাহ মতে চলার সুযোগ নেই।
রাসুলের নামায বলতে কী বুঝায়
উপরোক্ত বিবরণ ভালোভাবে অনুধাবন করে নিলে এ কথা স্পষ্ট হবে যে, নামায সম্পর্কে রাসূল স.-এর হাদীসে যেসব বিবরণ অকাট্য, সুস্পষ্ট , ব্যাখ্যাহীনভাবে পাওয়া যায় সেসব ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই; বরং চার মাযহাবের ইমামগণ সে ব্যাপারে একমত।
সুতরাং এ ক্ষেত্রে সব মাযহাবই সুন্নাতের অনুসারী।
নামাযের যেসব বিষয়ে রাসূল স.-এর বিভিন্ন কাজ ও কথা বিভিন্ন রকম, পরিস্কার কোনো আমল বা কথা পাওয়া যায় না। এসব ক্ষেত্রে চার মাযহাবের ইমামগণ নামাযের যে ব্যাখ্যা দিবেন সে ব্যাখ্যা মতে নামায আদায় করাই রাসূল স.-এর নামায বা সুন্নাত মোতাবেক নামায। কিন্তু যে ব্যাপারে রাসূল স.-এর পরিষ্কার কোনো বর্ণনা বা আমল পাওয়া যায় না, অথচ সে ব্যাপারে চার মাযহাবের কোনো একটারও অনুসরণ করা হয় না এমন নামাযকে ‘হাদীসের আলোকে নামায’ বা ‘রাসূলের নামায’ বলে আখ্যা দেয়া রাসূল স.-এর প্রতি জঘন্যতম অপবাদ।
আমাদের আলোচ্য বিষয়
মুক্তাদি ইমামের পেছনে সূরায়ে ফাতেহা পড়বে কি না ?
এ ব্যাপারে রাসূল স.-এর কোনো আমল প্রমাণিত নেই। হ্যাঁ, এ ব্যাপারে তার একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়।
এক বর্ণনায় রাসূল স. বলেছেন,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রلَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَصَاعِدًاগ্ধ
যে ব্যক্তি সুরায়ে ফাতেহা পড়বে না তার নামায হবে না।
অপর বর্ণনায় এসেছে, তার নামায পরিপূর্ণ হবে না।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ فَقِرَاءَتُهُ لَهُ قِرَاءَةٌগ্ধ
“ইমামের সাথে নামায আদায়কারীর জন্য ইমামের সুরা কেরাতই যথেষ্ট । তার পড়ার দরকার নেই।’’ (ভাবার্থ)
সুতরাং এ মাসআলার মধ্যে রাসূল স.-এর কোনো একটা হাদীস বা বিবরণ দ্বারা মুক্তাদীর ইমামের পিছনে ফাতেহা পড়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট মিমাংসায় পৌঁছার উপায় নেই। এ মিমাংসার দায়িত্ব ইমামে মুজতাহিদদের। তারা বিষয়টি মিমাংসা করতে গিয়ে ইজতিহাদগতভাবে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেননি।
ইমাম শাফেয়ী র. এক ধরনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, ইমামের সাথে নামায আদায়কারীদেরও সূরায়ে ফাতেহা পড়তে হবে নামাযে কিরাত আস্তে পড়া হোক বা উচ্চস্বরে পড়া হোক। পক্ষান্তরে ইমামের সাথে সূরায়ে ফাতেহা পড়া বৈধ হবে না।
হানাফী ব্যাখ্যার সারমর্ম
আহনাফের ব্যাখ্যার মর্মকথা হলো, পবিত্র কুরআনের এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
فأقروا ما تيسر من القرآن
‘নামাযে কুরআনের যে অংশই পড়া সহজ হবে তাই পড়’।
এ আয়াতে সাধ্যমতো পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কাজেই নামাযে কুরআনের যেকোনো একটি পড়া হবে ফরয।
আর যে হাদীসে রাসূল স. বলেছেন, ‘সুরায়ে ফাতেহা না পড়লে নামায হবে না’-এর অর্থ হলো, নামায পরিপূর্ণ হবে না। যা অন্য হাদীসেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।
সুতরাং নামাযে সুরা ফাতেহা পড়া ফরয নয় বরং ওয়াজিব।
আরেক হাদীসে রাসূল স. বলেছেন-
মুক্তাদীর জন্য কোনো সুরা কেরাত নেই। বরং ইমামের সুরা কেরাতই মুক্তাদীর সুরা কেরাত বলে গণ্য হবে।
একই ব্যক্তির পক্ষে থেকে এক রাকাতে দুইবার কেরাত পড়ার কোনো বিধান শরীয়তে নেই। তাই ইমাম মুক্তাদির পক্ষে একবার কেরাত পড়ার পর মুক্তাদি সুরায়ে ফাতিহা পড়ে দ্বিতীয় বার কেরাত পড়ার যুক্তি যুক্ত কোনো কারণ নেই। বিধায় শরীয়তে তা অগ্রহণযোগ্য।
একমাত্র হানাফী মাযহাবেই কুরআন-সুন্নার সবগুলি বিবরণ পালন করার মতো চমৎকার বিশ্লেষণ দেয়া হয়েছে। এ হিসাবে আহনাফের বিশ্লেষণ অনুযায়ী মুক্তাদির ফাতিহা না পড়ার মতই হচ্ছে কুরআন সুন্নার সর্বাধিক নিকটতম মত ।
ইমাম শাফেয়ী র., যিনি মুজতাহিদ ইমাম। তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী তার মাযহাবকে অনুসরণ করে মুক্তাদি সুরায়ে ফাতেহা পড়লে শাফেয়ীদের জন্য তাও অবশ্য সুন্নাতে রাসুলের অনুকরণ বলা হবে। কারণ নামাযের যেসব ক্ষেত্রে মুজতাহিদগণের ব্যাখ্যায় মতপার্থক্য রয়েছে, তার মধ্যে কোনো একটি পদ্ধতি/ব্যাখ্যাকে রাসূলের সুন্নাতসম্মত আর অন্যটি সুন্নাত পরিপন্থি তা বলা যাবে না। বিধায় যেকোনো ইমাম ও মাযহাবের অনুকরণে যে নামায পড়বে তা সুন্নাত নামায হিসেবে পরিগণিত হবে।
যারা মুজতাহিদও নয় মুকাল্লিদও নয় তারা সুরা ফাতিহা কেন পড়বে
কিন্তু যারা ইজতিহাদের গুণাবলী বিদ্ধমান না থাকায় তারা মুজতাহিদও হতে পারলো না। আবার হাদীস মানার দোহাই তুলে চার মাযহাবের কোনো মাযহাবকেও মানার সৌভাগ্য হলো না তাদের মতো কার নামায সুন্নাত অনুযায়ী এবং কার নামায সুন্নাতের পরিপন্থি এ নিয়ে মন্তব্য করার অধিকার আছে বলে মনে হয় না।
সারকথাÑ ইমাম আবু হানীফা র.-এর ব্যাখ্যা মতে মুক্তাদিদের জন্য সুরায়ে ফাতিহা না পড়া এবং ইমাম শাফেয়ী র. ব্যাখ্যা মতে পড়া না পড়া দুনোটাই সঠিক। উভয় মাযহাবীদের নামাযই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য। কেননা পূর্বোল্লোখিত রাসুলের হাদীসে বলা হয়েছেÑ মুজতাহিদগণের মধ্যে দ্বিমত হলে উভয় মতেই সওয়াব রয়েছে।
কিন্তু যারা মুজতাহিদও নয় আবার কোনো মাযহাবও মানে না তারাও সুরাতুল ফাতিহা পড়লেও জবাবদিহি করতে হবে আর না পড়লেও জবাবদিহি করতে হবে।
কেননা পবিত্র কুরআনে বলা আছে-
فاسئلو اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
‘তোমরা নিজেরা যদি না জানো , তাহলে যারা জানেন তাদের জিজ্ঞাসা করো। [দ্র. সুরায়ে নাহল : ৪৩]
এর উদাহরণ হচ্ছে, ধরুন কোনো এক শহরে চারজন মাত্র সনদধারী ডাক্তার আছেন। সরকারী আইনে রোগীর জন্য উক্ত ডাক্তারদের কোনো একজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী বা বৈধ। কিন্তু রোগী যদি সনদধারী ডাক্তারের ব্যবস্থা না নিয়ে হাতুড়ে ডাক্তারের ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে এ ব্যবস্থা দেয়া-নেয়া উভয়টাই হবে অবৈধ।
অনুরূপ মুজতাহিদ হিসেবে ইমাম আবু হানিফার মাযহাব মতে সুরায়ে ফাতিহা না পড়া যেমন বৈধ, ইমাম শাফেয়ী র.-এর মাযহাব মতে মুক্তাদির সুরায়ে ফাতেহা পড়াও বৈধ ।
কিন্তু যারা মুজতাহিদ নয় অথচ মাযহাবের ইমামের ব্যাখ্যাও মানে না এ ফাতওয়ায় তাদের কারো জন্য মুক্তাদি হয়ে সুরায়ে ফাতিহা পড়া যেমন অবৈধ, না পড়াটাও সমানভাবে অবৈধ।
বর্তমানে একটি মহল মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে যে, ইমাম আবু হানীফা র. যেসব মাসআলা উদ্ভাবন করে গেছেন সেগুলোর অধিকাংশই ভিত্তিহীন। তার অনুসারীরা যুগ-যুগ ধরে অন্ধের মত সেগুলোর উপর আমল করে আসছে। যেমন নামাযে হাত উত্তোলোন না করা, জোরে আমীন বলা না বলা ইমামের পিছনে কেরাত না পড়া ইত্যাদি । কিšত্ত অপপ্রচারকারীরা তাদের দাবীর পক্ষে কুরআন হাদীসের আলোকে দলীল পেশ করতে পারছেনা। ‘ইজমায়ে উম্মত’ আর শরীয়তের চতুর্থ দলিল ‘কিয়াস’ তো তারা মানেই না।
পক্ষান্তরে প্রত্যেকটি মাসআলা কুরআন সুন্নাহর সাথে সাথে ইজমায়ে উম্মত এবং কিয়াস সমর্থিত। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। বক্ষমান নিবন্ধে তা তুলে ধরা হলো।
মুক্তাদির ফাতেহা পাঠ প্রসঙ্গে ইমামগণের মতামত
এ ব্যাপারে সবাই একমত যে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা ছাড়া অন্য কিছু পড়বে না। শুধু ফাতেহা পড়া না পড়া নিয়ে মতানৈক্য।
নিচে আমরা এ ব্যাপারে উলামাদের মতামত এবং দলীল তুলে ধরছি।
১.হানাফী মাযহাব : ইমাম আবু হানীফা ও তার অনুসারীদের নিকট মুক্তাদির জন্য সর্বাবস্তায় (আস্তে কেরাতের নামায হোক বা জোরে, ইমামের কেরাত শুনা যাক বা না যাক) কেরাত পড়া মাকরুহে তাহরীমী ।
২. মালেকী মাযহাব : ইমাম মালেক র.-এর নিকট ‘যাহরী নামাযে’ মুক্তাদির কেরাত পড়া মাকরুহ আর সিররী নামাযে মুস্তাহাব।
৩. হাম্বলী মাযহাব : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল র.-এর নিকট ইমামের কেরাত শুনা গেলে মুক্তাদির জন্য কেরাত পড়া জায়েয নেই, অন্যথায় জায়েয।
৪.শাফেয়ী মাযহাব : ইমাম শাফেয়ী র.-এর প্রথম মত ছিলো ‘সিররী নামাযে’ মুক্তাদির কেরাত পড়া ওয়াজিব, জাহরী নামাযে নয়। পরে তিনি মতামত পরিবর্তন করে বলেন জাহরী নামাযেও মুক্তাদির কেরাত পড়া ওয়াজিব।
৫. তথাকথিত আহলে হাদীস বা গাইবে মুকাল্লিদগনের নিকট মুক্তাদির জন্য সকল নামাযে কেরাত পড়া ফরয, না পড়লে নামায হবে না।
ইমাম আবু হানিফা র. (হানাফী মাযহাব)-এর দলিল সমূহ
প্রথমত কুরআন থেকে
১.নং দলিল: মহান আল্লাহ বলেন-
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآَنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ .( الاعراف: ২০৪)
‘আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন মনোযোগ সহকারে শ্রবন করো এবং চুপ থাকো। যাতে তোমাদের প্রতি দয়া কর হয়। (সূরা আ‘রাফ:২০৪)
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল র.বলেন,
اجمع الناس علي ان هذه الآية نزلت في الصلاة. (المغني: ২/১২৭)
এ আয়াতটি সবার ঐক্যমতে নামাজের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। (আল মুগনী:২/১২৭)
হযরত ইবনে মাসউদ রা., ইবনে আবক্ষাস র. ,আবু হুরায়রা রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রা. বলেন-
واذا قري القرآن فاستمعوا له وانصتوا لعلكم ترحمون، يعني في الصلاة المفروضة. (ابن كثير: ৩/৩১৫)
এ আয়াতটি নামায এবং খুৎবার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। (ইবনে কাসীর ৩/৩১৫)
ইমাম যায়েদ ইবনে আসলাম ও আবুল আলীয়া র. বলেন-
كانوا يقرؤن خلف الامام فنزلت ’’واذا قري القرآن‘‘ الآية
যখন কিছু মানুষ ইমামের পিছনে কেরাত পড়া আরম্ভ করলো তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (আলমুগণী : ২/১১৭)
আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী র. তার তাফসীর গ্রন্থে পঁচিশেরও বেশি রেওয়ায়েত এনেছেন যে, আয়াতটি নামাযের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে এবং এমতটিকে তিনি অন্নান্য মতের উপর প্রধান্য দিয়েছেন।
ইমাম তাবারী র. বিষয়টিকে এভাবে বর্ণনা করেন-
واولي الاقوال في ذلك بالصواب قول من قال امروا باستماع القرآن في الصلوة اذا قرأ الامام وكان من خلفه ممن يأتم به يسمعه….لصحةالخبر عن رسول الله صلي الله عليه وسلم أنه قال : اذا قرأ الامام فانصتوا.
অর্থাৎ এক্ষেত্রে সঠিক ও প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হলো, যারা বলেছেন নামাযে কুরআন মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইমাম যখন কিরাত পড়বেন তখন তার পেছনে যারা ইক্তেদা করবে তারা তা শ্রবণ করবে। …. কেননা, রাসূল স. থেকে সহীহ সনদে এ হাদীস বর্ণিত আছে যে, যখন ইমাম কিরাত পড়বে তখন তোমরা নীরব থাকবে। (তাফসীরে তাবারী:৯/১৭২)
ইবনে আব্দুল বার র. বলেন-
في قول الله تعالي ’’واذا قري القرآن فاستمعوا له وانصتوا ..الخ‘‘ مع اجماع اهل العلم أن مراد الله من ذلك في الصلوات المكتوبة اوضح الدلائل علي أن الماموم اذا جهر امامه في الصلوة أنه لايقرأ معه بشيئ وأنه يستمع له وينصت.( التمهيد: ১১/৩০-৩১)
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার বানী (واذا قري القرآن) দ্বারা সকল আলেমের ঐক্যমতে আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে, ফরয নামাযসমূহ। এতে একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, ইমাম যখন নামাযে উচ্চস্বরে কিরাত পড়বেন তখন মুক্তাদিরা কিছুই পড়বে না; বরং কান পেতে শুনতে থাকবে ও নীরব থাকবে। (আত তামহীদ:১১/৩০-৩১)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া র. বলেন-
فَإِنَّ لِلْعُلَمَاءِ فِيهِ ثَلَاثَةَ أَقْوَالٍ. قِيلَ: لَيْسَ لَهُ أَنْ يَقْرَأَ حَالَ جَهْرِ الْإِمَامِ إذَا كَانَ يَسْمَعُ، لَا بِالْفَاتِحَةِ وَلَا غَيْرِهَا، وَهَذَا قَوْلُ الْجُمْهُورِ مِنْ السَّلَفِ وَالْخَلَفِ، وَهَذَا مَذْهَبُ مَالِكٍ وَأَحْمَدَ، وَأَبِي حَنِيفَةَ وَغَيْرِهِمْ، وَأَحَدُ قَوْلَيْ الشَّافِعِيِّ. وَقِيلَ: بَلْ يَجُوزُ الْأَمْرَانِ، وَالْقِرَاءَةُ أَفْضَلُ.
وَقِيلَ: بَلْ الْقِرَاءَةُ وَاجِبَةٌ، وَهُوَ الْقَوْلُ الْآخَرُ لِلشَّافِعِيِّ. وَقَوْلُ الْجُمْهُورِ هُوَ الصَّحِيحُ فَإِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ قَالَ: {وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ} [الأعراف: ২০৪] قَالَ أَحْمَدُ: أَجْمَعَ النَّاسُ عَلَى أَنَّهَا نَزَلَتْ فِي الصَّلَاةِ. (الفتاوي الكبري لابن تيمية: ২/১৩৪)
অর্থাৎ এ ব্যাপারে উলামাদের তিনটি মত রয়েছে-
১. কেউ কেউ বলেছেন ইমাম যখন কিরাত উচ্চস্বরে পড়বেন মুক্তাদি তা শ্রবণ করবে। কোনো অবস্থাতে সে কিরাত পড়তে পারবে না। এমনকি সূরায়ে ফাতেহাও না। পুর্বসুরী ও পরবর্তী অধিকাংশ আলেমের মত এটাই।
ইমাম মালেক, ইমাম আহমদ, ইমাম আবু হানিফা প্রমূখের মাযহাব ও তাই। ইমাম শাফেয়ী র. এর দুটি মতের একটি অনুরূপ।
২.কেউ কেউ বলেছেন , উভয়টি করা যাবে। তবে মুক্তাদির কেরাত পড়াই উত্তম।
৩.কেউ কেউ বলেছেন , মুক্তাদির জন্য ইমামের সাথে কিরাত পড়া ওয়াজিব। এটি ইমাম শাফেয়ী র. এর সর্বশেষ মত। (ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন) অধিকাংশ আলেমের মতটিই সঠিক। কারণ, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
واذا قري القرآن فاستمعوا له وانصتوا
যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনযোগ দিয়ে শ্রবণ কর এবং নীরব থাক।
আর ইমাম আহমদ র. বলেন: আয়াতটি সকলের মতে নামায সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। (আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা লি ইবনে তাইমিয়া: ২/১৩৪)
২নং দলিল-
আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآَنَهُ (القيامة: ১৮) قال ابن عباس استمع وانصت له.
অতপর: আমি যখন তা পাঠ করি আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন। (সূরা কিয়ামাহ:১৮)
ইবনে আবক্ষাস রা. বলেন অর্থাৎ চুপ করে মনোযোগের সাথে শ্রবন করুন। সকল মুফাস্সীরগণ এ আয়াতের একই তাফসীর করেছেন অর্থাৎ চুপ থাকা এবং মনোযোগ দিয়ে শ্রবন করা। নামাযের বাহিরে এ হুকুম হলে নামাযের ভিতরে কি হুকুম হবে তা সহজেই বোধগম্য।
দ্বিতীয়ত :হাদীস দ্বারা দলিল-
৩নং দলিল –
ইমাম মুসলিম র. নামাযে ইমাম-মুক্তাদীর দায়িত্ব এবং উভয়ের নামাযে পার্থক্য কি কি? এবিষয়ে হযরত আবু মূসা আশআরী রা. থেকে একটি হাদীস বর্ননা করেছেন।
ان رسول الله (ص) خطبنا فبين لنا سنتنا وعلمنا صلاتنا….فاذا كبر فكبروا واذا قرء فانصتوا واذا قال غير المغضوب عليهم ولاالضالين فقولوا آمين يجبكم الله…….الخ.
অর্থাৎ রাসূল স. আমাদের নামায শিক্ষা দিলেন ….. ইমাম যখন কিরাত পড়া শুরু করবে তখন তোমরা চুপ থাকবে আর যখন তিনি غير المغضوب عليهم والاالضالين
পড়বেন, তোমরা তখন আমীন বলবে। (মুসলিম শরীফ:১/১৭৪)
ইমাম আবু দাউদ ইবনে মাযাহ, আহমাদ র.সহ অনেকেই হাদীসটি নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেন।
এ হাদিসেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, মুক্তাদী সূরা ফাতেহা পড়বে না।
৪নং দলিল-
ইবনে মাযাহ শরীফে এমনই একটি হাদীস হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করা হয়েছে। ইমাম মুসলিম র.হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন। (ইবনে মাযাহ মাযাহ শরীফ ১/৬১)
৫ নং দলিল-
তিরমিযী ও আবু দাউদ শরীফে উল্লেখ আছে-
و حدثني يحيى عن مالك عن ابن شهاب عن ابن أكيمة الليثي عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم انصرف من صلاة جهر فيها بالقراءة فقال هل قرأ معي منكم أحد آنفا فقال رجل نعم أنا يا رسول الله قال فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم إني أقول ما لي أنازع القرآن فانتهى الناس عن القراءة مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فيما جهر فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم بالقراءة حين سمعوا ذلك من رسول الله صلى الله عليه وسلم
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল স. একবার জাহরী নামায শেষ করে সাহাবাদের জিজ্ঞেস করলেন, আমার পিছনে তোমাদের কেউ কি কেরাত পড়ছিল? একজন বলল জি হ্যাঁ ইয়া রাসূল আল্লাহ। রাসূল সা. বললেন তাই তো বলি কুরআনের সাথে ঝগড়া করছিলাম কি জন্যে। রাসূল সা.-এর এই মন্তব্য শুনে সবাই জাহরি নামাযে কেরাত পড়া বন্ধ করে দিলো। (তিরমিযী শরীফ : ১/৭১, মুয়াত্তা মালেক:পৃ:৬৯,নাসায়ী শরীফ:১/১৪৬,আবূ দাউদ শরীফ:১/১২০,ইবনে মাযাহ শরীফ :৬১)
৬নং দলিল-
মুসলিম শরীফে আছে-
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন,
واذا قال القاري غير المغضوب عليهم والاالضالين فقال من خلفه آمين فوافق قوله قول اهل السماء غفرله ما تقدم من ذنبه.
অর্থাৎ যখন ইমাম غير المغضوب عليهم ولاالضالينপাঠ করে আর মুক্তাদিগন আমীন বলে তাহলে যার আমীন আসমানবাসীদের আমীনের সাথে মিলে যায় তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (মুসলিম :১/১৭৬)
বিশ্লেষণ- এ হাদীসে রাসূল সা. নামাযের মধ্যে একমাত্র ইমামকেই ক্বারী বলেছেন। এতে বুঝা যায়, নামাযে কুরআন পাঠ করা একমাত্র ইমামের দায়িত্ব, মুক্তাদির নয়। যদি মুক্তাদির দায়িত্ব হতো তাহলে তাদেরকেও হাদীসে কারী বলে অভিহিত করা হতো।
তাছাড়া এ হাদীসে স্পষ্ট বলা হয়েছে ‘যখন (কুরআন) পাঠ কারী غير المغضوب عليهم والاالضالين বলে তখন মুক্তাদি আমীন বলবে’। বুঝা যাচ্ছে, ইমাম সূরা ফাতেহা পাঠ করবে আর মুক্তাদি শুধু আমীন বলবে।
৭নং দলিল-
বুখারী শরীফে আছে-
হযরত আবু হুরায়রা রাযি.-এর সূত্রে বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন-
اذا امن القاري فامنوا فان الملئكة تؤمن.
অর্থাৎ যখন (কুরআন) পাঠকারী আমীন বলেন, তোমরাও তখন আমীন বলবে। কেননা তখন ফেরেস্তারা আমীন বলে থাকে। (বুখারী শরীফ:২/৯৪৭)
এ হাদীসেও ইমামকেই একমাত্র কারী বলা হয়েছে।
৮নং দলিল-
আবু দাউদ ও নাসায়ী শরীফে আছে-
হযরত আবু হুরায়রা রা. সূত্রে বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন-
أخبرنا الجارود عن معاذ قال نا أبو خالد الأحمر عن محمد بن عجلان عن زيد بن أسلم عن أبي صالح عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : إنما جعل الإمام ليؤتم به فإذا كبر فكبروا وإذا قرأ فأنصتوا وإذا قال سمع الله لمن حمده فقولوا اللهم ربنا لك الحمد
অর্থাৎ ইমাম নিয়োগ দেয়া হয় তাকে অনুসরণের জন্য। অতপর যখন ইমাম তাকবীর বলবে, তোমরাও তখন তাকবীর বলবে। আর তিনি যখন কেরাত পড়বেন তোমরা তখন চুপ থাকবে, যখন তিনি سمع الله لمن حمده বলবেন তোমরা বলবে ربنا لك الحمد (আবু দাউদ শরীফ ১/৮৯,নাসায়ী শরীফ ১/১০৭,ইবনে মাজাহ শরীফ১/৬১)
বিশ্লেষণ- এ হাদীসে ইমামকে কিভাবে অনুসরণ করা হবে তা বলে দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ ইমাম যখন কেরাত পাঠ করবে তখন চুপ থাকা। হযরত আনাস রা. ও আয়েশা রা. থেকে বুখারী শরীফে দু’টি হাদীসে (হাদীস নং ৩৭৮-৬৮৮) বলা হয়েছে ইমামকে অনুসরণ করার জন্য। কিভাবে অনুসরণ করা হবে সে প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আবক্ষাস রা. فاذا قرئناه فاتبع قرآنه এর ব্যাখ্যায় বলেন (فاتبع) অনুসরণ করো অর্থাৎ চুপ থাক এবং মনোযোগের সাথে শ্রবন কর। অতএব কেরাত পড়ার সময় ইমামের অনুসরনও হবে তাই।
৯ নং দলিল-
হযরত জাবের রা. হাদীস বর্ণনা করেন,
عن النبي عليه الصلوة والسلام قال: ’’كل من كان له امام فقراءته له قراءة‘‘. (اخرجه ابن ابي شيبة: رقم: ৩৮২৩) قال حدثنا مالك ابن اسماعيل عن حسن بن صالح عن ابي الزبير عنه. اسناده صحيح.
ক্স واخرجه عبد بن حميد في مسنده عن ابي الزبير عنه مرفوعا: قال البوصري: اسناده صحيح علي شرط مسلم.
ক্স واخرجه احمد بن منيع في مسنده ، عن عبد الله بن شداد عنه مرفوعا، قال البوصري اسناده صحيح علي شرط الشيخين.
ক্স واخرجه الامام محمد في الموطأ ص৯৮ عن ابي حنيفة ثنا ابو الحسن موسي بن ابي عائشة عن عبد الله بن شداد بن الهاد عنه مرفوعا، واسناده صحيح.
ক্স واخرجه احمد عن اسود بن عامر عن حسن بن صالح عن ابي الزبير عنه مرفوعا، وهو اسناد صحيح.
ক্স واخرجه ابن ماجه في سننه كذلك، وفي اسناده جابر الجعفي (وهو ضعيف)
অর্থাৎ রাসূল স. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তির ইমাম আছে, ইমামের কিরাতই তার কিরাত বলে গণ্য হবে। পৃথকভাবে মুক্তাদির কোনো কিরাত পড়তে হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: হাদীস নং ৩৮২৩, হাদীসটির সনদ সহীহ)
ক্স উক্ত হাদীসটি মুসনাদে আবদ্ বিন হুমাইদে ভিন্ন সনদে উদ্বৃত হয়েছে। ইমাম বুসরী র. এ সনদ সম্পর্কে বলেছেন, এটি ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।
ক্স উক্ত হাদীসটি ভিন্ন সনদে মুসনাদে আহমদ বিন মানী গ্রন্থে উদ্বৃত হয়েছে, তার সম্পর্কে ইমাম বুসরী র. বলেছেন, এটি বুখারী ও মুসলিম উভয়ের শর্ত মোতাবেক সহীহ।
ক্স হাদীসটি মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদের ৯৮ নং পৃষ্ঠায় এবং মুসনাদে আহমদের ৩/৩৩৯ তে উদ্বৃত হয়েছে। উভয় সনদে হাদীসটি সহীহ।
হাদীসটি ইবনে মাজা শরীফে এসেছে, তবে এ সনদে জাবের আল-জু‘ফী নামক (দুর্বল) বর্ণনাকারী রয়েছে।
মোট কথা- উপরোক্ত হাদীসে একটি মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে যে, মুক্তাদির জন্য ইমামের কিরাতই যথেষ্ট। তাকে আলাদা করে সূরায়ে ফাতেহা বা অন্য কোনো কিরাত পড়তে হবে না। কেননা, সূরা ফাতেহা হচ্ছে আল্লাহর দরবারে আবেদন নিবেদন। আর ইমাম সাহেব সকলের পক্ষ থেকে এ আবেদন পেশ করেছেন। তাই মুক্তাদির ভিন্নভাবে কিছু করা নিয়ম বহির্ভূত। হাঁ, রুকু সিজদা তাকবীর ও তাসবীহ হলো আল্লাহর দরবারের আদব। এ কারণে ইমাম ও মুক্তাদি সকলেই তা পালন করতে হবে।
তৃতীয়ত: সাহাবাদের আমল-
১০ নং দলিল-
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এর মত যা তাফসীরে তাবারীতে উদ্বৃত হয়েছে-
صلي ابن مسعود رض فسمع اناسا يقرؤون مع الامام فلما انصرف قال: أما آن لكم أن تفقهوا ؟ أما آن لكم أن تعقلوا ؟ واذا قري القرآن فاستمعوا وانصتوا، كما امركم الله.
অর্থাৎ ইবনে মাসউদ রা. নামায পড়ছিলেন। তখন তিনি কতিপয় লোককে ইমামের সঙ্গে কিরাত পড়তে শুনলেন, নামায শেষে তিনি বললেন “তোমাদের কি অনুধাবন করার সময় আসেনি? তোমাদের কি এখনো বুঝার সময় হয়নি ? যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনযোগ দিয়ে শুনবে এবং নীরবতা পালন করবে। যেভাবে আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে আদেশ করেছেন। (তাফসীরে তাবারী : ৯/১০৩)
১১ নং দলিল-
মুয়াত্তা মালেকে আছে-
عن نافع أن عبد الله بن عمركان إذا سئل هل يقرأ أحد خلف الإمام قال إذا صلى أحدكم خلف الإمام فحسبه قراءة الإمام وإذا صلى وحده فليقرأ قال وكان عبد الله بن عمر لا يقرأ خلف الإمام
‘আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. কে যখন জিজ্ঞেস করা হতো যে, ইমামের পিছনে কেরাত পড়া হবে কি না ? তিনি বলতেন, ইমামের কেরাতই মুক্তাদির জন্য যথেষ্ট। যখন একা নামায পড়বে তখন যেন অবশ্যই কেরাত পড়ে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. কখোনো ইমামের পিছনে কেরাত পড়তেন না। (মুয়াত্তা মালেক:পৃ২৯)
চতুর্থত: তাবেয়ীগণের আমল
১২ নং দলিল-
عن عطاء ابن يسار انه اخبره أنه سئل زيد ابن ثابت عن القرأة مع الامام فقال لا قرأة مع الامام في شيئ
অর্থাৎ ইবনে ইয়াসার র. ইমামের পিছনে কেরাত পড়া সম্পর্কে হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত রা. কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জবাবে বলেন, কোনো নামাযেই ইমামের পিছনে কেরাত নেই। ( মুসলিম শরীফ ১/২১৫ নাসায়ী শরীফ ১/১১১)
১৩ নং দলিল- গাইরে মুকাল্লিদ যার কথার উপর আস্থা রাখেন, সেই ইবনে তাইমিয়া র. লিখেন ;
والامر باستماع قرأة الامام والانصات له مذكور في القرآن وفي السنة الصحيحة وهو اجماع الامة فيما زاد علي الفاتحة، وهو قول جماهير السلف من الصحابة وغيرهم في الفاتحة وغيرها.
‘ইমামের কেরাত চুপ করে শোনার বিধান কুরআন ও সহিহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। জামাতের নামাযে মুক্তাদি সূরা মিলাবেনা, এ ব্যাপারে সবাই একমত। আর সাহাবায়ে কেরাম ও সংখ্যা গরিষ্ঠ উলামার মতে সূরা ফাতেহাও পড়বে না । (তানাওইডল ইবাদাত পৃ:৫৫)
১৪ নং দলিল-
عن الشعبي قال ادركت سبعين بدريا كلهم يمنعون عن القرأة خلف الامام.
ইমাম শায়বী র. বলেন, আমি ৭০জন বদরী সাহাবীর দেখা পেয়েছি, তাদের প্রত্যেকেই ইমামের পিছনে কেরাত পড়া থেকে নিষেধ করতেন। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ৫/৪৪৭)
১৫ নং দলিল-
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী র. বলেন-
روى منع القراءة خلف الإمام عن ثمانين من الصحابة الكبار منهم المرتضي والعبادلة الثلاثة وأساميهم عند أهل الحديث فكان اتفاقهم بمنزلة الإجماع
ইমামের পিছনে কেরাত পড়ার বিষয়টি আট জন বিশিষ্ট সাহাবা থেকে বর্ণিত হয়েছে। তারা হলেন, হযরত আলী রা., হযরত ইবনে আবক্ষাস রা., হযরত ইবনে মাসউদ রা., হযরত ইবনে ওমর রা.প্রমুখ। হাদীস বিশারদদের নিকট এতগুলো সাহাবার এ বিষয়ে একমত পোষণ করা ইজমার স্থলাবর্তী। (উমদাতুল কারীর বরাত দিয়ে মা‘আরিফুস সুনান:৩/১৯১)
১৬ নং দলিল-
শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াকুব র. ‘কাশফুল আসতার’ নামক গ্রন্থে লিখেন-
وذكر الشيخ عبد الله ابن يعقوب الحارثي السبزموني في كتاب “كشف الاستار”عن عبد الله بن زيد ابن اسلم عن ابيه قال: كان عشرة من اصحاب رسول الله صلي الله عليه وسلم ينهون عن القرأة خلف الامام اشد النهي: ابوبكر الصديق،عمر الفاروق وعثمان ابن عفان وعلي ابن ابيطالب وعبد الرحمن ابن عوف وسعد ابن ابي وقاص وعبد الله ابن مسعود وزيد ابن ثابت وعبد الله ابن عمر وعبد الله ابن عباس رضوان الله عليهم.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ তার পিতার থেকে বর্ণনা করে বলেন, দশ জন বিশিষ্ট সাহাবী ইমামের পিছনে কেরাত পড়া থেকে কঠিন ভাবে নিষেধ করতেন। তারা হলেন (১) হযরত আবু বকর রা. ২)হযরত ওমর রা. ৩) হযরত ওসমান রা. ৪) হযরত আলী রা. ৫) হযরত আ.রহমান রা.৬) হযরত সা‘দ রা. ৭)ইবনে মাসউদ রা.৮) হযরত যায়েদ বিন ছাবেত রা. ৯) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. ১০)আব্দুল্লাহ ইবনে আবক্ষাস রা.। (মা‘আরেফুস সুনান :৩/১৯১)
১৭ নং দলিল-
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলতেন-
من صلي ركعة لم يقرأ فيها بام القرآن فلم يصلي الاوراء الامام.
‘যে ব্যক্তি নামাযের কোনো এক রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়লোনা সে যেন নামাযই পড়লোনা। তবে যদি সে ইমামের পিছনে নামায আদায় করে।
(তিরমিযি শরিফ :১/৭১,মুআত্তা মালেক:পৃ২৮)
১৮ নং দলিল-
عن أبي بكر: أنه انتهى إلى النبي صلى الله عليه و سلم وهو راكع فركع قبل أن يصل إلى الصف فذكر ذلك للنبي صلى الله عليه و سلم فقال ( زادك الله حرصا ولاتعد
অর্থাৎ হযরত আবু বকর রা. একবার নামাযে এসে দেখলেন রাসূল সা. রুকুতে চলে গেছেন। তিনিও কাতারে না পৌছেই রুকুতে শামিল হয়ে গেলেন। নামায শেষে রাসূল সা. কে এ বিষয়টি জানানো হলে রাসূল সা. বললেন, তুমি এমনটি আর করোনা। আল্লাহ তোমার আগ্রহ বাড়িয়ে দিন অর্থাৎ রাকাত প্রাপ্তির জন্য কাতারে না পৌছে ইমামের ইকতেদা করোনা। (বুখারী শরীফ :১/১০৮)
হাফেয ইবনে হাজার রাহ. একটি রেওয়ায়েত এনেছেন যে, আবু বকর রা. রাকাত ছুটে যাওয়ার ভয়েই এমনটি করেছিলেন। (ফাতহুল বারী :৪০৪)
১৯ নং দলিল-
চার ইমাম এ মাসআলাতে একমত পোষণ করেছেন যে, কোনো ব্যক্তি যদি ইমামকে রুকু অবস্থায় পেয়ে নামাযে শামিল হয়ে যায়, তাহলে সে ব্যক্তি উক্ত রাকাত পেল, অথচ ঐ রাকাতে সে না ফাতেহা পড়েছে না শুনেছে।
ইবনে রজব হাম্বলী র. ফাতহুল বারী গ্রন্থে লিখেন,
من ادرك الركوع مع الامام فقد ادرك الركعة وان فاته القيام وقراءة الفاتحة وهذا قول جمهور العلماء، وقد حكاه اسحاق بن راهويه وغيره اجماعا من العلماء ….وقد روي هذا عن علي و ابن مسعود وابن عمر وزيد بن ثابت وابي هريرة. (فتح الباري لابن رجب: ৪/২৩০)
তেমনিভাবে ইমাম যদি নামাযে ভুল করে অথবা ‘সিররী নামযে’ সেজদায়ে সাহু, সেজদায়ে তেলাওয়াত ওয়াজিব হয়, তাহলে মুক্তাদির উপরও ওয়াজিব হবে। অথচ মুক্তাদি নামাযে কোনো ভুল করেনি, সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করেনি, শুনেওনি। বুঝা গেলো ইমাম মুক্তাদীর নামাযের সকল দায়-ভার গ্রহণ করে নিয়েছে, রাসূল সা. বলেছেন الامام ضامن‘ইমাম হলো জামিন।
১৯ নং দলিল-
ইমাম নাখয়ী রা. বলেন; اول ما احدثو القرأة خلف الامام وكانوا لايقرؤون.
সর্বপ্রথম বিদ‘আত হলো ইমামের পিছনে কেরাত পড়ার বিদ‘আত। সাহাবায়ে কেরাম ইমামের পিছনে কখনো কেরাত পড়তেন না। (আদ্দুররুল মানসুর: ৩/১৫৬)
২০ নং দলিল –
ইমাম আহমাদ র. বলেন ;
ما سمعنا أحدا من أهل الإسلام يقول إن الإمام إذا جهر بالقراءة لا تجزئ صلاة من خلفه إذا لم يقرأ وماقال هذا النبي صلى الله عليه و سلم وأصحابه والتابعون
অর্থাৎ আমরা কোনো মুসলমান থেকে একথা শুনিনি যে, ইমাম জোরে কেরাত পড়ে। আর মুক্তাদী কেরাত না পড়ার কারণে তার নামায হয়নি। রাসূল সা. সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, ইমাম মালেক , ইমাম সাউরী ,ইমাম আওযায়ী, ইমাম লায়ছ ইবনে সা‘দ, এদের কেউই বলেননি যে, ইমামের পিছনে কেরাত না পড়লে মুক্তাদীর নামায বাতিল হয়ে যাবে। (আলমুগণী :২/১১৮)
ইমাম শাফেয়ী র. এবং গাইরে মুকাল্লিদ গনের দলিলসমূহ
১ নং দলিল-
حدثنا هناد حدثنا عبدة بن سليمان عن محمد بن إسحق عن مكحول عن محمود بن الربيع عن عبادة بن الصامت قال : صلى رسول الله صلى الله عليه و سلم الصبح فثقلت عليه القراءة فلما انصرف قال إني أراكم تقرؤن وراء إمامكم ؟ قال قلنا يا رسول الله إي والله قال فلا تفعلوا إلا بأم القرآن فإنه لا صلاة لمن لم يقرأ بها .قال أبو عيسى حديث عبادة حديث حسن
হযরত উবাদা রা. বলেন, রাসূল স. একদিন ফজর নামায আদায় করলেন, যাতে রাসূল সা. এর কেরাতে খটকা লাগলো। নামায শেষ করে সাহাবাদের জিজ্ঞাস করলেন, আমার মনে হয় তোমরা তোমাদের ইমামের পিছনে কেরাত পড় ? সাহাবায়ে কেরাম উত্তর দিলেন জ্বি-হ্যা ইয়া রাসূলাল্লাহ। রাসূল সা. তখন বললেন সাবধান ! তোমরা এমনটি আর করবে না। তবে সূরা ফাতেহা পড়বে। কেননা সূরা ফাতেহা ছাড়া নামায হয় না। ( তিরমিযী শরীফ : ১/৬৯)
ইমাম তিরমিযী র. বলেন হাদীসটি ‘হাসান’।
গাইরে মুকাল্লিদ গণের দলিল গুলোর মধ্যে এই হাদীসটিই হলো সবচেয়ে শক্তিশালী দলিল। তাই এই হাদীসটির অবস্থান জানার মাধ্যমে অন্যান্য দলিল গুলোর অবস্থানও সহজে অনুমেয় হবে।
হাদীসটির পর্যালোচনা
১. উল্লেখিত হাদীসটি অনেক গুলো সনদে বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সনদ হলো মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের সনদ। ইমাম তিরমিযী র. হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন। অর্থাৎ হাদীসটি সহিহ নয়। ইমাম তিরমিযী র. এর ‘ হাসান’ বলার অর্থ হাসান লি-যাতিহী নয়, বরং তিনি কখনো কখনো ‘যায়িফ হাদীসকেও’ তার সনদের দিকে লক্ষ্য করে হাসান বলে দেন। (কিতাবুল ইলাল লিত্তিরমিযী’পৃ:২/২৩৮)
২. হাদীসটির সনদে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক রয়েছে, যার ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কেরামের অনেকেই কালাম করেছেন। সে জন্যই ইমাম বুখারী র. তার কিতাবে হাদীসটি আনতে পারেন নি। বরং উবাদা ইবনে সামেতের অন্য হাদীস এনেছেন, যা আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীন।
৩. হাদীসটি ‘হাদীসে মুয়ানয়ান’ যা মুহাদ্দিসীনদের নিকট গ্রহনগোগ্য নয়।
৪. আল্লামা ইউসুফ বিন নূরী র.মুক্তাদির কেরাত পড়া নিয়ে মাআরিফুস সুনান গ্রন্থে দীর্ঘতর আলোচনা করেছেন। তিনি সেখানে উবাদা ইবনে সামেত রা. এর এ হাদীসটির পর্যালোচনা করতে গিয়ে হাদীসটির সনদে আট প্রকার ‘ইযতেরাব’ এবং মতনে তের প্রকার ইযতেরাব তুলে ধরে হাদীসটিকে যায়িফ সাব্যস্ত করেছে। (মাআরিফুস সুনান:৩/২০২-২০৫)
৫. গাইরে মুকাল্লিদীনের পরম আস্থাভাজন ব্যক্তি আল্লামা ইবনে তাইমিয়া র. হাদীসটি সম্পর্কে বলেন-
وهذاالحديث معلل عند ائمة الحديث بامور كثيرة ضعفه احمد.
আর এ হাদীসটি হাদীস বিষারদ গণের নিকট বহু কারণে দূর্বল। ইমাম আহমদ র. হাদীসটিকে দূর্বল বলেছেন। (ফাতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া:২৩/২৮৬)
৬. তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হাদীসটির তৃতীয় আরেকটি রেওয়ায়েত আছে, যাতে মাকহুল র. দু‘টি রেওয়াতের সমন্নয় করেছেন। কারণ মাকহুল র. হাদীসটি বর্ণনা করেন রবিয়ী র. থেকে । এ হাদীসটি অনেকেই বর্ণনা করেছেন, কিন্তু মাকহুলের মত কেউই বর্ণনা করেননি। বিস্তারিত দেখুন- (ফাতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া:২/১৭৮)
তাদের দ্বিতীয় দলিল لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب.
অর্থাৎ যে সূরা ফাতেহা পড়বে না তার নামায হবে না।
(বুখারী শরীফ হা:৭৫৬)
পর্যালোচনা
হাদীসটি সহিহ হলেও আলোচ্য বিষয়ের উপর স্পষ্ট নয়। কারণ আমরা বলবো
ক. এখানে لا صلاة দ্বারা নামাযের পরিপূর্নতা উদ্দেশ্য, অর্থাৎ সূরা ফাতেহা না পড়লে নামায পরিপূর্ণতা লাভ করে না। এর দ্বারা হানাফীদের বিপরিত হয়না। যেহেতু হানাফীরাও বলেন, নামাযে সূরা ফাতেহা পড়া ওয়াজিব, তবে সবার জন্য নয়। কেবলমাত্র ইমাম এবং ‘মুনফারিদের’ জন্য। কারণ এ হাদীসে জামাতের নামাযের কথা বলা হচ্ছে না ; বরং নামাযের আহকামের কথা বলা হচ্ছে।
খ. আমরা বলবো এ হাদীসে যে ব্যক্তি একাকী নামায পড়ে তার কথা বলা হয়েছে। যেমনটি ইমাম আহমাদ র. বলেছেন-
ان حديث لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب اذا كان المصلي وحده.
অর্থাৎ সূরা ফাতেহা ছাড়া নামায না হওয়ার হাদীসটি যে একাকী নামায পড়ে তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (তিরমিযি শরীফ: ১/৭১)
ইমাম সুফিয়ান সাওরী র. ও এমনটিই বলেছেন।দেখুন: (আবুদাউদ শরীফ:১/১১৯)
সমষ্টিগত ভাবে আহনাফের পক্ষ থেকে জবাব
১ নং জবাব : ইমামের পিছনে কেরাত পাঠ করার সকল হাদীস
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآَنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ .( الاعراف: ২০৪)
আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। যা বিস্তারিত ভাবে আহনাফের প্রথম দলীলে আলোচনা করা হয়েছে।
গাইরে মুকাল্লেদ গণের আরেক আস্থাশীল ব্যক্তি শায়খ আলবানী র. লেখেন, ইমামের পিছনে কেরাত পাঠের হাদীস রহিত হয়ে গেছে-
وكان قد اجاز للموتمين ان يقرؤوابها وراء الامام في الصلوة الجهرية ثم نها هم عن القرأة كلها في الجهرية …….وجعل الانصات لقرأة الامام من تمام الئتمام فقال انما جعل الامام ليتم به فاذا كبر فكبروا واذا قرأ فانصتوا.
প্রথমদিকে জামাতের নামাযে ইমামের পিছনে কেরাত পড়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু পরবর্তিতে রাসূল সা. জোরে কেরাতের নামাযে মুক্তাদির কেরাত পড়া থেকে নিষেধ করেন। ইকতেদার পূর্নতার জন্য ইমামের কেরাত পাঠের সময় নিশ্চুপ থাকাকে অপরিহার্য ঘোষনা করে বলেন, ‘ইমামকে নির্ধারণ করা হয়েছে তার ইকতেদা করার জন্য। অতএব ইমাম যখন তাকবীর বলবে তোমরাও তাকবীর বলবে আর তিনি যখন কেরাত পড়বেন তোমরা তখন চুপ থাকবে’। (সিফতু সালাতিন নাবী:৯৩)
হযরত ইবনে আবক্ষাস রা. বর্ণনা করেন-
صلي النبي صلي الله عليه وسلم فقرأ خلفه قوم فنزلت : وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآَنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا.الآية.
রাসূল সা. নামায পড়াচ্ছিলেন। কিছুলোক তার পিছনে কেরাত পড়লে وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآَن …..الخ. এই আয়াত নাযিল হয়। (তাফসীরে ইবনে হাতেম:৫/১৬৪৫)
২ নং জবাব :
তর্কের খাতিরে যদি কিছুক্ষনের জন্য মেনে নেই যে, হাদীসে মুক্তাদিকেই সূরা ফাতেহা পড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর এ ধরণের হাদীসগুলো রহিতও হয়নি। আমরা বলবো কেরাত পাঠ দু‘ভাবে হতে পারে।
এক. প্রত্যক্ষভাবে, যেমন ইমামের কেরাত পাঠ করা।
দুই. পরোরক্ষভাবে, যেমন জামাতের নামাযে ইমামের কেরাত মুক্তাদীর কেরাত হিসাবে গণ্য হওয়া।
হাদীসে এসেছে-
من كان له امام فقرأة الامام له قراة
‘যে ইমামের পিছনে নামায পড়বে, ইমামের কেরাতই তার কেরাত হিসাবে গণ্য হবে’ (ইবনে মাজাহ শরীফ:১/৬১) আমরা যদি মুক্তাদির উপর আবার কেরাত পড়া ওয়াজিব বলি তাহলে মুক্তাদির উপর দ্বিতীয়বার কেরাত পড়া আবশ্যক হবে, যা ঠিক নয়। সুতরাং ইমামের পিছনে মুক্তাদী কেরাত পড়বে না।
৩ নং জবাব :
কুরআন-হাদীসে সংঘর্ষ হলে কুরআন প্রাধান্য পায়। মুক্তাদীর ফাতেহা না পড়ার মাসআলা আমরা হাদীসের সাথে সাথে কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণ করে থাকি। তাই আমাদের প্রমানগুলো অগ্রগন্য হবে।
ইমাম আবু হানীফা র.-এর মত প্রাধান্যতার কারণ
১. ইমাম আবু হানীফা র.-এর মতামতটি কুরআন সম্মত।
২. ইমাম আবু হানীফা র.-এর মতামতটি সহীহ এবং স্পষ্ট ‘মারফু হাদীস’ দ্বারা প্রমাণিত।
৩. ইমাম আবু হানীফা র.-এর মতামতটি ‘আসারে সাহাবা’ দারাও প্রমাণিত।
৪. ইমাম আবু হানীফা র.-এর মতামতটি অধিকাংশ ইমামেরও মতামত।
৫. ইমাম আবু হানীফা র.-এর মতটি ‘কিয়াস’ তথা যুক্তিসঙ্গত। তাই এটা অন্যান্য মতামতের উপর অগ্রাধিকার প্রাপ্ত।
আল্লাহ রাবক্ষুল আলামীন আমাদের সঠিকভাবে কুরআন-হাদীস বুঝার সৌভাগ্যদান করুন।
(আমীন)
Leave Your Comments