রিচার্ড ডকিন্সের “দা গড ডিল্যুশান”- এর জবাব
.
রিচার্ড ড্যকিন্সের “দা গড ডিল্যুশান” বইটি হাতে তুলে নেয়ার সময় আমি ভেবেছিলাম হয়তো নতুন এমন কিছু যুক্তির সম্মুখীন হব যা দিয়ে নাস্তিকতার দর্শনের পক্ষে ইতিবাচক [১]যৌক্তিক আলোচনা তুলে ধরা হবে।
.
কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, বইটা পড়ার পর আমি হতাশ হয়েছি। যা পড়লাম তা ঘষামাজা করে মান্ধাতার আমলের, অসংলগ্ন পুরনো যুক্তিগুলোর পুনরাবৃত্তি ছাড়া আর কিছুই না। বুঝলাম, রিচার্ড ডকিন্স দর্শন-তত্ত্বে অতোটা পারদর্শী নন। এ বিষয়ে পরিচিতও নন।
.
এ জন্য আমার মনে হল ইতিমধ্যে যেসব আলোচনা এ বিষয়ে হয়েছে সেগুলোর সংকলন করে নিম্নোক্ত উপায়ে তার প্রধান যুক্তিগুলোর জবাব দেওয়া যেতে পারে :
.
১/ যে যুক্তিকে ডকিন্স তার প্রধান যুক্তি হিসেবে গণ্য করে সেটার জবাব
২/ দার্শনিকদের মতে যেটি ডকিন্সের সবচেয়ে ভালো যুক্তি, সেটার জবাব
.
ডকিন্সের প্রধান যুক্তির জবাবঃ
.
ডকিন্স যেটাকে তার বইয়ের “প্রধান যুক্তি” হিসেবে অভিহিত করেছে, তার একটি সারাংশ দেওয়া হয়েছে “দা গড ডিল্যুশান” বইয়ের ১৫৭-১৫৮ পৃষ্ঠাতে –
.
“১/ মানুষের বুদ্ধিমত্তার জন্য এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের একটি হলো মহাবিশ্বের জটিল এবং অসম্ভাব্য ডিজাইন বা নকশাকে ব্যাখ্যা করা।
.
২/ সাধারণ প্রবনতা হলো আপাতভাবে যাকে (ইচ্ছাকৃত) ডিজাইন বলে মনে হয়, সেটাকে প্রকৃতপক্ষেই কোন নকশাকারের ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা নকশা বা ডিজাইন হিসেবে ধরে নেওয়া।
.
৩/ এই প্রবণতাটি ভুল কারণ “ডিজাইনার হাইপোথিসিস” [অর্থাৎ একজন বুদ্ধিমান ডিজাইনার বা নকশাকার (স্রষ্টা) ইচ্ছাকৃতভাবে মহাবিশ্বকে এভাবে সৃষ্টি করেছেন] আমাদের সামনে সাথে সাথে আরো একটি বড় সমস্যা দাড় করিয়ে দেয়। সেটা হলো নকশাকারের নকশা কে করেছে ?
.
৪/ বর্তমানের আমাদের কাছে থাকা সবচেয়ে সৃজনশীল এবং শক্ত ব্যাখ্যা হল ডারউইনের “প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা বিবর্তনের মতবাদ” [evolution by natural selection]। আর পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে আমাদের কাছে এর সমতুল্য কোন ব্যাখ্যা নেই।
.
৫/ জীববিজ্ঞানের ক্ষেতরে ডারউইনের বিবর্তনবাদ যেমন তেমনি পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রেও এমন শক্তিশালী এবং ভালো ব্যাখ্যা একসময় পাওয়া যাবে এমন আশা আমাদের ছেড়ে দেয়া উচিত না।
.
(অতএব) প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।”
.
.
প্রারম্ভিক আলোচনাঃ
.
ডকিন্সের মূল পয়েন্টগুলো নিয়ে আলোচনায় যাবার আগে যাওয়ার আগে – “প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।” – ডকিন্সের এই উপসংহার বা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কিছু কথা বলতে চাই।
.
আমার মূল প্রশ্ন হলো – কিভাবে উপরের ৫টি বিবৃতি থেকে ডকিন্স এই উপসংহারে পৌছায় যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই? কোন যৌক্তিক ক্রমধারার মাধ্যমে প্রথম পাঁচটি বিবৃতি থেকে শেষের উপসংহারটি পাওয়া যায়? যেন সে স্রেফ হাওয়া থেকে তার উপসংহার নিয়ে আসল।
.
প্রথম পাঁচটি বিবৃতি থেকে এই উপসংহারে উপনীত হওয়াটা কেবল ডকিন্সের যুক্তির ভিত কতোটা দুর্বল সেটাই প্রমান করে। আমার কাছে মনে হয়, এখানে একমাত্র ডিল্যুশান হল ডকিন্সের এ দৃঢ় বিশ্বাস যে তার যুক্তি ঈশ্বরের অস্তিত্বকে নাকচ করে দায়।
.
ডকিন্সের পাঁচটি বিবৃতি থেকে যদি কোন উপসংহারের আসতেই হয়, তবে যৌক্তিকভাবে আমরা বড়জোর এটুকু বলতে পারি যে – মহাবিশ্বের ডিজাইন থাকার উপর ভিত্তি করেই আমাদের এই উপসংহারে আসা উচিত না যে স্রষ্টা আছেন। তবুও, যদি আমরা এটাকে সত্যি বলে ধরেও নেই, তাও কিন্তু এ থেকে “স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই” – এটা প্রমান হয় না [২]। অন্য অনেক যুক্তি দিয়ে স্রষ্টার অস্তিত্বের ব্যাপারে আমরা উপসংহার টানতে পারি। যার মধ্যে আছে :
.
• নৈতিকতা থেকে যুক্তি [Argument from morality]
• কুরআনের মু’জিযা
• মহাজাগতিক ঘটনাবলী থেকে যুক্তি [The Cosmological Argument]
• প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে যুক্তি [Argument from Personal Experience]
• প্রত্যেক মানুষের আত্মবোধ থেকে যুক্তি [Argument from consciousness] [৩]
.
যদি আমরা ডকিন্সের পাঁচটি বিবৃতির প্রতিটিকে সঠিক হিসাবে গ্রহণ করেও নেই, তবুও স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে এমন ধারণাকে নাকচ করে দেয়ার জন্য তা যথেষ্ট হবে না । আর অবশ্যই এ থেকে নাস্তিকতার দর্শনের পক্ষে কোন ইতিবাচক যৌক্তিক অবস্থান তৈরি করা সম্ভব না।
.
তবে ডকিন্সের বিবৃতিগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ভুল। আসুন ধারাবাহিকভাবে সেগুলোর বিশ্লেষণ এবং উত্তর দেয়া যাক।
.
[ইন শা আল্লাহ চলবে]
=========================
১। a positive case for the Atheist worldview – সাধারন নাস্তিকরা বিভিন্ন ধর্মকে ভুল প্রমান করার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানকে সঠিক প্রমান করতে চায়। অর্থাৎ বাকিদের ভুল প্রমান করার মাধ্যে তারা নিজেদের সঠিক প্রমান করতে চায় (i.e Negative case)। কিন্তু তাদের দাবির (স্রষ্টা নেই) পক্ষে যুক্তি তর্ক পেশ করে না, কিংবা তাদের দার্শনিক অবস্থানের পক্ষে ইতিবাচক প্রমান (Positive Case) আনে না।
.
২। যদি “ক” থেকে “খ” এর অস্তিত্ব প্রমান না করা যায়, তার মানে এই না যে “খ” এর অস্তিত্ব নেই এটা প্রমাণিত।
.
৩। ই প্রতিটি যুক্তি নিয়ে দীর্ঘ ও বিস্তারিত আলোচনা আছে। তবে সেগুলো তুলে ধরা এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য না হওয়াতে এখানে কেবল নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আগ্রহী পাঠক এ ব্যাপারে পড়ে নিতে পারেন।
=========================
লেখক: হামযা যর্তযিস
অনুবাদেঃ সত্যকথন ডেস্ক
Leave Your Comments