#নাস্তিক_প্রশ্ন:— শিলা(Hail) কি আকাশে অবস্থিত কোন শিলাস্তুপ(sky mountains/heaven mountains) থেকে নিক্ষিপ্ত হয়(Quran 24:43) ?
.
#উত্তরঃ বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরণের মেঘমালার উপর গবেষণা করেছেন। তারা প্রমাণ করেছেন যে, বৃষ্টিবাহী মেঘ নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়। তা গঠিত হয় নির্দিষ্ট প্রকারের বাতাস ও মেঘ দ্বারা। এক প্রকার মেঘের নাম “সাহাবুর রুকাম” তথা “মেঘপুঞ্জ” “Cumulonimbus”। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা উক্ত মেঘের গঠন, বৃষ্টি, শিলা ও বিজলি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা প্রমাণ করেছেন যে, উক্ত মেঘপুঞ্জ বৃষ্টি তৈরির জন্য নিম্নের প্রক্রিয়াসমূহ সম্পন্ন করে থাকে:
.
১) বাতাস কর্তৃক মেঘকে ধাক্কা দেয়া: ছোট মেঘখণ্ডকে বাতাস যখন ধাক্কা দেয় তখন Cumulonimbus বা “বৃষ্টিবাহী মেঘপুঞ্জ” নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে তৈরি হতে শুরু করে। (১ ও ২ নং চিত্র দেখুন) [চিত্রগুলো পর্যায়ক্রমে কমেন্টে দেয়া হল]
.
২) মেঘখণ্ডের মিলন: ছোট ছোট মেঘখণ্ড একসাথে মিলিত হয়ে বড় মেঘমালায় পরিণত হয়। [১] (দেখুন ২ ও ৩ নং চিত্র)
.
৩) স্তূপ করে রাখা: যখন ছোট ছোট মেঘখণ্ড একত্রে মিলিত হয় তখন তা উঁচু হয়ে যায় এবং উড্ডয়মান বাতাসের গতি পার্শ্ববর্তী স্থানের তুলনায় মেঘের মূল কেন্দ্রের নিকটে বৃদ্ধি পেয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়। এই উড্ডয়মান বাতাসের গতি মেঘের আকার বৃদ্ধি করে মেঘকে স্তূপীকৃত করতে সাহায্য করে। (দেখুন-৩.B, ৪ ও ৫নং চিত্র) এই মেঘের ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে মেঘটি বায়ুমণ্ডলের অধিকতর ঠাণ্ডা স্থানের দিকে বিস্তৃতি লাভ করে সেখানে পানির ফোটা ও বরফের সৃষ্টি করে এবং তা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এরপর যখনই এগুলো অধিক ওজন বিশিষ্ট হয়ে যায় তখন বাতাস আর তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে, মেঘমালা থেকে তা বৃষ্টি ও শিলা হিসেবে বর্ষিত হয়। [২]
.
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অতি সম্প্রতি কম্পিউটার, বিমান, স্যাটেলাইট সহ বায়ুর চাপ, আর্দ্রতা পরিবর্তন প্রভৃতি নিয়ে গবেষণার যন্ত্রপাতিসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মেঘের সৃষ্টি, গঠন প্রণালী ও তার কাজ-কর্ম সম্বন্ধে জেনেছেন। [৩]
.
মেঘ ও বৃষ্টি নিয়ে আলোচনা করার পর কুরআন বরফ ও বিদ্যুৎ সম্বন্ধে আলোচনা করেছে। আল্লাহ বলেন
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُزْجِي سَحَابًا ثُمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهُ ثُمَّ يَجْعَلُهُ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مِن جِبَالٍ فِيهَا مِن بَرَدٍ فَيُصِيبُ بِهِ مَن يَشَاءُ وَيَصْرِفُهُ عَن مَّن يَشَاءُ ۖ يَكَادُ سَنَا بَرْقِهِ يَذْهَبُ بِالْأَبْصَارِ
অর্থ: “তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন; অতঃপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। আর তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তূপ থেকে শিলা বর্ষণ করেন। এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা সরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎঝলক যেন তার দৃষ্টিশক্তিকে বিলীন করে দিতে চায়।”
(কুরআন, নুর ২৪:৪৩)
.
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, cumulonimbus তথা বৃষ্টিবাহী মেঘপুঞ্জ, যা থেকে শিলা-বৃষ্টি বর্ষিত হয়— তার উচ্চতা ২৫০০০ থেকে ৩০০০০ ফুট (৪.৭ থেকে ৫.৭ মাইল) পর্যন্ত হয়ে থাকে। [৪] তাকে পাহাড়ের মতই দেখায় যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজিদে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন: ﴿وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ جِبَالٍ﴾ অর্থাৎ “আর তিনি আকাশস্থিত পাহাড় (শিলাস্তূপ) থেকে শিলা বর্ষণ করেন।” (দেখুন চিত্র-৫)
.
এই আয়াত নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে— আয়াতে বরফের দিকে নির্দেশ করে “سَنَا بَرْقِهِ” (তার বিদ্যুৎঝলক) বলা হল কেন? তাহলে কি তার অর্থ দাঁড়ায় যে, শিলাই বিদ্যুৎঝলক সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা রাখে?
আসুন! আমরা দেখি Meteorology Today গ্রন্থ এ সম্বন্ধে কি বলে। উক্ত গ্রন্থে বলা হয়েছে— বরফ পড়ার দ্বারা মেঘে বৈদ্যুতিক চার্জের সৃষ্টি হয়। পানি ফোটার সাথে বরফের সামান্য সংস্পর্শ পেয়েই জমাট বেধে তাতে গোপন তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়। আর বরফ টুকরার কারণে উক্ত বরফ পৃষ্ঠে সমুদ্র পৃষ্ঠের চেয়ে বেশি তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়।
.
এ ছাড়া এখানে আরেকটা আশ্চর্যজনক প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়; তাহলো— এখানে বিদ্যুৎ অধিক ঠাণ্ডা থেকে অধিক গরমে পরিণত হয়ে নেগেটিভ চার্জের সৃষ্টি করে। এমনভাবে ঠাণ্ডা পানির ফোটার সাথে বরফের সংস্পর্শের পর এর ছোট ছোট কণাগুলো পজিটিভ চার্জ হয়ে ঊর্ধ্বগামী বাতাসের মাধ্যমে মেঘের উপরে চলে যায় এবং অন্য শিলাগুলো নেগেটিভ চার্জ হয়ে মেঘের নিচের দিকে চলে আসে। এখানে মেঘের নিচের অংশেও নেগেটিভ চার্জ হয়। আর এই নেগেটিভ চার্জই বিদ্যুৎ হয়ে প্রজ্বলিত হয়। [৫]
.
সারকথা হল- শিলাই বিদ্যুৎ সৃষ্টির প্রধান উপকরণ।
.
অতি সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বিদ্যুৎঝলক সম্বন্ধে এ সমস্ত তথ্য আবিষ্কার করেছেন। প্রায় ১৬০০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত দার্শনিক এরিস্টটলের তত্ত্বই সারা পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিল। তিনি বলেছিলেন: বায়ুমণ্ডল দু‘টি নিঃশ্বাসের সম্মিলনের ফলাফল: আর্দ্র ও শুকনো। তিনি আরও বলেছেন: বজ্রধ্বনি হল শুকনা নিঃশ্বাসের সাথে অত্যাচারী মেঘের সংঘর্ষের ফল। আর বিদ্যুৎঝলক হল ভীতিকর আগুনের মত করে শুকনা নিঃশ্বাসকে পুড়ে যাওয়া। [৬]
.
এগুলো মহাকাশ সংক্রান্ত তথ্যাদির মধ্যকার কিছু তথ্য; যা ১৪০০ বছর আগে কুরআন নাযিলের সময়ে প্রভাব বিস্তার করেছিল। কিন্তু কুরআনে তৎকালিন ভুল মতবাদের ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না।বরং এমন সব তথ্য কুরআনে সন্নিবেশিত আছে যা আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সম্পুর্ণ সঠিক।
অন্ধ বিদ্বেষীরা কি চোখ খুলবে?
===============================
তথ্যসূত্র
[১] দেখুন, The Atmosphere, Anthes and others, p. 268-269, এবং Elements of Meteorology, Miller and Thompson, p. 141.
[২] দেখুন, The Atmosphere, Anthes and others, p. 269, এবং Elements of Meteorology, Miller and Thompson, pp. 141-142.
[৩] ই’জাজুল কুরআনিল কারীম ফি ওয়াসফি আনওয়া‘ইর রিয়াহি ওয়াস সাহাবি ওয়াল মাত্বার, ম্যাকি ও অন্যান্য, পৃষ্ঠা-৫৫।
[৪] Elements of Meteorology, Miller and Thompson, p. 141.
[৫] Meteorology Today, Ahrens, p. 437.
[৬] The Works of Aristotle Translated into English: Meteorologica, vol. 3, Ross and others, pp. 369a-369b.
===============================
লেখকঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রাহমান মিনার
Leave Your Comments