ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো এবার ভারতে মাথা ও মুখ ঢাকার ওড়না নিষিদ্ধ করা শুরু হয়েছে। দেশটির উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মিরাটের চৌধুরি চরণ সিং বিশ্ববিদ্যালয়ে হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরে ক্যাম্পসে আসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টি ছাত্রীদের অনেকেই ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ক্যাম্পাসে আসছিলেন। তবে কর্তৃপক্ষ এতে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের দাবি, মুখ ঢেকে রাখার সুযোগে বাইরের লোকজন ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। আর তা বন্ধ করতেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অলকা চৌধুরি বলেছেন, ‘ছাত্রী নয় এমন বহু মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। তাদের ক্যাম্পাসে ঢোকা বন্ধ করতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’ ইতিমধ্যেই বহু বহিরাগতকে চিহ্নিত করা হয়েছে দাবি করে প্রক্টর আরও বলেন, ‘মুখ ঢাকা থাকায় এদের চিহ্নিত করা বেশ শক্ত হয়ে পড়ছিল। এদের ধরার পর তারা কোনো পরিচয়পত্র দেখাতে পারেনি। আপাতত মুখ-মাথা ঢাকার ওড়না নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিয়ম না মানলে পুলিশ ডাকা হবে।’
তবে স্কার্ফ নিষিদ্ধ করার ঘটনা নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে প্রবল আপত্তি জানিয়েছে। ‘আসামে বাঙালি মুসলমানের নাগরিকত্ব হরণ করছে বিজেপি’
এদিকে ভারতের বিজেপিশাসিত আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) প্রণয়নের নামে বাঙালিদের হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে কলকাতার আসাম ভবনে। সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন নামের সংগঠনটি বাঙালিদের হয়রানি বন্ধে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছে।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিজেপি সরকার নাগরিক পঞ্জির নামে আসামে বাঙালিদের, বিশেষ করে মুসলমানদের নাগরিকত্ব হরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে কলকাতার আসাম ভবনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর ভবনের পরিচালকের মাধ্যমে নাগরিক পঞ্জি প্রণয়নের সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলাকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এর আগে আসাম প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরা গুয়াহাটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ‘যেসব বিধানসভা এলাকায় হিন্দু-মুসলিমের সংখ্যা প্রায় সমান, সেইসব কেন্দ্রে বেশি হারে মুসলমানদের নাম কাটার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নাগরিক পঞ্জিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাম কাটা হচ্ছে বলে কংগ্রেস অভিযোগ করেছে।
রিপুন বরা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চায়েত সচিবের দেয়া সার্টিফিকেটকে লিঙ্কেজ হিসেবে বৈধতা দিলেও স্থানীয় পর্যায়ে ভেরিফিকেশনের সময় নানা অজুহাতে ওই প্রমাণপত্র নাকচ করা হচ্ছে। এক বৃহৎসংখ্যক নির্দিষ্ট ধর্মের লোকের নাম কাটাই এর উদ্দেশ্য।
এ প্রসঙ্গে আসামের হাইলাকান্দির বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর বলেন, সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চায়েতের নথির স্বীকৃতি দিলেও এনআরসি কর্মকর্তারা অনেক সময় তার বৈধতা মানছেন না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সংখ্যালঘুরা একটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও কিছু ক্ষেত্রে ভাষিক সংখ্যালঘুরা অনেকটা আশঙ্কার মধ্যে আছেন।
আসামে ব্যাপকহারে বিদেশিদের অনুপ্রবেশের তত্ত¡কে তিনি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে অভিহিত করে মুসলিমদের অপবাদ দেয়ার জন্য এরকম অপপ্রচার করা হয় বলে সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর অভিযোগ করেন।
সূত্র : জি নিউজ ও আইআরআইবি।
Leave Your Comments