কয়েকদিন আগে নোয়াখালীর সেনবাগ থানার কানকির হাট থেকে দাওয়াতী সফর শেষ করে সিএনজি যোগে ছাতারপাইয়ার দিকে যাচ্ছিলাম। পাশের দুই আসন খালি থাকায় একজন অমুসলিম মা বেশ সতর্কতার সঙ্গে মাথায় কাপড় দিয়ে তার সন্তানকে মাঝখানে বসাতে গিয়ে বলতে লাগলেন- “খবরদার মাণিক খবরদার! পা লাগবো কিন্তু!” অর্থাৎ “হুজুরের গায়ে যেন পা না লাগে!” মা ছেলেকে বার বার সতর্ক করায় বিষয়টা আমার কাছে অন্যরকম মনে হয়েছে। আনন্দ-বেদনা দুটোই আমার ভেতরে কাজ করেছে।
ফলে এই বৃষ্টিস্নাত পরিবেশেও আমি ঘামতে থাকি। মাণিকের মতো বালকরা কীভাবে জাহান্নামে জ্বলবে! মাণিকের মা-বোনেরা আমাদের সামনে কীভাবে নরকে প্রবিষ্ট হবে!! ঈমানের রওশন যদি তাদের হৃদয়ে থাকতো; তবে আমাকে ভাবতে হতো না! হিদায়াতের আলো যদি তাদের মাঝে থাকতো; তবে আমাকে ঘামতে হতো না। ইসলামের দাওয়াত যদি তাদের পৌঁছাতে না পারি; ঈমানের পয়গাম যদি তাদের উপহার দিতে না পারি; তবে তারা কাল হাশর দিনে আমার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে অভিযোগ দায়ের করবে।
প্রিয় পাঠক! আমাকে নয়; বরং নবীর সুন্নতকে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মতো অমুসলিম নারী এখনও বাংলাদেশে আছেন। আমাদের অজান্তে এমন অনেক অমুসলিম মা-বোন ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে থাকেন। তাদের এই সম্মান প্রদর্শন ঈমানের সাথে হলে আমার কোনো আপসোস এবং ব্যথা থাকতো না, হৃদয়েও রক্ত ক্ষরণ হতো না! এখানে প্রগতিশীল মুক্তমনা মা-বোনদের ব্যাপারে কোনো প্রকার সুনাম না করতে পারায় দুঃখ প্রকাশ করছি।
সে দিনের ঘটনায় আমি পেরেশান! আমার মন বলছে কথাগুলো আপনাকেও হতাশ করে তুলছে! মূলত আমরা অমুসলিমদের প্রতি পরকালীন মুক্তির জন্য কী করেছি? এ হতাশার মাঝে দাঈর সিফাত অর্জনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত। আমরা যদি উম্মতের প্রতি দরদী হয়ে একটু ব্যথা নিয়ে ঈমানের দাওয়াতে আত্মনিয়োগ করি; তবে আমলের দাওয়াতের পাশাপাশি ঈমানের এই অসহায় দাওয়াতী অঙ্গনও কিছুটা জিন্দা হয়ে ওঠবে! অন্যথায় দায়িত্ব এড়িয়ে গেলে এই দুনিয়া এবং সেই দুনিয়ায় (পরজীবন) বাঁচার কোনো পথ নেই। আল্লাহ আমাদের কাজের ময়দান তৈরি করে দিন!
মাওলানা মিযানুর রহমান জামীল
পরিচালক- দীনিয়াত মডেল মাদরাসা, মিরপুর, পল্লবী, ঢাকা|
Leave Your Comments