#মুক্তমনাঃ হ্যাঁ বুঝলাম, কিন্তু আপনি কুরআনের যে linguistic ভ্যালুর কথা বলছেন, এটা তো একটা subjective বিষয়।
#দাসত্বমনা: নাস্তিকরা আসলে আর্গুমেন্টটাই বুঝেনাই, তারা কুরআনের চ্যালেঞ্জটাই বুঝেনাই….. চ্যালেঞ্জে যাওয়ার আগে আসুন একটু সাহিত্য চর্চা করি, কুরআনের চ্যালেঞ্জ বুঝতে কাজে দিবে। (শ্রাগ করল মুক্তমনা)
দাসত্বমনা: আপনি জানেন, বাংলা ভাষায় কয়টা ছন্দে কবিতা লেখা যায়?
মুক্তমনাঃ যতদূর জানি, তিন রকমের ছন্দে।
দাসত্বমনা: প্রধানত তিন রকম, যেমন ধরুন, স্বরবৃত্ত ছন্দ, মাত্রাবৃত্ত ছন্দ, অক্ষরবৃত্ত ছন্দ। এর বাইরেও আছে, যেমন গদ্যছন্দ! এখন, রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী কবিতাটা একটু খেয়াল করি,
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হল সারা
ভরা নদী ক্ষুরধারা খরপরষা-
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।
প্রথম তিন লাইনে আটটি করে অক্ষর, চতুর্থ লাইনে পাঁচটা, শেষ লাইনে ৮+৫ অর্থাৎ ১৩ টা, রাশি রাশি ভারা ভারার আগে আরো দুই লাইন আছে, সেগুলোও এরকম ৮+৫ রিদমে চলে। পুরা কবিতাটার Structure এরকম। এটা দেখে মনে হয় যে, কবিতাটা অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত, কিন্তু…….
মুক্তমনাঃ কিন্তু কি?
দাসত্বমনা: কিন্তু শেষ অংশে “শূন্য নদীর তীরে”, এই লাইনে ৭ টা অক্ষর, যা পুরো কাঠামো এলোমেলো করে দেয়, এবং এর জন্য পরে দেখা যায়, যে, কবিতাটা আসলে মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। (মুক্তমনা কিছুটা আগ্রহী হয়ে উঠল)
মুক্তমনাঃ কিন্তু এর সাথে…
দাসত্বমনা: ভাই, একটু ধৈর্য্য ধরেন না! তারপর ধরুন, নজরুলের লিচু চোর, ভাল করে শুনুন,
“বাবুদের তাল পুকুরে”, তবলার বিট সম্পর্কে Idea আছে? (নাসূচক মাথা নাড়ল মুক্তমনা)
শুনুন, বাবুদের তাল পুকুরে (টাটাটা টা…টা টাটা)
হাবুদের ডাল কুকুরে (টাটাটা টা…টা টাটা)
সে কি বাস করলে দাঁড়া (টেটেটে টে…টে টেটে)
বলি থাম, একটু দাঁড়া (টেটেটে টে…টে টেটে) সেভেন বিটস, সাত মাত্রা!!………
এইরকম, জীবন বন্দনা, ছয় মাত্রার।
তবে বাংলা ভাষায়, ইংরেজি ভাষার স্টাইল প্রথম নিয়ে আসেন এক পাগল জিনিয়াস, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বংগভাষা, সনেট!!! অক্ষরবৃত্ত ছন্দ, ১৪ টি অক্ষর, ১৪ টি লাইন।
মুক্তমনাঃ আপনার পয়েন্টটা কি?
দাসত্বমনা: আমার পয়েন্ট টা হচ্ছে, ইংরেজি ভাষার একটা স্টাইলকে মধুসূদন Imitate করেছে, নকল করেছে, আশ্চর্যজনকভাবে এক ভাষার স্টাইলে অন্য ভাষায় কবিতা লিখেছে।
শুধু তাই নয়, কবি সুফি মোতাহার হোসেইন, তার কবিতায়, ইতালির কবি পেত্রার্ক আর শেক্সপিয়রের স্টাইলকে fusion আই মীন সংযুক্ত করেছে।
মুক্তমনাঃ হ্যাঁ, মুহাম্মদও এরকম জিনিয়াস হয়ে থাকতে পারে, অসাধারণ দক্ষতায় কুরআন লিখে থাকতে পারে।
দাসত্বমনা: (ঠোঁটের কোনে ব্যাংগাত্মক হাসি ঝুলিয়ে), চলুন শেক্সপীয়রকে একটু দেখে আসি। শেক্সপীয়রের একটা স্টাইল ছিল, lambic pentameter,…… bump BUMP bump BUMP….
অনেকটা হার্ট বিটের মত।
when I do COUNT the CLOCK that TELLS the TIME (বড় হাতের অক্ষরের শব্দগুলো জোর দিয়ে পড়তে হবে)
কবি জন কীটস, শেক্সপীয়রের কবিতার স্টাইল অনেকবারই অনুকরণ করেছেন। তারপর, শেক্সপীয়রের বিখ্যাত একটি উক্তি,
“TO BE OR NOT TO BE, THAT IS THE QUESTION” এই স্টাইলটা হচ্ছে Soliloquy…… “Our Town” এ Thornton Wilder এই স্টাইলকে Imitate করেছে।
(মুক্তমনা বুঝতে পারছে কিনা এটা বোঝার জন্য সে তারচোখের দিকে তাকাল। তা বুঝতে পেরে মুক্তমনা বলল)
মুক্তমনাঃ এ পর্যন্ত আপনার সব কথাই বুঝতে পেরেছি, বলতে থাকুন।
দাসত্বমনা: যাক,…….. ধারণা করা হয়, শেক্সপীয়র নিজেও অন্য লেখকের স্টাইল নকল করেছে, যেমন, জুলিয়াস সীজার নিয়ে তার লেখার অনেক অংশই প্লুটার্কের কপি। বাজারে এই গুজবও আছে, শেক্সপীয়র নাকি ক্রিস্টোফার মারলোয়ি কে জেনেবুঝে নকল করেছে।
মুক্তমনাঃকি বলতে চাচ্ছেন?
দাসত্বমনা: এতক্ষণের আলোচনায় দুইটা জিনিষ বুঝালাম,
১. প্রত্যেক ভাষার নিজস্ব রুলস রেগুলেশন্স, ছন্দ, স্টাইলে সাহিত্য রচনা করা হয়, সাহিত্যের উৎকর্ষতা এর উপর নির্ভর করে। কোন লেখকই ভাষার এই set of rules কে অতিক্রম করতে পারেনা। বাংলা ভাষায় যেইই কবিতা লেখুক না কেন ঐ set of rules এর বাইরে যেতে পারবেনা সে।
২. পৃথিবীখ্যাত সাহিত্যিকরা কেউই স্টাইলের দিক দিয়ে ইউনিক ছিলেননা, তারা নিজেরা তো অন্যের স্টাইল অনুকরণ করেছেনই, অন্যেরাও তাদেরটা অনুকরণ করতে পেরেছে, শুধু নিজের ভাষাতেই নয়, অন্য ভাষাতেও। (মুক্তমনা অপেক্ষা করছে)
(এবার বোম ফাটাল দাসত্বমনা)
দাসত্বমনা: কিন্তু কুরআনের স্টাইল অনুকরণ করে ১৪০০ বছর ধরে কেউ একটা তিন লাইনের সূরাও লিখতে পারেনি, শুধু তাই নয়, কুরআনের স্টাইল, কুরআন নাযিল হওয়ার আগে পরে আরবী সাহিত্যের কোন স্টাইলের সাথেই মিলেনা!!
(ব্যাপারটা অনুধাবন করতে ত্রিশ সেকেন্ড সময় লাগল মুক্তমনার, তারপরেই মাথার মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হল, অসম্ভব, এ অসম্ভব, এ কি করে হয়!!!!! এটা কিছুতেই হতে পারেনা)
নাস্তিকতার অন্ধ বিশ্বাস থেকে মানুষকে মুক্ত করে, দাসত্বের বীজ প্রতিটি হৃদয়ে বুনতে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
(আফ্রাহাম খালেদ)
Leave Your Comments