‘আপনারা যেভাবে নৃশংসভাবে পশুর গলা কেটে কোরবানি করেন, এর থেকে ভয়াবহ দৃশ্য আর কি আছে? আপনাদের মনে আসলে কোনো দয়া, মমতা, করুনা নাই’- কলাবিজ্ঞানী হুজুরের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
‘আপনার এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার আগে অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা করা যাক”-হুজুরের উত্তর। ‘বলেন কি বলবেন’-কলাবিজ্ঞানী কিছুটা বিরক্ত।
‘আপনার খাবারের মেনুতে চিকেন, ডাক,ফিশ এইগুলা কি কখনো থাকেনা? আর এইগুলা যে প্রাণী এদেরও প্রাণ আছে, এরাও ব্যথা পায় তাতো আপনার জানার কথা। তো এদেরকে যখন মারা হয় তখন আপনার মানবতা উথলিয়ে উঠেনা?’
কলাবিজ্ঞানী অপ্রস্তুত হয়ে, ‘ঠিক আছে আপনার কথা মানলাম কিন্তু যারা ভেজেটেরিয়ান তারাতো আপনার এই আপত্তি থেকে মুক্ত?’- কলাবিজ্ঞানী মনে মনে কিছুটা স্বস্তি পেলো, যাক হুজুরের প্রশ্নের প্যাচ থেকে বের হওয়া গেছে।
হুজুর অবিচলিতভাবে বললো, ‘শাকসবজিরও কিন্তু প্রাণ আছে? কিন্তু আমি আপনাকে আর অপ্রস্তুত করতে চাইনা।আচ্ছা বলুন দেখি, এমন কোনো ভেজেটেরিয়ান আছে আপনার পরিচিত যাদের ডায়াবেটিস, ক্যান্সার জাতীয় মরণঘাতি রোগে আক্রান্ত?’
‘অনেকেই আছেন, বাট পশু হত্যার সাথে এর সম্পর্ক কি?’-কলাবিজ্ঞানী চরম বিরক্ত।
হুজুর স্মিত হাসি দিয়ে, ‘সম্পর্ক আছে দেখেই বললাম। আপনার জানা থাকার কথা, এইসব প্রাণঘাতী রোগের ড্রাগস্, এন্টিবডি ও অন্যান্য প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট মার্কেটে আসার আগে কতশত গবেষণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে হাজার হাজার ইঁদুর, গিনিপিগ, বানর হত্যা করা হচ্ছে, এইসব প্রাণীদের জীবন আছে, তারা ব্যথা পায়। ভাবছেন ওরা ছোট খাটো প্রাণী ওদের আবার কষ্ট কি? অথচ সব প্রাণীরই অনুভুতি আছে তারা সবাই কষ্ট পায়, তারা সবাই আনন্দ পায়। বিজ্ঞানীরা একমত সমস্ত মেরুদন্ডী ও কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণীরও আমাদের (মানুষ) মতো অনুভূতি আছে। তো আপনারা এইসব প্রাণী হত্যার বিষয়ে মুখ খোলেন না কেনো ? এটা কি আপনাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আচরণ নয়?’
কলাবিজ্ঞানী হুজুরের এই উত্তরের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। আমতা আমতা করে বললো, ‘আপনার যুক্তি ঠিক আছে, কিন্তু আপনার যেভাবে হত্যা করেন সেটা যে বর্বর, তা এটলিস্ট স্বীকার করেন?’
হুজুর নির্লিপ্তভাবে শুরু করলো- ‘দেখুন আপনার জানার লেভেল কম জানতাম বাট এতো কম সেটা জানতাম না। পশু হত্যার পদ্ধতি নিয়ে অনেক আলোচনা ও গবেষণা আছে। এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের লোকদের ধারণা, ইহুদি ও মুসলিমরা সবচেয়ে নৃশংসভাবে পশু হত্যা করে। আসল কথা হলো বিজ্ঞানীরা এই দাবির পক্ষে কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাননি। বিজ্ঞানীরা কনভেনশনাল এনিম্যাল স্ল্যাউটরিং এর সাথে ইহুদি ও মুসলিমদের স্লাউটরিঙের তেমন কোনো পার্থক্য খুঁজে পাননি, সবক্ষেত্রেই ব্যাথা অনুভব করার মাত্রা সমান। কনভেনশনাল এনিম্যাল স্ল্যাউটরিং মেথড যেমন, ক্যাপটিভ বোল্ট গান, ইলেকট্রিক শক, গ্যাসিং সহ আরো অনেক পদ্ধতিতে যেভাবে প্রাণীকে অজ্ঞান করা হয় তাতে প্রাণীর যে কষ্ট হয় একই পরিমান কষ্ট হয় দ্রুত ঘাড়ের নিচে কেটে ফেলার মাধ্যমে হত্যা করলে। দ্রুত কেটে ফেলার দ্বারা এনিম্যাল দ্রুত অজ্ঞান হয়ে যায় কারণ ব্রেন এর সাথে ব্লাড ফ্লো খুব দ্রুত থেমে যায় এবং শরীর থেকে বাকি রক্ত দ্রুত বের হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট অনুযায়ী গলা কেটে ফেলার প্রথম ৫ সেকেন্ড প্রাণীরা তীব্র ব্যাথা অনুভব করে তারপর আস্তে আস্তে অবশ হতে থাকে, ৬০ সেকেন্ড পরে তারা একেবারে কিছুই অনুভব করতে পারেনা। প্রথম দিকের ব্যথা কোনো মেথড দিয়েই দূর করা সম্ভব নয়। কনভেনশনাল মেথোডেও প্রথম দিকে তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করে। সুতরাং কোরবানি ও কনভেনশনাল এনিম্যাল স্ল্যাউটরিং এর মধ্যে বৈজ্ঞনিক কোনো পার্থক্য নেই। তবে পশু হত্যা করার উদ্দেশ্য যেহেতু তার মাংস খাওয়া, এই দিকটা বিবেচনা করলে, দ্রুত গলা কেটে ফেলার দ্বারা এনিম্যাল স্ল্যাউটরিং করলে তার মাংসের গুনাগুন কনভেনশনাল এনিম্যাল স্ল্যাউটরিং থেকে অনেকগুন্ ভালো থাকে। দ্রুত রক্ত বের হওয়ার ফলে পশুর দেহের ভিতরে রক্ত জমাট বাধতে পারে না ফলে মাংসের আয়রন টক্সিসিটি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে যেটা কনভেনশনাল পদ্ধতিতে হওয়ার চান্স বহুগুনে।’
কলাবিজ্ঞানী হতাশ হয়ে পড়লো, আগের আলোচনাগুলোতে পর্যদুস্ত হওয়ার শোধ নেয়া দূরে থাক, নতুনভাবে পর্যদুস্ত হয়ে সে উঠে দাঁড়িয়ে প্রস্থানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো।
হুজরা কিন্তু থামছে না, সে বলে চললো.. ‘আপনাদের কোরবানির বিরুধীতার মূল কারণ ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ। আপনার কি জানা নেই, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কসাইখানাগুলো কোনো মুসলিম দেশে না, এগুলো আমেরিকাতে। ম্যাক ডোনাল্ড, কে. এফ. ছি., সাবওয়ে, এরা প্রতিদিন হাজারো পশু হত্যা করছে তার খবর কি আপনারা রাখেন?’
কলাবিজ্ঞানী আর নিতে না পেরে, পরে কথা হবে, কোরবানির নৃশংসতা নিয়ে একটা কালপতাকা প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে ওটাতে জয়েন করতে হবে, বলে সটান প্রস্থান করলো। হুজুরের স্মিত হেসে, পরওয়ারদিগারের কাছে এদের হেদায়তের দুআ করতে লাগলো।
ভাই Saifur Rahman
Leave Your Comments