”কখন আসবে আপনাদের কেয়ামত?” কলাবিজ্ঞানী হাতে একটা কলা নিয়ে সেটা ছিলতে ছিলতে হুজুরকে জিজ্ঞাসা করলো।
”কেয়ামত কখন আসবে সেটা একমাত্র আল্লাহই জানেন”, হুজুর আস্তে করে জবাব দিলো।
”কেয়ামতের আগে নাকি সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উঠবে”, বলে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো কলাবিজ্ঞানী, সাথে যোগ করলো, ”পৃথিবী তার কক্ষপথে আপন মনে, আপন গতিতে ঘুরছে, এর মাঝে আচমকা একদিন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠবে, এই সব অবৈজ্ঞানিক কথা কই পান?”
হুজুর চুপচাপ শুনছে। কলাবিজ্ঞানী ভাবলো এইবার হুজুরকে চিপায় ফেলানো গেছে, ”আপনারা সেই ১৫০০ বছর ধরে বলে আসতেছেন সূর্য পশ্চিমে উঠবে, এতবড় অবাস্তব জিনিস নিয়ে কথা বলতে তো আপনাদের একটু সংকোচ করা উচিত। তোতাপাখির মতো কোরান হাদিসের বাণী না আওড়িয়ে বিজ্ঞান নিয়ে ভাবেন।”
হুজুর গলাটা পরিষ্কার করে বললো, ”আপনার বলা শেষ হয়েছে?” ”জ্বি”, কলাবিজ্ঞানীর উত্তর। ”তাহলে এবার আমার কথা শুনুন”, হুজুর বললো। ”আপনার যা মন চায় বলেন কিন্তু দয়াকরে অবাস্তব ও অসম্ভব কিছু বইলেন না। যা বলবেন যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক রেফারেন্স সমেত”, কলাবিজ্ঞানীর ঝাঁজালো কণ্ঠ।
”বলেন তো কত ঘন্টায় একদিন?”, হুজুর বললো। ”২৪ ঘন্টায়, কিন্তু আমার সাথে মস্করা করছেন কেন? উপরের প্রশ্নের উত্তরের সাথে এর সম্পর্ক কি?” কলাবিজ্ঞানী বিরক্ত।
”সম্পর্ক আছে দেখেই জিজ্ঞাসা করলাম, আর ইসলামে কাউকে অপমান করার উদ্ধেশ্যে মস্করা নিষিদ্ধ”, হুজুর বললো।
”যাইহোক, আপনি কি জানেন আস্তে আস্তে দিন-রাতের দৈর্ঘ্য বাড়ছে?” হুজুর জিজ্ঞাসা করলো।
”নাতো, এমন কিছু জানিনাতো? আমার জানামতে বিশ্বজগতের সব কিছু তার আপন গতিতে চলছে, এখানে সময়ের কম বেশি হওয়ার সুযোগ কোথায়? আর যদি বেড়েও থাকে তার সাথে সূর্য পশ্চিমে উঠার সম্পর্ক কি?” কলাবিজ্ঞানীর উত্তর।
হুজুর তার দীর্ঘ আলোচনা আরম্ভ করলো,
”সময় কেন বাড়ে জানেন? জানি, জানেন না, তাই লজ্জা দিলাম না।বর্তমান পৃথিবী নামক গ্রহ নিজ অক্ষে প্রতি ২৪ ঘন্টা অন্তর একবার করে আবর্তিত হয়। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কমে যাচ্ছে তাই আবর্তিত হতে বেশি সময় লাগছে। গত ২৭৪০ বছরে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কমে যাওয়ার কারণে পৃথিবীতে অতিরিক্ত প্রায় ৬ ঘন্টা সময় যোগ হয়েছে। আপনার মাথায় হয়তো ঢুকছে না তাই সহজ করে বলি, আপনি যদি খ্রিস্টপূর্ব ৭২০ থেকে আজ পর্যন্ত অ্যাটমিক ক্লোকের সাহায্যে সময় নির্ণয় করতেন তাহলে এখন যদি সময় হয় সন্ধ্যা ৭ টা, তবে অচ্যুয়ালি তা হতো দুপুর ১টা। তারমানে পৃথিবীর আপন কক্ষপথে আবর্তন শ্লথ হচ্ছে, এভাবে স্লো হতে হতে একসময় হয়তো থেমে যাবে। আপনি খেয়াল করছেন কিনা জানিনা, যখন বড় ধরণের চাকা জাতীয় কোনো কিছুর ঘূর্ণন থেমে যায় সেটা থামা সাথে সাথেই একটু পিছন দিকে আস্তে আস্তে ঘুরা আরম্ভ করে। একইভাবে পৃথিবীর নিজস্ব ঘূর্ণন থেমে যাওয়ার পরে হয়তো উল্টোদিকে ঘুরতে থাকবে ফলে সূর্য পশ্চিম দিকে দিয়ে উঠবে। আপনি হয়তো বলতে পারেন, পৃথিবীর ঘূর্ণন কমে যাওয়ার রেট খুবই স্লো তাহলে তো অনেকদিন সময় লাগবে কমপ্লিটলি থিম যেতে।দেখুন, আমরা কিন্তু জানিনা ঠিক কতটুকু গতি কমলে এর ঘূর্ণন থেমে যাবে, হয়তো নির্দিষ্ট থ্রেশোল্ডের নিচে গেলেই থেমে যাবে, সেই থ্রেশহোল্ড লেভেলটা জিরো নাও হতে পারে। এই জন্যই বলা হয়েছে আল্লাহই ভালো জানেন। যাইহোক, এবার কি বুঝতে পারছেন, সূর্য পশ্চিমে উঠার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কি নাই?”
কলাবিজ্ঞানীর নাক মুখ দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছিলো। ”আপনি এইসব কি মনগড়া বললেন?”
হুজুর হেসে দিয়ে বললেন, ”আমি জানি, আপনারা হুজুরদের কথা বিশ্বাস করেননা। তাহলে আপনিই বলে দিন কোন ধরণের প্রমান লাগবে?”
”পিয়ার রিভিউড জার্নাল”, কলাবিজ্ঞানীর উত্তর।
”জ্বি, এটা নভেম্বর ২০১৬ সংখ্যার ‘প্রসিডিংস অফ দ্যা রয়েল সোসাইটি এ’ নামের পিয়ার রিভিউড জার্নাল থেকে নেয়া যা নিউজ আকারে বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সাইন্স’ এ প্রকাশিত হয়েছে”, হুজুর হাসিমুখে জবাব দিলো।
কলাবিজ্ঞানী আরো একবার পর্যদুস্ত হয়ে তাড়া আছে বলে দ্রুত কেটে পড়লো আর হুজুর মনে মনে কলাবিজ্ঞানীদের বিজ্ঞান চর্চার উৎস খুঁজতে লাগলো, হটাৎ মানসপটে ভেসে উঠলো কলাবিজ্ঞানীদের গুরুবিজ্ঞানীর কথা যিনি ইঞ্জিনারিং পড়ে বায়োলজি নিয়ে জ্ঞানগর্ভ লেখা লিখেছিলেন।
Saifur Rahman
Leave Your Comments