৩ বন্ধুর কথোপকথন। থিউরী অব ইভোলিউশন।
.
তিন বন্ধু। মাহমুদ, সুজন আর সুমন। এর মধ্যে সুজন আর সুমন একটু নাস্তিক কিসিমের। মাহমুদ আস্তিক, নামাজ রোজা করে ; কিন্তু তা নিয়া সুজন আর সুমনের হাসির শেষ নাই।
.
যাই হোক,গতকাল সুজন আর সুমন ল্যাপটপ কিনতে মেলায় গিয়েছিল। সুজন নিলো একটা লেনোভো থিংকপ্যাড ….. সুমন নিলো লেনোভো ইয়োগা… ।
.
পরদিন সকালে তিন বন্ধুর দেখা। মাহমুদ জিজ্ঞেস করলো :
—> কিরে সুজন, তোর প্রসেসর কি?
==> ‘ইনটেল কোর-আই ৫’
—>সুমন তোরটা?
==>’ইনটেল কোর-আই ৭’
–> এর মানে কি জানস?
==> কি?
—> এর মানে তোর আর সুজনের ল্যাপটপ দুইটার প্রসেসর প্রায় ৯৫% একই। তা থেকে প্রমাণিত হয় যে : তোদের এই দুইটা ল্যাপটপ একটা কমন ল্যাপটপ থেকে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে আজকের এই দুইটা ল্যাপটপ হয়েছে। বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে এই প্রক্রিয়া সংগঠিত হয়… বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে একটা কমন ল্যাপটপ রোদ,বৃষ্টি ঝড়ে বিভিন্ন ক্রিয়া প্রকৃয়ায় পরিবর্তীত হয়ে তা থেকে দুই ধরনের ল্যাপটপ হয়েছে : একটা সুজনের ল্যাপটপ একটা সুমনের ল্যাপটপ…. বিশ্বাস করতে সমস্যা কি?
.
সুমন আর সুজন বুঝতে পারলো যে ইভোলিউশন থিউরী নিয়ে মাহমুদ ফান করছে।
.
জবাব দিলো সুমন : পাগলামী করিস না তো মাহমুদ, দুইটা এক জিনিস না। তুই জানস লেনোভো কোম্পানী ল্যাপটপ দুইটা বানাইছে, এমনি এমনি কি আর ল্যাপটপ হয় নাকি? একটা ইনটেল কোর-আই প্রসেসর লক্ষ কোটি বছরেও এমনি এমনি হয়না তুই জানস।
.
মাহমুদ : তার মানে দুইটা জিনিস একই রকম হলে তার একজন কমন ম্যানুফ্যাকচারার আছে তাইনা? তাহলে মানুষ আর শিম্পাঞ্জীর জিন গুলো যদি ৯০% একই হয়, তাদের ম্যানুফ্যাকচারার একজন , তা সত্য হতে পারবেনা কেন? কেন মানুষ আর শিম্পাঞ্জীর একটা কমন এনসেস্টর থাকতে হবে?
.
সুজন: আরে মাহমুদ, ইভোলিউশন আর লেনোভো ল্যাপটপ প্রডাকশন এক না।
.
মাহমুদ: আরে আমি জানি তো এক না। এখন বল যে ইনটেল প্রসেসর বেশী কমপ্লেক্স, নাকি হিউম্যান ব্রেইন বেশী কমপ্লেক্স।
.
==> অবশ্যই ‘হিউম্যান ব্রেইন’
.
–> একটা ইনটেল প্রসেসর তৈরী করতে যদি হাজার হাজার মানুষের কয়েক যুগের পরিশ্রম লাগে এবং তা পরীক্ষাগারে তৈরী করতে হয়, তা এমনি এমনি রৌদ্র, বৃষ্টি, ঝড়ে কোটি কোটি বছরেও উৎপন্ন হওয়া সম্ভব নাহয়; তাহলে মানব মস্তিষ্ক কিভাবে এমনি এমনি হয়ে যায়? মানুষের চোখ, কান, হার্ট, লীভার, কিডনী, ব্লাড , রেড -হোয়াইট ব্লাড সেল, শিরা উপশিরা , বোনস, স্কিন …. এগুলো কিভাবে এমনি এমনি কারো কোন ডিরেকশন ছাড়া হয়ে যায়?
.
ইভেন একটা ‘বায়োলজিকাল সেল’ কিভাবে এমনি এমনি হয়, একটা কোষ এর ভিতরে থাকা মাইটোকন্ড্রিয়াই তো ইনটেল প্রসেসর থেকে বেশী কমপ্লেক্স … ওই মাইটোকন্ড্রিয়া কিভাবে হল? কিভাবে নিউক্লিয়াস হল? কিভাবে রাইবোসম হল? কিভাবে ডিএনএ হয়ে গেল? কেউ ডিরেকশন দিলোনা, এমনি এমনি কেমনে হল?
.
==> এসব বুঝতে হলে তোকে দ্য সেলফীশ জীন বইটা পড়তে হবে… রিচার্ড ডকিন্স এর? উনি দুনিয়ার সবচে’ বড় বিজ্ঞানী …
.
—> তুই পড়ছস?
.
==> এখনও পড়িনাই, তবে আসিফ ভাই পইড়া কইছে যে ইভোলিউশন থিউরী ঠিক আছে। এটা বৈজ্ঞানিক থিউরী। এটা অস্বীকার করা মানে বিজ্ঞান কে অস্বীকার করা।
.
—> প্রথম কথা হল তুই নিজে পড়স নাই। দ্বিতীয় কথা হল যে, থিউরী হল থিউরী, ফ্যাক্ট না। ইভোলিউশণ হল একটা থিউরী, এর পক্ষে যেমন অনেক বিজ্ঞানী আছে, বিপক্ষেও অনেক বিজ্ঞানী আছে। এটা পরীক্ষাগারে প্রমাণিত কোন থিউরী না। এটা হল স্পেকুলেশন বা ধারণাপ্রসূত থিউরী, এর পক্ষের প্রমাণগুলো কোন অকাট্য প্রমাণ না। বরং নিছক ধারণা ।
.
কেউ বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে অবজার্ভ করে নাই, যে অ্যামিবা থেকে সরীসৃপ হইয়া , তা থেকে বানর জাতীয় প্রাণী হয়ে, তা থেকে মানুষ হয় গেছে।
.
কেউ পরীক্ষাগারে একটা অ্যামিবা থেকে হাইড্রা এখনও বানাইতে পারে নাই। ইভেন কেউ পরীক্ষাগারে প্রোটিন অনুর সাথে প্রোটিন অনুর বাড়ি খাওয়াইয়া একটা অ্যামিবাও বানাইতে পারে নাই। ১০০ বছর ধরে যদি প্রোটিন অনুর সাথে প্রোটিন অনুর বাড়ি খাওয়ার একটা এক্সপেরিমেন্ট করা হইতো, আর তার থেকে একটা ব্যাকটেরিয়াও উৎপন্ন করা যাইতো, তাও না হয় মনরে একটু বুঝ দিতাম।
.
মানুষের মতন দেখতে কয়েকটা কংকাল পাইলেই কি প্রমাণ হয় যে ওই কংকালগুলো মানুষ আর বানরের পূর্বপুরুষ ছিল? কেউ কি টাইম মেশিনে গিয়ে দেখে এসছে? এটা কি হতে পারেনা, যে ওরা ডিফারেন্ট কোন এইপ? কত এইপ ই তো বিলুপ্ত হয়েছে? ওরা ওরকম বিলুপ্ত এইপ?
.
দুইটা প্রাণীর মধ্যে মিল থাকলেই কেন তাদের একটা কমন এনসেস্টর থাকতে হবে?কেন কমন এনসেস্টর এর থেকে ইভোলিউশণ এর মাধ্যমে তাদের পয়দা হতে হবে? কেন তাদের একজন কমন ক্রিয়েটর থাকতে পারবেনা?
.
==> এত এত বিজ্ঞানীর এত এত প্রমাণ তুই এভাবে ফেলে দিতে পারিস না মাহমুদ।
.
—-> আদৌ প্রমাণ করতে পারলে এ না ফেলার প্রশ্ন আসতো। আর বিজ্ঞান গণতন্ত্র না। অধিকাংশ বিজ্ঞানী যখন বলছে যে পৃথিবী স্থির , সূর্য তার চারিদিকে ঘুরে, কোপার্নিকাস বলছে যে পৃথিবী স্থির না , বরং তা সূর্যের চারিদিকে ঘুরে। কিন্তু কোপার্নিকাসই ছিল সঠিক, সেটা পরে প্রমাণিত হয়েছে্ ।
.
মেন্ডেলিফও জেনেটিক্স এর দুইটা ল দিছিল, কিন্তু কেউ এক্সেপ্ট করে নাই। পরে মেন্ডেল মরার পর তা সত্য প্রমাণিত হইছে। তার মানে অধিকাংশ বিজ্ঞানী(৯৯.৯৯৯৯%) ও ভুল হতে পারে।
.
তাই যদি অধিকাংশ বিজ্ঞানীও ইভোলিউশন এর পক্ষে থাকে , তার থেকেও ইভোলিউশন প্রমাণিত হয়ে যায় না। পৃথিবী যে ঘুরে , এটা হল প্রমাণিত ফ্যাক্ট….. এরকম অনেক ফ্যাক্ট বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করছে, কিন্তু ইভোলিউশন — এটা তো স্টীল থিউরী। কিছু কংকাল আর প্রাণীগুলোর মধ্যে থাকা কিছু মিল দেখিয়ে — তা থেকে দেয়া একটা নিছক থিউরী, যা নিয়ে অনেক অনেক কোশ্চেন আছে , এবং সেইসব কোশ্চেন এর কোন প্রপার উত্তর তারা দিতে পারেনাই। এটা একটা কমপ্লিট গোঁজামিল।
.
==> কিন্তু দেখ, জিনগুলোর মধ্যে কিন্তু মিউটেশন হয়,, এটা কিন্তু প্রমাণিত সত্য।
.
—> তুই একটা টয়োটা কার কিনলী। এখন ৩ বছর চালানোর পর তোর ব্রেকপ্যাড টা নষ্ট হইলো। এইটা হইলো মিউটেশন।
এখন ব্রেকপ্যাড তার অবস্থার পরিবর্তন করতে পারছে , তার মানে এইনা যে তোর ‘টয়োটা কার’ টা টয়োটা কোম্পানী ছাড়াই আপনা আপনি লক্ষ লক্ষ বছরের ক্রিয়া বিক্রিয়ায় তৈরী হয়ে গেছে।
.
==> তাহলে তোরা তোদের প্রপজিশন নিয়ে নেচারে পেপার পাবলিশ করছিস না কেন? প্রমাণ করছিস না কেন?
.
—-> যে থিউরী দিছে, তাকে তার থিউরী প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণ করতে না পারলে বুঝতে হবে থিউরীতে প্রবলেম আছে। তোরা থিউরী দিসছ, তোরা প্রমাণ করবি। তোরা প্রমাণ করতে পারস নাই, এটা তোদের প্রবলেম । আমরা আবার কি প্রমাণ করবো? ‘ কিছু একটা নাই ‘ তা নিয়ে তো পেপার লেখা যায় না। পেপার লেখা যায় ‘কিছু একটা থাকলে’। যেটা অস্তিত্বহীন, তা নিয়ে আমরা কি পেপার লেখবো?
.
===> শুন বুঝতে চেষ্টা কর। প্রথমে খুব সরল কোষ ছিল, পরে আস্তে আস্তে জটিল হইতে হইতে , মানুষ হইয়া গেছে।
.
—-> এভাবে নন স্পেসিফিকালী বললে হবে না। ডিটেইলস ইভোলিউশন প্রসেস সূক্ষাতিসূক্ষ ভাবে বর্ণনা করতে হবে।
.
গুগলে গিয়ে ইউটিউব ভিডিও দেখ যে চোখ কিভাবে দেখে বা কান কিভাবে শুনে, বা কিডনী কিভাবে রক্ত পরিষ্কার করে, বা হার্ট কিভাবে রক্ত সঞ্চালন করে — এই ফুল প্রসেসগুলো।
.
এরপর তোকে দেখাতে হবে, যে একটা প্রাণী যার চোখ নেই, কিভাবে তার মধ্যে চোখের জিন চলে এলো এবং সেই জিন থেকে কিভাবে চোখ উৎপন্ন হল, একই ভাবে : কান কিভাবে হল, মস্তিষ্কের ডেনড্রাইট আর এক্সন কিভাবে হল। মস্তিষ্কের জিন কিভাবে হয়ে গেল একটা এ্যামিবা জাতীয় প্রাণী থেকে…. কিভাবে শরীরের প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হল। কিভাবে হাড় হল ? কিভাবে চামড়া হল? এগুলোর জিন কিভাবে তৈরী হল তা তোকে দেখাতে হবে। পারলে তা দেখিয়ে নেচারে পেপার পাবলিশ কর। দুইটা নোবেল একসাথে পাবি।
.
আরও আছে ….
.
সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটা মনে আছে?
.
===> আছে । খুবই জটিল। অনেক বড় প্রক্রিয়া।
.
—-> এই প্রক্রিয়া গাছের পাতার মধ্যে কিভাবে এলো? এ প্রক্রিয়াটা কিভাবে র্যানডমলী হয়ে গেল , তা ব্যাখ্যা করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটা গাছের পাতায় করতে হলে গাছের যেই জেনেটিকাল ফরমেশন দরকার, তা এমনে এমনে কেমনে হল, তা ব্যাখ্যা করতে হবে।
.
মনে রাখিস সালোক সংশ্লেষণ ছাড়া এই পৃথিবীতে একটা প্রাণীও বর্তমান অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারতোনা।
.
===> আসলে এটা র্যানডমলী হওয়া একটু কঠিন বৈকি। স্বীকার করলো সুজন।
.
আমতা আমতা করছে সুমন । ….
.
—-> লক্ষ লক্ষ মিল্কিওয়ে, তার মধ্য থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন (বা ট্রিলিয়ন) সংখ্যক পৃথিবীতেও কি একটা ইনটেল প্রসেসর… হার্ড ডিস্ক…. র্যাম তৈরী হয়ে এমনি এমনি জোড়া লেগে একটা ল্যাপটপ হতে পারে?
একটা ইঞ্জিন সহ টয়োটা কার হতে পারে?
একটা স্পেসশীপ হতে পারে?
একটা এরোপ্লেন হতে পারে?
এমনি এমনি, ইভোলিউশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে?
.
===> হবার তো কথা না…. । বললো সুমন….কেউ একজন ডিরেক্ট করতে হবে, কেউ একজন ডিজাইন করতে হবে, একমাত্র তাহলেই সম্ভব।
.
কিন্তু যারা বিজ্ঞান মনস্ক তারা যে বলেন….
.
——> আচ্ছা, মশাকে উড়তে দেখছিস, বা মাছি? দেখেছিস তারা কিভাবে উড়ে। তুই ইচ্ছামতন দুইটা পাখা দিয়ে একটা বস্তু বানালেই কিন্তু তা উড়তে পারেনা, রাইট? তোকে এরো ডাইনামিক্স বুঝতে হবে এবং কিভাবে বলবিদ্যা কাজ করবে একটা বস্তু উড়ার সময় তাও বুঝতে হবে, তারপর বস্তুটা বানাতে হবে। এরোপ্লেন বা হেলিকপ্টার ইঞ্জিনিয়ার রা আগে থেকে ডিজাইন করে তারপরেই বানায় , এবং তারপরই এগুলো উড়ে।
র্যানডমলী দুইটা পাখা বানায় যদি উড়া যাইতো, মানুষ অনেক আগেই উড়তো। অথচ হাজার বছর চেষ্টা করেও মানুষ তা পারেনাই। কারণ ব্যাপারটা আসলেই কঠিন। দু্নিয়ায় সুপার পাওয়ার ছাড়া নরমাল রাষ্ট্রগুলো তাই এরোপ্লেন-হেলিকপ্টার বানাতে পারেনা। বরং তারা ক্রয় করে, সুপার পাওয়ার থেকে।
.
এখন দেখ , মশা, মাছি, ফড়িং, বাটার ফ্লাই, পাখি ( বিভিন্ন ধরনের ) — এগুলো সবগুলোই উড়তে পারে?
.
তুই এটা কিভাবে বিশ্বাস করিস যে আপনা আপনি কোন প্রাণীতে জেনেটিকাল মিউটেশন ঘটে এমন জিনের আবির্ভাব ঘটেছে, যে থেকে র্যানডমলী দুইটা পাখা গজিয়েছে এবং সেই পাখা দিয়ে পাখি গুলো বা পোকামাকড় উড়ছেও। কতটা ফানি আইডিয়া তা চিন্তা করছিস? ওই পাখা গুলো কেউ খুব সূক্ষাতিসূক্ষভাবে ডিজাইন করতে হবেনা? বায়ুচাপ হিসাব করতে হবেনা? পাখাগুলো কত দ্রুত নড়বে তা হিসাব করতে হবেনা? পাখাগুলোর শেইপ ডিজাইন করতে হবেনা? পাখাগুলো কি দ্বারা তৈরী হবে তা ঠিক করতে হবেনা? ভূমি থেকে কত হাজার ফুট উপরে একটা পাখি উড়বে , তার হাড়গুলো হালকা হওয়া লাগবে, ফুসফুস ৪ প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট হওয়া লাগবে(যাতে কম বায়ুচাপে পাখিগুলো নি:শ্বাস নিতে পারে)
.
…. এগুলো এমনি এমনি হয়ে গেছে? একেকটা পাখি বা পোকা কিন্তু আবার একেক ভাবে উড়ে। এরোডাইনামিক্স ডিফারেন্ট…কেউ ডিজাইন করলোনা , কিন্তু এগুলো সব এমনি এমনি হয়ে গেলো? পারলে মশার দুইটা পাখা বানাতো , দেখ পারিস কিনা?
.
তুই তো ফুস ফুস দ্বারা বাতাস থেকে অক্সিজেন নিস, তাইনা? মাছ নেয় ফুলকা দিয়ে , পানি থেকে। মাছের মধ্যে ওই জিন কিভাবে তৈরী হল যা থেকে ফুলকা দিয়ে পানি থেকে অক্সিজেন নেবার প্রসেস চলে এলো? কেউ ডিজাইন করলোনা, এমনি এমনি কেমনে হল?
.
চিন্তা কর, ইভেন তোর ফুসফুসটা কিভাবে হল যা বাতাস থেকে অক্সিজেন তোর শরীরের রেড ব্লাড সেল এর মাধ্যমে নিয়ে নেয় এবং শ্বসন প্রকৃয়ার মাধ্যমে তুই শর্করাকে পুড়িয়ে শক্তি পাস। এমনি এমনি জিন পরিবর্তীত হয়ে ফুসফুস কিভাবে হল, আর রেড ব্লাড সেলই বা কিভাবে হল?
.
ইভেন তোরা প্রজনন প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তা কর, কিভাবে দুই ধরণের মানুষ পুরুষ ও নারী সৃষ্টি হল, এবং তাদের মধ্যে আকর্ষণ এলো এবং তারা নতুন মানুষ জন্ম দিতে পারলো? শুক্রাণু ও ডিম্বাণু কিভাবে হল? কিভাবে একটি মানব ভ্রুণ বেড়ে উঠে মায়ের জঠরে একটি সুবিন্যস্ত প্রকৃয়ায়? একটু ভুল হলেই তো মানব শিশু আর হতে পারতোনা। এই সুবিন্যস্ত প্রকৃয়া সাধনের জন্য যেই জেনেটিকাল কমপোজিশণ দরকার ছিল, সেই জেনেটিকাল কমপোজিশন কিভাবে মানুষের শরীরের কোষে এমনি এমনি হয়ে গেল?
.
কিভাবে হজম প্রক্রিয়া হল যার মাধ্যমে তুই খেয়ে হজম করিস? বৃহদ্রান্ত-ক্ষুদ্রান্ত হল? এগুলোতে থাকা এনজাইমগুলো কিভাবে হল? ওই এনজাইমগুলো তৈরী করতে যেই জিন থাকা দরকার , তা তোর শরীরে কিভাবে এমনি এমনি কেমনে হয়ে গেল?
.
এগুলো শুধু মানুষ না, সকল প্রাণীর ক্ষেত্রেই সত্য। দুনিয়ায় থাকা প্রতিটা প্রাণীর জীবন প্রণালী নিয়ে গবেষণা করে তুই এ ধরণের প্রশ্ন করতে পারবি। একটা মশা, তেলাপোকা, ঘাসফড়িং, একটা চড়ুই পাখি — ইভেন একটা কুকুর বা বিড়াল নিয়ে গবেষণা করে তুই এইসব প্রশ্ন করতে পারবি।
.
কিভাবে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে পচন প্রকৃয়ার এলো পৃথিবীতে, এটা না থাকলে তো মৃতদেহ সরানো যেতোনা পৃথিবীতে…. এমনি এমনি কেমনে হল? একটা কমপ্লিট সিস্টেম যে পৃথিবীতে আমরা দেখছি, তা কি একটি সুপারন্যাচারাল পাওয়ারের অস্তিত্বকে প্রমাণ করেনা যিনি আমাদের সবার স্রষ্টা?
.
===> আসলে দেখ , এত বড় বড় বিজ্ঞানীরা নাস্তিক, আমরা কই যাই বল? একসঙ্গে বললো সুজন সুমন।
.
—-> আইসিস নিয়া মিডিয়া নাচে, কারণ সে ব্যতিক্রম। কিন্তু অধিকাংশ মুসলমান আইসিস করেনা। কিন্তু মিডিয়ায় আইসিস দেখে মনে হয় যেন ১.৭ বিলিয়ন মুসলিম সবাই আইসিস। কিন্তু ৯৯.৯৯ % মুসলমানই আইসিস না।
.
এরকম এখনও আমেরিকায় কোন বিজ্ঞানী নাস্তিক হইলে তার ঘটনা পত্রিকায় আসে, কারণ অধিকাংশ বিজ্ঞানীই আস্তিক । যে নাস্তিক সে হইলো ব্যতিক্রম, ব্যতিক্রম হিসেবে তারে নিয়া মিডিয়া নাচে। তার মানে এই না যে সবাই নাস্তিক।
.
===> কিন্তু বাংলাদেশে যে দেখি? বিজ্ঞানীরা নাস্তিক।
.
—-> তোরা কিসে পড়স?
===> চারুকলায়, জবাব দিল সুমন।
===>বাংলায়, জবাব দিল সুজন।
—-> আমি কিসে পড়ি?
——> ফিজিক্সে… বলল মাহমুদ নিজেই
.
তাহলে চিন্তা কর , তোরা তোদের আশে পাশে সব নাস্তিক দেখিস , কারণ কারণ যারা বাংলা-চারুকলায় পড়ে তারাই এদেশে বেশী নাস্তিক। যাদের আসলে ইংরেজীতে পাবলিশ হওয়া নেচারের পেপার পড়ার যোগ্যতা নাই। দ্য সেলফিশ জীন পড়ে বুঝার যোগ্যতা নাই। বাংলার নাস্তিক কুল কেউই এসব পড়ে নাস্তিক হয়নি। কলকাতার দাদাবাবুদের বাংলা বই আর অশিক্ষিত আরজ আলী মাতুব্বরের বই পড়ে নাস্তিক ইসলাম বিদ্বেষী হয়েছে। এমন কোন জ্ঞানের দৌড় এদের নেই।
.
কিন্তু বুয়েট, মেডিকেল বা ভার্সিটিগুলোর সাইন্স ডিপার্টমেন্টে গেলেই নাস্তিক তো পাবিই না, বরং দেখবি তাদের মধ্যে হুজুর এর সংখ্যাই বেশী। তার মানে বাংলার ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র-ছাত্রীরা নাস্তিক তো নয়ই বরং ৯৯% ই আস্তিক।
.
====> কিন্তু পেপার পত্রিকা পড়লে তো মনে হয় যে অনেক নাস্তিক।
.
—-> হুম , গুড পয়েন্ট। কারণ যারা সাংবাদিক তাদের মধ্যে নাস্তিক বেশী, তারা বেসিকালী সাইন্স বুঝে না। কিন্তু ইসলাম বিজ্ঞান ময় নহে — এই অভিযোগ তাদের বেশী। কিন্তু তারা নিজেরাই বিজ্ঞান বুঝে না্ । এরা মূলত কলকাতার প্রভাবে নাস্তিক।
.
আসলে নাস্তিকতা বাংলাদেশে মিডিয়ায় বেশী, যাদের সাইন্স সম্বন্ধে কোন ধারণা নাই। পশ্চিমা বিশ্বের একটি বিশেষ শ্রেণীকে তারা অন্ধ অনুকরণ করে থাকেন…
.
পশ্চিমা বিশ্ব বহুদিন ধরে চার্চ কর্তৃক নিষ্পেষিত হয়েছে। যার ফলে তারা ইভোলিউশন থিউরী পেয়েই চার্চকে অস্বীকার করার একটা উসিলা পেয়েছে।
.
এজন্য ইভোলিউশন থিউরী আসলে অনেকটা পলিটিকাল , সাইন্টিফিক না। কারণ পলিটিকাল লীডার রা এই থিউরী দিয়ে মানুষকে নাস্তিক বানিয়ে চার্চকে দুর্বল করতে চেয়েছে্ ।
.
আমাদের দেশে বা মুসলিম বিশ্বে আমরা মসজিদ কর্তৃক নিষ্পেষিত হইনি। আর আমাদের এসব মিথ্যা থিউরীর দরকারও নেই। আমরা অন্ধভাবে পশ্চিমা বিশ্বকে ফলো করিনা। আমরাই মুক্ত চিন্তা করেই আল্লাহ কে বিশ্বাস করি।
.
আর তোমরা নাস্তিকরাই বদ্ধ চিন্তা ভাবনার অধিকারী। কলকাতার চিন্তা চেতনা থেকে এখনও বের হতে পারোনি….
এমন সময় যোহরের আযান দিলো …
.
—–> আয়, মসজিদে যাই, যোহরের সময় হল। বলল মাহমুদ…
=======> নানা, দোস আমাদের প্যান্ট নষ্ট, পরে আরেকদিন হবে। দেখি আমরা একটু চিন্তা করে নি……পরে দেখা হবে।
.
পুনশ্চ: আরিফ আজাদ ভাই কর্তৃক অনুপ্রাণিত হয়ে এই লেখাটা লিখা হয়েছে। উনাকে যে বিজ্ঞানযাত্রা রিফিউট করেছে, তা পড়েই জবাব হিসেবে এটা লিখলাম। প্রিপারেশণ ছাড়াই, তাই একটু বিক্ষিপ্ত….
ভবিষ্যতে সময় পেলে দ্য সেলফিশ জিন সহ ওদের নেচারের পেপার গুলো পড়ে তারপর নোট লিখার ইচ্ছা আছে। দোয়া করবেন।
================================
লেখকঃ মুহাম্মাদ রেযাউল করিম ভূঁইয়া
Leave Your Comments