এদেশে ছোটবড়, নামী-বেনামী, রাষ্ট্র কর্তৃক নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত কয়েক ডজন ইসলামী রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব রয়েছে। তারমধ্যে বেশিরভাগ দল কওমী ঘরানার। আজ আমার আলোচনার মূল টপিক হলো কওমী ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর ‘চলমান কর্মতৎপরতা, রাজনীতির উদ্দেশ্য, এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ নিয়ে। যুগযুগ ধরে দেশের রাজনীতিতে কওমী ঘরানার দলগুলো মোটামুটি ভালো একটা অবস্থান থেকে সম্মুখে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে কওমীদের এই রাজনৈতিক অবস্থান মোটেও সন্তোষজনক নয়।
.
এদেশে ‘কওমী’ শব্দটি বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠীর সাথে অন্তরঙ্গভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ‘কওমী’ কোনো ধর্ম বা গোত্রের নাম না হলেও ইসলাম ধর্মীয় সহীহ দ্বীনি শিক্ষা কেন্দ্র মাদরাসা কেন্দ্রিক তাদের ধর্মকর্ম, জীবনযাত্রা পরিচালিত হবার ফলে তারা ‘কওমী’ বলেই চতুরদিকে পরিচিতি লাভ করেছে। দেশ-বিদেশে ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড রোধে কওমীদের ভূমিকা সর্বদা প্রশংসনীয়। তারা সময়ের প্রয়োজনে দেশ, জাতি ও ধর্মের জন্যে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতেও প্রস্তুত। উপমহাদেশে তাদের যথেষ্ট সুনাম-খ্যাতি, ইতিহাস ঐতিহ্য রয়েছে।
.
উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনেও কওমীদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। যা আজ স্বীকার করতে বাধ্য কওমী বিদ্বেষীরাও। মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। বাংলাদেশে যেসমস্ত কওমী ঘরনার দল রাজনীতিতে সরব রয়েছে আমার জানামতে তাদের প্রত্যেকের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। যেকোনো কওমী ঘরানার রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা কিম্বা নেতৃবৃন্দের কাছে আশাকরি এরচেয়ে ব্যতিক্রম উত্তর পাওয়া যাবেনা। মতাদর্শের দিক দিয়ে তারা সবাই এক।
.
মতাদর্শ ও উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে কওমীরা এক ও অভিন্ন হলেও রাজনীতিতে তাদের ভিন্নভিন্ন অনেকগুলো ছোটবড় প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রাচীন ইসলামী দল জমিয়ত, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস সহ অন্যান্য দলগুলো। এছাড়াও নাম না জানা আরো ইসলামী দল রয়েছে। তবে তারা মতাদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের দিক দিয়ে এক ও অভিন্ন হলেও কোন যুক্তিতে ভিন্নভিন্ন প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তা আমার বোধগম্য নয়।
.
কওমীরা আন্দোলন-সংগ্রামে প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে পারে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে একজোট হয়ে অংশগ্রহণ করতে পারেনা। অথচ এদেশের প্রগতিবাদী দলগুলোও নির্বাচন আসলে ক্ষমতায় যেতে একজোট হয়ে যায়। প্রয়োজনে তারা ভিন্নমতের সাথেও জোটবদ্ধ হয়। অথচ সেম মতাদর্শী কওমী ঘরানার ইসলামী দলগুলো তখন অবস্থান নেয় পরস্পর বিরোধী! ইসলামী দলগুলো নিজেরা একজোট না হলেও অনেকসময় প্রগতিবাদীদের সাথে ঠিকই লেজুড়বৃত্তি করে দু’য়েকটা আসন থেকে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে যায়!
.
আচ্ছা! দেশে খেলাফত কায়েম করাই যদি ইসলামী দলগুলোর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে তারা একজোট হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনা কেনো? নাকি খেলাফত কায়েমের নাম দিয়ে নিজেদের ক্ষুদ্র দলকে প্রতিষ্ঠিত করাই মূল উদ্দেশ্য? আচ্ছা! ধরে নিলাম দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এককভাবে সংসদে যাওয়া আপনার দলের উদ্দেশ্য। তো আপনি কি নিশ্চিত যে, আদৌ এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব? আমি বলি অসম্ভব। এভাবে কখনো রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হওয়া যাবেনা; উলটো নিজেদের মধ্যে দলাদলি বাড়বে বৈ কমবেনা।
.
জাতীয় নির্বাচন কাছাকাছি সময়ে আমরা অতীতের ন্যয় এবারও দেখছি কওমী ঘরানার ইসলামী দলগুলো আছে নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হবার ন্যূনতম আলামত তো দেখছিনা; বরং তারা রেখেছেন নিজেদের ছিদ্রান্বেষণে ন্যস্ত। বুঝলাম আপনারা একজোট হবেন না, ভালো। তাহলে আরেকটা দলের নেতৃবৃন্দ নিয়ে অযথা কুৎসা রটাবেন কেনো? ঐক্য না হোক, অন্তত দূরত্ব তৈরি না করলেই তো পারেন! মনে রাখবেন, এই রাজনীতি দিয়ে কস্মিনকালেও দেশে খেলাফত কায়েম সম্ভব হবে না। উলটো ক্ষতি হবে।
.
কুফরি গণতন্ত্র দিয়ে খেলাফত কায়েম হবে না একথা বলতে পারি। তবে রাজনীতি দিয়েই যদি খেলাফত কায়েম করার দিবাস্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে অন্তত আগে দরকার ঐক্যবদ্ধ হওয়া। খেলাফত কায়েম হোক বা নোক, নিজেদের একটা অবস্থান তো সৃষ্টি হবে। অন্তত ইসলাম বিদ্বেষীদের অযাচিত আস্ফালন তো বন্ধ হবে। তাই আসুন ঐক্যের মিছিলে অংশগ্রহণ করি। অন্তত কওমীরা ঐক্যবদ্ধ হোন। কওমী এদেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী। তারা এক হলে দেশে অনেককিছু করা সম্ভব। আর নয় দূরত্ব। এবার হবো ঐক্য।
maolana Ali Azam
Leave Your Comments