দেশব্যাপী তুমুল আলোচনা বয়ে যাওয়া অনেকদিনের আকাঙ্ক্ষিত কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতি কাগজে-কলমে বাস্তবায়নের কাজ কতদূর এগিয়েছে আমাদের জানা নেই। সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়নে সরকার কতটা আন্তরিক সে ব্যাপারেও আমরা আছি ঘোর অন্ধকারে। কবে নাগাদ কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতি আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে ঘরে-বাইরে তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন সন্দেহ। আদৌ কি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতি আলোর মুখ দেখবে? এই প্রশ্ন হাজার হাজার কওমী মাদরাসার ছাত্রদের। এই নিয়ে মাদরাসা শিক্ষক-ছাত্রসমাজের মনে দিনদিন বাড়ছে চাপা ক্ষোভ।
অথচ এই স্বীকৃতির জুজু তুলে সরকার কওমী অঙ্গন নিয়ে কতো কাণ্ডই না ঘটালো! প্রথমে গোটা অঙ্গনকে ভেঙে টুকরো-টুকরো করলো। ফের কওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষককে মুখোমুখি দাঁড় করানোর ঘৃণ্য পায়তারা করলো। এই স্বীকৃতি কেন্দ্র করে কওমী আঙ্গনে কতো তুলকালামই না বয়ে গেলো! যাক শেষপর্যন্ত কওমী অঙ্গনের ঐক্যের প্রতীক, সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী, এদেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্ব আল্লামা শাহ আহমাদ শফী সাহেবের হাত ধরে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত হলো ঐতিহাসিক কওমী সনদের স্বীকৃতি। যা আজও কার্যকর হয়নি। কবে নাগাদ কার্যকর হবে আল্লাহ মালুম। নাকি এটাও গতানুগতিক রাজনীতির অংশ বলা মুশকিল।
এদেশে ইসলাম এবং কওমী অঙ্গনকে ঘিরে প্রায়ই চলে ভোটের রাজনীতি। বিশেষ করে এই রাজনীতি নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে নতুন রূপ নেয়। এদেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে এমপি, মন্ত্রী এমনকি তৃণমূল পর্যায়ের সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা পর্যন্ত সুযোগ পেলে ইসলাম এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ঈমান, অনুভূতিতে আঘাত করে বসে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। অথচ তারাই আবার নিজেদের প্রয়োজনে মাদরাসা, মসজিদে এবং ইসলামী প্রোগ্রামগুলোতে অংশগ্রহণ করে ইসলামের পক্ষে বড় গলায় গলাবাজি করে। বিশেষ করে সরলমনা আলেমসমাজকে নিজেদের কব্জায় নিতে আজগুবি সব প্রতিশ্রুতির বুলি আওড়াতে থাকে।
প্রায়ই আমরা দেখি ইসলাম এবং মুসলমানদের ব্যবহার করে রাজনীতিবিদরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে। অথচ প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তারাই আবার ইসলাম, মুসলমান, মসজিদ, মাদরাসা ও আলেমসমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ইসলামী সভাসম্মেলন ও মসজিদ মাদরাসার উপর নজরদারী করে। মাদরাসা ছাত্র ও আলেমসমাজকে জঙ্গি বলে অবহিত করে। সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্র ইসলামকে ব্যবহার করলেও কোনোভাবে ইসলাম রাষ্ট্রের মাধ্যমে উপকৃত হয় না; বরং আক্রান্ত হয়। আমার ধারণা এবারও আওয়ামীলীগ সরকার কওমী সনদের স্বীকৃতি ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরলমনা আলেমসমাজকে ধোঁকা দিয়ে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে চাইছে।
ইতোপূর্বেও আমরা দেখেছি তৎকালীন জোট সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালে কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিল। যদিও কুচক্রী মহলের কুদৃষ্টির কবলে পড়ে শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে গিয়েছিল। বলাবাহুল্য বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের মত এভাবে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে না হলেও জোট সরকারও কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছিল। যা স্রেফ ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আলোর মুখ দেখেনি। তাহলে এবারও কি সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে? যদি তাই হয় তা হবে দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের ঐতিহাসিক মশকারা এবং জঘন্যতম গাদ্দারি।
কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতির দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।
Leave Your Comments