একজন কওমিপড়ুয়া আলেমকে কেনো ইংরেজির তোতা পাখি হতে হবে?

একজন ডাক্তার হওয়ার জন্য মেডিকেলের একজন ছাত্রের কতোটুকু ডাক্তারি জ্ঞান প্রয়োজন? যাতে সে একটি সফল অস্ত্রোপচার করতে পারে?
একজন প্রকৌশলী হওয়ার জন্য একজন প্রকৌশলের ছাত্রের বিল্ডিং বানানোর কতোটুকু জ্ঞান প্রয়োজন?
কিংবা একজন বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য কতোটা বিজ্ঞান অধ্যয়ন প্রয়োজন?
একজন কওমিপড়ুয়া আলেমকে কেনো ইংরেজির তোতাপাখি হতে হবে? কেনো তার কাছে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ভূগোল, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যাপারে অজ্ঞতার প্রশ্ন তোলা হবে? তার কাজ ধর্ম নিয়ে কথা বলা। ধর্মের বিষয়াদি মানুষকে জানানো, মানুষকে মানানো।

আপনি তো কখনো একজন ডাক্তারের কাছে দালান বানানোর জন্য যান না। কিংবা ইঞ্জিনিয়ারের কাছে যান না দাঁত দেখাতে। তাহলে একজন আলেমকে কেনো অর্থ উৎপাদন করে দেশের অর্থনীতির অন্যতম অনুঘটক ভাবছেন?

ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করুন যক্ষ্মার রোগলক্ষণগুলো কী কী। সে আপনাকে পাঁচ মিনিটে সব ক্লিয়ারলি বলে দেবে। ইঞ্জিনিয়ারের কাছে এই জ্ঞান পাবেন না। তার কাছে জিজ্ঞেস করুন পাঁচতলা বাড়ি বানাতে কয় টন রড লাগবে, সে হুট হাট হিসাব করে আপনাকে বলে দেবে। তার জ্ঞান পাবেন না পদার্থবিদের কাছে। সবার জ্ঞানের পরিধি আলাদা। তেমনি একজন আলেমের কাছে কেবল ধর্ম নিয়েই জিজ্ঞেস করুন, তিনি আপনার ধর্মবিষয়ক সকল সমস্যা সমাধান দেবেন। তাকে জিজ্ঞেস করুন, কুরআন কীভাবে পড়বেন, অজু কীভাবে করবেন, কখন নামাজ পড়া যায় না, রোজা কখন ভাঙা যাবে, হজ কখন করতে হবে, জাকাত কাকে কীভাবে দেবেন, ব্যবসায় কোনটা হারাম কোনটা হালাল, চাকরিতে কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায়… এইসব ধর্মীয় বিষয়।

যদি সে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারে তবেই তাকে আপনি সমাজের বোঝা ভাবতে পারেন। যেমন ইঞ্জিনিয়ারের ভুলের কারণে রানা প্লাজা যদি ভেঙে পড়ে কিংবা হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসায় যদি রোগী মারা যায়। আপনি যদি মনে করেন, না, আমার জীবনে ধর্মের কোনো প্রয়োজন নেই, আমি কোনো ধর্ম মানবো না। তাহলে হয়তো আলেমদের প্রয়োজনীয়তা না হতে পারে। কিন্তু সমাজের ৯০% মানুষ যখন ধর্ম মানতে ইচ্ছুক, ইসলামের বিষয়াদি মানতে ইচ্ছুক সেখানে আলেমদের প্রয়োজনীয়তা, ধর্মবিদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ কারণে বাংলাদেশে আরো বেশি করে কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার একান্ত প্রয়োজন।

অনেকেই বলছেন, কওমি শিক্ষার ৯০% সমাজের কোনো কাজে লাগে না। কতো বোকা চিন্তা আমাদের! একজন ডাক্তার আট বছর অধ্যয়ন করে আপনাকে পাঁচ মিনিটে কেবল যক্ষ্মারোগের লক্ষণগুলো বলেছে। তাই কি আপনি ধরে নেবেন, তার আর যতো ডাক্তারি জ্ঞান আছে সব বেকার? ইঞ্জিনিয়ারের রডের হিসাব আপনি জেনে গেলেই কি ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজনীয়তা এই সমাজে আর হবে না? আপনার জন্য ধর্মের ১০% কাজে লাগছে, আরেকজনের জন্য হয়তো ধর্মের অন্য ১০% কাজে লাগছে। ধর্মের পুরো স্ট্রাকচারটি তো আপনার একসঙ্গে এমনকি সারাজীবনে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কিন্তু তা সামাজের অন্য অনেকেরই কাজে লাগছে। সুতরাং ধর্মকে এভাবে পার্সেন্টিজ হিসেবে হিসাব করাটা স্রেফ একটা বোকামি।

অনেকেই বলছেন, কওমি আলেমরা সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কি আমাকে একজন আলেম দেখাতে পারবেন যে বেকার হয়ে ঘরে বসে আছে? কওমি আলেমদের এটা সবচেয়ে বড় সফলতা, তারা শিক্ষা শেষে কখনোই বেকার থাকে না। এটা সবাই নিজের আশপাশে একবার তাকালেই সত্য অনুধাবন করতে পারবেন। যে কোনো কাজেই হোক তারা লেগে যাচ্ছে। আর যাই হোক, সমাজের বোঝা আলেমদের বলা যাবে না। আরেকটি বিষয়, সমাজ বা রাষ্ট্রের উন্নতিতে তারা কী অবদান রাখছে?

প্রথম কথা হলো, একজন ধর্মবিদের কাজ কি সমাজের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ানো?
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমাদের মনে যে সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, দুঃশাসন, অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা-ভয় কাজ করে- সেটা কোথা থেকে উদ্গত হচ্ছে? এসব অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা আমরা কোথা থেকে শিখছি?

আমাদের ধর্মই তো আমাদের ভেতরে এই বোধ তৈরি করে দিচ্ছে। নারীকে নির্যাতন করা যাবে না, অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানো যাবে না, নারীকে অর্ধাঙ্গী ভাবতে হবে- এই ধরনের সামাজিক বিষয়গুলো তো কুরআনই আমাদের শেখাচ্ছে। তাহলে এই যে কুরআন প্রতিনিয়ত আমাদের মানবমন উন্নত করছে এটা কি আমাদের সমাজে প্রভাব ফেলছে না? আমাদের সামাজিক প্রক্রিয়াগুলো উন্নত করছে না? যে মানুষটি ব্যবসায় দুর্নীতি করেন তিনি যদি কুরআন মানতেন তাহলে কি তিনি দুর্নীতি করতেন? তিনি দুর্নীতি না করলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অর্থনীতিতে সুনীতির সুফল আসতো। রাজনীতিবিদরা যদি ইসলামিক শিষ্টাচার শিক্ষাগ্রহণ করতেন তাহলে কি আমাদের সমাজে এতো অস্থিরতা লেগে থাকতো? সুতরাং উন্নতির ধারায় তারা খুব ভালোভাবেই নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে। ডলার দিয়েই কেবল দেশের উন্নতি হয় না, আরো অনেক কিছুরই উন্নয়ন প্রয়োজন, আমাদের উচিত কওমি মাদরাসার কাছে এসে এই সমাজের সেসব বিষয়ে শিক্ষা নেয়া উচিত।

লিখেছেনঃ সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *