মাজলুম মুহাজিরদের (রোহিঙ্গাদের) দানের ছবি প্রচার নিয়ে চলছে চরম বিতর্ক। পক্ষে বিপক্ষে মতামত তুলে ধরছেন অনেকেই। আমি মনে করি,
বিপক্ষে অবস্থানকারী আর পক্ষাবলম্বনকারী উভয়ের নিয়তই ভাল। তবে উপস্থাপনের ভিন্নতার কারনেই এ সংকটের সৃষ্টি।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে সেলফির বিপক্ষে আর কাজের ছবি(সচিত্র প্রতিবেদন) তুলে ধরার পক্ষে। আমার মনে হয়েছে সেলফির বিরোধীতাকারীরা একটু আগ বেড়ে সব ছবির বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়ে বসেছেন। আর পক্ষাবলম্বনকারীরা ত্রানের ছবির পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় সেলফি মার্কা ছবিও পোষ্ট করে দিচ্ছে। আর এতেই বেঁধে যাচ্ছে সমস্যা। অন্যথায় এর বিরোধীতার আমি কোন কারণ দেখিনা। কারণ এতে কাজের স্বচ্ছতা বাড়ে। আর এ বিষয়টার গুরুত্ব সর্বত্র।
সরকারী-বেসরকারী প্রায় প্রতিটি সেক্টরে একই অবস্থা। চলমান কার্যক্রম, অগ্রগতি ও ফলাফল সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যাদি নিয়মিত মনিটরিংসহ প্রতিবেদন আকারে মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক ও বাৎসরিক বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ করা হয়। সেখানে তথ্যের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দলিলাদি স্বরূপ বিভিন্ন ছবি সংযুক্ত করা হয়।এতে বিষয়টির স্বচ্ছতা ও প্রকৃত অবস্থা ফুটে উঠে।
যাদের লেনদেনগুলো বৈদেশিক দাতা সংস্থার সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত তাদের জন্যতো এটা আরও জরুরী । বরং আলাদাভাবে ছবিগুলোর স্থান, সময়, বিবরণ ইত্যাদি বর্ণনা পূর্বক তাদেরকে প্রতিবেদন পাঠাতে হয়। পরবর্তীতে তারা সেই সমস্ত জায়গাগুলো ভিজিটও করে থাকেন সত্যতা যাচাইয়ান্তে। বিধায় আর্থিক সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সেক্টরে কাজের স্বচ্ছতার জন্য স্থীর চিত্র, ভিডিও ধারণ খুবই অত্যাবশ্যক যা স্বচ্ছতা এবং দলিল হিসাবে সহায়ক। বিশেষভাবে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্ণিত সিস্টেমসহ আরও নতুন নতুন টেকনিক অবলম্বন করে থাকেন যা প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে কিন্তু তথ্য-প্রমানাদি, সচিত্র প্রতিবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উপরোক্ত বিষয়টি বর্ণনা করার মূল উদ্দেশ্য হলো আর্থিক লেনদেন সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কাজের স্বচ্ছতা ও সন্দেহ প্রবনতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃত তথ্য-উপাত্তসহ সচিত্র প্রতিবেদন দোষনীয় নয় বরং আরও স্বচ্ছতা ও নিশ্চয়তা প্রকাশ পায়। যারা ত্রান কার্যক্রমে মাঠ পর্যায়ে অবস্থানে করছেন এবং আর্থিক কার্যক্রমের সাথে সরাসরি জড়িত তাদের প্রত্যেকের উচিত প্রতিটি কাজের বিবরণসহ সচিত্র প্রতিবেদন পেশ করা। খাতওয়ারী খরচের তালিকাগুলোও প্রকাশ করা। হ্যা একান্তই যদি আপনি আপনার ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে খরচ করে থাকেন তাহলে ভিন্ন কথা তখন এটা জরুরী নয় যে, এটা প্রচার-প্রসার করতেই হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো নিয়ে আমাদের মধ্যে এতো আলোচনা-সমালোচনা কেন? বিশেষত দ্বীনদার শ্রেনীর মধ্যে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি, আত্মার ব্যাধি (আত্মপ্রচারনা ও লোক দেখানো আমল) থেকে বাঁচার জন্য সাবধানতা এবং এখলাস। কিছু নাদান ভাইয়েরা নিজেদের কিছু হাস্যকর ছবি পোস্ট করে এগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বটে কিন্তু সবার কার্যক্রমকে একপাল্লায় মাপা ঠিক হবে না। অপরদিকে যারা মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাবলিক সেক্টর থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ত্রান কার্যে শরিক হচ্ছেন তাদেরকে মানুষ বিশ্বাস করে টাকা-পয়সা দিলেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের জন্য জরুরী এর যথাযথ হক্ব আদায়সহ তথ্যগুলো সকলকে অবহিত করা। অবহিত করতে গেলে যে জিনিস প্রথমেই আসে সেটি হচ্ছে লিখনি, অতঃপর স্থীরচিত্রসহ ভিডিও ধারণের বিষয়টি কাজকে আরও ত্বরান্বিত করে। জবাবদিহিতা, সন্দেহপ্রবনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো দূর হয়ে যায়, জনসম্পৃক্ততা এবং গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ে।
আত্মপ্রচার, লোক দেখানো (রিয়া), অহংকার, অপ্রয়োজনীয় ছবি-ভিডিও ইত্যাদি আত্মার ব্যধির চিকিৎসার জন্য বিনয়ের সাথে সতর্ক করা যেতে পারে, আল্লাহওয়ালাদের সোহবতেরও বিকল্প নেই সেক্ষেত্রে। কিন্তু যারা এগুলো থেকে মুক্ত থেকে শুধুমাত্র কাজের ফায়দার জন্য প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করছেন তাদের ব্যাপারে নেগেটিভ মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এভাবে অনুরোধের বিষয়গুলোকে অনুরোধসূচক শব্দ ব্যবহার না করে শাসন করলে হীতে বিপরীতও হতে পারে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ, মতানৈক্যসহ ভাল কাজগুলোও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। নিজেদের ধাক্কাধাক্কিতে মানুষ মূল কাজ থেকেই না বিমুখ হয়ে যায়, ভয়টা সেখানেই। এছাড়াও সেলফি তোলা এক জিনিস আর কাজের অবস্থা তুলে ধরা আরেক জিনিস। দুটোই ছবি তবে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। উৎসাহ দিন, পথ দেখান, সংশোধনের নিয়্যতে সমালোচনা করুন, কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য নয়।
মুআমালাত তথা লেনদেনের স্বচ্ছতায় আমরা বহু দূরে সরে গিয়েছি আর আকড়ে ধরেছে অমুসলিম বিশ্ব। আপনি আজিমাতের উপর আমল করছেন আপনাকে অসংখ্য মোবারকবাদ কিন্তু যারা রুখসাতের উপর আছেন তাদেরকে ভুল না বোঝার আহ্বান রইল। এছাড়াও সবার দ্বীনি ও ঈমানি হালত এক নয়।
মুহা.শামছুদ্দোহা
খতিব:-বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার (সাইন্সল্যাব) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ,ধানমন্ডি,ঢাকা,বাংলাদেশ।
তথ্য সহযোগীতায়:- Saif ভাই।
Leave Your Comments