কলাবিজ্ঞানীদের মনে প্রশ্ন, আল্লাহ সামান্য পৃথিবী ও তার মানুষ নিয়ে এতো সিরিয়াস কেনো যেখানে মহাবিশ্বের বিশালতার কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব এতটাই নগন্য যা তুলনাযোগ্যও নয়। একটা পৃথিবী সৃষ্টি করলেই তো হতো, সেখানে এতো বিশাল মহাবিশ্বের কি দরকার ছিল? প্রশ্নটা কলাবিজ্ঞানীরা এতো সুন্দর গুছিয়ে করেনি, কলা-স্টাইলে করেছে, আমি এটার ভাবার্থ এমনটা করেছি। যাইহোক, প্রশ্নটা শুধু মাথামোটা কলাবিজ্ঞানীরাই করেনা, অনেক সাধারণ বুদ্ধির মানুষদেরও করতে দেখেছি।
মূল উত্তরের আগে পাল্টা একটা বিষয় আলোকপাত করা দরকার। কলাবিজ্ঞানীদের কথানুযায়ী যদি শুধু একটা পৃথিবী আর তার আশেপাশে দুই চারটা গ্রহ-উপগ্রহ থাকতো, তাহলে তারা আল্লাহর দেয়া সেই ওয়াদাকে চ্যালেঞ্জ করতো। হয়তো বলতো, যে আল্লাহ মাত্র একটা পৃথিবী বানাইছে সে আবার একজন জান্নাতিকে ১০ দুনিয়ার সমান জায়গা জান্নাতে কিভাবে দিবেন? (নাউযুবিল্লাহ)। মহাবিশ্বের বিশালতার কারণে এইটা আর বলতে পারতেছেনা। কলাবিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনার জগতটা খুব ছোট তাই তারা গভীরভাবে ভাবতে পারে না। ওদের ধারণা, যে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সে শুধু বিশাল বিশাল জিনিসপত্র নিয়ে ডিল করবে, তার কি ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ভাবার সময় থাকবে? মূর্খদের মস্তিষ্কে মরিচা পড়ে গেছে, সর্বময় ক্ষমতাধর তো সেই যার কাছে পিঁপড়া থেকে মহাবিশ্বের গ্যালাক্সি, সবকিছুর খবর থাকবে, সব কিছুকে সে নিয়ন্ত্রণ করবে। কলাবিজ্ঞানীরা পিঁপড়া আর গ্যালাক্সির সাইজের অনুপাত করতে গিয়ে বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে, পরে এই কনক্লুশনে আসে যে সৃষ্টিকর্তা গ্যালাক্সি আর পিঁপড়াকে একই সময়ে কিভাবে সমন্বয় করে? মাথামোটাদের মাথায় এটা ঢোকেনা, আমাদের ব্রেইনে পিঁপড়া আর গ্যালাক্সির পার্থক্য বিশাল হতে পারে কিন্তু সর্বশক্তিমানের কাছে গ্যালাক্সির বিশালতা আর পিঁপড়ার তুচ্ছতা কোনো পার্থক্য বহন করেনা আর একারণেই তিনি সর্বশক্তিমান।
তারপরেও যেহেতু প্রশ্ন এসেছে উত্তর দিতে হবে এবং তা বৈজ্ঞানিকভাবেই। কলাবিজ্ঞানীদের কাছে একটা জিনিস ছোট বা ক্ষুদ্র হলেই তার গুরুত্ব থাকে না। পৃথিবী এতো ছোট তার কি গুরুত্ব আছে এই মহাবিশ্বের কাছে? অদ্ভুত রকমের গর্দভ এরা। একটা উদাহরণের মাধ্যমে উত্তর দিচ্ছি, জানিনা ওদের মাথায় ঢুকবে কিনা। আমাদের মানব দেহ সেল বা কোষ দিয়ে তৈরী আমরা সবাই জানি। একটা পূর্ণাঙ্গ মানুষের শরীরে মোট কোষের সংখ্যা ~৩৭.২ ট্রিলিয়ন (১০০০ বিলিওনে ১ ট্রিলিয়ন)। কোষের মধ্যে ডিএনএ আছে যা আমাদের দেহের সবকিছু কন্ট্রোল করে। ডিএনএ নিউক্লিওটাইড নামক মলিকিউল দিয়ে তৈরী। একটা কোষে ৩ বিলিয়ন নিউক্লিওটাইড পেয়ার্স মানে ৬ বিলিয়ন সিঙ্গেল নিউক্লিওটাইড থাকে। একটা কোষে যদি ৬ বিলিয়ন নিউক্লিওটাইড থাকে তাহলে ৩৭.২ ট্রিলিয়ন কোষে নিউক্লিওটাইড এর সংখ্যা কত, এবার হিসাব করেন, মাথা নষ্ট হয়ে যাবে। একটা পূর্ণাঙ্গ মানুষের শরীরের সমস্ত নিউক্লিওটাইড যদি একটার পর একটা রাখা হয় তবে তার দুরুত্ব হবে ৬৭ বিলিয়ন মাইল!! যা প্রায় ৭০ বার সূর্যে যাওয়া আসার সমান দুরুত্ব।
ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন নিউক্লিওটাইড দিয়ে যেখানে একটা পূর্ণাঙ্গ মানবদেহ তৈরী সেখানে সিঙ্গেল একটা নিউক্লিওটাইড পুরো দেহের তুলনায় কতটা নগন্য, এটাকি কল্পনা করা যায়? এখন কলাবিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষদের কাছে যদি বলি মানবদেহের এই ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন নিউক্লিওটাইড এর মধ্যে মাত্র একটা নিউক্লিওটাইড যদি এদিক সেদিক হয় তবে কি কোনো ক্ষতি হবে? ওরা হয়তো বলবে, এতে আর তেমন কি হবে? অথচ মাত্র একটা নিউক্লিওটাইড ডিলিট বা অ্যাড হলে মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। বিভিন্ন ধরণের জীবনঘাতী ক্যান্সার যেমন সিকল সেল এনিমিয়া, যা মাত্র একটা নিউক্লিওটাইড রিপ্লেসড হওয়ার কারণে হয়ে থাকে।
কলাবিজ্ঞানীদের কাছে প্রশ্ন, পৃথিবীর সাথে চন্দ্র, সূর্যের যে আকর্ষণ বল কাজ করে তার কি কোনো ইমপ্যাক্টই বাকি মহাবিশ্বের উপরে নেই?
Saifur Rahman
Leave Your Comments