অনেকদিন পর হুজুরের সাথে কলাবিজ্ঞানীর দেখা। হুজুর কলাবিজ্ঞানীকে জিজ্ঞাসা করলো, ভাই কেমন আছেন? ‘ভালো’-আয়েশি ভঙ্গিতে জবাব দিলো কলাবিজ্ঞানী। ‘আপনার কি খবর?’- কলাবিজ্ঞানী কার্টেসি মেইনটেইন করে বললো।
‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি’- হুজুর স্মিথ হেসে জবাব দিলো।
‘আচ্ছা আপনারা কথায় কথায় এতো আলহামদুলিল্লাহ বলেন কেন, এই জিনিষটা আমার বুঝে আসেনা’- কলাবিজ্ঞানী কিছুটা বিরক্ত হয়ে জানতে চাইলো।
‘দেখুন মুসলিমরা ‘মঙ্গলজনক’ যেকোনো কিছুর জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কৃতজ্ঞতা বা ধন্যবাদ স্বরূপ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে, মানে হলো আল্লাহ এই যে তুমি আমাকে ভালো রেখেছো বা আমার জন্য মঙ্গলজনক কিছু করেছে এইজন্য তোমার প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম’।- হুজুর জবাব দিলো।
কথা শেষ হতেই হুজুর একটা ‘হাঁচি’ দিলো এবং সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।
‘আপনার দেয়া আলহামদুলিল্লার আগের ব্যাখ্যা না হয় মেনে নিলাম, ভালো কিছুর জন্য বলেন, কিন্তু এই যে হাঁচি দিয়েও আলহামদুলিল্লাহ বললেন, এখানে কি প্রয়োজন ছিল এটার?’ কলাবিজ্ঞানীর উৎসক জিজ্ঞাসা।
‘দেখুন এটা আমাদের নবি (সা:) শিখিয়েছেন, এই কারণে আমরা এটা পালন করি। তবে হাঁচির সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলা পিছনে একটা বৈজ্ঞানিক কারণও কিন্তু আছে?’ হুজুর জবাব দিলো।
‘হাউ রিডিকিউলাস!!! হাঁচির সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলার বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক? আপনারা হুজুররা কালে কালে আরো কত কি শুনাবেন তার ঠিক আছে?’ -কলাবিজ্ঞানী অবজ্ঞার সুরে বলে উঠলো।
‘আগে শুনুন তারপরে প্রতিক্রিয়া দেখান’- হুজুর একটু চড়া গলায় বললো।
‘জ্বি, বলেন, শুনি আপনার ব্যাখ্যা’- অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে কলাবিজ্ঞানী পাল্টা জবাব দিলো।
হুজুর বলা আরম্ভ করলেন….
‘ এমনিতে হাঁচির সাথে নাকের ভিতরকার জীবাণুগুলো বাইরে চলে আসে এবং নাকটা পরিষ্কার থাকে, এই তথ্য অনেক পুরোনো। নতুন করে এটা নিয়ে কিছু বলবো না।
আপনি বোধ হয় জানেন, কম্পিউটার একটানা অনেকদিন ব্যবহার করলে এর পারফরমেন্স কমে যায় তখন ‘রি-বুট’ করতে হয়। তখন আবারো আগের গতিতে চলতে থাকে। বছর চারেক আগে একদল গবেষক আবিষ্কার করেছেন যে ‘হাঁচি’ হলো আমাদের শরীরের জন্য একটা ‘রি-বুটিং’ সিস্টেম। আমাদের হাঁচির ফলে যে প্রেসার তৈরী হয় তার কারণে বায়োলজিক্যাল ‘রি-বুট’ টা হয়। হাঁচির ফলে আমাদের নাকের রাস্তার (nasal passage) এনভায়রনমেন্ট রিসেট হয় ফলে নিশ্বাস নেয়ার ফলে যেসব খারাপ বস্তু (ব্যাড পার্টিকেলস) নাকের মধ্যদিয়ে শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারতো তা নাকের মধ্যেই আটকে পড়ে যায়। খারাপ বস্তু আটকানোর এই এনভায়রনমেন্টটা সচল রাখার কারণেই বারবার হাঁচির মাধ্যমে শরীর তার নাকের প্রতিরোধ ব্যবস্থা রি-সেট করে নেয়।
তাহলে দেখুন, হাঁচি দেয়ার ফলে আমাদের ১. জীবাণুরা নাক থেকে বের হয়ে যাচ্ছে ২. নাকের মধ্য দিয়ে ব্যাড পার্টিকেল যাতে শরীরে অভ্যন্তরে ঢুকতে না পারে তার জন্য দরকারি এনভায়রনমেন্ট বজায় রাখতে সাহায্য করছে।
এবার বলেন হাঁচির সাথে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা উপকারী বিষয় জড়িত এর জন্য কি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বরূপমাত্র একবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা কি অনেক কিছু? উচিত ছিলো আরো বেশি করে বলা।’
কলাবিজ্ঞানী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো, এমন জবাবের জন্য সে প্রস্তুত ছিলোনা।
‘শুধু এটা নয় ইসলামে হাঁচি দেয়ারও এটিকেট আছে, যথাসম্ভব অনুচ্চস্বরে ও একটা হাত দিয়ে নাক মুখটা ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে। এরও বৈজ্ঞানিক কারণ আছে। বিজ্ঞান বলে, হাঁচির বেগ ঘন্টায় ৩০-৩৫ মাইল (কারো মতে এটা ১oo মাইল পর্যন্ত) এবং হাঁচির ফলে বের হওয়া নাকের শ্লেষ ও জীবাণু ৫ ফিট থেকে ৩০ ফিট পর্যন্ত দূরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাঁচির সময় মুখটা হাত দিয়ে ঢেকে দিলে এসব জীবাণু ও ময়লার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এড়ানো সম্ভব। আপনি হয়তো ভাবছেন, এতে তো হাত নোংরা হয়ে গেলো? জ্বি ঠিকই ধরেছেন আর একারণেই ইসলামে খাওয়ার আগে হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করার কথা বলা হয়েছে (সুন্নাহ)।
এখন আপনার যদি স্বাভাবিক সেন্স থাকে তাহলে চিন্তা করে দেখুন, যে মানুষটা (সা:) আমাদের হাঁচির ব্যাপারে এতো কিছু জানালেন তিনি ১৫০০ বছর আগের মানুষ এবং কোনো পিএইচডি ছিলোনা, বিজ্ঞান গবেষক ছিলেন না…’
অনেক্ষন ধরে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখেন কলাবিজ্ঞানী উধাও…
Saifur Rahman
Leave Your Comments