বৃষ্টি নেই। প্রচণ্ড রোদ। তীব্র গরম। ঘরে বৈদ্যুতিক পাখায়ও কমছে না। বাইরে তো অবস্থা কাহিল। ঘেমে একাকার। যেন নাভিশ্বাস উঠছে রাজধানীবাসীর। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে না। এ অবস্থা কাটতে লাগবে দু-একদিন।
ঢাকার জিয়া কলোনিতে চায়ের দোকানি আল-আমীন। চা সিগারেট রুটি বিক্রি করছিলেন। লক্ষ্য করে দেখা গেল, তার শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। তিনি বলছিলেন, আর কইয়েন না, মন চাচ্ছে মালমূল ফেলে ফ্রিজে ঢুকে বসে থাকি।
একটি স্বনামধন্য গ্রুপের মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত আলী আযম। গরমের এমন অবস্থা বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, মারা যাচ্ছি। গরম কারে কয়, মরণদশা। ভাবছি, এখন আর কাজ করবো না। বিকেল গড়ালে গরম কমলে আবার কাজ করবো। কেবল আযমই নন, ঘর বা কর্মস্থলের বাইরে থাকা মানুষ তীব্র দাবদাহে যেন মরণদশায়।
এই দাবদাহের বিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ রয়েছে। লঘুচাপ হওয়ার কারণে সব মেঘ বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে, আমাদের এখনকার (ঢাকার) মেঘের ফোকাসটা ওই জায়গায়। সেজন্য এখানে বৃষ্টিটা কম। লঘুচাপ পশ্চিমবঙ্গের দিকে উঠে যাবে দু-তিনদিন পরই।’
তিনি আরও বলেন, ‘লঘুচাপ উঠে গেলে আগামী দুদিন পর বৃষ্টি আবার শুরু হতে পারে। এখন এপ্রিল, মে মাস নয়, তারপরও গরম লাগছে, কারণ বর্ষাকাল। এ সময় বাতাসে জলীয়বাস্প থাকে। বৃষ্টি না হয়ে যদি রোদ থাকে, তবে গরমের অনুভূতিটা বেশি হয়।’
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ঢাকায় বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার এই তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকার তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা পাঁচ দশকের সর্বোচ্চ।
বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর ও মধ্য প্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তরপূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয়। এটি উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজমান। পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টার (বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে) মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
Leave Your Comments