বর্তমান হিন্দুত্ববাদী শিক্ষানীতি বাতিলের দাবীতে বেশকিছুদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ডাকা হয় মহাসমাবেশ। এ উপলক্ষে সারাদেশ থেকে বাস-ট্রাক, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে লক্ষাধিক নেতাকর্মী সমাবেশে জড়ো হন। বিকেল ৩টায় সমাবেশ শুরু হলেও দুপুরের আগেই সমাবেশস্থল পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সমাবেশের কারণে দুপুরের পর থেকে শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন সড়কটির একপাশ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। আশপাশের সড়কগুলোতেও দেখা যায় যানজট।
ইসলাম ধর্মবিরোধী পাঠ্যসূচি, শিক্ষাআইন ও শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে আয়োজিত এ মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। চরমোনাই পীর বলেন, ‘আমাদের শরীরের এক বিন্দু রক্ত থাকতে সর্বনাশা হিন্দুত্ববাদী শিক্ষানীতির সিলেবাস মেনে নেব না। এই নাস্তিক্যবাদী শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে কাপনের কাপড় পরে আমরা রাজপথে নামবো। যদি আমাদের জানও দিতে হয় আমরা তা করবো। তবুও আমরা এই নাস্তিক্যবাদী শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হতে দেব না।’
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘ধর্ম-বিশ্বাস ও আমাদের স্বকীয় সংস্কৃতি ধ্বংস করার জন্য গভীর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। আজ আমরা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়েও শঙ্কিত। আমাদের স্বাধীন জাতিসত্ত্বা আজ হুমকির মুখে। দেশকে ১৯৪৭ সালের পূর্বাবস্থায় নিয়ে যাওয়ার যড়যন্ত্র চলছে। জাতীয় শিক্ষনীতি ২০১০ ও শিক্ষা আইন ২০১৬ সেই ষড়যন্ত্রেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। সরকার আমাদের আপত্তি তোয়াক্কা না করে এক তরফাভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি এবং ইসলাম ধর্মবিহীন পাঠ্যসূচি অনুমোদন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুমোদন লাভের সাথে সাথেই আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় সর্বনাশা পরিবর্তন চলে আসে। বিশেষ করে সকল শ্রেণির বাংলা সিলেবাস থেকে মুসলিম ও ইসলামী ভাবধারার সব বিষয় বাদ দেয়া হয়। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনীও বাদ দেয়া হয়েছে। আমাদের জাতীয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শনকেও অপমান করা হচ্ছে।’
সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে চরমোনাই পীর বলেন, ‘কারা তৈরি করেছে এই সিলেবাস? এই সর্বনাশা সিলেবাসতো আওয়ামী লীগেরও চেতনাবিরোধী। আওয়ামী লীগের মুসলমান ভাইয়েরা তাদের সন্তানদেরকে কিছুতেই হিন্দুয়ানী বা নাস্তিক্যবাদী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। কারা জাতীয় শিক্ষার সিলেবাস থেকে ইসলাম এবং মুসলমানিত্ব বাদ দিয়ে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ অন্তর্ভূক্ত করেছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। তারা আমাদের অস্তিত্ত্বের শত্রু। তারা আমাদের স্বাধীনতার শত্রু। তারা এ জাতির ভয়ঙ্কর দুশমন।’
তিনি বলেন, ‘আত্মমর্যাদাশীল একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের একটি জাতীয় শিক্ষানীতি অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু এই শিক্ষানীতি বাংলাদেশ ধ্বংসের শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতি বাংলাদেশ থেকে ইসলাম ও মুসলমান জাতিসত্ত্বা ধ্বংসের রণকৌশল। এই শিক্ষানীতি কোনো দেশ প্রেমিক মুসলমান মেনে নিতে পারে না। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জাতি বিধ্বংসী ষড়যন্ত্রের এই শিক্ষাআইন প্রত্যাখ্যান করবে।’
Leave Your Comments