বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সহ-সভাপতি নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, বর্তমান শিক্ষা নীতি, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন হলে এ দেশে মানুষের মুসলমানিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন কওমী মাদরাসা বন্ধের হাতিয়ার হবে। তাই এই সেক্যুলার শিক্ষা নীতি, শিক্ষা আইন কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এই শিক্ষা নীতি, শিক্ষা আইন ও সিলেবাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী আয়োজিত জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে অনুষ্ঠিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি শেখ গোলাম আসগরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল। মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা আজীজুল হকের পরিচালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমীর ড. ঈশা শাহেদী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক মুজাহিদুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্মমহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা মাওলানা শওকত আমীন, ইসলামী ছাত্র মজলিসের সেক্রেটারি জেনারেল মো: আজিজুল হক প্রমুখ।
নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, বর্তমান শিক্ষা নীতি, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন হলে এ দেশে মানুষের মুসলমানিত্ব বিলিন হয়ে যাবে। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন কওমী মাদরাসা বন্ধের হাতিয়ার হবে। তাই এ শিক্ষা নীতি, শিক্ষা আইন কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এই শিক্ষা নীতি, শিক্ষা আইন ও সিলেবাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তবে আমাদের আন্দোলন হবে শান্তিপূণ এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
সেমিনারের প্রধান আলোচক খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, নতুন প্রজন্মকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্যে প্রচেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন এক সময়ের কমিউনিস্ট নেতা বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী। আওয়ামী লীগ যেন ভারতের বিজিপি’র বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে। তাই তারা শিক্ষায় হিন্দুত্ববাদের প্রসারের জন্যে শিক্ষায় হিন্দুত্ববাদী সন্নিবেশিত করেছে। ভারতে বিজিপি’র লোকেরা মুসলমানদের গরু কোরবানীতে বাঁধা দিচ্ছে, গরু জবাই করার অপরাধে মুসলমানদের হত্যা করছে। আর বর্তমান সরকার পাঠ্যপুস্তকে গোমাতার প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধায় উৎসাহিত করে মুসলমানদের সন্তানদের ঈমান ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। শুধু শিক্ষায় নয় রাজনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে সরকার ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু ৯২ ভাগ মানুষের আদর্শ বিসর্জন দিয়ে বিজিপি’র দর্শন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। এর বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
সেমিনারে খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমান বলেন, এই সরকার নিজে দেশ চালাচ্ছে না বরং পিছনের একটি শক্তি কলকাঠি নাড়ছে। এ সরকার দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকলে শুধু শিক্ষা নয় দেশের সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই সকল অনাচারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আল্লাহ রাসূলের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য বরদাস্ত করা হবে না। যা ধন্যবাদযোগ্য। বিগত বই মেলায় ব-দ্বীপ প্রকাশনী থেকে একটি আপত্তিকর বিতর্কিত বই প্রকাশ করায় লেখক- প্রকাশককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বইটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাতির জন্যে দুর্ভাগ্য এই সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন একজন পাকা কমিউনিস্ট। তেঁতুল গাছ লাগিয়ে যেমন সুমিষ্ট আম ফল পাওয়া যাবে না তেমনি একজন কমিউনিস্ট শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা ছাড়া কিছু আশা করা যায় না। আমি মনে করি এ ধরনের লোক দিয়ে সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তা হারাবে। তাই এ সরকারের উচিত শিক্ষামন্ত্রীসহ বিতর্কিত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণে ১০ দফা সুপারিশ পেশ করে বলেন, শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন নিয়ে শুধু নেতিবাচক কথাগুলো তুলে আনা এ প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য হল গণমানুষের চেতনার বিষয়টি জানানো।
Leave Your Comments