প্রশ্ন :
ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিমদের ওপর জিযিয়া বা ‘বিশেষ কর’ ধার্য হওয়ার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে কেউ কেউ বলে থাকেন যে, এভাবে তারা অবহেলিত নাগরিক হিসেবে মূল্যায়িত হয়ে থাকেন। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
উত্তর :
জিযিয়া বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান না থাকার কারণে কারো এমন ধারণা হতে পারে। বস্ত্তত ইসলামী রাষ্ট্রের অমুসলিমগণকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে মুসলমানদের তুলনায় কম সম্পদ জমা করতে হয়। অথচ রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা তারা ভোগ করে থাকে সমানভাবে।
জিযিয়া মূলত ২ প্রকার :
১. পরস্পর আলোচনার মাধ্যমে এই করের হার নির্ধারণ করা হয়। কোনো অমুসলিম অঞ্চল আলোচনা সাপেক্ষে ও সন্ধির মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হলে তাদের ক্ষেত্রে এ নীতি প্রজোয্য হয়। খলীফা ওমর রা. কোনো কোনো গোত্রের সাথে এভাবে আলোচনা করে জিযিয়ার হার নির্ধারণ করেছিলেন।
২. জিযিয়ার ২য় প্রকার প্রজোয্য হয় ঐ সকল অঞ্চলের অমুসলিমদের ক্ষেত্রে, যে অঞ্চল জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের আওতায় আসে। এদের ক্ষেত্রে জিযিয়ার হার সুনির্ধারিত। বর্তমান সময়ের মানুষ এই করের হার দেখলে অবাক না হয়ে পারবেন না।
হানাফী মাযহাবে এই হার হচ্ছে ধনীদের জন্য বাৎসরিক ৪৮ দিরহাম। মধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে ২৪ দিরহাম। আর নিম্ন আয়ের লোকদের ক্ষেত্রে ১২ দিরহাম। যা রূপার বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী (আনুমানিক) যথাক্রমে ১৮,০০০/-, ৯,০০০/- ও ৪,৫০০/- টাকা হয়ে থাকে। তাও আবার এ জিযিয়া আরোপিত হয় শুধু সক্ষম বালেগ পুরুষের উপর। অমুসলিম সকল নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এ করের আওতামুক্ত।
আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রা. বলেছেন, ‘আমি আমার পরবর্তী খলীফাদের জন্য বলে যাচ্ছি, তারা যেন (সংখ্যালঘু) অমুসলিমদের সাথে সদাচরণ করে, তাদের সাথে কৃত চুক্তি যেন রক্ষা করে এবং তাদের জান, মাল ও ইজ্জত রক্ষার জন্য যেন লড়াই করে। আর তাদের উপর যেন সাধ্যাতিরিক্ত কিছু আরোপ না করা হয়।
(কিতাবুল খারাজ পৃ. ১৩৬)
এমনকি হযরত উমর একজন দরিদ্র অমুসলিম বৃদ্ধকে দেখে তার জন্য মুসলমানদের বাইতুল মাল থেকে ভাতাও চালু করেছিলেন। যা পরবর্তীতে শরয়ী বিধান হিসাবে বিবেচিত হয়।
(কিতাবুল আমওয়াল পৃ. ৫২)
জিযিয়া সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়িল এবং হাদীস ও আছার-এর জন্য পড়া যেতে পারে : মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৭/৪০৬; কিতাবুল আমওয়াল পৃ. ৪৯; কিতাবুল খারাজ পৃ. ১৩২; আলমাউসূআতিল ফিকহিয়্যাহ ১৫/১৮৩।
আর আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. ‘আহকামু আহলুয যিম্মাহ’ নামে এ বিষয়ে সুন্দর একটি স্বতন্ত্র কিতাবও রচনা করেছেন।
এবার দেখুন ইসলামী রাষ্ট্রের মুসলমানদের দিকে। সকল সামর্থবান বালেগ মহিলা-পুরুষের উপর যাকাত ফরয। তার স্বর্ণ, রূপা, নগদ টাকা, ব্যাংক ব্যালেন্স ও ব্যবসার সম্পদের ২.৫% অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হয়। যা থেকে একই রাষ্ট্রে বসবাসকারী ও রাষ্ট্রের সুবিধা ভোগকারী অমুসলিমগণ সম্পূর্ণ দায়মুক্ত। কারণ যাকাত হচ্ছে একটি ইবাদত, আর কোনো অমুসলিমের ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। সে কারণে তার ওপর কোনো ইবাদত চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
লক্ষ্যণীয় হল যেখানে মানব রচিত আইনে শাসিত রাষ্ট্রগুলো ধনী-গরিব নির্বিশেষে বাধ্যতামূলক করারোপ করে থাকে, ভ্যাট বা মূল্য সংজোযিত করের নামে এমনকি একজন ভিক্ষুকের কেনা মাথাব্যাথার ট্যাবলেটের উপরও করের বোঝা চাপায় সে রাষ্ট্রগুলো বা ঐ রাষ্ট্র পদ্ধতির সমর্থকের মুখে জিযিয়া পদ্ধতির সমালোচনা কীভাবে মানায়!
==========================
মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ
এপ্রিল ২০১৩, মাসিক আল-কাউসার
Leave Your Comments