কোরবানি না দিয়ে বন্যার্তদের সাহায্যের প্রস্তাবে আমি অবাক হইনি !

কোরবানি না দিয়ে বন্যার্তদের সাহায্যের প্রস্তাবে আমি অবাক হইনি। মানবতাবাদী কলাবিজ্ঞানীরা এমনিতেই প্রতি বছর কোরবানির সময় পশু কুরবানীর নৃশংসতা নিয়ে মুখর থাকে, এবার তো তাদের ডাবল মওকা। কলাবিজ্ঞানীরা অনেক প্রফুল্ল কারণ এবার তাদের সাথে যোগ দিয়েছে দুই ঈদে নামাজ পড়া আর গরুর গোস্ত খাওয়া কিছু স্বল্পজ্ঞানী মুসলিম।

অর্থনীতি যারা জানে তারা বোঝে কোরবানির অর্থনৈতিক গুরুত্ব কেমন। প্রতিবছর কোরবানি উপলক্ষে পশু ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে। এই পশুগুলো কিনে কারা জানেন? যারা সমাজে সচ্ছল, অনেকে আছে যারা ঠিকমতো জাকাত, ট্যাক্স দেয় না, তাদের পকেট থেকে কিছু টাকা খসানোর সুযোগ করে দেয় এই কোরবানি। কোরবানির মাংসের প্রধান গ্রাহক কারা? যারা সারা বছর মাংস চোখে দেখে না, যাদের সামনে আপনি বছরের অন্যান্য সময় মাংস খেয়ে দাঁত খিলাল করতে থাকেন আর তারা দূর থেকে করুন চোখে তাকিয়ে থাকে, কুরবানী তাদের কপালে কিছু মাংস জোটার সুযোগ করে দেয়। চামড়া শিল্প থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের গর্বে আপনার বুক ফেটে যায়, অথচ কোরবানির মাধ্যমেই এই অর্থের বড় একটা অংশ অর্জিত হয়। এখন দুঃসহ বন্যা চলছে, গরিব কৃষকেরা তাদের গবাদি পশুগুলো বিক্রি করে দিবে কারণ তাদের নিজেদেরই থাকা, খাওয়ার ঠিক নেই, পশু গুলোকে কি খেতে দিবে? এমতাবস্থায় কোরবানি তাদের জন্য আশির্বাদস্বরূপ। অন্য সময় হলে তারা তাদের কষ্টে পালিত গবাদি পশুগুলো বিক্রি করতে পারতো না। কোরবানি তাদের এই সুযোগ করে দিয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে এই প্রথম না, এর আগেও এর থেকে ভয়াবহ পরিস্থিতি পার করেছে, কই কোনোদিন তো কাউকে বলতে বা ক্যাম্পেইন করতে দেখলাম না যে, আসুন আমরা হলে গিয়ে সিনেমা না দেখে, শারুখ বা কক্কাসের কনসার্ট না দেখে, একদিন সিগেরেট না খেয়ে, বন্ধুদের সাথে পার্টি না করে, ছেলে/মেয়ে বন্ধুকে গিফট না দিয়ে সেই টাকাটা অসহায়দের দান করে দেই? অথচ উল্লেখিত প্রতিটা কাজই অপ্রয়োজনীয় ও অপচয় ছাড়া কিছু না। সামনে ক্রিকেট খেলা আসছে, এখনই কেনো ক্যাম্পেইনিং শুরু করছেন না যে আসুন আমরা একদিন স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা না দেখে সেই টাকাটা বন্যার্তদের মাঝে বিলিয়ে দেই? আপনারা তা করবেন না কারণ আপনারা যে চূড়ান্ত ভন্ড।
আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো মানবতাবাদী বা কলাবিজ্ঞানীকে এখন পর্যন্ত দেখিনি বাংলাদেশের কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি দেখেছি বিভিন্ন মাদ্রাসা, ধর্মীয় সংগঠন ও সাধারণ মানবিকবোধ সম্পন্ন মুসলমানদের মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে টাকা তুলতে। আজ যারা কোরবানি দিচ্ছে তারাই বন্যার্তদের সাহায্যে সর্বাগ্রে। স্বল্পবুদ্ধির মুসলমানদের বুদ্ধির দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে কলাবিজ্ঞানীরা আরামদায়ক রুমে বসে কোরবানির সাথে বন্যার্তদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।

কলাবিজ্ঞানীরা নিজেদের সেনসিবল মানুষ দাবি করে, কিন্তু তারা যে ভণ্ড তার প্রমান আগেও পেয়েছি এবারও পেলাম। একজন সচেতন মানুষের মনে বন্যা বিষয়ক আলোচনায় সবার আগে আসা উচিত বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থার বন্যা মোকাবেলায় অবহেলা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি। থাকার জন্য যদি নিরাপদ আশ্রয় না থাকে তাহলে আপনি টাকা দিয়ে কি করবেন? টাকার উপরে তো ঘুমাতে পারবেন না। সারা দেশ যদি তলিয়ে যায়, খাদ্য সংকট দেখা দেয়, তখন কি টাকা চিবিয়ে খাবেন? সাম্প্রতিক বন্যার দায়ভারের কিছুটা যে আমাদের নতুজানু পররাষ্ট্রনীতিরও, সেটাও আমাদের আলোচনায় নাই। সুতরাং কলাবিজ্ঞানীদের প্রপাগান্ডায় বিভ্রান্ত না হয়ে কোরবানি দিন, বন্যার্তদের জন্য শুধু আর্থিক নয় শারীরিক শ্রম দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি মেরামতে সাহায্য করুন।

Saifur Rahman

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *