সমকামিতা কি আসলেই জেনেটিক্যাল?
=========================
.
এই কমিউনিটির মানুষরা অনেক দিন থেকেই দাবি করে আসছে সেক্সচুয়াল ওরিয়েন্টেশন বায়োলোজিক্যালি প্রি-ডিটারমাইন্ড, সহজাত এবং জন্মগত একটি বৈশিষ্ট্য। বাস্তবতা হলো, তাদের এই ‘জন্মগতভাবে সমকামী’ দাবির পক্ষে বৈজ্ঞানিক কোনো তথ্য, উপাত্ত নেই, বরং গত বছর আমেরিকার জন হপকিন্সের দুই বিখ্যাত সাইকিয়াট্রিক প্রায় ২০০ সাইন্টিফিক জার্নাল ঘেটে নিউ অ্যাটলান্টিস নামক জার্নালে একটা প্রতিবেদন ছাপিয়েছেন যেখানে তারা দেখিয়েছে সেক্সচুয়াল ওরিয়েন্টেশনের সাথে সহজাত, জন্মগত বা বায়োলোজিক্যাল যে সম্পর্ক এতদিন ভাবা হতো তার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। কিছু বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্টর আছে যার সাথে লৈঙ্গিক আচরণগত সম্পর্ক আছে কিন্তু সেটা কোনো মতেই ওরিয়েন্টেশনে ভূমিকা রাখে না।
.
ইদানিং অনেকে নেচার নিউজের একটা লিংক শেয়ার করছে, সেখানে নাকি দাবি করা হয়েছে সমকামিতার সাথে জিনের সম্পর্ক রয়েছে। এদের অজ্ঞতার সীমা নাই। প্রথমত, গবেষণাটি নেচার জার্নালে প্রকাশিত কোনো প্রবন্ধ না, এটা একটা সায়েন্টিফিক কনফারেন্সে একজন বিজ্ঞানীর দেয়া গবেষণার আপডেট। বিষয়টা হলো, সেখানে দাবি করা হয়েছে, সমকামিতার সাথে সম্ভাব্য জিনগত সম্পর্কটা প্রচলিত ক্লাসিকাল জেনেটিক্সের মতো নয়। এর সাথে এপিজেনেটিক্স নামে বায়োলজির নতুন একটি শাখার সম্পর্ক। সংক্ষেপে বলতে গেলে এপিজেনেটিক্স হলো, এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টর বা বাহ্যিক কোনো কারণে ক্রোমোসোমের কেমিক্যাল চেঞ্জ ঘটে যার ফলে ডিএনএ’র কোনো পরিবর্তন হয়না কিন্তু জিনের ফাঙ্কশন চেঞ্জ হয়ে যায়। এটা জীবনের যেকোনো পর্যায়ে হতে পারে। এপিজেনেটিক্যাল চেঞ্জ প্রাত্যাহিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত অনেক কারণেও হতে পারে, যেমন, ড্রাগ, টক্সিক কেমিক্যাল, ডায়েট, স্ট্রেস এবং অন্যান্য এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টরস।
.
সমকামিতার সাথে এপিজেনেটিক্সের সম্পর্ক আছে কি নাই এটা বলার মতো অবস্থা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে তবে এখন আপনাদের মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া প্রমাণিত কিছু এপিজেনেটিক্সের ফলাফল উদাহরণসহ উল্লেখ করবো।
.
১. ম্যাটার্নাল ইনফ্লুয়েন্স: আমরা অনেকেই কথাটা জানি, মায়েদের স্বাস্থ্যের উপরে গর্ভের সন্তানের সুস্থতা ও শারীরিক সক্ষমতা নির্ভর করে। এর মূল কারণটা অনেকেই জানে না যে, এটা এপিজেনেটিক্সের কারণেই হয়ে থাকে। ইঁদুরের উপরে এক গবেষণায় দেখা গেছে মাতৃত্বকালীন ডায়েট ও স্ট্রেস জরায়ুর ভ্রূণের উপরে প্রভাব ফেলে। আমরা অনেকসময় বলি, গর্ভবতী মায়েদের ধুমপান অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। গবেষণায় স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, গর্ভকালীন স্মোকিং ডিএনএ’র এক্সপ্রেশনে প্রভাব ফেলে। এমনকি মাতৃত্বকালীন সাইকোলোজিক্যাল ও সোশ্যাল বিহেভিয়র সাথে মানুষিক স্ট্রেস এপিজেনেটিক্যাল চেঞ্জ ঘটায়। ইঁদুরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মা ইঁদুরের স্ট্রেসের কারণে নবজাতকের নিউরোলোজিক্যাল ডিফেক্ট হয়েছে।
.
২. প্যারেন্টাল ইনফ্লুয়েন্স: শুধু মায়েদেরই নয়, বাবাদের স্বাস্থ্যের সাথেও সন্তানের সুস্থতা সম্পর্কিত। অতিরিক্ত এলকোহল পান করলে ও টক্সিক কেমিক্যালের কারণে যথাক্রমে স্পার্মের ডিএনএ’র মিথাইলেশনে ও জার্মলাইনে প্রভাব পড়ে, যা একটি এপিজেনেটিক্যাল পরিবর্তন।
.
৩. পেরিনেটাল ইনফ্লুয়েন্স: অবাক করা তথ্য, সিজারিয়ান বেবিদের ডিএনএ’র মিথাইলেশন নরমাল ডেলিভারড বেবিদের থেকে বেশি থাকে, যা এপিজেনেটিক্যাল। শিশুদের বেড়ে উঠার সময়ে পারেন্টসদের কেয়ার, সোশ্যাল বিহেভিয়ার, স্ট্রেস এডাপটেশন ইত্যাদি পরবর্তীতে ডিএনএ’র এপিজেনেটিক্যাল মোডিফিকেশনের মাধ্যমে বায়োলজিক্যাল মেমরি ও নিউরোন সার্কিট ডেভেলপমেন্টে ভূমিকা রাখে।
.
এইভাবে বয়ঃসন্ধিতে, সাবালকত্বে, অনেক এনভায়রনমেন্টাল ও সোশ্যাল ফ্যাক্টর আছে যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে ভূমিকা রাখে। এ সবই এপিজেনেটিক্যাল ডিএনএ মোডিফিকেশনের ফলাফল।
.
আমরা জানতে পারলাম যেসব এনভায়রনমেন্টাল ও সোশ্যাল ফ্যাক্টরস ডিএনএ’র ফাঙ্কশনে পরিবর্তন আনে, যাকে আমরা এপিজেনেটিক্স বলছি, তার সবগুলোই মানুষের ‘চয়েস’ বা ইচ্ছাকৃত। সমকামিতাও একটি ‘চয়েস’ যার ফলে পরবর্তীতে এপিজেনেটিক্যাল পরিবর্তন হচ্ছে (এখনো চূড়ান্তভাবে অপ্রমাণিত)।
.
ইনহেরিটেড জেনেটিক্যাল ডিসঅর্ডারগুলো (যেমন, এনিমিয়া, সিস্টিক ফ্রিব্রোসিস ইত্যাদি) ক্রোমোসোমাল পরিবর্তনের ফলে হয়ে থাকে। মায়ের থাকলে সন্তানের হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। এখানে মায়ের কিছুই করার থাকে না, কারণ এটা তার জিনের পরিবর্তনের ফল। পক্ষান্তরে, এপিজেনেটিক্যাল পরিবর্তনের জন্য মানুষের নিজস্ব কর্মকান্ড (ড্রাগ, এলকোহল, স্মোকিং, স্ট্রেস ইত্যাদি) দায়ী থাকে। সমকামিতার সাথে জিনের সম্পর্ক আছে দাবি করাটা ততটাই হাস্যকর যতটা হাস্যকর অতিরিক্ত মদপান, ধূমপান বা ড্রাগ এডিকশনের জন্য জিন দায়ী দাবি করাটা।
.
আরো একটি তথ্য জানিয়ে লেখাটা শেষ করছি, গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে উঠা একজন মানুষের সমকামী হওয়ার সম্ভাবনা শহরে বেড়ে উঠা কারো থেকে ন্যূনতম ৪ গুন্ কম, যা প্রমান করে সমকামিতা একটি পলিটিকাল, সোশ্যাল ও কালচারাল ট্রেন্ড।
.
লেখকঃ সাইফুর রহমান [ফেসবুক id: Saifur Rahman]
Leave Your Comments