“ সমকামিতা একটি ভয়ানক ব্যাধি”

“ সমকামিতা একটি ভয়ানক ব্যাধি”
================================
.
ফারিসের ইচ্ছা ছিল লাইব্রেরীতে যাওয়ার। আমিই ওঁকে জোর করে ধরে ক্যান্টিনে নিয়ে গেলাম। খুব চা খেতে ইচ্ছা করছিল তাই। ক্যান্টিনে পৌঁছে আমরা দক্ষিণ পার্শ্বের ছোট টেবিলটিতে বসলাম। খাবারের অর্ডার ফারিসই দিল। তবে চা নয়। কফি। চকলেট ফ্লেবারের কফি। আমরা কফি খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম। মিনিট দশেক পর রফিক ভাই এলেন। রফিক ভাই ভার্সিটির সংস্কৃতি সংঘের সভাপতি। সংস্কৃতি সংঘের সভাপতি হলেও সংস্কৃতির বদলে ইসলামের ভুল ধরার পেছনেই বেশি সময় ব্যয় থাকেন। কথায়-কথায় ইসলামকে আক্রমণ করাটা তাঁর অভ্যাস। ফারিসকে দেখে তিনি এগিয়ে এলেন। আমাদেরকে কফি খেতে দেখে একটু ঠাট্টা করেই বললেন, “কিরে মোল্লার দল? তোরা দেহি ক্যান্টিনে বইয়া বইয়া কফি খাইতাছস। কাম কাজ নাই”?
.
ফারিস বলল, “থাকবে না কেন ভাই? অবশ্যই আছে। কাজের মাঝে একটু বিরতি নিলাম। যাতে শরীরটা চাঙ্গা হয়। এই আর কি”।
– ভাল ভাল।
– কফি খাবেন ভাই?
– কফি! হ খাওয়া যায়। দিতে ক।
.
ক্যান্টিনের আসাদ মামাকে ডেকে আরও একটা কফি দিতে বললাম। রফিক ভাই একটা সিগারেট ধরালেন। তবে একটান দিয়েই নিভিয়ে ফেললেন। নেভানোর কারণটা অবশ্য ফারিস। রফিক ভাই জানেন, সিগারেটের গন্ধ ফারিস একদম সহ্য করতে পারে না। মিনিট পাঁচেক পর কফি এল। কফির কাপটা ফারিস রফিক ভাইয়ের দিগে এগিয়ে দিল।
.
কাপটা হাতে নিয়ে রফিক ভাই বললেন, “ঈদের অনুষ্ঠানে আরটিভি সমকামিতা নিয়া একটা নাটক প্রচার করল। সেইখানে না খারাপ কিছু দেহানো অইল। আর না খারাপ কোন কতা প্রচার করা অইল। তার পরেও হুজুররা এইডা নিয়া লাফালাফি শুরু করল। অনলাইন অফলাইনে এক্কেবারে ঝর তুইলা ফেলল। এই কামডা কি ঠিক অইল? তুঁই ক”?
.
যা ভেবেছিলাম তাই। আজও তিনি ফারিসের সাথে তর্ক করতে এসেছেন। ওনার প্রশ্নের জবাবে ফারিস বেশ শান্ত গলায় বললো, “হুজুররা কেন সমকামিতার বিরোধিতা করেন জানেন ভাই”?
– কেন আবার? তারা মানুষের কাজ কামের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তাই।
– আপনার ধারণা সম্পুর্ণ ভুল ভাই।
– ভুল মানে?
– হুজুরদের বিরোধীতার আসল কারণটা আপনি জানেন না।
– জানি জানি। খুব জানি। হুজুরগো আমার চিনা আছে। খালি মসজিদ মাদ্রাসা লইয়া পইরা থাকে। আর মানুষের কাজে-কামে নাক গলায়। মানুষরে দাস বানাইয়্যা রাখবার চায়। এইডাই মেন কারণ।
– রফিক ভাই, আপনি আবারো ভুল বলছেন।
– ভুল কইতাছি? তাইলে ঠিকটা কি?
– হুজুরদের সমকামিতাকে সাপোর্ট না করা, কিংবা সমকামীদের বিরোধিতা করার কারণ হল- সমকামিতা একটি গর্হিত কাজ?
– গর্হিত কাম? হা হা হা। হাঁসাইলি ফারিস। হাঁসাইলি। সমকামিতা খারাপ কাম অইব কেন? এইডা মানুষের জেনেটিক বিষয়। মানুষ জন্মগতভাবেই সমকামী অইতে পারে। হেইডা কি তোর জানা নাই?
– আপনি একটা মস্তবড় ভুল ইনফরমেশন দিলেন ভাই।
– আমি ভুল ইনফরমেশন দিছি?
– এইতো, এইমাত্র দিলেন।
– তাইলে ঠিকটা তুই-ই ক। আমি শুনি।
.
রফিক ভাই এর কথা শেষ হলে ফারিস আমাকে লক্ষ্য করে বললো, “তুই তো হিস্টোলজি আমার থেকে ভাল করে পড়েছিস। রফিক ভাই কে একটু পায়ু ও যোনীর গাঠনিক পার্থক্যগুলি বল তো”।
.
ফারিসের কথা শেষ হলে আমি বললাম, “আসলে মেয়েদের যোনী যৌনমিলনের জন্য স্পেশালভাবে তৈরি একটি অঙ্গ। যোনী তিন স্তর বিশিষ্ট পুরু ও স্থিতিস্থাপক মাসল দ্বারা তৈরি। যোনীর অভ্যন্তরে রয়েছে ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট। যার ফলে যোনীর ভিতরে লিংগ অতি সহজেই ঢুকে যেতে পারে। ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট, তিন স্তর বিশিষ্ট লেয়ার ও স্থিতিস্থাপক মাসল থাকার কারণে যোনীতে লিঙ্গ প্রবেশের ফলে কোন রকম রক্তপাত কিংবা ঘর্ষণ পরিলক্ষিত হয় না। অপরদিকে মলাশয় একটি অত্যন্ত নাজুক অঙ্গ। মলাশয়ে নেচারাল লুব্রিকেন্ট অনুপস্থিত। মলাশয়গাত্র একেবারেই পাতলা। একস্তর বিশিষ্ট আবরণ থাকে। আর মলাশয়ে লিঙ্গ যোনীর মত সহযেই ঢুকতে পারে না। চাপ দিয়ে ঢুকাতে হয়। যেহেতু মলাশয় গাত্র পাতলা ও ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট অনুপস্থিত, তাই লিঙ্গ ঢুকানোর ফলে রক্তপাত হয়। ফলে বীর্য অতি সহজেই রক্তের সাথে মিশে ইনফেকশন তৈরি করতে পারে। ইউমিনোলজিক্যাল স্টাডি থেকে আরও জানা যায় যে, বীর্যরস ইমিউনোসাপ্রেসিভ। আর মানুষের এন্যাল রুটের ইমিনো সিস্টেম যোনির ইমিউনো সিস্টেমের তুলনায় দুর্বল হয়। বীর্যরস যদি মলাশয়ে নির্গত হয়, তাহলে মলাশয়ের ইমিনো সিস্টেম আরও দুর্বল হয়ে পরে। ফলে জীবাণু বিনা প্রতিরোধে শরীরে প্রবেশ করে। এবং বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে”।
.
আমার কথা শুনে রফিক ভাই সন্তুষ্ট হতে পেরেছে বলে মনে হল না। তিনি এবার বললেন, “সবই বুঝলাম। কিন্তু বিজ্ঞানীরা যে গে জীন আবিষ্কার করছে। গে জীনডাই তো যথেষ্ট সমকামিতাকে জেনেটিক্যালি প্রোভ করবার জন্য”।
রফিক ভাইয়ের কথা শুনে ফারিস হাঁসতে শুরু করল। হাসি থামিয়ে রফিক ভাইকে বলল, “ভাই একটা প্রশ্ন করি”?
– আর কি প্রশ্ন করবি? এইবার তো তুই আমার কাছে হাইরা গেলি। হো হো হো।
– সে না হয় পরে দেখা যাবে। আগে বলেন তো, আপনি গে জীনের কথা কোথা থেকে শুনেছেন?
– হেইডা তোরে কওয়া যাইবো না। এইডা সিক্রেট ব্যাপার।
– আমি বলি?
– ক দেহি?
– ‘অভিজিৎ রায়ের’ বই থেকে। তাইনা?
.
ফারিসের সন্দেহটা ঠিক। রফিক ভাই কোন জবাব দিল না। রফিক ভাইইয়ের চুপ থাকাটাই মৌন সম্মতি নির্দেশ করে।
এরপর ফারিস বললো, “আচ্ছা রফিক ভাই। আমি যদি গণিতবিদের কাছে অর্থনীতি বুঝতে যাই- তাহলে সেটা কেমন হবে”?
– পাগলে কয় কি? গণিতের লোকগো কাছে তুই অর্থনীতির কি পাইবি? অর্থনীতি বুঝতে চাইলে অর্থনীতিবিদদের কাছে যাইতে অইব’।
– তাহলে আপনি যদি ইঞ্জিনিয়ার এর বই পড়ে মেডিক্যাল সাইন্স বুঝতে চান সেটা কেমন হবে?
.
রফিক ভাই কিছু বলল না। ফারিস বলল, “সবারই অধিকার আছে মেডিক্যাল সাইন্সের বিষয় গুলি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার। তাই বলে মিথ্যাচার করার অধিকার কিন্তু কারো নেই”।
– তার মানে তুই কইবার চাস অভিজিৎ দাদা মিসা কতা লিখছে তার বইডার মধ্যে?
– শুধুই কি মিথ্যা? তার গোটা বইটাই মিথ্যার ফুলঝুড়ি দিয়ে সাজানো।
– দাদাতো বইডার মধ্যে রেফারেন্স দিয়াই লিখছে। নাকি?
– রেফারেন্স দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু ভুল গবেষণার।
– ভুল?
– জ্বি ভাই। ভুল। অভিজিৎ রায় ‘গে’ জীনের কথা উল্লেখ করে দাবি করেছেন মানুষের সমকামী হওয়ার জন্য এই ‘গে’ জীন দায়ী। কিন্তু তথাকথিত ‘গে’ জীনের ফাদার উপাধিপ্রাপ্ত Dr. Dean Hamer ‘গে’ জীনের কথা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। ‘Scientific American Magazine’ যখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, ‘সমকামিতা কি জীনবিদ্যার সাথে সম্পর্কিত’? তখন তিনি তার উত্তরে বলেছিলেন, ‘Absolutely not’.
‘The Human Genome’ প্রজেক্ট শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালে এবং শেষ হয় ২০০৩ সালে। এই প্রজেক্টে মানুষের জীন নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করা হয়। কিন্তু তারা তথাকথিত ‘গে’ জীনের কোন অস্তিত্বই খুঁজে পায় নি।
Dr. George Rice, Dr. Neil and Whitehead, Drs. William Byne, Bruce Parsons এই সব বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, মানুষ কখনোই জন্মগতভাবে সমকামী হতে পারে না। আর ‘গে’ জীন বলে কোন জীনের অস্তিত্বই নেই। ছাড়াও অনেক বিজ্ঞানীই হেমারের গবেষণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন। যে গবেষনায় তিনি দাবি করেছিলেন যে, ‘মানুষ জন্মগতভাবে সমকামী হতে পারে’।
Laumann এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, সমকামিতা সৃষ্টিতে শহর পরিবেশ গ্রাম্য পরিবেশের তুলনায় বেশি ভুমিকা পালন করে। যদি সমকামিতা জেনেটিক-ই হত তাহলে তো সব স্থানে এর বিস্তার সমান হওয়ার কথা ছিল। সমকামিতা আবেগ, কৌতুহল, আকর্ষণ ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ফলেই উদ্ভূত হয়। আর সমকামী সম্পর্ক অস্থায়ী। যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।
এখন বলেন তো ভাই, অভিজিৎ রায় কি ভুল তথ্য আর মিথ্যা তথ্য দেন নি?
.
ফারিসের কথা শুনে রফিক ভাইকে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে। তিনি বেশ কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। এরপর কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, “শুনলাম আমেরিকার মনোবিজ্ঞানীরা নাকি সমকামিতারে মানসিক রোগের চার্ট থেইকা বাদ দিছে? যদি দিয়াই থাকে তাইলে তোর কথা কেমনে মানি? হেরা নিশ্চয়ই তোর চাইতে বিজ্ঞান বেশি জানে”।
.
রফিক ভাইয়ের কথা শুনে ফারিস বেশ হাসিমুখে বললো, “ভাই আপনি জানেন কি? ১৯৭৩ সালের আগ পর্যন্ত আমেরিকায় সমকামিতা একটি মানসিক ব্যাধি হিসেবে গণ্য হত”।
– না। এইডা আমার জানা ছিল না।
– সমকামিতাকে মানসিক ব্যাধির চার্ট থেকে বাদ দেয়ার কারণ বিজ্ঞান নয়। অন্য কিছু।
– তোরা না! সব কামোই খালি সন্দেহ খুজস। আইচ্ছা ক দেহি হেই কারণডা কি?
– পলিটিকাল কারণ।
– পলিটিকাল?
– জি ভাই। পলিটিকাল। কেননা রাজনৈতিক দলগুলো সমকামী ও তাঁদের প্রতি সহনশীল ব্যাক্তিবর্গের ভোট পাওয়ার জন্য আমেরিকান মনোবিজ্ঞান সংস্থাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। তাঁদের চাপের মুখে সংস্থাটি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। তবে তারা এটা বলার দুঃসাহস দেখায় নি যে- বিজ্ঞান এটা মেনে নিয়েছে। ২০০০ সালের মে মাসে ‘American Psychiatric Association’ ঘোষণা করে, ‘Currently, there is a renewed interest in searching for biological etiologies for homosexuality. However, to date there are no replicated scientific studies supporting any specific biological etiology for homosexuality’.
.
রফিক ভাই এবার চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসলেন। এরপর বললেন, “তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতা বইলা তো একটা কথা আছে। নাকি? সমকামীরা তো সমাজের কোন ক্ষতি করতাছে না। তাইলে তাগো পিছনে লাইগ্যা লাভ কি? তারা তাগোর কাম করুক। আমরা আমাগোর কামে টাইম দেই। হেইডাই আমাগোর লাইগ্যা ভালা”।
– রফিক ভাই, একটা প্রশ্ন করি?
– হ কর।
– কেউ যদি আপনার সামনে গাঁজা খায় আপনি কি তাকে বাঁধা দেবেন?
– বাঁধা দিমু না মানে? এইডা তুই কি কস?
– কেন বাঁধা দিবেন? গাঁজা খাওয়াটা কি তার ব্যক্তিস্বাধীনতা নয়?
– রাখ তোর স্বাধীনতা। গাঞ্জা খাইলে হের শরীলো কি পরিমাণ ক্ষতি অইব তুঁই জানস? তারে অবশ্যই এই কাম থেইকা ফিরাইয়্যা রাহন লাগবো।
– সমকামীদেরও বাঁধা না দিলে যে বিভিন্ন ধরণের রোগ তাঁদের শরীরে বাসা বাঁধবে। সেটার খেয়াল কে করবে ভাই?
– মানে? তুই কি কইবার চাস?
– ভাই। বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, এনাল সেক্স অন্য যে কোন সেক্সের তুলনায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে ‘সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ’ গুলো অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করে। আর সে জন্যেই আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন- সমকামীদের মধ্যে এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া সহ সব যৌনরোগ গুলোর সংক্রমণের হার বেশি। ‘গে-বাওয়েল সিনড্রোম’ নামক রোগ সমকামীদের মধ্যে অধিকমাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘গে-বাওয়েল সিনড্রোম’।
আচ্ছা রফিক ভাই বলেন তো; এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া রোগগুলোর মধ্যে কোনটা মানুষের জন্য অধিক ক্ষতিকারক?
– কোনডা আবার? এইডস। এইডা তো সবাই জানে। কারণ এইডার কোন অশুধ এহনো আবিষ্কার অয় নাই।
– আপনি শুনলে হয়তো অবাক হবেন, মরণঘাতী এইডস এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সমকামিতা।
– এইডা কি তর কতা? নাকি বিজ্ঞানীদের?
– আমার কথা কেন হবে ভাই? এটা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত। আমেরিকান ‘সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’ (CDC) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার UNAIDS দেয়া স্টাডি এ কথা প্রমাণ করেছে। তারা দেখিয়েছে যে, সমকামিতা এইডস এর অত্যন্ত বড় রিস্ক ফ্যাক্টর। CDC’র দেয়া তথ্য থেকে আরও জানা যায়, ১৯৯৮ সালে আমারিকায় নতুন এইচআইভি সংক্রামিত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৪%-ই ছিল সমকামী। ২০০৯ সালের আগষ্ট মাসে CDC’র দেয়া অপর একটি রিপোর্ট বলছে, সাধারণ জনগোষ্ঠীর চেয়ে সমকামীদের মধ্যে এইডস সংক্রমণের হার প্রায় ৫০গুণ বেশি। এছাড়া UNAIDS’র ২০১৫ এর একটি রিপোর্টও ঠিক একই কথাই বলেছে।
.
ফারিসের কথা শেষ হলে আমি বললাম, “আচ্ছা ফারিস। সমকামিতা কি যৌনরোগ ছাড়া অন্যান্য রোগের জন্যেও দায়ী? যেমনঃ ক্যান্সার বা এই টাইপের কিছু?”।
.
আমার প্রশ্ন শুনে ফারিস বললো, “গুড পয়েন্ট। অনেক সুন্দর একটা প্রশ্ন করছিস। প্রশ্নটা না করলে হয়তো আমার এই পয়েন্টটা মনেই আসতো না। সমকামিতা শুধু যৌনরোগই ছড়ায় না বরং অন্যান্য রোগও ছড়ায়। ক্যান্সার হল তাদের মধ্যে অন্যতম। এনাল সেক্সের ফলে মলাশয়গাত্রে অতি সহজেই ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। যেটা কিছুক্ষণ আগে তুই নিজেই বলেছিস। আর প্যাপিলোমা ভাইরাস খুব সহজেই এনাল রুট দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। ক্ষতের মাধ্যমে এই ভাইরাস অতি দ্রুত রক্তের সাথে মিশে যায়। যার ফলে এনাল ক্যান্সার সমকামীদের মধ্যে অনেক বেশি দেখা যায়। ‘Nursing Clinic of North America’র দেয়া ২০০৪ সালের একটি রিপোর্ট থেকে দেখা যায়- এইডস আক্রান্ত ৯০% এবং এইডস ব্যতীত ৬৫% সমকামীদের দেহে ‘Human Papilloma Virus’ রয়েছে। যা ক্যান্সারের জন্য দায়ী। সমকামীদের এনাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বিষকামীদের থেকে ১০গুণ বেশি। আর এইডস আক্রান্ত সমকামীদের এ ঝুঁকির পরিমাণ আরও বেশি। প্রায় ২০গুণ।
হেপাটাইটি-এ সমকামীদের মধ্যে বেশি হয়। ১৯৯১ সালে নিউইয়র্কে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সে সময়টাতে ৭৮% হেপাটাইটিস-এ তে আক্রান্ত ব্যক্তি ছিল সমকামী। এছাড়া বিভিন্ন প্যারাসাইট্রিক ও ব্যাকটেরিয়াল ডিজিজ সমকামীদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। সমকামিতার আরও বড় সমস্যা হল, সমকামীরা একটা সময়ে এসে বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী হয়ে যায়”।
.
ফারিসের পাশে বসা রফিক ভাই এতক্ষণ চুপই ছিলেন। কিন্তু ফারিসের কথা শুনে যেন তার টনক নড়ে উঠল। ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল। তিনি বেশ মোটা গলায় বললেন, “বিকৃত মস্তিষ্ক হইয়্যা যায় মানে? কস কি আবোল-তাবোল? এইসব ইনফরমেশন তোরে কেডায় দিছে?”
.
“Coprofilia কাকে বলে জানেন ভাই?” ফারিসের পাল্টা প্রশ্ন রফিক ভাইয়ের কাছে।
.
রফিক ভাই মাথা নাড়লেন। এরপর আবার চেয়ারে হেলান দিয়ে কফির কাপের দিকে মনোযোগ দিলেন। রফিক ভাইয়ের উত্তরটা জানা ছিল না বিঁধায় উত্তরটা ফারিস-ই দিল।
.
ফারিস বললো, “Coprofilia হল এমন একটি যৌন আচরণ যেখানে ব্যক্তি মলমুত্রের সংস্পর্শে এসে আনন্দলাভ করে। ফিনল্যান্ডের একটি সার্ভে থেকে জানা যায় যে ১৭% সমকামী এই অস্বাভাবিক যৌনাচারে লিপ্ত। একবার চিন্তা করুন ভাই। সমকামীরা মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্রতম অংশ। তারপরেও এই অস্বাভাবিক যৌনাচার তাদের মধ্যে ১৭%। আনুপাতিক বিচারে এই পারসেন্টেজটা তাহলে কত বিশাল?
সমকামীদের মধ্যে ধর্ষকামও বেশি দেখা যায়। ৩৭% সমকামী এই অস্বাভাবিক যৌনাচারে লিপ্ত। সমকামীরা যৌনতাড়িত বেশি হয়। একটা পর্যায়ে এসে সমকামীরা আত্ন বিধ্বংসী চিন্তা-চেতনার অধিকারী হয়ে যায়। ‘New York Times’র একটি প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, এইডস আক্রান্ত সমকামী ব্যক্তির তার সেক্সুয়াল পার্টনারের মধ্যে এইডস এর ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার পরেও এ নিয়ে কোন অনুতাপ নেই। কোন অনুশোচনা নেই। এছড়া সমকামীরা উন্নাসিক প্রকৃতির হয়। সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথাই থাকে না। অপরদিকে Bagley ও Tremblay’র রিসার্চ থেকে দেখা যায়, সমকামী ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বিষকামীদের চেয়ে ২ থেকে ১৩.৯ গুণ বেশি”।
.
ফারিসের কথা শেষ হলে রফিক ভাই বললেন, “তোর লাস্ট পয়েন্টটার সাথে আমি একমত হইতে পারলাম না ফারিস”।
– কেন ভাই?
– আত্মহত্যা কস আর মানসিক সমস্যাই কস। এইগুলার জন্য কইলাম সমকামীরা দায়ী না। এইডার জন্য দায়ী হোমোফোবিয়া। দায়ী সমাজের হুজুরগুলা। যারা উঠতে বইতে সমকামীদের বিরোধীতা করে। আর হোমোফোবিয়া ছড়াইবার কাম করে। সমকামীদের সামাজিকভাবে মাইন্যা নিলে এই সমস্যাডা মনে অয় আর থাকবো না।
– ভাইয়ের নিশ্চয় জানা আছে, নেদারল্যান্ড এ সমকামী বিয়ে আইনসিদ্ধ। মানে সেখানে সামাজিকভাবে সমকামিতাকে কোন অপরাধ বলে গণ্য করা হয় না।
– হ জানি। জানুম না কেন?
– ভাল। নেদারল্যান্ডের General Psychiatry’র দেয়া রিপোর্ট থেকে জানা যায়, তাদের দেশে সমকামীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা অনেক বেশি। সমকামীরা অনেক বেশি মেন্টাল ডিপ্রেশনে ভুগে। অপরদিকে কানাডা একটি উদার রাষ্ট্র। যেখানে সমকামিতা সাধারণ বিষয়। কানাডায় বছরে যে কটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে তার মধ্যে ৩০% আত্মহত্যাকারী সমকামী। একটু লক্ষ্য করুন ভাই। এই সব রাষ্ট্রে হোমোফোবিয়া নেই। তারপরেও এখানে সমকামীদের মানসিক সমস্যা বিষমকামীদের থেকে বেশি। আর এ থেকেই বুঝা যায়, সমকামীদের মানসিক সমস্যার কারণ হোমোফোবিয়া নয়। হুজুররাও নয়। তারা নিজেরাই এর জন্যে দায়ী। তাদের যৌন-উশৃঙ্খল জীবন যাপনই এর জন্য দায়ী।
– আইচ্ছা ফারিস। সমকামিতা তো খৃষ্টের জন্মেরও অনেক আগে থেইকাই চইলা আইতাছে। তাইলে এইডারে কি স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে ধরা যাইবো না?
– আপনি ধর্ষণকে কীভাবে দেখেন? এটাকে কি আপনি স্বাভাবিক আচরণ মনে করেন?
– পাগলে কয় কি? হা হা হা। ধর্ষণরে কি কোন সুস্থ মানুষ স্বাভাবিক আচরণ বইলা মাইনা নিব? হা হা হা।
– কেন নিবে না ভাই? আপনার আপত্তি কোথায়? ধর্ষণ তো খৃষ্টের জন্মের অনেক আগে থেকে চলে আসছে।
.
রফিক ভাই চুপচাপ। কফির কাপটিকে ঘুরাচ্ছেন। কপাল ভাঁজ করে কি যেন চিন্তা করছেন? হয়তো মনে মনে ভাবছেন, ‘আমার শেষ টোপটাও ফারিসকে গেলানো গেল না’। রফিক ভাই এর নিস্তব্ধতা আমাকে সত্যিই আনন্দিত করছে। আসলে মিথ্যা যতই বিশাল হোক না কেন, তার স্থিতি নেই। মিথ্যা তো সমুদ্রের ফেনার মত। আর ফেনা তো বিলীন হয়েই যায়।
.
রফিক ভাই চুপ করে আছেন দেখে ফারিস বললো, “সমকামিতাকে সহজলভ্য করার জন্য আমেরিকাকে আজ চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। আমেরিকা আজ যৌন বিকারগ্রস্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যৌনরোগ সেখানে মহামারি আকার ধারণ করেছে। আমেরিকার ৬৫ মিলিয়ন নাগরিক বিভিন্ন যৌনরোগে আক্রান্ত। যশুধুমাত্র HIV-তে আক্রান্ত হল ১.২ মিলিয়ন। এদের মধ্যে সমকামীদের পরিমাণ হল ৫৪%। আমেরিকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩.৫% হল সমকামী। তুলনামূলক অনুপাতে সমকামীরা একেবারেই নগণ্য। কিন্তু সংক্রমণের দিক থেকে এরাই সংখ্যাগরিষ্ট। শুধুমাত্র ২০১২ সালে ১৩,৭১২ জন এইডস আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঘটে। যাদের মধ্যে মেক্সিমাম-ই হল গে অথবা লেজবিয়ান। যৌনরোগুলোর ৫৭% সমকামীদের দ্বারা ছড়ায়।
রফিক ভাই। একটু ভাবুন। ভেবে দেখুন, সকামীতা কতটা ভয়ানক ব্যাধি। সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকর। ব্যক্তির জন্য কতটা ধ্বংসাত্মক। এর পরেও যদি আপনি সমকামিতার পক্ষ নেন, আর সমকামিতার বিরোধীতা করার জন্য হুজুরদের সমালোচনা করেন; তো আমার বলার কিছুই নেই ভাই। এস ইউর উইস ব্রাদার”।
.
ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি ফারিসকে ইশারা দিলাম। ওঁ কথা থামিয়ে দিল। রফিক ভাইয়ের কাছ থেকে আমরা বিদায় নিয়ে ফ্যাকাল্টির দিকে যাত্রা করলাম। চলে যাওয়ার সময় আমি রফিক ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। তাঁর মুখটা বেশ শুকনো দেখাচ্ছিল। পরাজিত সৈনিকের মত মনে হচ্ছিল। আর হবেই না কেন? তিনি আজও ফারিসের কাছে হেরেছেন। মারাত্মকভাবে হেরেছেন। আসলে মিথ্যা কখনোই সত্যের সামনে জয়ী হতে পারে না। কেননা মিথ্যার সে ক্ষমতা নেই।
.
ক্লাসে পৌঁছানোর পর আমি ফারিসকে বললাম, ‘আজ যা দেখালি না দোস্ত। রফিক ভাইকে একেবারে ভোঁতা করে ছেঁড়ে দিলি’।
.
ফারিস কিছু বললো না। কেবল ওঁর চিরচেনা হাঁসিটা উপহার দিল। বেশ নজরকাড়া হাসি। যেন মুক্তো ঝরছে।
.
====
ফারিস সিরিজ- ০৯/
লেখকঃ জাকারিয়া মাসুদ [ফেসবুক id: Jakaria Masud ]
#সত্যকথন
.
________________________
তথ্যসূত্রঃ
1) S. S. Witkin and J. Sonnabend, “Immune Responses to Spermatozoa in Homosexual Men,” Fertility and Sterility, 39(3): 337-342, pp. 340-341 (1983).
2) New Evidence of a gay gene’ by AnastasiaTouefexis,Time ,November 13,1995,vol. 146,issue 20,p.95
3) http://www.theatlantic.com/…/no-scientists-have-not…/410059/
4) https://concernedwomen.org/images/content/bornorbred.pdf
5) George Rice, et al., “Male Homosexuality: Absence of Linkage to Microsatellite Markers at Xq28,”Science, Vol. 284, p. 667.
6) William Byne and Bruce Parsons, “Human Sexual Orientation: The Biologic Theories Reappraised,” Archives of General Psychiatry, Vol. 50, March 1993: 228-239
7) Laumann EO, Gagnon JH, Michael RT, Michaels S. 1994. The Social Organization of Sexuality. Chicago: University of Chicago Press
8) American Psychiatric Association . Fact sheet – “Gay,Lesbian and Bisexual Issues,” , May – 2000
9) http://www.evolvedworld.com/…/it…/169-back-to-school-sex-101
10) http://www.yourtango.com/experts/ava-cadell–ph-d—ed-d/3-reasons-men-cheat
11) Henry Kazal, et al., “The gay bowel syndrome: Clinicopathologic correlation in 260 cases,” Annals of Clinical and Laboratory Science, 6(2): 184-192 (1976).
12) Hepatitis A among Homosexual Men—United States, Canada, and Australia,” Morbidity and Mortality Weekly Report, CDC, 41(09): 155, 161-164 (March 06, 1992).
13) Glen E. Hastings and Richard Weber, “Use of the term ‘Gay Bowel Syndrome,’” reply to a letter to the editor, American Family Physician, 49(3): 582 (1994).
14) Paraphilias,” Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, Fourth Edition, Text Revision, p. 576, Washington: American Psychiatric Association, 2000; Karla Jay and Allen Young, The Gay Report: Lesbians and Gay Men Speak Out About Sexual Experiences and Lifestyles, pp. 554-555, New York: Summit Books (1979).
15) http://www.cdc.gov/hiv/topics/msm/index.htm
16) http://www.springerlink.com/content/jx13231641717w48/
17) http://www.cdc.gov/hiv/resources/qa/qa22.htm
18) http://www.unaids.org/…/aboutuna…/unaidsstrategygoalsby2015/
19) http://www.cdc.gov/hiv/topics/surveillance/basic.htm…
20) Mads Melbye, Charles Rabkin, et al., “Changing patterns of anal cancer incidence in the United States, 1940-1989,” American Journal of Epidemiology, 139: 772-780, p. 779, Table 2 (1994).
21) N. Kenneth Sandnabba, Pekka Santtila, Niklas Nordling (August 1999). “Sexual Behavior and Social Adaptation Among Sadomasochistically-Oriented Males”. Journal of Sex Research.
22) Theo Sandfort, Ron de Graaf, et al., “Same-sex Sexual Behavior and Psychiatric Disorders,” Archives of General Psychiatry, 58(1): 85-91, p. 89 and Table 2 (January 2001).
23) http://www.youth-suicide.com/gay-bisexual/gbsuicide1.htm
24) Edward O. Laumann, John H. Gagnon, et al., The social organization of sexuality: Sexual practices in the United States, p. 293, Chicago: University of Chicago Press, 1994
25) United States”. HIV/AIDS Knowledge Base. University of California, San Francisco. Retrieved November 25, 2011.
26) “Estimating HIV Prevalence and Risk Behaviors of Transgender Persons in the United States: A Systematic Review”. AIDS Behav. 12 (1): 1–17. Jan 2008. doi:10.1007/s10461-007-9299-3. PMID 17694429.
27) Centers for Disease Control and Prevention, (CDC) (June 3, 2011). “HIV surveillance—United States, 1981–2008”. MMWR. Morbidity and mortality weekly report. 60 (21): 689–93. PMID 21637182.
28) http://www2.law.ucla.edu/…/How-many-people-are-LGBT-Final.p…
29) https://simple.m.wikipedia.org/wiki/Coprophilia
30) https://en.m.wikipedia.org/wiki/HIV/AIDS
31) https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sadism

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *