ইমাম আবু হানিফা রাহ. সম্পর্কে বিভিন্ন যুগের শ্রেষ্ঠ উলামায়ে কেরামগণের অভিমত

ইমাম আবু হানিফা রাহ. এর  ইলমী পান্ডিত্ত,ফিকহি যোগ্যতা, হাদিস, তাফসীর,কালাম, তর্ক শাস্র সহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর প্রচুর জ্ঞান থাকার বিষয়টি জানা না থাকার কারণে অনেক ভাই কে দেখা যায় কখনো কখনো বিভ্রান্তির স্বীকার হন। তাদের খিদমতে  ইমাম আবু হানিফা সম্পর্কে বিভিন্ন যুগের শ্রেষ্ঠ উলামায়ে কেরামগণ কি বলেছেন তা তুলে ধরছি। আশা করি নিরপেক্ষভাবে পড়লে অনেক ভুল ধারণা দূর হয়ে যাবে।
ইমাম আবু হানিফা কেমন ছিলেন?

*****************************
(১) বিখ্যাত ইতিহাসবিদ, রিজালশাস্রের প্রখ্যাত ইমাম হাফেজ যাহাবি রহ. বলেন,কুফার শ্রেষ্ঠ ফকিহ হলেন হযরত আলী রা. ও ইবনে মাস উদ রা. । তাদের ছাত্রদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফকিহ আলকামা রা.। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফকিহ ইব্রাহিম নাখয়ী রা. । তাঁর ছাত্রদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফকিহ হাম্মাদ রাহ.। হাম্মাদের ছাত্রদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফকিহ আবু হানিফা রাহ.। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ৫/ ২৩৬)
(২) হাফেজ যাহাবী আরও বলেন, আবু হানিফা যিনি ছিলেন ইমাম , মুসলিম মিল্লাতের ফকিহ, ইরাকের বিশিষ্ট আলেম, তিনি হাদিস অন্বেষণের প্রতি সবিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন এবং এ উদ্দেশ্যে সফর করেছেন। ইলমে ফিকহের সুক্ষাতিসুক্ষ বিষয়ে তিনিই সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। এ ব্যাপারে সকল মানুষ তাঁর কাছে দায়বদ্ধ।   (সিয়ারু আলামিন নুবালা ৬/৩৯০)
(৩) ফিকহি আহকাম  নিরুপনে ইমাম আবু হানিফা রা. এর নীতি ছিল বিস্ময়কর ও সুক্ষাতিসুক্ষ। তিনি প্রতিটি মাসালার দলিল গ্রহণ ও মান নিরুপনে এমন সুদক্ষ ছিলেন যে তাঁর অনেক দক্ষ ছাত্রও হতবাক হয়ে যেতেন।
ইমাম মালেক রাহ. বলেন, ইমাম আবু হানিফা তো এমন এক ব্যক্তি , এই স্তম্ভটিকে দলিলের মাধ্যমে স্বর্ণ বলে প্রমাণ করতে চাইলে  অবশ্যই তাতে সক্ষম হবেন। আস সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা-৪৪২
(৪) ইমাম শাফেয়ী রাহ. এর শাইখ আল্লামা ওয়াকী ইবনুল জাররাহ রহ. এর অভিমতঃ তিনি বলেন, আমি ইমাম আবু হানিফার চেয়ে  শ্রেষ্ঠ কোন ফকিহ এর সাক্ষাত পাইনি। (তারিখে বাগদাদ- ১৩/২৮৬)
(৫)ইমাম আবু হানিফা রহ. সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী রাহ. এর অভিমতঃ তিনি বলেন যে ব্যক্তি ইলমে ফিকহ শিখতে চায় সে যেন ইমাম  আবু  হানিফা ও তাঁর  ছাত্রদেরকে আঁকড়ে ধরে। কেননা সকল মানুষ ফিকহ বিষয়ে ইমাম আবু হানিফার কাছে দায়বদ্ধ। (তারিখে বাগদাদ ১৩/২৮৬)
(৬) ইমাম আবু হানিফা রহ. সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ. এর  অভিমতঃ তিনি বলেন ইমাম আবু হানিফা রাহ. ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ফকিহ। এ ব্যাপারে কাউকে তাঁর সমতুল্য দেখিনি । (তাবয়ীযুস সহিফা পৃষ্ঠা-২৪ )
(7) মুহাম্মদ ইবনে বিশর রাহ. এর অভিমতঃতিনি বলেন আমি ইমাম আবু হানিফা ও সুফিয়ান সাওরির রাহ. নিকট আসা- যাওয়া করতাম। একদা সুফিয়ান সাওরির নিকট গমন করলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কোথা থেকে এলে? বললাম, আবু হানিফার কাছ থেকে। শুনে তিনি বললেন, তুমি তো ভুপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ ফকিহের নিকট থেকে এসেছ।(আল খাইরাতুল হিসান-২১০)
(৮) শামসুল আইম্মাহ হুলয়ানী রহ. বলেন, আমি আবু আসেম নাবিলকে জিজ্ঞেস করলাম আবু হানিফা বড় ফকিহ নাকি সুফিয়ান সাওরি ? তিনি বললেন আমার দৃষ্টিতে সুফিয়ানের তুলনায় আবু হানিফা শ্রেষ্ঠ ফকিহ।(তারিখে বাগদাদ-১৩/৩৪২)
(৯)হুসাইন ইবনে ইবরাহীম রাহ.বলেন, আমি আবু বকর ইবনে আইয়াশকে বলতে শুনেছি, আবু হানিফা ছিলেন তীক্ষ্ণ ধীশক্তিসম্পন্ন যুগশ্রেষ্ঠ ফকিহ। (ফাযাইলু আবী হানিফা-৮১)
(১০)নসর ইবনে শুমাইল বলেন,ফিকহের ব্যাপারে সকলে ঘুমিয়ে ছিল। আবু হানিফা রহ. ফিকহ চর্চা ও গবেষণার মাধ্যমে তাদেরকে জাগ্রত করেছেন। (তাবয়ীযুস সহিফা-২৪)
(১১) আবু হাইয়্যান তাওহিদী রহ. বলেন, শাসকবর্গ রাজনীতির ব্যাপারে হযরত উমর রা. এর নিকট দায়বদ্ধ।ফুকাহায়ে কেরাম কিয়াস প্রশ্নে ইমাম আবু হানিফার নিকট দায়বদ্ধ। আর মুহাদ্দিসিনে কেরাম সনদ বর্ণনার ক্ষেত্রে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের নিকট দায়বদ্ধ।( মানাকিবুল কারী পৃষ্ঠা-৪৬১।
(১২) হাফেয সামআনি রহ. স্বীয় কিতাব আল আনসাব এ লিখেন, ইমাম আবু হানিফা রহ. একদা সপ্নে দেখেন তিনি নবিজির কবর খনন করছেন। মুহাম্মদ ইবনে সিরিন বা অন্য কোন বুজুর্গ কে এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি  বলেন, এই সপ্ন দ্রষ্টা ইলমের এমন একটি ভিত্তি রাখবেন যা এ পর্যন্ত অন্ন কেউ রাখতে পারেনি। ( কিতাবুল আনসাব সামআনী)
(১৩) প্রখ্যাত তাবেয়ী ইসরাইল রাহ. বলেন, ইমাম আবু হানিফা কেমন বিস্ময়কর ব্যক্তি । কী আশ্চর্য ভাবেই না তিনি ফিকহ সম্বলিত হাদিস সমূহ মুখস্থ করে নিতেন। হাদিস থেকে ফিকহ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে অগ্রগামী কাউকে দেখিনি। হাদিসের ফিকহ উপলব্ধির ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সবার সেরা। (তারিখে বাগদাদ-১৩/৩৩৯)
(১৪) ইমাম আবু ইউসুফ রহ. এর মতামতঃ তিনি বলেন , হাদিস ও হাদিসের ফিকহ সম্বলিত সুক্ষ স্থানের ব্যাখ্যা দানে আমি ইমাম আবু হানিফা এর চেয়ে পারদর্শী আর কাউকে দেখিনি। (তারিখে বাগদাদ- ১৩/৩৪০)
(১৫) আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারকের অভিমতঃ তিনি বলেন যদি কোন হাদিসে ব্যাখ্যার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে ইমাম আবু হানিফা , সুফিয়ান সাওরি, ও ইমাম মালেক রহ. এর ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হবে। তাদের মধ্যে ইমাম আবু হানিফা রহ. হলেন সর্ব উত্তম , সবচেয়ে সুক্ষদর্শী ও ফিকহ শাস্রে অধিক মনোযোগী । তিনজনের মধ্যে তিনিই  শ্রেষ্ঠ ফকিহ। (তারিখে বাগদাদ- ১৩/৩৪৩)
(১৬) তিনি আর ও বলেন , আমি হাসান ইবনে উমারা কে আবু হানিফা রহ. এর বাহন ধরা অবস্থায় দেখেছি, তিনি বলেছিলেন আল্লাহর কসম ! আমরা আপনার মত ফিকহ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গতর এবং সংক্ষিপ্ততর কথা বলতে আর কাউকে দেখিনি। আপনি সমসাময়িক যারা ফিকহ নিয়ে গবেষণা করছেন, আপনি ই হচ্ছেন তাদের সরদার। কেবল হিংসুকেরাই আপনার সমালোচনা করে থাকে। (মুকাদ্দামা ইলাউসসুনান- পৃষ্ঠা  ১১)
(১৭)শাদ্দাদ ইবনে হাকিম বলেন, আমি ইমাম আবু হানিফার চেয়ে বড় কোন আলেম দেখিনি। ( তারিখে বাগদাদ)
(১৮) ইমাম বুখারি রহ.এর শ্রেষ্ঠ উস্তাদ মাক্কি ইবনে ইবরাহীম রাহ. বলেন, আবু হানিফা রহ.ছিলেন স্বীয় যুগের শ্রেষ্ঠ আলেম।
(১৯) আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন , আমি কুফার উলামাদের কে জিজ্ঞাসা করলাম , আপনাদের দেশের সবচেয়ে বড় আলেম কে? সকলে এক বাক্যে উত্তর দিলেন ইমাম আবু হানিফা রহ.। তারপর আমি যে কোন উত্তম গুণাবলী ও কৃতিত্তের ব্যপারে জানতে চাইলাম। তারা সবাই বললেন, ইমাম আবু হানিফা রহ. ব্যতীত এসব গুনের অধিকারী অন্য কাউকে আমরা দেখিনা। কেউ আছে বলেও আমাদের জানা নেই। (মিজানুল কুব রা লিস শায়রানি- ১/৮৭)
(২০) ইয়াযীদ ইবনে হারুন রহ. এর অভিমতঃ তিনি বলেন, আমি এক হাজার আলেমের সাক্ষাত পেয়েছি। তাদের অনেকের থেকে আমি হাদিস সংগ্রহ করেছি। তাদের মধ্যে ৫ জনকে পেয়েছি, যারা ছিলেন শ্রেষ্ঠ ফকিহ, শ্রেষ্ঠ খোদাভিরু ও শ্রেষ্ঠ আলেম। আর তাদের সেরা জন হলেন ইমাম আবু হানিফা রহ. ।( জামিউ বয়ানিল ইলম-১/২৯)

বিনয়াবনতঃ মুফতি মুহা.শামসুদ্দোহা আশ্রাফী।

তথ্যসুত্রঃমুফতি মানসুরুল হক দা.বা. লিখিত কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাক লিদ ও মাজহাব বই অবলম্বনে।

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *