নাসখ’
.
যদি স্রষ্টা মানুষকে কিছু বলেন – তবে তাতে কি ভুল থাকা সম্ভব?
উত্তর হচ্ছে না। সকল ধর্মের লোকেরাই এই ক্ষেত্রে একমত হবে। বিশেষ করে যারা দাবী করে তাদের কাছে কিতাব আছে ( মুসলিম, ইহুদি ও খৃষ্টান সম্প্রদায়)। তারা তো সবার আগে মাথা ঝাঁকাবে।
.
এখন যদি বলা হয়- স্রষ্টা কি এমন বিধান দিতে পারেন, যা পরবর্তীতে রহিত করতে হয়? এক্ষেত্রেও আহলে কিতাবরা বলবেঃ অসম্ভব! এটাও হতে পারে না । অনেক মুসলিমও হয়তো অজ্ঞতার কারণে কিংবা মডারেট হয়ে বলবেঃ এটা সম্ভব না। যুক্তি হচ্ছে-
.
“কুর’আন অনুসারে আল্লাহ ভবিষ্যত জানেন। যদি কুর’আনের রচয়িতা আল্লাহই হন, তবে কেন তিনি এমন বিধান দিবেন যা পরবর্তীতে রহিত করতে হয়? তিনি কি জানতেন না যে তার বিধান ভবিষ্যতে অকার্যকর হয়ে পড়বে? ”
.
ইসলামী পরিভাষায় ‘রহিতকরণ’ বলতে এমন কিছুই বোঝানো হয় না।
.
.
রহিতকরণ কি?
আরবী ‘নাসখ’ শব্দের অর্থ রহিত করা। পারিভাষিকভাবেঃ নাসখ মানে সকল শর্ত পূরণ করেছে এমন কোন কর্মবিষয়ক বিধান পালনের সময়সীমার সমাপ্তি ঘোষণা করা।
অর্থাৎ, নাসখ বলতে স্রষ্টার একটি বিধান নতুন আরেকটি বিধান দ্বারা রহিত হয়ে যাওয়াকে বোঝায়।
.
.
রহিতকরণ কি সত্যিই আছে?
কুর’আন-সুন্নাহ ও সালাফদের থেকে রহিতকরণ বা ‘নাসখ’ এর বিষয়টি পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত। আর এটা আমাদের অনেকের কমনসেন্সের সাথে না মিললেও একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই রহিতকরণের পিছনে প্রজ্ঞাটা ধরতে পারা যায়।
.
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুর’আনে এ সম্পর্কে বলেনঃ
“আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?” [১]
এছাড়া সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি, সূরা আহযাব এক সময় আকারে সূরা বাকারার মত ছিলো। পরবর্তীতে এর অধিকাংশ আয়াত রহিত করে দেয়া হয়। [২]
.
সাহাবাদের নিকট ‘রহিতকরণ’ এর জ্ঞান থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, অনেক সময়ে কেউ কেউ হালাল ভেবে নিজে হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে পড়তে পারে, আর অন্যকেও সে দিকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে। একবার চতুর্থ খলিফা আলী(রাঃ) একজন বিচারককে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি মানসুখ(রহিত) আইন-কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন কি না। বিচারক জবাব দিলেন, “না।” আলী(রাঃ) তাকে বললেন, “তুমি নিজে ধ্বংস হয়েছো আর অন্যদেরও ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছো।” [৩]
.
আমাদের সালাফরাও নাসখ নিয়ে প্রচুর বই লিখে গেছেন। সম্ভবত এর মধ্যে সর্বাধিক প্রাচীন গ্রন্থটি হলো বিখ্যাত তাবিয়ী, হাদীস বিশেষজ্ঞ কাতাদাহ ইবনু দিয়ামা’র লেখা ‘আন নাসিখ ওয়াল মানসুখ ফী কিতাবিল্লাহ’। এছাড়া নাসখ নিয়ে বই লিখেছেন ইবনু হাযাম যাহিরী, মাকী ইবনু আবী তালিব, ইবনুল জাওযী প্রমুখ।
.
উল্লেখ্য যে, বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নাসখের সংক্রান্ত ঘটনার সংখ্যা মাত্র অল্প কয়েকটি। আর সেগুলো সনাক্ত করার সুনির্দিষ্ট তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলো হলোঃ
ক) নবী(সাঃ) কিংবা তাঁর কোন সাহাবীর সুষ্পষ্ট বক্তব্য।
.
খ) রহিতকারী ও রহিত- উভয়ের আইনের ব্যাপারে প্রথম দিকের মুসলিম বিশষজ্ঞদের পূর্ণ মতৈক্য।
.
গ) এ বিষয়ের নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক জ্ঞান যে, যে আইনটিকে রহিত করা হয়েছে সেটি রহিতকারী আইনটির পূর্বে নাযিল হয়েছে এবং তা রহিতকারী আইনটির কোন সম্পূরক বিধি নয়, বরং তার সাথে সুষ্পষ্টভাবে সাংঘর্ষিক।
.
.
নাসখ কত প্রকারের হতে পারে?
.
মূলতঃ তিন ধরনের নাসখ সংঘটিত হতে পারে।
ক) কুর’আন দ্বারা কুর’আনের নাসখ। [৪]
খ) কুর’আনের মাধ্যমে সুন্নাহর নাসখ। [৫]
গ) সুন্নাহর মাধ্যমে সুন্নাহর নাসখ। [৬]
.
শুধু কুর’আনের মধ্যেই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে নাসখ হতে পারেঃ
ক) নতুন আইন দ্বারা পূর্বের আইনটি বাতিল হবার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট আয়াতের পাঠও কুর’আন থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। [৭]
.
খ) আইনটি বলবৎ থাকে, শুধু আয়াতের তিলাওয়াত রহিত হয়ে যায়। [৮]
.
গ) আয়াতের তিলাওয়াত বহাল থাকবে, শুধু আইন রহিত হয়ে যাবে। [৯]
.
—– এখানে উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক প্রকারের নাসখই স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার অনুমোদনেই হয়ে থাকে।
.
প্রতিস্থাপনের প্রকারভেদঃ
.
ক) আয়াতটি প্রতিস্থাপন না করেই রহিত করা। [১০]
.
খ) একটি সহজ আইনের মাধ্যমে পূর্বের কঠিনতর আইনের নাসখ। [১১]
.
গ) একই ধরনের আইনের মাধ্যমে নাসখ। [১২]
.
ঘ) একটি কঠিনতর আইনের মাধ্যমে নাসখ। [১৩]
.
.
নাসখ কেন করা হয়? এর পিছনে কি কোন প্রজ্ঞা রয়েছে?
শায়খ রাহমাতুল্লাহ কীরানবী(রহঃ) তার অনবদ্য বই ‘ইযহারুল হক’ এ নাসখের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেনঃ
.
“আল্লাহ জানতেন যে, এই বিধানটি অমুক সময় পর্যন্ত তার বান্দাদের মধ্যে প্রচলিত থাকবে এবং এরপর তা স্থগিত হয়ে যাবে। যখন তার জানা সময়টি এসে গেলো তখন তিনি নতুন বিধান প্রেরণ করলেন। এই নতুন বিধানের মাধ্যমে তিনি পূর্বতন বিধানের আংশিক বা সামগ্রিক পরিবর্তন সাধন করতেন। প্রকৃতপক্ষে, এ হলো পূর্বতন বিধানের কার্যকারিতার সময়সীমা জানিয়ে দেয়া। তবে যেহেতু আগের বিধানটি দেয়ার সময় এর সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি, সেহেতু নতুন বিধানটির আগমনকে আমরা আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে বাহ্যত ‘পরিবর্তন’ বলে মনে করি।
.
আল্লাহর সাথে কোন সৃষ্টির তুলনা হয় না। তাই, তুলনার জন্য নয়, শুধু বোঝার জন্য একটা উদাহারণ দেয়া যায়। আপনি আপনার একজন কর্মচারীকে একটি কর্মের দায়িত্ব প্রদান করলেন। আপনি তার অবস্থা জানেন এবং আপনার মনের মধ্যে সিদ্ধান্ত রয়েছে যে, এক বছর পর্যন্ত সে উক্ত কর্মে নিয়োজিত থাকবে। এরপর আপনি তাকে অন্য কর্মে নিয়োগ করবেন। কিন্তু আপনার এই সিদ্ধান্ত আপনি কারো কাছে প্রকাশ করেন নি। যখন নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেল তখন আপনি আপনার পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুসারে তাকে অন্য কর্মে নিয়োযিত করলেন। এই বিষয়টি উক্ত কর্মচারীর নিকট ‘রহিতকরণ’ বলে গণ্য। অনুরূপভাবে, অন্য সকল মানুষ যাদের নিকট আপনি আপনার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেওন নি, তারাও বিষয়টিকে ‘পরিবর্তন’ বলে গণ্য করবেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এবং আপনার কাছে বিষয়টি ‘পরিবর্তন’ নয়।
.
এরূপ রহিতকরণ যুক্তি বা বিবেকের দৃষ্টিতে অসম্ভব না। ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও তা তাঁর মহত্ত্ব বা মর্যাদার পরিপন্থী নয়।
.
পাঠক কি দেখেন না যে, ভালো ডাক্তার রোগীর অবস্থার প্রেক্ষিতে তার ঔষধ পরিবর্তন করেন। তিনি সর্বদা রোগীর জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা প্রদানের চেষ্টা করেন। কেউই তার এই বিধানকে অজ্ঞতা বা মূর্খতা বলে গণ্য করেন না। কাজেই অনাদি-অনন্ত জ্ঞানের অধিকারী সর্বজ্ঞানী মহান স্রষ্টার এইরূপ প্রজ্ঞাময় পরিবর্তনকে আমরা কিভাবে অজ্ঞতা বলে অপব্যাখ্যা দিতে পারি? [১৪]
.
ড. বিলাল ফিলিপ্স তার বইয়ে নাসখের তিনটি মৌলিক কারণ উল্লেখ করেছেনঃ
.
১) আসমানী আইনসমূহকে ধীরে ধীরে পূর্ণতার স্তরে নিয়ে যাওয়া।
.
২) ঈমানদারদের পরিক্ষা করা। কখনো তাদের একটি আইন মানতে বলা হয় আর কিছু কিছু জায়গায় তাদের সে আইন মানতে বারণ করা হয়। এভাবে পরিক্ষা করা হয়, ঈমানদাররা সবসময় আল্লাহর আইন মানতে কতটুকু প্রস্তুত।
.
৩) কখনো কঠিন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ঈমানদারদের পুরস্কার অর্জনের সুযোগ করে দেয়া হয়। কারণ- কাঠিন্য যত বেশী, পুরস্কারও বেশী। আবার সহজ আইন প্রণয়ন করে ঈমানদারদের একটু বিশ্রাম প্রদান করে এ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, আল্লাহ মূলত তাদের কল্যাণই কামনা করেন। [১৫]
.
.
যেসব বিষয় রহিত হয় নাঃ
.
রহিত হবার বিষয়টা নিয়ে তখনই আপত্তি তোলা যেতে পারে, যখন একই কিতাবের কোন কাহিনী, ঘটনা এবং ভবিষ্যৎবাণী সেই কিতাবেই রহিত করা হয়। আমরা মানুষেরা এটা প্রায়ই করি। নিজেদের লেখা বইয়ে কোন তথ্যের ভুল থাকলে তা সংশোধন করি। কিন্তু স্রষ্টার পক্ষে ভুল তথ্য দেয়া অশোভন। কুর’আন তথ্যের ও ভবিষ্যৎবাণীর রহিতকরণ না করে হুকুমের রহিতকরণ করে আমাদের আরো পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে এটা মানুষের তৈরি কোন বই নয়।
.
অনেকে দাবী করেন, বাইবেলের নতুন ও পুরাতন নিয়মের কাহিনী কুর’আন দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। ব্যাপারটা মোটেও সেরকম নয়। তাছাড়া বাইবেলের মধ্যে অনেক মিথ্যা কাহিনী রয়েছে। যেমনঃ
.
* লূত(আঃ) মদ খেয়ে মাতাল হন এবং তাঁর দুই মেয়ের সাথে পর পর দুই রাতে ব্যভিচারে লিপ্ত হন। ফলে তাঁর দুই মেয়ে পিতার দ্বারা গর্ভবতী হয়। [১৬]
.
* দাউদ(আঃ) দূর থেকে উরিয়র স্ত্রী বাতসেবাকে নগ্ন অবস্থায় গোসল করতে তাকে প্রাসাদে ডেকে পাঠান এবং বাতসেবার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হন। ফলে বাতসেবা গর্ভবতী হয়। বিপদ বুঝতে পেরে, তিনি সেনাপতিকে পরামর্শ দেন কৌশলে যুদ্ধের মাঠে উরিয়কে হত্যা করার জন্য। এভাবে উরিয় নিহত হন আর দাউদ(আঃ) বাতসেবাকে ভোগ করেন। [১৭]
.
* সুলাইমান(আঃ) শেষ বয়সে মেয়েলোকের পাল্লায় পরে ধর্মত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যান। তিনি মূর্তিপূজা শুরু করেন। [১৮]
.
* হারূন(আঃ) একটি বাছুরের মূর্তি তৈরি করেন এবং এর উপাসনা করা শুরু করেন। শুধু তাই না, তিনি বনী ইসরাইলকে এই বাছুরকে উপাসনা করার নির্দেশ ও দেন। [১৯]
.
আমরা বিশ্বাস করি, সকল নবীই নিষ্পাপ। তাই এই কাহিনীগুলো মিথ্যা ও বাতিল। আমরা বলি না যে, এগুলো রহিত। কারণ, রহিত তো কেবল সত্য কিছুই হয়ে থাকে।
.
.
রহিতকরণ কি কেবল কুর’আনেই আছে?
.
আগেই উল্লেখ করেছি, ইহুদি ও খৃষ্টানরা এটা বিশ্বাস করতে পারে না যে, স্রষ্টার অভিধানে ‘রহিত’ শব্দটি থাকতে পারে। যদিও তাদের বাইবেলে প্রচুর ‘রহিতকরণ’ এর ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। কয়েকটি উল্লেখ করছিঃ
.
* বিকৃত বাইবেল অনুসারে, ইব্রাহীম(আঃ) এর স্ত্রী সারা তাঁর সৎ-বোন ছিলেন । যার অর্থ, ইব্রাহীম(আঃ) এর জন্য নিজের সৎ-বোনকে বিয়ে করা বৈধ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখতে পাই, তোরাহ তে সৎ-বোনকে বিয়ে করার বিধান নিষিদ্ধ করা হয়। [২০]
.
* বিকৃত বাইবেল অনুসারে, মূসা(আঃ) এর শরীয়াতে, যে কোন কারণে একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। স্ত্রী ঘর থেকে বের হয়ে গেলে অন্য পুরুষ তাকে বিয়ে করতে পারেন। যিশু খ্রিষ্ট ব্যভিচারের কারণ ছাড়া তালাক দেয়া রহিত করেন। আর যে এমন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে করবে তাকেও ব্যভিচারী হিসেবে সাব্যস্ত করেন। [২১]
.
* বিকৃত বাইবেল অনুসারে, শনিবার(সাবাত) কে সম্মান করে সকল প্রকার কাজ থেকে বিরত থাকা মূসা(আঃ) এর ব্যবস্থায় একটি অলঙ্ঘনীয় চিরস্থায়ী বিধান। কিন্তু বাইবেলেই আমরা দেখতে পাই, যিশু খৃষ্ট বারবার এই আইন ভঙ্গ করছেন[২২]।
.
বর্তমানেও খৃষ্টানরা বাইবেলের এই বিধান পালন করে না। অথচ তাদের অনেক স্কলারই দাবী করে, পুরো বাইবেলই ঈশ্বরপ্রদত্ত আর সেখানে কোন রহিত হবার বিধান নেই।
.
তারা কি জানেন, এই বাইবেল অনুসারেই চিরস্থায়ী ‘সাবাত’ ভঙ্গ করার কারণে তাদের সবার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিৎ? কারণ, বাইবেল পড়লে জানা যায়, শনিবারের দিনে শুধু কাঠ কুড়ানোর অপরাধে এক লোককে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হয়েছিলো। [২৩]
.
* বিকৃত ইঞ্জিলেই এক বিধান কর্তৃক আরেক বিধান রহিত হবার প্রমাণ মেলে। মথি লিখিত সুসমাচারে যিশু তার শিষ্যদেরকে জেন্টাইল(যারা ইহুদী নয়) দের কাছে যেতে নিষেধ করেন। তিনি আরো বলেন, বনী-ইসরাইল ছাড়া তিনি আর কারো কাছে প্রেরিত হননি। জেন্টাইলদের তিনি ‘কুকুর’ বলে সম্বোধন করেছেন। আবার অন্য গস্পেল পড়লে জানা যায়, সেই তিনিই সকল সৃষ্টির নিকট তাঁর সুসমাচারগুলো প্রচার করতে বলছেন। [২৪]
.
* “ নিশ্চয়ই জান্নাত রয়েছে তরবারির ছায়াতলে” – রাসূল(সাঃ) এর এই হাদিসকে অনেক খৃষ্টান স্কলার ব্যঙ্গ করে থাকেন। অথচ বাইবেল অনুসারে, যিশু খৃষ্ট বলেছেন, “একথা ভেবো না যে আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি৷ আমি শান্তি দিতে আসি নি কিন্তু তরবারি দিতে এসেছি৷”
আবার সেই তিনিই ইহুদিদের হাতে বন্দী হবার প্রাক্কালে তাঁর সাথী পিতরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “যারা তরবারি চালায়, তারা তরবারিতেই মারা পড়ে।” [২৫]
.
সুতরাং, শুধু কুর’আনেই নয় বরং পূর্ববর্তী কিতাবগুলো বিকৃত হওয়ার পরেও তাতে অনেকগুলো রহিত বিধান রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, যে চোখ দিয়ে ইহুদি ও খৃষ্টানরা কুর’আনকে দেখে সেই একই চোখে তারা বাইবেলকে দেখে না।
.
.
আমাদের বর্তমান প্রজন্মের একটি মূল সমস্যা হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সাঃ) এর প্রতি ঈমান আনার দাবী করার পরেও ইসলাম বিদ্বেষীদের কিছু সাধারণ ছোড়া প্রশ্নে আমরা সংশয়বাদী হয়ে যাই। আমরা দাবী করিঃ আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর’আনে আমাদের আকল ব্যবহার করতে বলেছেন।
.
হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, আল্লাহ আমাদেরকে আকল ব্যবহার করতে বলেছেন, চিন্তা করতে বলেছেন। কিন্তু তিনি আমাদেরকে আমাদের আকলের পূজা করতে বলেননি।
.
আমরা অবশ্যই সত্যকে জানার চেষ্টা করব। কিন্তু যিনি মহাবিশ্বের সবকিছু জানেন তাঁর জ্ঞানের সাথে আমাদের আকলের সবকিছু সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এমনটা ভাবাই বা কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ?
.
শান্তি তাদের উপর বর্ষিত হোক যারা হেদায়েতের উপর চলে।
.
“আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন, যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি তখন এরা বলে, ‘তুমি নিজেই এ কুর’আনের রচয়িতা’; আসলে এদের অধিকাংশই প্রকৃত সত্য জানে না।” [আল কুর’আন- সূরা নাহল, আয়াতঃ ১০১]
======================
তথ্যসূত্রঃ
.
১। আল কুর’আন- সূরা আল বাকারাহঃ ১০৬
২। আবু দাউদঃ হাদীস নংঃ ৫৪০
৩। আল ইতকানঃ জালালুদ্দিন সূয়তী- খন্ড ৩, পৃষ্ঠাঃ ৫৯
৪। সূরা নিসার ১৫ নং আয়াতের বিধান রহিত হয়েছে সূরা আন-নূরের ২নং আয়াতের মাধ্যমে ।
৫। আশুরার আবশ্যিক রোযা রহিত হয় কুর’আনের রোযার বিধানের মাধ্যমে।
৬। রান্না করা খাবার খাওয়ার পর অযু করার বিধান পরবর্তীতে সহীহ হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।
৭। সহীহ মুসলিম, খণ্ড ২, হাদীস নং ৩৪২১
৮। সহীহ মুসলিম, খণ্ড ৩, হাদীস নং ৪১৯৪
৯। সূরা আল বাকারাহ’র ২৪০ নং আয়াতটি রহিত হয় ২৩৪ নং আয়াতের মাধ্যমে।
১০। সূরা আল মুজদালাহ এর ১২ নং আয়াত রহিত হয় ১৩ নং আয়াতের মাধ্যমে।
১১। রোযা রাখার সময় রাতের বেলা পানাহার না করার বিধান রহিত হয় সূরা আল বাকারার ১৮৭ নং আয়াতের মাধ্যমে।
১২। মাসজিদুল আক্বসা থেকে মাসজিদুল হারামে কিবলা বদলানো।
১৩। রোযার পরিবর্তে ফিদইয়া এর বিধান রহিত করে শারীরিক ভাবে সক্ষম সকল ব্যক্তির জন্য রোযা ফরজ করে দেয়া।
.
১৪। ইযহারুল হক- আল্লামা রাহমাতুল্লাহ কীরানবী, পৃষ্ঠাঃ ৪৬৭-৪৬৮
১৫। কুরআন বোঝার মূলনীতি- ডা.বিলাল ফিলিপ্স, পৃষ্ঠাঃ ২২৮-২২৯
১৬। Holy Bible, Genesis- chapter:19, verse:30-38
১৭। Holy Bible, 2 Samuel- chapter:1, verse: 1-27
১৮। Holy Bible, 1 kings- chapter 11, verse: 1-13
১৯। Holy Bible, Exodus- chapter 32, verse: 1-35
২০। Holy Bible, Genesis- chapter 20, verse-12 কে রহিত করছে Leviticus- chapter 18, verse 9
২১। Holy Bible, Deuteronomy- chapter 24, verse:1-2 কে রহিত করছে Gospel of Matthew, Chapter 5, verse: 31-32
২২। Holy Bible, Exodus- chapter 35, verse: 2-3 কে রহিত করছে Gospel of John-chapter 5, verse 16
২৩। Holy Bible, Numbers-chapter 15, verse: 32-36
২৪। Holy Bible, Gospel of Matthew- chapter 15, verse: 24-26 কে রহিত করছে Gospel of Mark- chapter 16
২৫। Holy Bible, Gospel of Matthew- chapter 10, verse: 34 কে রহিত করছে Gospel of Matthew- chapter 26, verse: 52
==============================
লেখকঃ শিহাব আহমেদ তুহিন
Leave Your Comments