ইসলামবিদ্বেষী লেখক S.P. এর বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের জবাব (৪র্থ পর্ব)
.
কেউ ওনার একাউন্টে গিয়ে নিজের অজান্তেই তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে পারেন বিধায় তার সম্পূর্ণ নাম উল্লেখ না করে শুধু নামের অদ্যাক্ষর উল্লেখ করা হল।যারা আগেই তার পোস্ট পড়েছেন, তারা এমনিতেই চিনতে পারবেন।
.
S.P. লিখেছেনঃ——–
.
//ধড়িবাজ ইসলামি লেকচারাররাই আয়াত কাটছাট করে তোমাদের বোকা বানায় আর নাস্তিকদের আয়াত বিকৃতির জন্য দায়ী করে। যাই হোক, এবার তোমার কথার জবাবে বলি, সুরা মায়দার যে অংশটুকু তুমি বললে সেটা কিন্তু সুরা মায়দার বক্তব্য না। এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন তিনি ইহুদীদের তাওরাতে ঐ কথাগুলো লিখে দিয়েছিলেন। আমি পুরো আয়াত বলি শোন- “এ কারণেই আমি বনী-ইসলাঈলের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। তাদের কাছে আমার পয়গম্বরগণ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী নিয়ে এসেছেন…”(সূরা মায়েদা: ৩২)। অর্থ্যাৎ দাবী করা হচ্ছে এই কথা ইহুদীদের ঐশ্বিগ্রন্থে আল্লাহ ইহুদীদের উপদেশ দিয়েছিলেন। এ কারণেই বলছেন, আমার পয়গম্বরগণ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী নিয়ে এসেছেন। কুরআন কিন্তু এরকম উক্তি মুসলমানদের পালন করতে নির্দেশ করেননি। //
.
—– >>>> আমাদের নাস্তিক মহোদয় এবারে ‘মুফাসসিরের’(!) ভূমিকা পালন করলেন। কিন্তু আয়াতের এমন তাফসির(?) তিনি করলেন, যার সঙ্গে সাহাবী-তাবিঈ কারো তাফসিরের মিল নেই।
.
গায়ের জোরে অপব্যাখ্যা করলে যা হয় আরকি। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে মাজহারীতে একটি হাদিস উল্লেখ আছেঃ বারা বিন আজিব(রা) বর্ণিত; রাসুল(ﷺ) বলেছেন, সারা পৃথিবী ধ্বংস করাও একজন মানুষকে হত্যা করার চেয়ে আল্লাহর নিকট কম অন্যায়।হাসান সূত্রে বর্ণণা করেছেন ইমাম ইবন মাজাহ। [১]
.
এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক আরেকটি হাদিস হচ্ছেঃ কবিরা গুনাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে আল্লাহর সাথে কাউকে শির্ক করা এবং কোন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। … [২]
সাহাবী ইবন আব্বাস(রা) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তা’আলা যে প্রাণ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন, তা যদি কেউ হত্যা করে, তাহলে সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করল। [৩]
আমিরুল মু’মিনীন উসমান(রা)কে যখন বিদ্রোহীরা ঘিরে ফেলে, তখন আবু হুরাইরাহ(রা) তাঁর কাছে গিয়ে বলেন, “হে আমিরুল মু’মিনীন, আমি আপনার পক্ষ হয়ে আপনার বিরুদ্ধাচরণকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে এসেছি।এ কথা শুনে উসমান(রা) বলেনঃ তুমি কি সমস্ত লোককে হত্যা করার প্রতি উত্তেজিত হয়েছ যাদের মধ্যে আমিও একজন? আবু হুরাইরাহ(রা) উত্তরে বললেন, “না, না।” তখন তিনি বললেনঃ “জেনে রেখ যে, তুমি যদি একজন লোককেই হত্যা কর তাহলে যেন তুমি সমস্ত লোককেই হত্যা করলে।যাও, ফিরে যাও।আমি চাই যে, আল্লাহ তোমাকে পুরস্কৃত করুন, পাপকাজে লিপ্ত না করুন।”” [৪]
.
সুলায়মান ইবন আলী আর রাব’ঈ(র) বলেন, আমি হাসান বসরী(র)কে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আবু সাঈদ, –{““এ কারণেই বনী ইস্রাঈলের উপর এ বিধাণ দিলাম যেঃ নরহত্যা বা যমিনে ধ্বংসাত্মক কাজ করার কারণ ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।”-সুরা মায়িদাহ ৫:৩২} এর বিধান কি আমাদের জন্যও প্রযোজ্য?
তিনি বললেন, “অবশ্যই, সেই সত্তার শপথ, যিনি ভিন্ন আর কোন ইলাহ নেই – এ বিধান বনী ইস্রাঈলের মত আমাদের জন্যও সমান প্রযোজ্য। আল্লাহ তা’আলা বনী ইস্রাঈলের রক্ত আমাদের রক্তের চেয়ে বেশী দামী করেননি।” [৫]
.
তাবিঈ মুজাহিদ(র) বলেন, অন্যায়ভাবে একজন মানুষকে হত্যাকারী ব্যক্তি এমনভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে, যেমনভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করে সকল মানুষের হত্যাকারী।
একারণেই এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসির মাজহারীতে বলা হয়েছে, “নরহত্যা এবং ধ্বংসাত্মক কার্য—এই দুই অপরাধে অপরাধী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোন কারণে কেউ যদি কাউকে হত্যা করে—তবে সে হবে দুনিয়ার সকল মানুষকে হত্যাকারীর মত।আর কেউ যদি কারো প্রাণ রক্ষা করে, তবে সে হবে পৃথিবীর সকল মানুষের প্রাণ রক্ষাকারীর মত।বনী ইস্রাঈলের প্রতি এই বিধানটি আল্লাহপাক এখানে জানিয়ে দিয়েছেন।কেবল বনী ইস্রাঈলদের লক্ষ্য করে বলা হলেও বিধানটি কিন্তু চিরন্তন।পূর্বাপর সকল উম্মতের জন্য বিধানটি অবশ্য পালনীয়।” [৬]
.
সুরা মায়িদাহর ৩২নং আয়াতটির দ্বারা একটি চিরন্তন সত্যকে জানানো হয়েছে যে—একজন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা সারা পৃথিবীর মানুষকে হত্যা করার মত এবং একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সারা পৃথিবীর মানুষের জীবন রক্ষা করার মত। এটি বনী ইস্রাঈলকে বিধান হিসাবে দেয়া হয়েছিল।উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্যেও এটি জানা জরুরী বিধায় আল্লাহ কুরআনেও তা উল্লেখ করেছেন। রাসুল(ﷺ) এর হাদিসেও আয়াতের অনুরূপ বক্তব্য পাওয়া যায়, সাহাবী-তাবিঈগণও এ আয়াত দ্বারা এটি বুঝেছেন যে এটি উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্যও পালনীয়।সে অনুযায়ী তাঁরা আমল করেছেন।
.
কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সুরা মায়িদাহর ৩২নং আয়াত সম্পর্কে সাহাবি-তাবিঈগণ যেভাবে বুঝেছেন, তার আলোকেই ইসলামী লেকচারারগণ বক্তব্য দিয়ে থাকেন, এবং নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করতে নিষেধ করেন। ইসলামী লেকচারারগণের এই সঠিক ব্যাখ্যাকে ‘ধড়িবাজি’ বলে উল্লেখ করে আমাদের আলোচ্য নাস্তিক লেখক কি তার নিজ ‘ধড়িবাজি’র স্বরূপই উন্মোচন করলেন না?
.
[ চলবে, ইন শা আল্লাহ।
সিরিজের পরবর্তী পর্বে এই ইসলামবিদ্বেষী লেখকের আরো অনেকগুলো মিথ্যাচার ও অপব্যাখ্যার পোস্টমর্টেম করা হবে। আল্লাহু মুসতা’আন। ]
.
[[এই সিরিজের ১ম ও ২য় ও ৩য় পর্বের জন্য দেখুন
#সত্যকথন_৯৯ [লিঙ্কঃ https://goo.gl/9CmxBF ],
#সত্যকথন_১০০ [লিঙ্কঃ https://goo.gl/WqL6fk ]
ও #সত্যকথন_১০১ [লিঙ্কঃ https://goo.gl/baSp7n ] ]]
.
= = = = = =
লেখকঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার [ফেসবুক id: Muhammad Mushfiqur Rahman Minar ]
#সত্যকথন
.
তথ্যসূত্রঃ
.
[১] তাফসির মাজহারী, সুরা মায়িদাহর ৩২নং আয়াতের তাফসির, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৮৩
[২] সহীহ বুখারী ৬৮৭১
[৩] তাবারী ১০/২৩৩ এবং তাফসির ইবন কাসির, সুরা মায়িদাহর ৩২নং আয়াতের তাফসির
[৪] তাফসির ইবন কাসির, সুরা মায়িদাহর ৩২নং আয়াতের তাফসির
[৫] তাফসির তাবারী(ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ৮ম খণ্ড, সুরা মায়িদাহ এর ৩২নং আয়াতের তাফসির, রেওয়ায়েত নং ১১৮০০, পৃষ্ঠা ৪২০
[৬] তাফসির মাজহারী, সুরা মায়িদাহর ৩২নং আয়াতের তাফসির, খণ্ড ৩, ৪৮২নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য
Leave Your Comments