ইসলাম আল্লাহ তায়ালার মনোনীত সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. দুনিয়ায় আল কোরআন নিয়ে এসেছেন মানব জাতিকে দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তির সন্ধান দিতে। তার সুন্নাহ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন ব্যবস্থা। মনীষী জর্জ বার্নাড ‘শ ঠিকই বলেছেন। তার উক্তির মর্মার্থ ছিল এই, ‘বিশ্বের সকল রাষ্ট্র ভেঙ্গে যদি একটি রাষ্ট্র হয়, আর এর শাসনভার যদি ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর হাতে তুলে দেওয়া হয়, আর যদি তিনি এক নায়কের মতো বিশ্ব শাসন করেন, তাহলেই পৃথিবীতে শান্তি ও মানবতার মুক্তি সম্ভব।’ আরেকজন পশ্চিমা চিন্তাবিদ বহু আগেই বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, ইউরোপের ভবিষ্যত একমাত্র ইসলাম।’ ইসলাম ৬১০ খৃ. থেকে ১৯১৭ খৃ. পর্যন্ত ১৩০০ বছর বিশ্ব শাসন করেছে। মহানবী সা. থেকে তার ৪ খলিফা তথা, খোলাফায়ে রাশিদিন হয়ে তুর্কি খলীফা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ পর্যন্ত বিশ্বের ইতিহাস ছিল নাগরিক জীবনে শান্তি ও সুখের। ইসলাম কায়েমের জন্য ঈমানদার ও কাফের মুশরিক সব মিলিয়েও ১১০০ মানুষের বেশি নিহত হয় নি। অথচ বিজয়ী ইসলাম বিহীন গত ১০০ বছর পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ বিপ্লব ও রাজনীতির নামে শাসকদের হাতে নিহত হয়েছে। ১ম বিশ্বযুদ্ধ, ২য় বিশ্বযুদ্ধ, রাশিয়ার বিপ্লব, চীনের বিপ্লব ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকায় কত কোটি লোক মরেছে এর পরিসংখ্যান এক মিনিটেই বের করা সম্ভব। গত ২৫ বছরে দুনিয়াজুড়ে কেবল মুসলমানই হত্যা করা হয়েছে সোয়া কোটি। এসবই গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ও সামরিক তন্ত্রের ছদ্মাবরণে চেঙ্গিজি স্টাইল। ধর্ম ও নৈতিকতা, ঈমান ও আল্লাহর ভয়, পরকালে বিশ্বাস না থাকায় এসব হয়েছে। অথচ, সেক্যুলার পদ্ধতি দুনিয়াকে এ শিক্ষাটিই ভালোভাবে দিতে পেরেছে যে, রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা কর। জীবনে ধর্ম যেন স্পষ্ট ও প্রকাশ্য না থাকে। প্রাচ্যের মহাকবি আল্লামা ইকবাল একথাটিই বলেছিলেন, ‘জোদা হো দীন সিয়াসত সে/ তো রাহ জা-তি হে চেঙ্গিজি।’
সেক্যুলারিজম কথাটির অর্থ এর রূপকাররা বলেছেন, ‘নট রিলেটেড উইথ এনি স্পিরিচুয়াল এন্ড রিলিজিয়াস ম্যাটার।’ অর্থাৎ, যে আদর্শের সাথে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। সহজ অর্থে ধর্মহীনতা। এ মতবাদটি নাস্তিক মুরতাদদের অস্ত্র। ঈমান ইসলামকে মোকাবেলার জন্য এর চেয়ে ধারালো আর কোনো অস্ত্র নেই। যদিও কুফর, শিরক, বিদাত ইত্যাদি বিষয়ে আলেম ও ইসলামি জ্ঞানী ব্যক্তিদের ধারনা বেশি। কিন্তু এই সেক্যুলারিজম সম্পর্কে তাদের অনেকরই জ্ঞান বা ধারনা চরম হতাশামূলক। ১৪০০ বছরের মুসলিম শাসন কর্তৃত্ব খেলাফত ধ্বংস করা হয় এই সেক্যুলারিজম দিয়ে। প্রথমে প্রায় ৭০০ বছরের উসমানী খেলাফতকে নাম দেওয়া হয়, ‘সিকম্যান অব ইউরোপ’। এরপর দুনিয়ার ইহুদি খৃষ্টানেরা বহু বছরের তৈরী প্রাচ্যবিদ শ্রেনীকে কাজে লাগায় মুসলমানদের মনে ইসলাম সম্পর্কে ঘৃণা তৈরির কাজে। প্রাচ্যবিদ বলা হয়, সেসব ইসলামবিরোধী গবেষককে যারা ইসলামের ক্ষতি করার জন্য ইসলামি জ্ঞান বিজ্ঞান আহরণ ও চর্চা করেন। প্রাচ্যবিদকে ইংলিশে বলে ‘ওরিয়েন্টালিষ্ট’। তারা কোরআন হাদীস, আরবী ভাষা ও ইসলামি সাহিত্য পড়েন এবং এ নিয়ে শত শত বই লিখেন। উদ্দেশ্য থাকে ইসলামের মধ্যে দ্বিধা, সংশয়, কূটতর্ক ও অমূলক প্রশ্ন সৃষ্টি করা। যা তারা বিশ্বের প্রতিটি সমাজে আধুনিক শিক্ষিত মুসলমানের মনে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। পাশাপাশি পশ্চিমা জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়ে ইহুদি খৃষ্টানরা সারা জগতের মুসলমান সমাজকে নিজেদের ভাবশিষ্য বানিয়ে ফেলেছে। মুসলমানরা কোরআন সুন্নাহর শাসন বিচার ও সভ্যতা ভুলে গেছে। এ সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ অজ্ঞ। কারণ, তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সেক্যুলার। পশ্চিমারাই তাদের সর্ব বিষয়ে শিক্ষক ও গুরু। এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে বর্তমান সময়ের অন্যতম বড় বিপ্লব। দুনিয়ার কোথাও এ কাজ থেমে নেই। তবে তা ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে চলছে। করছেন আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, ইমাম-খতীব, ধর্মীয় শিক্ষক ও বযস্ক মুরব্বীগণ। রাজনৈতিকভাবে কেউ এ কাজটি করতে চাইলে তাকে শুরুতেই শত্রুরা ধ্বংস করে দেয়। বহু কষ্টে নিজের আসল রূপ গোপন করে শত্রুর সাথে বাহ্যিক অনেক ক্ষেত্রে মিল দিয়ে কোনো কোনো নেতা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সচেতন মুসলমানরা কিছু আশাবাদী হয়, অনেকে তাদের সমর্থন ও দোয়া দিয়ে প্রাণপনে ওসব নেতার সফলতা কামনা করতে থাকেন। কিছু লোক তাদের খুঁতখুঁতে মেজাজ ও অতিশয় ক্ষুদ্র মানসিকতার জন্য এদের বিরোধিতা করেন। সার্বিক বিশ্ব পরিস্থিতি ও কঠিন বৈরী পরিবেশ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে তারা এসব নেতার সংগ্রাম ও যুদ্ধটি সম্পর্কে কোনো ধারণাই করতে পারেন না। ঘরে বসে নিজ পরিমÐলে তাদের খুঁটিনাটি দোষত্রুটি খুঁজে বের করেন। সাধ্যমত গীবত গান। আরেক শ্রেণী ইহুদি নাসারাদের সাথে গলা মিলিয়ে তাদের সরাসরি বিরেধিতায় মেতে উঠে। মুসলিম বিশ্বের অবস্থা বর্তমানে প্রায় এরকম। একদল মানুষ এমনও আছেন তারা মুসলিম উম্মাহর কোনো বিষয়েই ভাবতে রাজী নন। অথচ মহানবী সা. এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগী নয় সে তাদের অন্তর্ভূক্ত নয়।’ বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঙ্গনে সেক্যুলারিজম তার শিকড় ও ডাল-পালা বিস্তার করছে। এর শুরু ও গত ১০০ বছর ধরে এর নিষ্ঠুর ভয়াবহ রূপ মুসলমানদের জানা কর্তব্য। বিশেষ করে আলেম সমাজের জন্য এ বিষয়ে জ্ঞান লাভ, এর মোকাবেলা, এর হাত থেকে নিজের দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা অন্যতম ফরজ। শতকরা ৯২ জন মুসলমানের দেশ বাংলাদেশেও সেক্যুলারিজমকে হাতিয়ার করে এক শ্রেণীর নাস্তিক মুরতাদ, ইহুদি নাসারার দোসর, সংস্থা ও এনজিও যে স্লো পয়জন ঢুকাচ্ছে সে বিষয়ে উলামা-মাশায়েখ ও ইসলামি চিন্তাবিদদের পূর্ণ সজাগ থাকতে হবে। ইসলামে বিশ্বাসী সরকার ও দায়িত্বশীলদের এ বিষয়ে আন্তরিক হতে হবে। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ যেভাবে বলে ৯২ ভাগ মানুষকে সেভাবে চলতে দিতে হবে। মানুষের ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে না। ক্ষমতা চিরদিন থাকবে না, আমরা কেউই চিরদিন দুনিয়ায় থাকবো না। দুনিয়ায় কিছুই থাকবে না। থাকবে শুধু সর্বশক্তিমান দয়ালু আল্লাহর অস্তিত্ব। সুতরাং আল্লাহকে ভালোবেসে ভয় করে তার উপর আশা ও বিশ্বাস রেখে আসুন সবাই পূর্ণরূপে ইসলামকে গ্রহণ করি। সুন্নাহকে অনুসরণ করি। কুফুরি নানা মতবাদ শত্রুরা এনে হাজির করলেও আমরা তা সচেতনভাবে বর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
-লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট (বিআইএম)
Leave Your Comments